দার্জিলিং এর ভুলে যাওয়া সমাধিস্থল

দূর থেকে জর্জ ডাব্লিউ অ্যালিমার লয়েডের সমাধি 

 

জানি অনেক দিন কোনো ব্লগ আসেনি, কারণ শারীরিক কারণের জন্য আশা করছি আবার আসবে ব্লগ। আচ্ছা এখন দুর্গাপুজো চলছে অনেকেই কলকাতায় আসেন পুজো উপভোগ করতে, আবার অনেকে এই ছুটিটা উপভোগ করতে বেড়িয়ে আসেন অনেক জায়গা থেকে। তার মধ্যে অবশ্যই দার্জিলিং থাকে। এখন তো দার্জিলিং যাওয়া খুব সহজ, নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে গাড়ি করে দার্জিলিং এর রাস্তা শুরু। কিন্তু আগে এতটা সহজ ছিল না। আগে যেতে হতো নদী পেরিয়ে তারপর দার্জিলিং এর মিটারগেজের ট্রেন ধরতে হতো, সেই সময় দার্জিলিং যাওয়ার ট্রেনের কামরা গুলি ছিল ছোট ছোট ট্রাম গাড়ির মতো একটা ইঞ্জিন সেই ট্রেন কে নিয়ে যেত। এখন আর ঐ রকম নেই। দার্জিলিং মানে অনত্যম জায়গা হলো ম্যাল, ওখানেই সব ভিড় সেটা সকাল হোক কিংবা বিকেল। তবে দার্জিলিং এ অন্যতম শান্তির জায়গা হলো একটি সমাধিস্থল মানে কবরস্থান। এই জায়গায় লোকে ব্রিটিশ কবরের স্থান বলেও চেনে। এখানে গেলে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাবে আর এর জায়গায়র উপরে রয়েছে চা বাগান এবং দেখা যায় পশ্চিম হিমালয়ের বরফে ঢাকা চূড়া। এই যায়গা টি রয়েছে দার্জিলিং টাউন সেন্টার থেকে এক মাইল দূরে লেবংকার্ট রোডে, এছাড়া যেই জায়গাটির কথা বললাম এবং যারা ওখানে শুয়ে আছে তাড়া এই চা বাগান এস্টেট তৈরি করেছিলেন। এখানে বলে রাখা দরকার যে কাঞ্চনজঙ্ঘা কথাটা এসেছে তিব্বতী ভাষা থেকে এখানে কান মানে হলো বরফ চেন মানে হলো মহান জ্ড মানে হলো গুপ্তধন ইঙ্গা মানে হলো পাঁচ, এর মানে হলো The Five Tresures of Snow Mountain. জানা যায় 1840 সালের সময়কার কবর এখানে দেখা যায়। এখানে কিন্তু একশোটার বেশি কবর রয়েছে তবে সব সবাধির অসতিত্ব টের পাওয়া যায় না কারণ আবহাওয়া। কিন্তু এখানে আছে এমন এক জনের সমাধি যার মাধ্যমে দার্জিলিংয়ের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ যুক্ত হয়েছিল। হ্যাঁ সমাধি এখানে রয়েছে, দার্জিলিংয়ের সাধারণ মানুষও ঐ সাহেব কথাই বলে। তিনি হলেন জর্জ ডাব্লিউ অ্যালিমার লয়েড। এই লয়েড সাহেব 1828 সালে সিকিমের রাজার সঙ্গে চুক্তি করে এবং মধ্যস্থাকরে দার্জিলিং এ এসেছিলেন। তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্মরত ছিলেন পরবর্তীতে তিনি 1835 সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সঙ্গে চুক্তি করে দার্জিলিং পশ্চিমবঙ্গের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। দার্জিলিং ছিল ব্রিটিশদের শীতকালীন রাজধানী পরে অবশ্য শিমলা ও তালিকায় পড়ে। এছাড়া ব্রিটিশরা দার্জিলিং কে চা এর উৎপাদন করা জন্য ব্যবহার করতো, দার্জিলিং পাহাড়ের চা এর বাগান তৈরি করে। এই সাহেব সারা জীবন এখানে থেকেছেন উনি 1865 সালে ছিয়াত্তর বয়েসে দার্জিলিং এ মারা গেছেন। এই সমাধিস্থল তার সমাধি রয়েছে। দ্যা হিন্দু পত্রিকা বলা হয়েছে এই সমাধিস্থল দুটি গুরুত্বপূর্ণ সমাধি রয়েছে একটি হলো এই সাহেবের, কলকাতার এএসআই এর কলকাতা সার্কেলে উল্লেখ করা হয়েছে যে প্রত্নতাত্ত্বিক শুভা মজুমদার বলেন, দুই ইউরোপীয়ের কবরের সাথে পাহাড়ি এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ রয়েছে। এগুলি ছিল লেফটেন্যান্ট জেনারেল জর্জ অ্যালিমার লয়েডের কবর, যিনি দার্জিলিং শহর আবিষ্কার করেছিলেন এবং অন্যজন ছিলেন মহান হাঙ্গেরিয়ান ভাষাবিদ আলেকজান্ডার কসমা ডি করোস, যিনি তিব্বতি ভাষায় প্রথম অভিধান এবং ব্যাকরণ সংকলন করেছিলেন। এই দুটি কবরই এএসআই, কলকাতা সার্কেলের অধীনে কেন্দ্রীয়ভাবে সুরক্ষিত স্মৃতিস্তম্ভ হিসাবে অবহিত করা হয়েছিল।

