কলকাতার ক্লক টাওয়ারা !

কলকাতার বিখ্যাত ক্লক টাওয়ার 


সময় কিন্তু খুব দামি, এই সময় দেখার জন্য ঘড়ি ব্যবহার করা হয়। এখন বলাই যেতে সবাই জানে ঘড়ি কী আর কীভাবে কাজ করে বেশি জ্ঞান দিতে হবে না! আসলে আমি বলতে চাইছি এখন যে সমস্ত ঘড়ি বা clock tower এগুলো কিন্তু ব্রিটিশরা ভারতে এবং কলকাতা সহ বিভিন্ন বড় বড় শহরে তৈরি করেছিল। কিন্তু ভারতে কী ঘড়ি ছিল না ?! হ্যাঁ হাজারবার ছিল তবে একটু অন্যরকমের ঘড়ি। প্রাচীন ভারতের জলঘড়ি আবার সূর্য ঘড়ি ব্যবহার হতো। 

জল ঘড়ি 


আগে একটু জল ঘড়ি সম্পর্কে বলে নেওয়া দরকার কারাণটা ক্রমশ জানতে পারবেন, একটি পাত্রে ফুটো করে তারমধ্যে জল ঢালা হতো এবং তার নিচে অন্য একটি পাত্রে সেই জল পড়তো সেই অনুযায়ী হতো। এই সূর্য ঘড়ি অনেক সময় কাজ করতো না কারণ আবহাওয়া। অনেক সময় সূর্য গ্রহণ বা মেঘ হলে সূর্য দেখা যেত না। যার ফলে ছায়া দেখা যেত না,আর সেই জন্য জলঘড়ির সৃষ্টি হয়। সাধারণত বলা হয় যে 325 সালে গ্রীকে এই ঘড়ি শুরু হয় আবার অনেকে মনে করেন যে মিশরে এই ঘড়ি আবিষ্কার হয়েছিল। গ্রীকে এই ঘড়ি কে বলা হতো ক্লেপসিড্রা। এথেন্স এ আইন আদালতে বক্তৃতার সময় এই জলঘড়ি ব্যবহার দেখা যেত, বিশেষ করে জলঘড়িটি অ্যারিস্টটল, নাট্যকার অ্যারিস্টোফেনিস এবং রাষ্ট্রনায়ক ডেমোস্থেনিস সহ বিভিন্ন বিখ্যাত গ্রীকদের বক্তৃতার সময় ব্যবহৃত হয়েছিল। তাদের বক্তৃতার সময় নির্ধারণ করা ছাড়াও, জলঘড়ি তাদের বক্তৃতাকে খুব বেশি সময় চলতে বাধা দেয়। যে ধরনের বক্তৃতা বা বিচার চলছিল তার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন পরিমাণ জল পাত্রে ভর্তি করা হবে। কিন্তু এই জলঘড়িও একদম পারফেক্ট টাইম দেখাতো না।।জলের প্রবাহকে স্থির গতিতে রাখার জন্য জলের একটি স্থির চাপ প্রয়োজন ছিল। এই সমস্যা সমাধানের জন্য, জল ঘড়িটি একটি বড় জলাধার থেকে জল সরবরাহ করা হয়েছিল যেখানে জল একটি ধ্রুবক স্তরে রাখা হয়েছিল। জল ঘড়ির সাথে আরেকটি সমস্যা ছিল যে দিন এবং রাতের দৈর্ঘ্য ঋতু অনুসারে পরিবর্তিত হয়, তাই প্রতি মাসে ঘড়িগুলিকে ক্রমাঙ্কিত করা প্রয়োজন ছিল। এই সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য বেশ কয়েকটি সমাধান নিযুক্ত করা হয়েছিল।

যদিও জলের মৌলিক নীতিটি তুলনামূলকভাবে সহজ, তবে জলের চাপের পদার্থবিদ্যা এবং পরিবর্তিত ঋতুগুলির সাথে সম্পর্কিত কিছু চ্যালেঞ্জ ছিল যা  মোকাবেলা করতে হয়েছিল, যার ফলে জল ঘড়িগুলি সময়ের সাথে আরও জটিল হয়ে উঠছিল। আজকে আমরা যে স্বাচ্ছন্দ্যে সময়ের হিসাব রাখি তার সাথে তুলনা করলে মনে হয় আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।

