- Get link
- X
- Other Apps
Posted by
Tiki liki
on
- Get link
- X
- Other Apps
![]() |
| সাউথ পার্ক স্ট্রিট গোরস্থানে চার্লস স্টুয়ার্টের সমাধি |
ফেলুদার গোরস্থানে সাবধান পড়ে কলকাতার বুকে এই অসামান্য যায়গাটি চিনে ছিলাম। পরবর্তী সময়ে জানতে পেরেছিলাম কলকাতায় এক সময়ে এই পার্কস্ট্রিটে দুটো গোরস্থান ছিল, আমরা চিনি সাউথ পার্ক স্ট্রিট সেমেট্রি। নামের শুরুতে যখন সাউথ, তাহলে নিশ্চয়ই নর্থ পার্ক স্ট্রিট নর্থ পার্ক স্ট্রিট গোরস্থান থাকবে। আর ছিলো নর্থ পার্ক স্ট্রিট গোরস্থান, এই বিষয়ে আগেই একটা ব্লগে আলোচনা করেছি। এই সাউথ পার্ক স্ট্রিট গোরস্থানে একটি সমাধি রয়েছে যা দেখে একটু অবাক হতে হয়, কারণ এই সমাধি দেখতে পুরো ছোট্ট একটি মন্দিরের মতো। তবে এই সমাধি সৌধটি কেন এরকম, এর কারণ যিনি সমাধির নিচে শুয়ে আছেন সেই ইংরেজ সাহেব। সাহেবের নাম চার্লস স্টুয়ার্ট তবে তিনি অন্য একনামে পরিচিত ছিল কলকাতা তথা ভারতবর্ষের মানুষের কাছে।
![]() |
| চার্লস স্টুয়ার্ট |
স্টুয়ার্ট সাহেব আইরিস ছিলেন, জানা যায় 1758 সালে আয়ারল্যান্ডের গালওয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। জানা যায় তার বাবা এমপি ছিলেন এমনকি তার দাদু ও বড়মাপের মানুষ ছিলেন। জানা যায় তিনি কিশোর বয়সে ভারতে চলে এসেছিলেন। তিনি প্রথমে সাধারণ ক্যাডেট ছিলেন। নিজে খ্রিষ্টান হয়েও কলম ধরেছিলেন, তিনি ভারতীয়দের খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার বিরুদ্ধে খ্রিষ্টিয় ধর্ম প্রচারক ক্লাডিয়াস বুকানেনর যুক্তির জবাব দিয়েছেন। তিনি নিজেকে ধর্মান্তরিত হিন্দু বলে পরিচয় দিতেন। জানা যায় স্টুয়ার্ট সাহেব এই দেশে রীতিনীতি খুব ভাল ভাবে মেনে নিয়েছিলেন। বলা হয় তিনি হিন্দুস্তানি পোশাক পড়তেন, বুট এর বদলে তার পায়ে নাগড়াই চটি এবং চিবুক অব্দি গোঁফ, পান ও হুঁকো ছিল তার নেশা, পান এর জন্য পিকদান ছিল।
![]() |
| হিন্দু স্টুয়ার্ট বা পন্ডিত স্টুয়ার্ট |
শোনা যায় তিনি এক ভারতীয় মহিলা কে বিয়ে করলেন এবং কাজের ফাঁকে তার ভারতীয় স্ত্রী কে নিয়ে বেড়াতে জেতেন। জানা যায় তার খাওয়াদাওয়াতে ব্যবহার করতেন দেশিয় বাসনপত্র সেই জন্য অবশ্য তার কাছে মোগলদের জলের বিভিন্ন পাত্র ছিল। তিনি প্রতিদিন গঙ্গা স্নান করতেনা এমনকি কাউর সাথে যদি দেখা হতো তিনি তখন জয় সীতারামজি বলে অভিবাদন করতেন। এই সব দেখে তো মিশনারিরা রেগেমেগে নালিশ করলেন সাহেবদের কাছে, সাহেবেররা স্টুয়ার্ট সাহেব কে পেগান, বিধর্মী অনেক কিছুই বলল কিন্তু স্টুয়ার্ট সাহেব যা করছিলেন তাই করলেন। এখানে উল্লেখ্য যে কখনো সাহেবরা স্টুয়ার্ট সাহেবর ব্যাক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেনি।
