কলকাতার ভূতের বাড়ি

 

পুতুল বাড়ি


কলকাতা City of Joy, এই কলকাতায় রয়েছে যেমন হেরিটেজ এ ভর্তি তেমনি রয়েছে নানান রকম ও ধরনের ইতিহাস। এখানে আমরাপাই বিভিন্ন ধরনের বাড়ি, মেমোরিয়াল, গোরস্থান প্রমূখ। আবার ভূতের বাড়ি রয়েছে এই কলকাতায় এখন তো কালীপুজোর সময়, তার আগেরদিন অর্থাৎ ভূত চতুর্দশী পড়ে বাঙালি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সেই দিন খাওয়া হয় বিভিন্ন বলা ভালো চোদ্দো ধরনের শাক সেগুলো হলো ওল, কেও, বেতো, কালকাসুন্দা, নিম, সরষে, শালিঞ্চা বা শাঞ্চে, জয়ন্তী, গুলঞ্চ, পলতা, ঘেঁটু বা ভাঁট, হিঞ্চে, শুষনি, শেলু। এর বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে। এই ভূতের কথা বলতে গিয়ে মনে পড়ে যাচ্ছে কলকাতার অন্যতম ভূতুড়ে বাড়ি হিসাবে বিখ্যাত পুতুল বাড়ির কথা। এই বাড়িটি রয়েছে হরচন্দ্র মল্লিক লেনে, অনেক মতে এই বাড়িটি বানানো হয়েছিল গুদাম বাড়ি হিসাবে, কারণ বাড়িটির কাছেই রয়েছে গঙ্গার আহিরীটোলা ঘাট, দেখা যায় যে আগে জলপথেই বিভিন্ন জিনিসপত্রের পরিবহন হতো আর নৌকা বা জাহাজ থেকে নামিয়ে জিনিস পত্র তো আর নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে যেত না সেই জন্য ঐসব জিনিস কে গুদাম ঘরে রাখতে হতো এই পুতুল বাড়ি এই কাজের জন্য অন্যতম।

সেই ঘাট


 তবে কে বাড়িটি কে রোমান শৈলীতে নির্মাণ করেছিল তা জানা যায় নি, এমনকি এই পুতুল গুলো কে বাড়িতে নির্মাণ এর সময় লাগানো হয়েছিল নাকি পরবর্তী সময়ে সেই কথাও জানা যায়নি।

কলকাতার দুটি বাড়িতে এই ধরনের মুখ দেখা যায়
বাড়ির ভেতরের কিছু অংশ 

 Time's of India পত্রিকার খবর অনুযায়ী জানা যায় আহিরিটোলা আর শোভাবাজার ঘাটে থামতো জাহাজ এবং সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হতো গুদাম ঘরে তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলো এই পুতুল বাড়ি। স্ট্র্যান্ড রোডের ধারে নির্মিত বিশাল গুদামে সংরক্ষণ করা হত। সেই গুদামগুলির মধ্যে একটি ছিল পুতুল বাড়ি একমাত্র, উপরতলা ছাড়া পুরো বাড়িটা গুদাম বাড়ি হিসাবে ব্যবহার হতো। এই পত্রিকার খবর অনুযায়ী রোল্যান্ড জোফের সিটি অফ জয়-এ প্রদর্শিত একটি সুন্দর, অভিজাত ভবন কেন এবং কীভাবে একটি গুদামে পরিণত হয়েছিল, তা যে কোনও কৌতূহলী মনকে বিচলিত করবে। এই সময় পত্রিকা মারফত জানা যায় ১৮০০ সালের প্রথম দিকে বা তারও আগে তৈরি করা হয়। এবং আরো জানা যায় যে এরপর ১৮৬৯ সালে বৈকুণ্ঠ নাট্টা এটি ভাড়া নিয়ে শুরু করেন বিনোদনের জন্য। এবং আরো বিখ্যাত নাট্টা যাত্রা কোম্পানির মালিক নাট্টা পরিবারের বাড়ি। নাট্টা কোম্পানির অফিস ছিল তৃতীয় তলায়। তবে, ১৯৭৮ সালে সম্পত্তিটি অধিগ্রহণকারী শ্রী মাখন লাল নাট্টা ২০১৫ সালে মারা যান।ওখানকার মানুষদের কাছে শোন যায় এই বাড়িতে একসময় ছিল তৎকালীন বাবু সম্প্রদায়ের আড্ডা, অনেক বাবু এখানে এসে নাচ যেমন দেখতেন তেমনি অনেক মহিলাদের খুন করে ঐ বাড়ির মধ্যেই ফেলে রাখতেন আরো রয়েছে এই বাড়ির মালিক এক বাবু জোর করে দাসীদের শ্লীলতাহানি করতেন। কয়েকজন দাসী এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তাঁদেরকে খুন করে শবদেহ পুঁতে ফেলা হয় বাড়ির পিছনে। এমনকি খুন হওয়া লোকেদের অতৃপ্ত আত্মা নাকি বাড়ির আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ায় আজও। 2022 সালে টেলিগ্রাফ অনলাইন জানানো হয়েছে যে Kolkata's most hantand places এ একনম্বর স্থানে আছে এই পুতুল বাড়ি। তবে এই তথ্য গুলো সবই মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত, এর পরিপ্রেক্ষিতে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। 

