- Get link
 - X
 - Other Apps
 
Posted by
Tiki liki
on
- Get link
 - X
 - Other Apps
 
![]()  | 
| জটার দেউল | 
আমাদের কলকাতায় তথা পশ্চিমবাংলায় কিন্তু অনেক কিছুর ছড়া ছড়ি রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেক জায়গায় মানুষ বেড়াতে যায় বা আসা যাওয়ার সময় দেখে, কিন্তু অনেক জায়গায় এমনকি কলকাতার বুকেই রয়েছে টেরাকোটা যুক্ত একটা মন্দির, কিন্তু চোখের আড়ালে চলে যায়। তবে আজকে কলকাতার আড়ালে চলে যাওয়া টেরাকোটা মন্দির কথা অন্য আরো একদিন বলা যাবে। আজকে কলকাতার একটু বাইরে যাবো মানে পশ্চিমবাংলার শেষ দিকে যাবো, সেটা হলো সুন্দরবনে মানে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায়। এই মন্দির টিকে নিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক এবং ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। একে আমরা চিনি জটার দেউল মন্দির হিসাবে। সুন্দরবনে এই জায়গাটি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য আর জায়গাটি দেখতে গেলে নৌকায় তো উঠতে হবে, এখানে বলে রাখি প্রথমে ক্যানিং এ যেতে হবে আর তার পর সেখান থেকে লঞ্চ বা নৌকা করে সুন্দরবনে যেতে হবে, এখানে বলে রাখি নৌকা চড়ার কিন্তু আলাদাই একটা মজা রয়েছে। তাই ভাবি কেন সবাই শিকারায় চড়ে! সে যাই হোক সুন্দরবনের কাঙ্কনদিঘির উপর এবং এইকথা জানা যায় কাঙ্কনদিঘি হলো রায়দিঘি গ্রামের একটি অংশ। এও বলা হয় যে মণি নদীর পূর্বদিকে যে গ্রামটি রয়েছে সেটি হলো জটা গ্রাম সেখানে এই ঐতিহ্যবাহী মন্দিরের অবস্থান। এই কথা বলা হয়ে থাকে যে এই রায়দিঘি তে অনেক খোঁড়াখুঁড়ি হয়েছে এই জটার দেউল খুঁজে পাওয়া পর। যখন এই মন্দির খুঁজে পাওয়া যায় তখন ভারত পরাধীন, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি থেকে ক্ষমতা রাণীর হাতে চলে যায় 1870 সাল নাগাদ মিস্টার স্মিথ কাছে সুন্দরবনের ক্ষমতা দেওয়া হয়, তখন তিনি এই জটার দেউল খুঁজে পান। তিনি ভেবেছিলেন নিশ্চয়ই এর আসে পাশে কোন খাজানা থাকবে, ব্যাস সব লোক কাজে লাগিয়ে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করলেন কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পর কিন্তু কিছু পাওয়া যায়নি। তবে একটা বিশেষ ব্যাপার দেখা যায় এই জটার দেউল কোন মূর্তি পাওয়া যায়নি। মনে করা হয় জঙ্গল পরিষ্কার করার সময় নাকি ঐ 1868 সাল নাগাদ 100 ফুট লম্বা ইটের তৈরি সৌধটি খুঁজে পাওয়া যায়।
| জটার দেউলে পটচিত্র | 
সেই সময়ের ব্রিটিশ এখনকার ডায়মন্ড হারবারের ডেপুটি কমিশনার বলেন যে জটার দেউলের কাছে তাম্রশাসন পাওয়া গেছে সেখানে সাস্কৃতিতে লেখা ছিল যে ওটা নাকি রাজকীয় নির্দেশনামা। সেই তাম্রশাসনে আরো লেখা ছিল যে ওই তাম্রশাসনে লেখা ছিল যে ওটি প্রকাশ করেছিলেন রাজা জয়ন্তচন্দ্র বা জয়চন্দ্র ৮৯৭ শকাব্দ বা ৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে। তিনি সম্ভবত বিক্রমপুরের চন্দ্র বংশের রাজা ছিলেন।
![]()  | 
| প্রাচীন বাংলার পাল বংশের শাসক দেবপালের সময়ে তৈরি যে ইছাই ঘোষের দেউল | 
