![]()  | 
| সেই হ্যাঙ্গার | 
এবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে কলকাতা তথা সেই সময়ের চব্বিশ পরগনা তথা এখনকার উত্তর চব্বিশ কী অবস্থানে ছিল? প্রতিবার এইধরনের ব্লগে বলেছি যে সেই সময়ের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল কলকাতা তথা ভারতের সুরুক্ষার দায়িত্ব, বিশেষ করে আকাশ পথকে সুরক্ষিত করার দায়িত্ব আমেরিকার উপর ছেড়েছিল ব্রিটিশ সরকার। কারণ সেই সময় ব্রিটিশ বিমান বাহিনী ভারতের সুরুক্ষার দায়িত্ব নিতে পারছিল না। বিমান বাহিনী কথা এই জন্য বললাম, কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানি বিমান বাহিনী অনেক শক্তিশালী ছিল এবং তারা বিমান আক্রমণে অভ্যস্ত ছিল। এবং হয়েছিলো তাই, জাপানি চীন,ভর্মা এখনকার মায়ানমারে নিজের আয়ত্বে আনার চেষ্টায় ছিল, কারণ কলকাতা থেকে তেল এবং যন্ত্রপাতি সরবরাহ হতো এবং কলকাতাই ছিল সেই সময়ের জাপানের মূল লক্ষ্য। কারণ কলকাতা থেকেই সব কিছু আনানো হচ্ছিল, এখানেই ছিল বন্দর। তখন কলকাতাকে আক্রমণ করবে জাপানিরা এর কারণ অবশ্য বাকি সব এলাক জাপানিদের হাতে চলে এসেছে। জাপানিদের লক্ষ্য ছিল কলকাতার দুটিই বন্দর এক হলো খিদিরপুর বন্দর এবং নেতাজি সুভাষ পোর্ট মানে তৎকালীন সময়ে যার নাম ছিল King George Dock। মোট কথা তারা পুরো কলকাতা আক্রমণ করার জন্য তৈরি ছিল, এর কারণ অনেক জাপানি মানুষ কলকাতা বসবাস করতো এমনকি তাদের মধ্যে অনেক ইঞ্জিনিয়ার ছিল যারা কলকাতায় বিভিন্ন কাজ করেছে, ফলে যার জন্য তাদের কলকাতা কে নতুন করে চেনাতে হয়নি। জাপানি বিমান বাহিনী গোয়েন্দাগিরি জন্য লোকজন পাঠিয়েছিল কলকাতায়। সেই সময় বাংলায় দমদম, আলিপুর, ব্যারাকপুর প্লেন চলতো। মার্কিন সেনাবাহিনী এবং ব্রিটিশ সেনাবাহিনী শুধু মাত্র কলকাতা কে রক্ষা করার জন্য আলাদা করে বিমান ঘাঁটি তৈরি করে বর্তমানের উত্তর চব্বিশ পরগনা অশোকনগরের কল্যাণগড়ের বাইগাছিতে। এই বাইগাছি বিমান ঘাঁটি তে ছিল No. 81, No. 152, No. 155 Squadron (Spitfires MK V and MK VIII), No. 176 Squadron (Bristrol Beaufighter MkV IF) around 8 and Airborne Interception Hurricanes. প্রভৃতি বিমান এবং তার সাথে ছিল এই বিমান গুলির Squadron রা, তার সাথে এখানে লাগানো হয়েছিল জাপানি বিমান কে ট্রেক করার যন্ত্রপাতি এবং রাডার এবং বড়ো বড়ো টাওয়ার পাহারা দেওয়ার জন্য। আসাম এবং বর্মা তে লাগানো হয়েছিল রাডার। এই খানে বিমান ঘাঁটি বানোর আগে সেটা রক্ষা করার জন্য মোটামুটি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, বিউফাইটার কে রক্ষা করার জন্য আরো কড়া ব্যবস্থা নিয়েছিল, এই বিমান টি ছিল রাতে যুদ্ধ করার জন্য অন্যতম।
![]()  | 
| বিউফাইটার | 
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এই বিমান গুলির নাম উল্লেখ করা হয়েছে বিভিন্ন বই তে। এছাড়া আরো একটি বিমান ছিল সেটি হলো হারিকেন নামের একটি ব্রিটিশ বিমান।
![]()  | 
| হারিকেন | 
ওদের যেমন গুপ্তচর আমাদের এখানে ঘুরে বেড়াতো তেমনি মিত্র পক্ষের অর্থাৎ Allied powers এর গুপ্তচর ওখানে থাকাতো, এমনি তেও জার্মানির হিটলার সরকার, তাদের তৈরি গুপ্ত কথা বলার জন্য এনিগমা মেশিন তৈরি করে ছিল, যার ফলে ঐ কথা বুঝতে একটু অসুবিধা হলেও সেটা বোঝা যেত। জাপানি বিমান বাহিনী ঠিক করেছিল 1943 সালে বড়দিন অর্থাৎ ক্রিসমাসের দিন কলকাতাতে আক্রমণ করবে বলে ঠিক করেছিল, কারণ ক্রিসমাসের দিন সব সাহেবরা পালন করবে এবং পরের দিন তারা থাকবে ক্লান্ত।