সূর্য ঘড়ি 

আমাদের ভারতে সূর্য ঘড়ির ব্যবহার ছিল, তবে সূর্য ঘড়ি ব্যবহার করা হতো মিশরে, প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা অনুযায়ী তারা দিন কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছিল। 1500 খ্রিষটাপূর্বে প্রাচীন মিশরীয়রা সূর্যদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মোট বারোটি ভাগে ভাগ করেছিল। প্রাচীন রোমানরা আবার সপ্তাহে সাতদিন যায়গায় আট দিন ধরতো, কেন একটা এক্সট্রা দিন? কারণ ঐ দিনে নাকি কনা ও বেচার দিন। পরবর্তী কালে অবশ্য কনস্টানটাইন রোমের ক্ষমতায় আসলো তখন তিনি খ্রিষ্টান ধর্ম কে রাষ্ট্রিও ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করলেন এবং আটদিনের যায়গায় সাত করা হলো কারণ খ্রিষ্টান ধর্ম অনুযায়ী সপ্তাহের শেষ দিন হলো ঈশ্বরের বিশ্রাম নেওয়ার দিন। এবং সূর্য ঘড়ি ব্যবহার মাধ্যমে ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ভারতে সূর্য ঘড়ির ব্যবহার করা হতো, ভারতের সূর্য ঘড়ি ছিল ছায়া মেশিন হিসাবে এখনকার ঘড়ি কে নিয়ন্ত্রন করতো একধরনের যন্ত্র যার নাম ছিল,Gnomon. এই যন্ত্রের মাধ্যমে ভারতের সময় নির্ধারিত হতো। এই যন্ত্রের কথা বেদ এর কথা বলা হয়েছে। ভারতের জ্যোতিবিজ্ঞানীরা খুব ভালো ভাবেই সময় কে বুঝতে পেরেছিলেন, সাতেরো শতকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে সূর্য ঘড়ির প্রচলন শুরু তার মধ্যে অন্যতম হলো যন্তরমন্রর এখানে সূর্য ঘড়ি L মতো দেখতে হতো এবং ত্রিভুজাকৃতির হতো। ভারতের জ্যোতিবিজ্ঞানীরা সেই সময় অনেক উন্নত ছিল, এই জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম ছিল আর্যভট্ট। তিনি প্রথম জানিয়েছিলেন যে রাত বারোটার পর পরের দিন আরম্ভ হয়ে যায়। এছাড়া আরো অনেক জ্যোতিবিজ্ঞানী ছিল, বলা হয় যে Horology কথাটি সংস্কৃত শব্দ AHORÃTRA থেকে এসেছে, যার মানে হলো একদিন ও একরাত, আর এর অপভ্রংশ হয়ে এসেছে Horā চব্বিশ ঘণ্টায় একদিন ও একরাত। আর এখানেই গ্রীক শব্দ Hour এসেছে। তবে হয়তো মতোভেদ থাকতে পারে। 

সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল

এবার আসি আমাদের কলকাতার clock tower গুলোর দিকে। কলকাতা সহ ভারতের বড় বড় শহর গুলিতে এই ক্লক টাওয়ার গুলি তৈরি হয়েছিল ইউরোপীয় দের প্রার্থনার সময়ের কথা মনে করিয়ে দিতে এবং তার সাথে কারখানা এবং রেলপথের সময় মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য। সাধারণত চার্চ বা চার্চের আসেপাশে এই ক্লক টাওয়ার গুলি তৈরি করা হয়েছিল এগারো থেকে কুঁড়ি শতকের মধ্যে। ব্রিটিশদের মনে হয় খুব সময়জ্ঞান ছিল কিংবা সময়ের কথা ভূলে যেত! ( ব্যক্তিগত মতামত) সেই জন্য সারা কলকাতা জুড়ে বিভিন্ন যায়গায় ক্লক টাওয়ার তৈরি করেছিল। সেন্ট পলস ক্যাথেড্রালের ঘড়ি, সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল তৈরির কাজ শুরু হয় 1839 সালে আর শেষ হয় 1847 সালে। এই ক্যাথেড্রাল এত সুন্দর হয়েছিল যে রাণী ভিক্টোরিয়া 10 টি সিলভার-গিল্ট প্লেট উপহার দিয়েছিলেন। এই গিল্ট গুলি বা বলা হয় প্লেট গুলি তৈরি করেছিলেন, লন্ডনের রাজকীয় ক্লক মেকার Vulliamy. এই ক্যাথেড্রাল ঘড়িটি অক্সফোর্ডের ক্রাইস্ট চার্চের ঘড়ির মতো দেখতে, সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল প্রাচ্যের প্রথম এপিস্কোপাল চার্চ হিসেবে উদ্বোধন করা হয়, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সময় রানী ভিক্টোরিয়া বিশপ উইলসন কাছে একটি কমিউনিয়ন প্লেট পাঠিয়েছিলেন। মূলত, গির্জাটি স্পায়ারে 201 ফুট লম্বা ছিল, কিন্তু 1897 সালে একটি ভূমিকম্প এবং 1934 সালে আরেকটি ভূমিকম্প এটিকে 145 ফুটে নামিয়ে দেয়। এটি 247 ফুট লম্বা এবং প্রায় 81 ফুট চওড়া। 1934 সালে ক্ষতিগ্রস্ত স্পায়ারটি ক্যান্টারবেরি ক্যাথেড্রালের বেল টাওয়ার দ্বারা প্রভাবিত একটি নতুন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। ভুলিয়ামি পরিবার, সেন্ট পলস ক্যাথেড্রালের ঘড়ির নির্মাতা, মূলত সুইজারল্যান্ডের এবং 18- এবং 19 শতকের ব্রিটেনের উল্লেখযোগ্য ঘড়ি নির্মাতা ছিলেন। এই গির্জা ছাড়াও কলকাতার আরো এক গির্জার রয়েছে ঘড়ি, কলকাতার পুরনো ছবি গুলিতে এই গির্জা ছবি দেখা যায় আর দেখা যায় এই ঘড়িটি।

সেন্ট অ্যান্ড্রুউ চার্চ


 ঠিক ধরেছেন সেন্ট অ্যান্ড্রুউ চার্চের কথাই বলছি, এখন যে যায়গায় এই চার্চ অবস্থিত আগে সেখানে ওল্ড কোর্ট হাউসের আন্ডারে ছিল, এর এটি মেয়র হাউসে পরিনত হয় পরবর্তীতে এখানে সেই সুপ্রিম কোর্ট বসে যেখানে এলিজাবেথ ইম্পে নন্দ কুমারের ফাঁসি ঘোষণা করে। এখনো এই রাস্তাটি ওল্ড কোর্ট হাউসের নামেই পরিচিত। কিন্তু ওল্ড কোর্ট হাউস ভেঙে যায় 1792 সালে,তার যায়গায় এই চার্চটি তৈরি হয়। এই চার্চটি সেই সময় অ্যাংলো ইন্ডিয়ান দের তবে এটি কিন্তু স্কোটিস চার্চ, 1813 সালে অ্যাংলো ইন্ডিয়ান বিশপ চার্চের দ্বায়িত্ব নেন, সেই জন্য স্কটল্যান্ডে থেকে মন্ত্রী চিঠি পাঠিয়েছিল বলে জানা যায়। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার এই চার্চটি তৈরির জন্য একলাখ টাকা দান করেছিল। তবে আজকে মূল বিষয় যেহুতু ঘড়ি সেই জন্য চার্চের দিকে যাচ্ছিনা। এই ঘড়িটি বৈশিষ্ট্য হলো এর তিনটি দিক খোলা ছিল, এবং লন্ডনের তৈরি। লন্ডনের থেকে এই ঘড়িটি কলকাতায় ইমপোর্ট করা হয়েছিল এবং 1835 সালে এটি লাগানো হয়েছিল। এই ঘড়িটিকে অনন্য করে তুলেছিল ঘন্টা বা বলা ভালো Chim. এই ঘড়িটি পনেরো মিনিট অন্তর দুটি ঘন্টা, তারপর আধঘন্টা চারটি ঘন্টা আর পঁয়তাল্লিশ মিনিটে আটটি ঘন্টা এবং এক ঘন্টায় একটি এবং দুঘন্টা দুটি এই রকম বাজতে থাকতো। কিন্তু অনেকদিন এই ঘড়িটি অচল হয়ে গেছিল দুশো বছর, কিন্তু এই বছর আবার ঘড়িটি চলতে শুরু করেছেন কলকাতার Time keeper স্বপন দত্ত এবং তার ছেলে সত্যজিৎ দত্তের জন্য। সুধু চার্চেই নয় আরো অনেক যায়গায় ঘড়ি বাড়ি ছিল। 