জানা যায় স্টুয়ার্ট সাহেব বলেছিলেন ইউরোপীয় নারীদের ভারতীয় নারীদের মতো শাড়ি পরা উচিৎ তাহলে নাকি আরো সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। ভাবা যায়! এই স্টুয়ার্ট সাহেব একদিন ক্যাডট থেকে মেজর জেনারেল হলেন, সেই সময় তিনি উত্তর ভারতের একটি রেজিমেন্টের কামান্ডর ছিলেন আর সেই রেজিমেন্টে আসেন উইলিয়াম লিনিয়াস গার্ডেনার নামে আরো এক সাহেবি, বলাইবাহুল্য যে স্টুয়ার্ট সাহেবের অধীনে ছিলেন তিনি। এখানে বলে রাখা দরকার যে গার্ডেনার সাহেব চালর্স স্টুয়ার্টকে হিন্দু স্টুয়ার্ট আখ্যাদেন। গার্ডেনার সাহেবের সঙ্গে স্টুয়ার্ট সাহেবের চিঠি চালাচালি হতো, সেই রকম একটি চিঠি থেকে জানা যায় স্টুয়ার্ট সাহে প্রতিদিন পুজো করতেন। গার্ডেনার সাহেব একটি চিঠিতে জেনারেল স্টুয়ার্টের যায়গায় পন্ডিত স্টুয়ার্ট বলেছেন। গার্ডেনার সাহেব একটি চিঠিতে জানিয়েছেন স্টুয়ার্ট সাহেব তাকে চুকাল ঘাটে দেখা করতে বলেছেন, গার্ডেনার সাহেব আরো বলেছেন এই ঘাট সব হিন্দুদের তিনি জয় সীতারামজি বলেছেন এমনকি স্টুয়ার্ট সাহেবের ইচ্ছে এখানে একটা প্যাগোডা বানাবেন। আরো একটি চিঠিতে গার্ডেনার সাহেব জানিয়েছেন যে কুম্ভমেলায় স্নানের জন্য ছুটি নিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন সেই মেলায় স্টুয়ার্ট সাহেব কে ঘিরে বসে রয়েছে ডজন খানেক সাধু এবং তাদের সবার হাত স্টুয়ার্ট সাহেবের এর মাথায়। জানা যায় তিনি গঙ্গাসাগর দ্বীপে একটি মন্দির তৈরি করেছিলেন। মেজর জেনারেল পদে থাকাকালীন তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ফার্সির ভাষার অধ্যপক ছিলেন, তিনি ইংরেজদের ফার্সি উর্দু পড়াতেন। সেই সময় তার সহকর্মীরা ছিলেন জন গিলক্রিস্ট, উইলিয়াম কেরি, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, ম্যাথু লাম্সডেন প্রমুখ। কলকাতার উড স্ট্রিটে বাড়ি ছিলো স্টুয়ার্ট সাহেবের। স্টুয়ার্ট সাহেবের একটি বাতিক সখ ছিল বিভিন্ন জিনিসপত্র কালেকশন করা, জানা যায় তার বাড়িতে নাকি হিন্দু বৌদ্ধ জৈন ধর্মের বিভিন্ন মূর্তি, মোগল আমলে বিভিন্ন জিনিসপত্র, হুঁকো, বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র, পুরোন পুঁথি, বিভিন্ন ছবি, বই ইত্যাদি। এক ব্রিটিশ আর্মি অফিসার নাম হলো স্যার জর্জ বেল এই উড স্ট্রিটে বাড়িতে যেতেন, স্টুয়ার্ট সাহেবের প্রাইভেট মিউজিয়াম দেখতে। বেল সাহেবের ডাইরি থেকে জানা যায় স্টুয়ার্ট সাহেবের সংগ্রহে ছিল প্রাচীন পুঁথি সহ তেত্রিশ কোটি হিন্দু দেব দেবীর মূর্তি। এমনকি এই কথা জানা যায় যে স্টুয়ার্ট যখন সুস্থ হওয়ার জন্য ইউরোপের গেছিলেন তখন তার এই সব জিনিস ও তার সঙ্গে গেছিল। জানা গেছে স্টুয়ার্ট সাহেব সংগ্রহে থাকা অনেক মূর্তি চুরি করা। এই অভিযোগে করেছিল একদল ব্রাক্ষন। 1837 সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লেফটেন্যান্ট মাহরাম কিটো উড়িষ্যা এশিয়াটিক সোসাইটির হয়ে কয়েকটি শিলালিপি দেখেছিলেন সেই সময় কয়েকজন ব্রাক্ষন এর বিরোধিতা করে, এবং এই কথা বলে আগে একজন কর্নের সাহেব জোর করে মন্দিরের শিলালিপি চুরি করে নিয়ে পালিয়েছেন! আবার এও অভিযোগ শোনা যায় স্টুয়ার্ট সাহেব খাজুরাহোর মন্দির থেকে বেলেপাথরের অসামান্য সুন্দর হরিহর উপড়ে এনে নিজের