তবে মজার ব্যাপার এখন সেই তাম্রশাসন আর খুঁজে পাওয়া যায় না, কিন্তু এই তাম্রশাসন গুলি পাওয়া যায় 1875 সাল নাগাদ। তার আগে অবশ্য বৌদ্ধ, হিন্দু সব ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিল কারণ ওখানে কোন মূর্তি পাওয়া যায়নি, অনেক ঐতিহাসিক দাবি করেছিল ওটি আসলে হিন্দুদের মন্দির আবার অন্যদিকে আরো একদল ঐতিহাসিক দাবি করেন ওটি আসলে বৌদ্ধ স্তুপ আবার এও বলা হয় যে এটি আসলে কোনও রাজার বিজয় স্তম্ভ। আবার অনেক ঐতিহাসিক বলেছেন যে এই দেউলটি আসলে পাল বংশের সময় তৈরি কারণ তারা জানান যে কোনো এক পাল রাজা এটি তৈরি করেন তাদের আর একটা দাবি হলো নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বই থেকে জানা গেছে ধর্মপাল সারা পৃথিবী জয় করে গঙ্গা ও সমূদ্র যেখানে মিশেছে সেখানে হাতিদের জল খাওয়ান আর হাতিদের ছেড়ে দিন। আবার এই কথা শুনতে পাওয়া যায় যে বাংলার পাল বংশের রাজা দেবপাল তৈরি ইছাই ঘোষের দেউল যা কী না রয়েছে অজয় নদীর তীরে ঠিক তার মতই দেখতে জটার দেউল। সেই জন্য পাল বংশের সময় এটি তৈরি বলে ঐতিহাসিকরা দাবি করেছেন। এবার যদি এর নামের কথায় আসি তাহলে বলতে হয় যে জটার দেউল আসলে শিব সাথে যুক্ত কারণ হিসেবে বলা হয় শিব ঠাকুরের জটাধারী চুল যা একদম মাথা থেকে মাটি অব্দি এসেছে, আর এই জটার দেউলের ভিতরে একটি শিবলিঙ্গ রয়েছে যার ফলে এটি কে শিব সাথে তুলনা করা হয়।
![]()  | 
| জটার দেউলের মধ্যে এবং বাইরের ছবি সঙ্গে দেউল গায়ে কাজ | 
এখানে বলে রাখা দরকার যে ASI অর্থাৎ Archeological Survey of India জানিয়েছেন এগারো শতকে তৈরি বা বলা ভালো 11 th AD. এই জটার দেউল টি তৈরি হয়েছিল পোড়ামাটির সাহায্য আর এর ইট গুলো বড় বলে এর নাম ও ঐ ধরনের, এখানে গেলেই বোঝা যায় যে এখানে পোড়ামাটির মাধ্যমে তৈরি কারণ এই মাটি কালো তাই দেখলে বোঝা আমাদের পশ্চিমবাংলায় ব্রিটিশদের ঢোকার আগে এই পোড়া মাটির ব্যবহার হতো, এখন অবশ্য এই মাটি এবং তার কাজ দেখাই যায় না। যদি দ্রোণের মাধ্যমে এই মন্দির দেখতে হয়, তাহলে বলা যায় এটা হলো একটি চৌকো মন্দির, আগেই বলেছি এই মন্দিরের উচ্চতা এবার বলি এই মন্দিরের একটি কিন্তু ঢোকার রাস্তা আছে যার উচ্চতা প্রায় 10 এর কাছাকাছি এবং এই মন্দিরের দেয়ালের উচ্চতা 10 এবং মেঝে 6 ফিট।
তবে ঐতিহাসিক বলেছেন এই ধরনের কাঠামো শুধুমাত্র দেখা যেতো উড়িষ্যা অঞ্চলের মধ্যে, যদি আরো ভালো ভাবে বলতে গেলে তারা জানিয়েছেন ছয় এবং দশ শতকে এই ধরনের কাঠামো দেখা যেতো আর পরর্বতী কালে ষোলো এবং উনিশ শতকে এই ধরনের কাঠামো দেখা যেতো। তবে এই মন্দির দেখতে পাওয়া যায় মন্দির গায়ে অনেক ধরনের নকশা। ব্যক্তিগত ভাবে আমার বারবার জটার দেউলের দরজার দিকে মন চলে যায় কারণ দরজা রয়েছে ইসালামিক স্টাইলের নকশা, যার দিকে বার বার মন চলে যায়।