ম্যাগন ডেভিড সিনাগগ

আমাদের কলকাতার সিনাগগে ঘড়ি রয়েছে, জানেন নিশ্চয়ই তার নামে এজরা স্ট্রিট মানে ডেভিড জোসেফ এজরা তার ছেলে ইলিয়াস ডেভিড কলকাতায় একটি সিনাগগ তৈরি করেছিলেন, বলাহয় এই সিনাগগটি এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম সিনাগগ গুলির মধ্যে অন্যতম। এই সিনাগগটির নাম হলো ম্যাগন ডেভিড সিনাগগ, এই সিনাগগটি আর সব সিনাগগ থেকে আলাদা কারণ হলো এর স্থাপত্য শৈলী। এই সিনাগগটি ইতালির রেনেসাঁ যুগের শৈলী রয়েছে এবং এই সিনাগগ একটি গম্বুজ রয়েছে এবং একই সঙ্গে গম্বুজ একটি ঘড়ি রয়েছে যা আর কোনো সিনাগগ দেখা যায় না। এই সিনাগগকে বাইরে থেকে দেখতে অনেকটা চার্চের মতো লাগে। এই নিয়ে একটি গল্প রয়েছে সেটি হলো "The story goes that the Ezra family wrote to Baghdad, the seat of Jewish learning, to ask if they could build a steeple and if it would be compatible with Jewish law (Halacha). The rabbis wrote back that there was nothing in Jewish law that said that a synagogue could not have a steeple, so they could build one but it had to be taller than the ones around it." এই সিনাগগে একটি ঘড়ি রয়েছে, তবে নাম কী জানতে পারিনি তবে এই ঘড়িটি ও ঠিক করে দেবে কলকাতার দুই ডাক্তার। 

হাওড়া স্টেশনের বিগ বেন

এবার যাই হাওড়া স্টেশনে, এই ঘড়িটিও বেশ বিখ্যাত, এই ঘড়িটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখেছে। হাওড়া স্টেশন এই ঘড়িটি কে বলে বড় ঘড়ি, কিন্তু সাধারন মানুষ এই ঘড়িটিকে বলে বিগ বেন। 1926 সালে হাওড়া স্টেশনে লাগানো হয়,ভারী কাঠের ফ্রেমে মাউন্ট করা হয়েছিল, জোড়া ঘড়িগুলি লন্ডনের বিগ বেনের পরে তৈরি হয়েছিল। এটিতে 45 ইঞ্চি ব্যাস এবং 18 ইঞ্চি লম্বা এক ঘন্টার ডায়াল রয়েছে। মিনিটের হাতটি 24 ইঞ্চি লম্বা। এই ঘড়িটি বানিয়ে ছিল Gents of Leicester কোম্পানি,এই কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা কররেছিল জন থমাস জেন্ট 1872 সালে প্রতিষ্ঠা করেছিল, এই কোম্পানি অনেক ঘড়ি তৈরি করেছিল। তাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো লন্ডনের ওয়াটারলু স্টেশনে। 

