কলকাতার অন্যতম প্রাসাদ এসপ্ল্যান্ড ম্যেনশেন

এসপ্ল্যান্ড ম্যেনশেন

 গত রবিবার এসপ্ল্যান্ড রাস্তাটির কথা বলেছিলাম আর বলেছিলাম কিভাবে এর এই রাস্তার নামকরণ হয়েছে। কলকাতার অন্যতম ব্যাস্ত রাস্তা এসপ্ল্যান্ড রয়েছে একটি বাড়ি বা বলা ভাল ম্যেনশেন যার নাম হলো এসপ্ল্যান্ড ম্যেনশেন। এই প্রাসাদ প্রমান ঐতিহ্যবাহী বাড়ির এক আলদা ইতিহাস রয়েছে। এই বাড়িটি তৈরি করেন একজন ইহুদী ব্যবসায়ী, তার নাম ছিল ডেভিড জোসেফ এজরা। ইনি বাগদাদ থেকে কলকাতায় এসে অনেক সম্পতির অধিকারী হন। তিনি ঔপনিবেশিক কলকাতার বিকাশকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। এজরা এই কথটি শুনে নিশ্চই কলকাতার এজরা স্ট্রিটের কথা মনে পড়ছে, হ্যাঁ এনার নামে সেই রাস্তার নামকরণ হয়েছে। তিনি নীল, রেশম ও আফিমের রপ্তানির ব্যবসা করতেন আর তাছাড়া ও তিনি আরবি বণিকদের একজন সিপিং এজেন্ট ছিলেন। 
ডেভিড জোসেফ এজরা

এই ডেভিড জোসেফ এজরা সিপিং এজেন্ট ছিলেন তাই মাস্কাট, জিঞ্জিবার থেকে আশা বণিকরা খেজুর সহ অন্যান্য পন্য সামগ্রী কলকাতায় এসে ব্যবসা করতেন। আর এজরা সাহেব এই সব বণিক দের সাথে চাল , চিনির ব্যবসা করতেন অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের বিনিময়ে। এরপর এজরা সাহেব আবাসন সংক্রান্ত ব্যবসা শুরু করেন মানে real estate ব্যবসা করেন। যার ফলে তার অনেক লাভ হয় আর সেই জন্য তিনি বাগদাদী ইহুদী সম্প্রদায়ের একজন অনত্যম হয়ে ওঠেন। জানা যায় তিনি প্রচুর পরিমাণে বাগদাদী ইহুদী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠান গুলির উপর খরচ করতেন। সেই কারণে তিনি এই সম্প্রদায়ের অন্যতম নেতা হয়ে উঠেছিলেন। ডেভিড জোসেফ এজরা কলকাতার বিভিন্ন যায়গায় আবাসন তৈরি করেছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো এসপ্ল্যানেড ম্যানশন , এজরা ম্যানশন এবং চৌরঙ্গি ম্যানশন। এছাড়া ও এজরা টেরেস তৈরি করেন ডেভিড জোসেফ এজরা। ডেভিড জোসেফ এজরা এবং ইজাকিয়েল জুদাহার 1856 সালে ইহুদী সম্প্রদায়ের প্রার্থনালয় বেথ এল সিনাগগ তৈরি করেন পলোক স্ট্রিটে। আগেই বলেছি ডেভিড জোসেফ এজরা নামে কলকাতার এজরা স্ট্রিট, সেটা হয় তার মৃত্যুর পর। জানা যায় ডেভিড জোসেফ এজরা ছিলেন কলকাতার সবচেয়ে বড় সম্পতির মালিক। সেই টা হলো এসপ্ল্যান্ড ম্যেনশেন, ডেভিড জোসেফ এজরা জন্য এই বাড়ি টি 1910 সালে তৈরি করেছিলেন স্যার রাজেন মুখার্জি ফার্ম ও মার্টিন অ্যান্ড কোং। 

স্যার রাজেন মুখার্জি


বলা হয় সারা ভারতবর্ষে একমাত্র এসপ্ল্যান্ড ম্যেনশেনে আর্ট নুওয়াউ ( Art Nouveau ) স্থাপত্য রীতিতে তৈরী করা হয়েছে। এই স্থাপত্য রীতিটি ফরাসি। এই স্থাপত্য রীতিতে বেশিরভাগ সময়ে উদ্ভিদ এবং ফুলের নকশা ব্যাবহার করা হয়েছে।

মন দিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে 


এমন কি এসপ্ল্যান্ড ম্যেনশেনে এই আর্টি স্পষ্ট দেখা যায়। কাঁচ এবং লোহার উপর এর ব্যাবহার দেখা যায় কিন্তু এসপ্ল্যান্ড ম্যেনশেনে কংক্রিটের উপর এই আর্ট ব্যাবহার করা হয়েছে। 1890 থেকে 1910 সালে এই শিল্পকলা খুব জনপ্রিয় হয়েছিলো। জানা যায় এই বিল্ডিং এ 24 ফ্ল্যাট ছিল, তবে এই বাড়ি টি এখন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশনের অফ ইন্ডিয়ার মালিকাধীন। তাছাড়া এখানে LIC র অফিস রয়েছে এবং LIC র রেস্টহাউস হিসাবে ব্যাবহার করা হয়। এমনকি বর্তমানে এখানে পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক, রেলের দাবি ট্রাইব্যুনাল, ভাইস চেয়ারম্যান অফিস রয়েছে এই বিল্ডিং। কিন্তু যেহুতু এই বিল্ডিং টা আবাসন হিসেবে তৈরি হয়েছিল সেই জন্য, অনেক বিখ্যাত ব্যাক্তির ফ্ল্যাট এখনো রয়েছে যেমন বিখ্যাত ক্রিকেটার অরুনলালের ফ্ল্যাট ছিল এখানে। অনেকদিন ধরে এই বিল্ডিং টা অবহেলা পড়ে ছিল, সেই জন্য গোলাপি রঙের ছোপ দেখা দিয়েছিল বাড়িটির গায়ে। পুনরুদ্ধার করার পর বিল্ডিংটিটে সাদা রঙ করা হয়েছে। জানা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন এই বিল্ডিং টিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইজারা দেওয়া হয়েছিল মার্কিন সেনাদের থাকার জন্য, এমনকি এখানে একটি মার্কিন লাইব্রেরী ছিল অবশ্য কিছু দিনের জন্যে। এসপ্ল্যান্ডের রো এর পূর্বে দিকে রয়েছে এই প্রাচীন প্রাসাদ প্রমান বাড়িটি। বাড়িটির বিপরীতে রয়েছে রাজভবনের পূর্ব দিকের গেট। এইভাবেই কলকাতার বুকে দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাস, সেই জন্য বলি Nothing Like Kolkata ! 

বর্তমান সময়ে এসপ্ল্যান্ড ম্যেনশেন 


ছবি সূত্র - internet

তথ্য সূত্র - Wikipedia এবং  The concrete paparazzi



Comments