সত্যি ঐ বাড়িতে কেউ ভূত দেখেছে বলে এখনো অব্দি শোনা যায় নি। তবে এই কথা জানা গেছে যে রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশনে যে কটি মৃত্যু হয়েছে লাইনে ঝাঁপ দিয়ে বেশিরভাগই আত্মহত্যা নাকি এখানেই ঘটেছে। বাড়ি সমানে কিন্তু বোর্ডে বড়ো করে লেখা রয়েছে কঠোরভাবে প্রবেশ নিষেধ!

ছবিতে সেই হোডিং


 তবে বাড়িটি কিন্তু এককথায় অসাধারণ, রোমান শৈলীতে এই বাড়িটি যেমন তৈরি হয়েছে তার সঙ্গে এই বাড়ি বড় বড় নম্বা জানাল গুলি অন্যতম। জানালা গুলির উপরের অংশে নিশ্চয়ই রঙিন কাঁচ লাগানো হয়েছিল এবং তার সঙ্গে রয়েছে কারুকার্য যতই ভগ্নপ্রায় উঠুক এই বাড়ি থাকুক যতই গাছগাছালি এই বাড়ি। বর্তমানে এই বাড়িটি হেরিটেজ এবং অনেক মানুষ এই বাড়িতে ভাড়া থাকেন, Time's of India খবরের কাগজ অনুযায়ী এই বাড়িটির প্রত্যেক ভাড়াটে দাবি করেছেন তাড়া কখনোই যে তারা বাড়িতে কখনও কোনও অপ্রাকৃত ঘটনার সম্মুখীন হননি। আর যেই বোর্ড কথা বলেছিলাম সেটা ছিল ঐ সব মানুষের জন্য যারা ভাড়াটেদের অনুমতি নিয়ে বাড়ির সীমানা অতিক্রম করার চেষ্টা করেছে যাতে বাড়িটি সত্যিই ভূতুড়ে কিনা তা খুঁজে বের করা যায়। তবে আক্ষরিক অর্থেই বলা যায় এই বাড়িটি ভূতের নয়, গুজব ছড়িয়ে বর্তমানে একে ভূতের বাড়ির তকমা হয়েছে। শেষে এই কথাই বলা যায় Bade Bade Deshon Mein Aisi Chhoti Chhoti Baatein Hoti Rehti Hain এখানে দেশের জায়গায় শহর ঢুকালেই হবে।

 ছবি সূত্র - internet 

তথ্য সূত্র - https://www.tutorialathome.in/history/putul-bari-calcutta

https://homegrown.co.in/amp/story/homegrown-voices/inside-putulbari-unravelling-the-dark-history-of-kolkatas-house-of-dolls

https://timesofindia.indiatimes.com/travel/destinations/kolkatas-putulbari-house-of-dolls-is-more-like-house-of-terror/articleshow/93049429.cms

https://www.bongodorshon.com/home/story_detail/ghost-of-putul-bari

Comments