GPO র ঘড়ি 

আমাদের কলকাতার জেনারেল পোস্ট অফিস, মানে GPO তে একটি ঘড়ি আছে। এই ঘড়িটি বিয়ে থেকেই দেখা যায়। এখানে বলে রাখা দরকার যে GPO বিল্ডিংটি ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পুরোনো ফোর্ট উইলিয়াম। ঔপনিবেশিক বা বলা ভালো ইঙ্গগ্রীক শৈলীতে তৈরি একটি ঘড়ি সহ 220 ফুটের উপরে উত্থিত উচ্চ-গম্বুজ বিশিষ্ট ছাদের জন্য উল্লেখযোগ্য, হোয়াইট বিল্ডিংটি এডওয়ার্ডিয়ান স্থাপত্যের একটি অসামান্য উদাহরণ যা ব্রিটেনে জনপ্রিয় ছিল। 1901 এবং 1914। 1868 সালে ওয়াল্টার বি গ্র্যানভিল দ্বারা ডিজাইন ও নির্মিত, এই ঘড়িটি লন্ডন থেকে আমদানি করা হয়েছিল এবং প্রায় 7,000 টাকা খরচ হয়েছিল। ব্রিটিশরা কলকাতার বিভিন্ন জমজমাট বাজারে ঘড়ির টাওয়ার তৈরি করেছিল। এটি প্রাথমিকভাবে করা হয়েছিল কারণ এই স্পটগুলি লোকেদের একটি বিশাল মণ্ডলীকে আকৃষ্ট করেছিল যারা সময় জানতে চেয়েছিল। সেই দিনগুলিতে, খুব কম মানুষের কাছে সেই সময় ঘড়ি ছিল। 

ভগ্নপ্রায় টেগোর ক্যাসেলের ঘড়ি 

এবার যাই কলকাতার একটি প্রাসাদের, বাড়িটিকে সবাই জানে টেগোর ক্যাসেল হিসেবে। এই ক্যাসেলে একটি ক্লক টাওয়ার রয়েছে, কিন্তু এই বাড়িটি তাঁর অতীত কথা ভুলে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে জোড়াবাগান এলাকায়। এই ঘড়িটিও লন্ডন থেকে আমদানি করা হয়েছিল, প্রশ্ন উঠতে পারে বেশিরভাগ ঘড়ি লন্ডনের ঘড়ির ক্ষেত্রে তো সুইজারল্যান্ড সবচেয়ে ভালো, কিন্তু মনে রাখা দরকার যে সুইজারল্যান্ডের আগে ইংল্যান্ড ভালো ঘড়ি তৈরি হতো। সেই জন্য বেশিরভাগ ঘড়ি ইংল্যান্ডের। জ্যোতিন্দ্রনাথ ঠাকুর 1895 সালে এই প্রাসাদ তৈরি করেন ইংল্যান্ডের উইন্ডসর ক্যাসেলের আদলে এই বাড়িটি তৈরি করেন এবং ঐ ক্যাসেলের মতো একশো ফুট উচ্চতায় ঘড়ি টাওয়ারটি তৈরি করেছিলেন। 


হগ মার্কেটের এর clock tower 

এবার আসি হগ মার্কেট ঘড়ির কথায় মানে নিউ মার্কেট ঘড়িতে, নিউ মার্কেট ঘড়ি হলো Westminster ঘড়ি। এই ঘড়িটি নাকি হাডার্সফিল্ড আমদানি করা হয়েছিল। ঘড়ি মিনিটে আওয়াজ করতো এবং ঘন্টায় ডং করে বাজতো। 1930 ঘড়িটি বসানো হয়েছিল। কিন্তু অযত্নের কারণে ঘড়িটির মধ্যে অনেক গাছের শীকড় গজিয়ে ওঠে যার ফলে ঘড়িটি বন্ধ হয়ে যায়। 2019 সালে ঘড়িটি কে আবার সচল করতে ঘড়ি টাওয়ারটি খোলা হয় এবং দেখা যায় ঘড়িটির অনেক পার্ট মিসিং। নিউ মার্কেট ঘড়িটি জিলেট এবং জনসন কোম্পানির যারা ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ঘড়ি কোম্পানি, ইংল্যান্ড থেকে মোট চারটি ঘড়ি ভারতে আমদানি করা হয়েছিল এবং চারটির কলকব্জা এক, আবার এই কথাও বলা হয় জিলেট এবং জনসন কোম্পানি থেকে ঘড়ির কলকব্জা এনে ব্রিটিশ ভারতে এই ঘড়ি গুলি তৈরি করা হয়েছিল। তার মধ্যে দুটি ঘড়ি আমাদের কলকাতায় একটি নিউ মার্কেটে আর দ্বিতীয়টি শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। 