জর্জ অ্যালিমারের সমাধি 


তাই এবার ঐ সাহেব কথাই যেতে হচ্ছেই, এই সাহেব নাম জানা যায় আলেকজান্ডার ডি করোস, ইনি ছিলেন হাঙ্গারির উল্লেখযোগ্য ভাষাবিদ, 1831 তিনি কলকাতায় এসেছিলেন ঘুরতে এবং একটি গ্রন্থাগার পদে নিযুক্ত হয়ে দার্জিলিং আসেন। তিনি প্রথম তিব্বতী ভাষা ডিকশনারি ও গ্রামারের বই প্রকাশ করেন এবং এই জন্য তাকে এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে 1833 সালে সম্মান জানানো হয়। তিনি তার তিব্বতী গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেলিনেন এবং অন্যদিকে বলা হয় তিনি তিব্বতী ভাষার উৎস সমাধনের জন্য এক কঠিন সফর শুরু করেন এমনকি লাসা অব্দি চলে গিয়েছিলেন কিন্তু হঠাৎ ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

আলেকজান্ডার ডি করোস এর সমাধি 


 তিনি 1842 সাল অবধি তার গবেষণা চালাতে পেরেছিলেন। দ্যা হিন্দু পত্রিকার খবর অনুযায়ী হাঙ্গেরীয় ভাষা এবং মানুষের উৎপত্তি সম্পর্কে কোনও স্থায়ী সূত্রও দিতে সক্ষম হননি। পরিবর্তে, তিনি তিব্বতি অধ্যয়নের নতুন উদীয়মান ক্ষেত্রে অবদান রেখেছিলেন, যা তার মূল লক্ষ্যের সাথে মূলত সম্পর্কহীন ছিল। হাঙ্গেরিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেস তার সমাধিপ্রস্তরে লিখেছে যে তিনি "ভারত এবং হাঙ্গেরির জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বের পথিকৃৎ।" অন্য দিকে অনেক সমাধি রয়েছে এই জায়গায়, জানা যায় এই সমাধিস্থলটি প্রথমে সেন্ট অ্যান্ড্রু চার্চের আয়তায় ছিল। 1970 সালে দার্জিলিং এ অবস্থিত বিখ্যাত এবং উল্লেখযোগ্য দাশ স্টুডিও কে সমাধি গুলির ছবি তুলতে বলা হয় এবং সেই কাজ হয়েছিল জোরকদমে, কিন্তু রহস্যজনক ভাবে সেই ছবি আর পাওয়া যায় না। দার্জিলিং এর এই সমাধিস্থল এর কথা মানুষ প্রায়ই ভুলেই গেছিল। এখন অনেক মানুষ রয়েছেন যারা একবার এই সমাধিস্থল দেখে যান, যার নাম নেই ওল্ড সেমিট্রি নামেই পরিচিত।

ছবি সূত্র - internet 

তথ্য সূত্র - https://www.thehindu.com/news/cities/kolkata/cemeteries-give-a-peek-into-history-of-darjeeling-hills/article33054503.ece

https://www.darjeeling-tourism.com/darj_00002d.htm






Comments