কলকাতায় রয়েছে ভুলে যাওয়া গোয়ালিয়র মনুমেন্ট

গোয়ালিয়র মনুমেন্ট 

কলকাতায় কিছু কিছু যুদ্ধের স্মৃতি সৌধ রয়েছে। তার মধ্যে একটি স্মৃতি সৌধ অর্থাৎ লক্সার মেমোরিয়ালের কথা আগে উল্লেখ করছি। আজকে বলবো আরো একটি যুদ্ধের স্মৃতি সৌধের কথা, এই সৌধটি স্টেন্ড রোডের কাছে প্রিন্সেপ ঘাট ও আউটরাম ঘাটের মাঝখানে দাড়িয়ে রয়েছে এই সৌধটি, হ্যাঁ ঠিক ধরছেন গোয়ালিয়র মনুমেন্ট। এই মনুমেন্ট তৈরি হয়েছে ব্রিটিশ সৈন্যদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে। মার্বেল পাথর ও লোহা দিয়ে তৈরি হয়েছে সৌধটি। এই সৌধটি আবার আরো এক নাম হলো সাদা কালো সৌধ। ব্রিটিশ আমলের তৈরি এই স্মৃতি সৌধটিকে অনেকে মুঘল আমলের হাওয়া ঘরের সাথে গুলিয়ে ফেলে , অবশ্যই এর কারণ হলো সৌধটির গঠন শৈলি। এই সৌধটি তৈরি হয়েছিল 1847 সালে। ষাঠ ফুট উঁচু এই স্মৃতি সৌধটি গোয়ালিয়রের যুদ্ধে প্রাণ হারানো ব্রিটিশ সৈন্যদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের গর্ভনর জেনারেল লর্ড এলেনবোরো তৈরি করেছিলেন। 

লর্ড এলেনবোরো


এবার বলি কেন এই war memorial তৈরি হয়েছিল,

জানা যায় 1843 সালের 13 ই ডিসেম্বর লর্ড এলেনবোরো গোয়ালিয়রের মহারানী কে চিঠি দিয়ে জানান যে আপনার রাজ্যের সৈন সংখ্যা কমাতে হবে। এখানে বলে রাখা দরকার যে এখন আমরা জানি গোয়ালিয়র মধ্যপ্রদেশে কিন্তু, সেই সময় গোয়ালিয়র মারাঠাদের নেতৃত্বাধীন ছিল। কিন্তু রানী এই নির্দেশ মেনে নেয়েনি স্বাভাবিক। এর ফল স্বরূপ জেনারেল স্যার ইউ গফ নেতৃত্বে 1804 সালের গোয়ালিয়রের চুক্তি লঙ্ঘন করে 1843 সালের 29 ডিসেম্বর চম্বল নদীর তীরে 1400 সৈন এবং 40 বন্দুক বাজ শহর আক্রমণ করে।

স্যার ইউ গফ 


মারাঠাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ভাগেরত রাও সিন্ধিয়া। 

ভাগেরত রাও সিন্ধিয়া


মারাঠাদের সৈন সংখ্যা ছিল 1800 আর বন্দুক বাজ ছিল 100 জন কিন্তু তাও ব্রিটিশ এই যুদ্ধে জয় লাভ করে। এই যুদ্ধ হয়েছিল মহারাজাপুরে, এই যুদ্ধে ব্রিটিশদের 787 জন সৈন্য প্রাণ হারায়। এবং মারাঠাদের 3000 সৈনিক নিহত হয়। আর সেই দিন মহারাজাপুর থেকে 30 কিলোমিটার দূরে পুন্নিয়ার নামক যায়গায় জেনারেল গ্রেয়ের নেতৃত্বে বারো হাজার মারাঠা বাহিনীকে পরাস্ত করে এবং 40 বন্দুক ( ব্যক্তিগত ধারণা ওগলো কামান হবে ) বাজেয়াপ্ত করে। লর্ড এলেনবোরো চেয়েছিলেন ব্রিটিশ সৈনিকদের এই কৃতিত্ব চিরস্থায়ী করতে, সেই জন্য তিনি 1844 সালে গোয়ালিয়র মনুমেন্ট তৈরির একটি প্ল্যান করেন। সেই প্ল্যানটি কার্যকর হয়েছিল 1847 সালে, ভারতের স্বাধীনতার একশো বছর আগে। এই war memorial টি ডিজাইন করেন বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ার্সের এইচ গুডউইন, আর তৈরি দ্বায়িত্ব নিয়েছিল জোসেফ অ্যান্ড কোম্পানি। 