তবে Hindustan Times এর একটি আর্টিকেল রয়েছে সেটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ASI এর কলকাতার বিশেষজ্ঞ ডাঃ মজুমদার জানিয়েছেন "গত বেশ কয়েক বছর ধরে, আমরা লক্ষ্য করেছি যে মন্দিরের বাইরের ইটের প্রাচীর ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে, ইটের ধারগুলি ক্রমাগত ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। আমরা অনুমান করেছি যে এটি বায়ুর লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে হয়েছে," তিনি আরো বলেন "আমরা সাবধানে ক্ষতিগ্রস্ত ইটগুলি সরিয়ে ফেলব এবং একই আকারের নতুন ইট দিয়ে প্রতিস্থাপন করব," এছাড়া তার বক্তব্যে উঠে এসেছে “ এছাড়া "মন্দিরটি একটি খালি জায়গায় অবস্থিত। উপকূলীয় বাতাসের বিরুদ্ধে কিছু গাছ আছে, বিশেষ করে মন্দিরের উপরের অংশে, এবং এই কারণেই মন্দিরের উপরের দিকে ক্ষয় কম হয়েছে।" এছাড়া 2020 সালে বিশাল বড় সাইক্লোন দেখা যায় আফফান নামের, এই ঝড়ে অনেক কিছু এবং প্রচুর ঘড় বাড়ি ভেঙে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুন্দরবনে এলাকায় জটার দেউল একটি মন্দির সেখানে তিনটি বড় গাছ ভাঙে এবং জটার দেউল প্রচুর পরিমাণে ঝোড়ো কিন্তু লবনাক্ত হাওয়া এবং তার সাথে যোগ হয় উপকূলের হাওয়া। প্রত্নতাত্ত্বিক জানিয়েছেন ASI জটার দেউল কে রক্ষার করার জন্যে মন্দির চারধারে অনেক গাছ লাগিয়েছ, ডাঃ মজুমদার জানিয়েছেন যে এই মন্দিরের রক্ষার জন্য এইসব করা হয়েছে কারণ মন্দিরের চারধারে কৃষি জমি ঘূর্ণিঝড় তো লেগেই থাকে এর ফলে উপকূলের হাওয়া লাগছে মন্দির এর গায়ে। তবে শর্মিলা সাহা ASI জটার দেউলের যে তারিখ ঘোষণা করেছেন, সেটা তার কাছে ভুল কিন্তু তিনি একমত হয়েছেন যে এই মন্দির উপকূলের লবনাক্ত হাওয়ার ফলে যে ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলেছে। ডাঃ সাহা জানান উল্লেখ করেছেন যে, সাগর দ্বীপের মন্দিরতলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন ইটের মন্দির - যা জটার দেউল থেকে খুব দূরে নয় - প্রতিকূল জলবায়ুর কারণে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে মাটিতে মিশে গেছে। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে, উপকূল বরাবর অবস্থিত পাথরের মন্দিরগুলি - যেমন ওড়িশার বিখ্যাত কোনার্ক মন্দির - লবণাক্ততার দ্বারা কম প্রভাবিত হয় কারণ পাথরের ছিদ্র ইটের চেয়ে অনেক কম। জটার দেউল একটি শিব মন্দির এবং মনি নদীর তীরে সুন্দরবনের সবচেয়ে উঁচু মন্দির, ডঃ সাহা বলেন। "মন্দিরটিকে জটার দেউল বলা হয় কেন তা নিয়ে বেশ কিছু মৌখিক কিংবদন্তি রয়েছে। মন্দিরটিতে ওড়িশার নাগর মন্দিরের মন্দির স্থাপত্যের অনুরূপ একটি বক্ররেখার মিনার রয়েছে," তিনি আরও যোগ করেন। বাতাস এবং মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধির পাশাপাশি, সুন্দরবন ঘন ঘন গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের মুখোমুখি হচ্ছে যা সমুদ্রের জল প্রবেশের কারণে বড় আকারের বন্যার সৃষ্টি করে।
কিন্তু আমাদের এই জটার দেউল অনেক দেশী এবং বিদেশী মানুষ নিজের কাছে টানছে, এর ফলে সুন্দরবন মানুষ কাছে একটি অন্যতম গন্তব্যে স্থান হয়ে উঠেছে।
ছবি সূত্র - internet
তথ্য সূত্র - https://www.bongodorshon.com/home/story_detail/jatar-deul
- Get link
 - X
 - Other Apps
 



Comments