কলকাতার রয়েল বিল্ডিং

Royal Insurance company 

আমাদের কলকাতার অন্যতম প্রধান রাস্তা হলো ডালহৌসি, সবাই জানে এই নামে একজন ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল ছিলেন। তাই আজ ও কলকাতার এই রাস্তা নাম পাল্টে দেওয়া হলেও এখন বাস কিংবা ট্যাক্সি এখন অবশ্য ওলা ওবের চলে এসেছে এমনকি টোটো কে বললেও ঠিক এই রাস্তায় নামাবে। শুধু তো তাই নয় এই রাস্তা ধরে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল বিশাল সব অফিস, তারই মধ্যে একটি রয়েল ইন্সুরেন্স বিল্ডিং। কিন্তু এখানে জানিয়ে রাখা দরকার যে সেই সময় ভারতে বীমা কোম্পানি গুলি ছিলো ব্রিটিশ সরকার হাতে, এমনকি এই কথা বলা হয়েছে যে ব্রিটিশ ফার্ম গুলো পুরো পুরি অর্থ ব্যাবস্থা কে ডোমিনেট করতো। শুধু কী তাই ভারতীয়দের পর্যন্ত বীমা কিনতে মানা করা হয়। তবে এই কোম্পানির গুলির বীমা কিনতো ব্রিটিশরা, আসলে ব্রিটিশদের নিজেদের ইচ্ছা ছিল না যে ভারতে এসে তারা কোনো কোম্পানি খুলুক। এমনকি তাদের আরো ইচ্ছে ছিল কোনো ব্রিটিশ সেখানে পয়সা লাগাক, কারণ কলকাতার গরম, জীবন যাত্রা, জল এরফলে অনেক ইংলিশ ম্যান কে মারা যেতে হতো কলকাতার গরমে অথবা মেলেরিয়া কিংবা কলেরায়। কিন্তু তারা বীমা কোম্পানি খুলল, প্রথমে Standard Life Assurance তারপর The Oriental Assurance Company দুটোই ছিল বীমা কোম্পানি তারপর আসলো রয়েল ইন্সুরেন্স কোম্পানি বা বিল্ডিং। কিন্তু জানা যে কলকাতার বিল্ডিং টি ছিল অবস্থিত হয়েছিল 1905 সালে কিন্তু জানলে অবাক হতে হয় যে ইংল্যান্ডে 1845 সালে খুব বড় ভাবে এই কোম্পানির যাত্রা শুরু হয়। 1916 সাল নাগাদ লর্ড কারমাইকেল এই কোম্পানির ভিত্তি স্থাপন করে, এই মনোরম ভবন নির্মাণ অন্যতম ছিল এডওয়ার্ড থরটর্ন এবং উইলিয়াম ব্যঙ্কস গাইথার। এই গাইথার সাহেব আবার PWD মানে কলকাতার বিভিন্ন ভবনে ওনার মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল। 

রয়েল ইন্সুরেন্স কোম্পানি বা বিল্ডিং সেই গম্বুজ 

এই সব পরিস্থিতিতে PWD উইলিয়াম ব্যঙ্কস গাইথার কলকাতার পৌরসভা কলকাতার অন্যতম ঘড়ি যা আমরা চিনি কলকাতার পোর্ট ঘড়ি বলে চিনি এছাড়া আছে মিলিটারি স্যাকরেটিয়ট বিল্ডিং। ব্রিটিশরা নিশ্চিন্তে ছিল কারণ, রয়েল ইন্সুরেন্স বিল্ডিং কাজের নেপথ্যে ছিল জে সি ব্যানার্জি। জে সি ব্যানার্জি দায়িত্ব দিয়ে ব্রিটিশরা বিনা ঝনঝাটে ছিল কারণ তার দায়িত্বে সেই সময় কলকাতায় তৈরি হয়েছিল হংকং এবং সাংহাই ব্যাঙ্কিং করপারেশন বিল্ডিং। এই রয়েল ইন্সুরেন্স বিল্ডিং তৈরি হয়েছিল দুবছর সময়ের মধ্যে, এর কাজ মোটামুটি শেষ হয়ে ছিল 1918 সালে আর এই বিল্ডিং তৈরি হতে খরচ হয়েছিল পঞ্চাশ হাজার টাকা। এই বিল্ডিং ডালহৌসি স্কোয়ারে একটু কর্নার করে হয়ে ছিল, সেই ভাবে দেখতে বলা যায় এর অবস্থান ছিল চার্নক প্লেস ও কৈলাঘাট স্ট্রিট এর কোন করে কিন্তু জিপিও উল্টো দিকে। এই রয়েল ইন্সুরেন্স বিল্ডিং টি তৈরি হয়েছিল এডওয়ার্ডিয়ান স্টাইলে, হবে না কেনো যার নির্মাতা নামেই রয়েছে এডওয়ার্ড। এই বিল্ডিং টি লাল ও সাদা দিয়ে রং করা হয়েছে, আর সেই জন্য বিল্ডিং দারুন লাগে। জানিয়ে রাখি এখানে ও একটি গম্বুজ রয়েছে, এবং সেটা জিপিও বিল্ডিং এর গম্বুজ মতো বড়ো নয় এবং সম্পূর্ণ সাদামাটা বলা ভালো। রয়েল ইন্সুরেন্স বিল্ডিং গম্বুজ ঢুকতেই চোখে পড়ে, যদি অবস্থান বলতে হয় তাহলে বলা ভালো রয়েল ইন্সুরেন্স কোম্পানির উত্তর পূর্ব কোণে এর অবস্থান। সবচেয়ে ভালো হয় রাতের ছবি তে এই দুই গম্বুজ অবস্থান দেখলে। শুধু রয়েল ইন্সুরেন্স কোম্পানি এই বিশাল বড়ো বিল্ডিং এ চলে না, এই বিল্ডিং আরো অনেক অফিস চলে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি কানাড যেটি 1887 সালে এখানে এসেছিল এছাড়া রয়েছে স্যান্ডারসন অ্যান্ড মরগান এবং আরো অনেক কোম্পানি রয়েছে এই বিল্ডিং এ 

ঐ বিল্ডিং কিছু অংশের ছবি 

এই রয়েল ইন্সুরেন্স কোম্পানী বিল্ডিং আরো অনেক ব্রাঞ্চ আছে বলে জানা যায়, শুধু মাত্র কলকাতায় না অনেক দেশে। যেমন বলা যায় যে লিভারপুল এই কোম্পানির একটি ব্রাঞ্চ আছে তবে সেই ব্রাঞ্চ অবস্থা নাকি খুব খারাপ বলে শোনা যায়, এমনকি এও শোনা যায় যে ওই ব্রাঞ্চটি নাকি রেস্টুরেন্ট হিসেবে বিক্রি হবে। তবে উপরুক্ত যেই বিল্ডিং রয়েছে সেগুলো সবকটির আর্কিটেক্ট হলো উইলিয়াম ব্যঙ্কস গাইথার তিনি ইংল্যান্ডের রকির দ্য টমসন ইন্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাস করেন। কিন্তু তার মৃত্যু হয় শীলং এ 1910 সালের জুন মাসের 29 তারিখে টাইমস পত্রিকায় ছাপা হয়।

কতো কিছুই করে গেছে এই সাহেব তবে এখনো রয়েল ইন্সুরেন্স কোম্পানি কথা ধরেই তাকে মনে করে কলকাতা। 

ছবি সূত্র - internet অনেক ছবি পাইনি 

তথ্য সূত্র - internet এবং বিভিন্ন পত্রিকা 

Comments