সংগ্রহে রেখেছিলেন। কিটো সাহেব এই সব অভিযোগ কলকাতায় জানায়, এবং বলেন যে সোসাইটি যেন শিলালিপি ফেরত দিয়েদেয়। এখন কথা হচ্ছে এশিয়াটিক সোসাইটি কাছে স্টুয়ার্টের চুরি করা শিলালিপি আসল কিভাবে এবং এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি এবং জেমস প্রিন্সেপ তদন্ত করে দেখেছিলেন সত্যি ঐ শিলালিপি স্টুয়ার্ট সাহেব চুরি করেছিল। কিটো সাহেব যখন ঐ শিলালিপি ফেরত দেন, ব্রাক্ষন তাকে ধন্যবাদ জানাইনি তার বদলে বলে ছিল এতো সবে হিমবর্গের চূড়া মাত্র।
![]() |
| গোরস্থানে |
কলকাতায় 1828 সালের একত্রিশ মার্চ মৃত্যু হয় চালর্স স্টুয়ার্টের,তার মিউজিয়ামের সমস্ত জিনিস নিলামে ওঠে এবং অবশেষে সেই সব জিনিসপত্র যায়গা পায় ব্রিটিশ মিউজিয়ামে। চার্লস স্টুয়ার্ট শেষ ইচ্ছে ছিল তাঁকে দাহ করা হোক। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার এই প্রস্তাবে মান্যতা দেয়নি, কিন্তু তার সমাধির সঙ্গে কিছু মূর্তি আছে বলে শোনা যায়।
![]() |
| সমাধিস্থলে একদম কাছে থেকে ছবি |
শুরুতেই বলেছি এই সমাধির ছোট্ট একটি মন্দির রয়েছে। জানা যায় এই সমাধির গায়ে নাকি স্টুয়ার্ট সাহেবের বেশ কিছু ব্যাক্তিগত সংগ্রহ ছিল যেমন পৃথিবীদেবী, মকরবাহিনী গঙ্গাদেবী, পাথরের পদ্ম এবং আরও অনেক কিছু। এখন জানা যায় পাথরের পদ্মের আগেই পৃথিবীদেবী ও মকরবাহিনী গঙ্গাদেবীর ভাষ্কর্য চুরি হয়ে যায়।
![]() |
| ব্রিটিশ মিউজিয়ামে চালর্স স্টুয়ার্টের সংগ্রহে থাকা মূর্তি |
এখন ব্রিটিশ মিউজিয়ামে গেলে মেজর জেনারেল চার্লস স্টুয়ার্ট সংগ্রহ আমারা দেখতে পাব, চার্লস স্টুয়ার্ট নামে নামকরণ হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে 1829 সালে তার অবশিষ্ট সংগ্রহ ব্রিটেনে পাঠানো হয় এবং নিলাম করা হয়। 1830 সালে জন ব্রিজ সংগ্রহের একটি বড় অংশ অধিগ্রহণ করে। 1872 সালে ব্রিটিশ মিউজিয়াম তার উত্তরাধিকারীদের কাছ থেকে মিস্টার ব্রিজের এই সংগ্রহটি অধিগ্রহণ করে। 1943 সাল পর্যন্ত এটি 'মি. ব্রিজের সংগ্রহ।'কিন্তু 1943 সালে প্রয়াত রমাপ্রসাদ চন্দ ব্রিটিশ মিউজিয়ামে হিন্দু স্টুয়ার্টের বিশাল সংগ্রহ আবিষ্কার করেন, যেটি তখন পর্যন্ত 'ব্রিজের সংগ্রহ' হিসেবে রেকর্ড করা ছিল।'চন্দ আবিষ্কার করেন যে সেগুলির মূল মালিক মেজর চার্লস স্টুয়ার্ট। তিনি তাঁর উইল করেছিলেন (1823) এবং তিনি তাঁর উইলে এই সংগ্রহের কথা উল্লেখ করেছিলেন। তাঁর উইল অনুসারে তিনি বলেছিলেন যে এই সংগ্রহটি 30,000/- টাকার জন্য বিমা করে ইংল্যান্ডে পাঠানো হবে। মিঃ জন ব্রিজ 1830 সালে সংগ্রহের বেশিরভাগটি কিনেছিলেন। এই ছিল একসাহেবে যিনি ভারতে এসে হলেন হিন্দু হিন্দু সাহেব।
ছবি সূত্র - Internet
তথ্য সূত্র - https://www.peepultree.world/livehistoryindia/story/eras/charles-stuart-more-hindoo-than-british
British Calcutta
Charles Stuart
East India company
Graveyard
Heritage
History
South Park Street Cemetery
- Get link
- X
- Other Apps






Comments