বর্তমান সময়ে 


ষাঠ ফুট উঁচু এই সৌধটি মুঘলদের স্টাইলের ছত্রী বা ছাতার মতো যা কিনা 8 টি ব্রোঞ্জের স্তম্ভের মাধ্যমে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেনোটাফ আকারে মুকুটের মতো। ছাতার মতো লোহা দিয়ে তৈরি গম্বুজটিকে ভারতীয় মুঘল স্টাইলের বিভিন্ন ফুলের নকশা খোদাই করা হয়েছে। অনেক মনে করেন এই গম্বুজটি মারাঠাদের কাজে বাজেয়াপ্ত কামানের লোহা গোলিয়ে, এখানে ও গোথিক স্থাপত্য কলা রয়েছে।

 এই মেটেলের গম্বুজটি দাঁড়িয়ে আছে একটি একতলা মার্বেল পাথরের উপর। অনেকে মনে করেন মার্বেল পাথর গুলি এসেছে সেই গোয়ালিয়র থেকে, এই সৌধটি উঠার জন্য ঐ মার্বেল পাথরের সিঁড়ি রয়েছে, আর যখন এই সৌধটি তৈরি হয়েছিলো, নদী তখন অনেক কাছে ছিল, জানা যায় এই সৌধটি থেকে বিদ্যাসাগর সেতু ও হাওড়া ব্রিজ দেখা যায়।

সেই সিঁড়ি 

 কিন্তু এখন এই সৌধটিতে প্রবেশ নিষেধ রয়েছে। বলা হয়ে থাকে যে গম্বুজটির ভেতরে নাকি brazen sarcophagus এ সৈনিকদের নাম খোদাই করা আছে । ডেসমন্ড ডয়েগ যিনি স্টেটসম্যান খবরের কাগজে কলকাতার অনেক স্মৃতি সৌধের ইলাস্ট্রেশন করেছিলেন 1956 সালে। তিনি জানিয়েছেন এই সৌধটি তে ব্রিটিশ সৈন্যদের নাম তো আছেই এমনকি ভারতীয় সেপাইদের নাম রয়েছে। এছাড়া তাদের রেজিমেন্টের নাম উপস্থিত, এছাড়া এখানে হেডকোয়ার্টার স্টাফ, আর্টিলারি, ঘোড়সওয়ারদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু কি তাই ড্রামার, ট্রাম্পেটার্স এবং বাদ্যযন্ত্রের মতো অপরিচিত পদের সৈন্যদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ডেসমন্ড ডয়েগ জানিয়েছেন এখানে একটি ছোট কামান ছিল। ডয়েগ তার বইতে এই সৌধটিকে বলেছেন "Pepper Pot" সৌধটির আকৃতির জন্যই। কিন্তু সৌধটিকে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে 1990 সালে। জানা যায়1957 সালের গুরুদত্তের ক্লাসিক সিনেমা পেয়াসা ছবির Jane Kya Tune Kahi গানের শুটিং ঠিক এই গোয়ালির মনুমেন্ট সামনে হয়েছিল। 

WILLIAM SIMPSON আঁকা একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে এই মনুমেন্ট 


এই সৌধটি এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে কলকাতার বুকে, মনে করাচ্ছে কত ইতিহাস।


ছবি সূত্র - Internet

তথ্য সূত্র - Wikipedia 



 

Comments