মার্কিনদের গুপ্ত বিমান ঘাঁটি আমাদের বাংলায়

পিয়ারডোবা বিমান ঘাঁটির রানওয়ে 

আমাদের ভারতবর্ষ তথা কলকাতাও কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বাইরে ছিল না। আসলে কলকাতা সেই সময়ের অন্যতম জায়গায় গুলির মধ্যে, কারণ এখান থেকেই অনেক সময় ব্রিটিশ সরকারের পাশাপাশি অন্য শক্তি গুলো খাবার রসদ নিতো। কিন্তু জাপানিরা পুরো চীন দখল করে নিয়েছিল এবং এর পাশাপাশি বর্মা ছিল তাদের দখলে। এবার তাদের লক্ষ্য ছিল কলকাতা। যদি কলকাতা দখলে চলে আসে তাহলে আর কথাই নেই, কিন্তু ব্রিটিশ সরকার এই খবরটি পেয়েছিল এবং তারা জানত যে জাপানিরা বোমারু বিমান কলকাতা কে সুরক্ষিত রাখবে না। অন্য দিকে ব্রিটিশ বিমান বাহিনীর অত ক্ষমতা ছিল না অন্তত কলকাতায় তাদের সঙ্গে লড়াই করার। তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল মার্কিন সেনা বাহিনী অনুরোধ করে কলকাতাকে রক্ষা করার জন্য। অবশ্য চার্চিল মার্কিন সেনা বাহিনীর উপর গোপনে নজর রাখছিল এমনকি মার্কিন সেনা বাহিনীর জন্য আলাদা একটি পকেটে বুক প্রকাশ করে ব্রিটিশ সরকার। চার্চিল কোন ভাবেই ভারতের স্বাধীন করতে চাইনি। এই রকম পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী কলকাতা আসে। এমনকি এই মার্কিন সেনা কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে বিমান ঘাঁটি তৈরি করেছিল, এবং এখনো সেই বিমান ঘাঁটি গুলি দেখা যায় উত্তর চব্বিশ পরগনা অশোকনগরে এই রকম একটি বিমান ঘাঁটি রয়েছে। 

পিয়ারডোবা বিমান ঘাঁটি কাজ চালাচ্ছে
 মার্কিন সেনা বাহিনী 

মার্কিন সেনা বাহিনী বিমান ঘাঁটি তৈরি করেছিল বাঁকুড়া জেলায় অবস্থিত পিয়ার্দোবা অঞ্চলে। এই অঞ্চলে আসতে হয়েছিল অনেক কষ্ট করে, 1944 সালের সাত তারিখ তারা ভারতে ঢুকেছিল এবং এই বিমান ঘাঁটি তৈরি করতে তিন সপ্তাহ সময় লেগেছিল আর ভারতের আসতে সময় লেগেছিল একমাস, ফ্লোরিডা থেকে ক্যারিবিয়ান হয়ে দক্ষিণে ব্রাজিলের নাটাল পর্যন্ত ভ্রমণ। ব্রাজিল থেকে দক্ষিণ আটলান্টিক অতিক্রম করে পশ্চিম আফ্রিকায় পৌঁছানো হয় এবং মরক্কোর মারাকেশে পুনরায় একত্রিত করা হয়। এরপর দলটি করাচিতে পৌঁছানোর আগে মরক্কো থেকে উত্তর এবং পশ্চিমে উড়ে আলজেরিয়া এবং মিশর হয়ে উড়ে যায়। দলটি যখন পিয়ারডোবায় পৌঁছায় , তখন মাসব্যাপী এই ভ্রমণ বিমান এবং কর্মীদের উপর প্রভাব ফেলে। এবং এই বিমান ঘাঁটি তৈরি করেছিল B-29 বিমান জন্য এই বিমানটি ছিল সেই সময়ের বোমারু বিমানের মধ্যে অন্যতম এবং এত বড়ো ছিল যে এর একটি ডানার 141 ফুট এবং বিমানটি দুহাজার পাউন্ড বোমা নেওয়ার ক্ষমতা ছিল। মার্কিন সেনা বাহিনী বিমান ঘাঁটি মাধ্যমে বোমা হামলা চালানো যায় এবং প্রতিরক্ষা কাজে এই বিমান ঘাঁটি তৈরি করেছিল মার্কিন সেনা বাহিনী।

B-29

পিয়ারডোব বিমান ঘাঁটি তৈরি হয়েছিল B-29 বিমান এর জন্য, সেই সময় এই বিমানটি ছিল বড় এবং ভারী দূরপাল্লার বোমারু বিমানগুলির মধ্যে একটি ছিল এই B - 29. পিয়ারডোবা অঞ্চলে বিমান ঘাঁটি তৈরি করতে মার্কিন সেনা বাহিনীর কষ্টের কথা আগেই বলেছি কারণ সেই সময় পিয়ারডোব অঞ্চল ছিল জঙ্গলে ভরা। 

এই সবই পরিষ্কার করে নেয় মার্কিন সেনা 

এই বিমান ঘাঁটি তৈরি করেছিল 462d বোম্বার্ডমেন্ট গ্রুপ, এই গ্রুপের পাশে ছিল B-29 Squadrons 768th, 769th, 770th, and 771st আর ছিল Bomb Maintenance Squadrons 9th, 10th, 11th, and 12th; 13th আর ছিল 86th ফটো ল্যাব আর ছিল এয়ার সার্ভিস গ্রুপ। পরবর্তী কালে এই এই বিমান ঘাঁটি চলে যায় মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জে, তার জায়গায় আসে 33d Fighter Group. হয়তো অনেকেই ভাবছে এতো বিমান ঘাঁটি তৈরি করে লাভ কী হলো? লাভ হয়েছিল, এই বিমান ঘাঁটি এই বিমানঘাঁটি থেকেই জাপানের ইয়াওয়াতা পর্যন্ত দীর্ঘতম বোমা হামলা চালানো হয়েছিল। তবে ভারতের বা বলা ভালো পিয়ারডোবা বিমান ঘাঁটি তে পৌঁছানোর পর বিমানের ইঞ্জিনে আগুন লেগে যায়, সেই জন্য তারাতারি বিমান গুলো কে এই বিমান ঘাঁটি নামানো হয়। 

Emblem of the
462d BombardmentGroup


তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এবং ভারতের স্বাধীন হলে এই বিমান ঘাঁটি ভারতের হয়, কিন্তু এখন কথা হচ্ছে এই বিমান ঘাঁটি সত্যি এখন রয়েছে প্রশ্ন উঠতে পারে, হ্যাঁ রয়েছে তবে সেটা আর বিমান ঘাঁটি নেই। চারিদিকে চাষের জমি রয়েছে, তবে হ্যাঁ বিমানের যে রানওয়ে ছিল সেটা আছে তবে রানওয়ের অবস্থায় আর নেই রয়েছে লালমাটি, তবে এখন জায়গায়টি সরকারের হাতে রয়েছে। তবে খুব সহজেই জায়গায়টি দেখতে যাওয়া যায় না, শুনেছি বাইকি আরহিরা এই রানওয়ে বাইক চালিয়েছে। এই বিমান ঘাঁটি বারবার মনে করিয়ে দেয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা আর পশ্চিমবঙ্গের কথা।

ছবি সূত্র - Internet 

তথ্য সূত্র - https://downfromorbit.com/beneath-the-radar-the-untold-story-of-usafs-b-29-bomber-fleet-base-in-piardoba-india/

https://www.midnapore.in/arifield/piardoba-airfield.html



Comments