মানিকতলা বাজারের ঘড়ি 

মানিকতলা বাজারের ঘড়ি ও খুব বিখ্যাত, হোডিং আর বিঞ্জাপনের ভিড়ে এই ঘড়িটি প্রায় চোখে পড়তো না, কিন্তু অবশেষে এই ঘড়িটি আবার পুনরুদ্ধার করা গেছে। তবে ঘড়িটি সম্পর্কে বিশেষ কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি। শুধু এইটুকু জানা যায় 1881 সালের অক্টোবর মাসে জৈনিক বাবু অনাথ দে এই জমি তে নতুন বাজার তৈরি করেন। ক্লক টাওয়ারটি পুনরুদ্ধার করা সময় এখন মালিক কাগজপত্র ঘেঁটে দেখেন যে কলকাতার অন্যতম ক্লক টাওয়ার গুলি মধ্যে এটি একটি। 250 কেজি এই ঘড়ির ঘন্টার ওজন আর কলকাতা ঘড়ির ডাক্তার জানিয়েছেন, রোমান ডায়াল সহ জার্মান-নির্মিত ঘড়িতে ঘন্টায় স্ট্রাইক মেকানিজম আছে। বাংলা সংখ্যা পরে যোগ করা হয়েছে," । এখন এই ঘড়িটি অনত্যম হেরিটেজ বলাই যায়।

সেই ঘড়ি 

 যেই ঘড়ি কথা না বললেই নয় সেটি হলো উত্তর কলকাতার বউবাজার এলাকার নির্মল চন্দ্র স্ট্রিটে ভীম চন্দ্র নাগের আইকনিক মিষ্টির দোকানটি তার মধ্যে একটি। লেডিকেনি মিষ্টি আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত এই দোকান, এই দোকান রয়েছে এক এবং অদ্বিতীয় কুক অ্যান্ড কেলভে বিখ্যাত বাংলা ঘড়ি। থমাস কুক এবং চার্লস কেলভি প্রতিষ্ঠিত করে এই কোম্পানি, ব্রিটিশ সিলভারওয়্যার কোম্পানি কলকাতায় আসে। ঘড়ির সাথে তাদের আরো অনেক ব্যবসা ছিল টমাস কুক 1858 সালে ভীম নাগের দোকানে গিয়েছিলেন। সম্ভবত লেডি ক্যানিংয়ের জন্মদিনের জন্য তৈরি একটি মিষ্টির উদ্ভাবক হিসাবে ভীম নাগের নতুন খ্যাতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, মিষ্টির স্বাদ গ্রহণের পর তিনি আনন্দিত হয়েছিলেন। কুক অবাক হয়েছিলেন যে এত বড় দোকানে কোনও ঘড়ি নেই এবং ভীম নাগকে একটি উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এখনো আছে এই ঘড়ি। কলকাতার ঘড়ি কথায় বলতে গেলে আর শেষ হবে না তাই আপাতত এখানেই শেষ করছি। সময়ের চাকা ঘুরবে আর কলকাতা মনে রেখে দেবে তার ঘড়ি গুলিকে।  

ছবি সূত্র - internet 

তথ্য সূত্র - https://timesofindia.indiatimes.com/city/kolkata/century-old-maniktala-clock-tower-repaired-painted-2l-crowdfunded-to-light-up-dome/articleshow/104955754.cms

https://timesofindia.indiatimes.com/city/kolkata/140-year-old-clock-under-magen-david-synagogue-steeple-all-set-to-strike-again/articleshow/110779710.cms

https://timesofindia.indiatimes.com/city/kolkata/200-year-old-church-clock-set-to-chime-after-a-decade-in-kolkata/articleshow/107706039.cms

https://blog.justforclocks.com/water-clocks-the-biggest-phenomena-of-time-keeping/

https://sanjaybali.wordpress.com/2020/01/18/ancient-indian-methods-of-time-keeping/

https://groups.google.com/g/bvparishat/c/2qRaGgSHr5Y

https://m.thewire.in/article/history/a-brief-history-of-telling-time

Comments