ব্যাস জাপানি বিমান বাহিনী কলকাতা কে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য ক্ষেপণাস্ত্র যুক্ত মিতসুবিশি কি-৪৬ বিমান কে পাঠিয়েছিল কলকাতা কে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে, কিন্তু নৌসেনার রাডারে মাধ্যমে জাপানিদের এই আক্রণের কথা জেনে গেছিল মার্কিন সেনাবাহিনী কারণ তাদের সৃষ্টি বিখ্যাত সুপারহিরো একটা লাইন আছে With great power comes great responsibility. আটার সময় তাদের নৌ সেনার রাডারে এই খবর পেয়েছিল যে তারা আসছে এবং সেই সময়ই তারা বাইগাছি বিমান বাহিনী এই আক্রণের কথা জানিয়ে দেয় তখন বাইগাছির আকাশে মার্কিন বিমান বাহিনীর আটটি স্পিটফায়ার আকাশে উড়েছিল এবং কয়েকটি জাপানি যুদ্ধ বিমান কে তারা ধ্বংস করে। বাইগাছি অ্যার ফিল্ড কে এখন আমরা খুঁজে পাব উত্তর চব্বিশ পরগনার অশোকনগরের কল্যাণগড়ে। তবে হ্যাঁ এখানে কোনো মেমোরিয়াল নেই যারা শুধুমাত্র কলকাতা কে রক্ষা করার জন্য এতো কিছু করলো তাদের কথা প্রায়ই ভুলে গেছিল ব্রিটিশ সরকার।
![]()  | 
| বাইগাছি এয়ার ফিল্ড | 
তবে এই জায়গায়টির কথা জানতে পারি বিখ্যাত লেখক এবং বৈজ্ঞানিক শ্রী কৌশিক মজুমদারের কাছ থেকে এবং এই কথাও জানতে পারি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কী হয়েছিল এখানে। জানা যায় ভারত স্বাধীন হওয়ার পর তৎকালীন পাকিস্তান বহু মানুষ ভারতে চলে আসে, প্রায় বলা যায় থাকে থাকে মানুষের ভিড় জমে ভারতে। কারণ অবশ্যই জানাবেন সেই জন্য ঐ প্রসঙ্গে গেলাম না।
![]()  | 
| বর্তমানে সেই হ্যাঙ্গার | 
তৎকালীন ভারত সরকার ঠিক করে কলকাতার এই জায়গায় অর্থাৎ অশোকনগরের কল্যাণগড়ে অনেকে মানুষ আশ্রয় নেওয়ার জন্য এখানে একটা সেটালাইট শহর তৈরি করে প্রায় বারোশ বাড়ি তৈরি করে রিফিউজিদের জন্য, তবে এই বাড়ি বা জমি যারা কিনতে পারবে যারা তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের সরকারকে ঠিক মতো টাকা দিতে পারবে কারণ ভারত তখন সবে স্বাধীন হয়েছে যার ফলে সরকার এর টাকার দরকার ও ছিল। যেহেতু সরকারি জমি বা বাড়ি তাই সরকারকে টাকা দিতে হবে, মোট কথা হলো যারা মধ্যবর্তী রিফিউজি ছিল তাঁরাই কিনতে পেরেছিল। এখন বলবেন তাহলে ঐ এয়ার স্ট্রিপ কী হলো, যেহেতু আগে থেকেই কলকাতা এয়ারপোর্ট ছিল যার জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া এয়ার স্ট্রিপ কথা সবাই ভুলেই গেল। কিন্তু সত্যি কী ভুলতে পেরেছে সবাই কারণ বিমান ঘাঁটি না থাকুক রয়েছে হ্যাঙ্গার ও দেখা যায় না তবে এখনো রয়েছে রোদ থেকে বিমান বাঁচানোর জন্য একধরনের ছাতা এগুলি রোদ এবং বৃষ্টি থেকে ছায়া দেওয়া এলাকা ইঞ্জিনিয়াররা বিমানের যত্ন সহকারে বানিয়ে ছিল এদের বলা হয় "সান পেন" এই সান পেনগুলি মূল বিমানঘাঁটি থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত ছিল যাতে বিমান আক্রমণের ক্ষেত্রে বিমানটি ছদ্মবেশে থাকে। এখনো এই ছাতা গুলি দেখা যায় কোনো রক্ষনাবেক্ষণ হয় কী না জানি না, তবে এরাই বার বার মনে করিয়ে দেয় আমরা আছি!
ছবি সূত্র - internet
Beaufighter Aces of World War 2 by Andrew Thomas
Air Battle for Burma: allied pilots fight for supremacy






Comments