কলকাতায় আছে আয়নার নামে রাস্তা!

The Indian Mirror সংবাদপত্র 

কলকাতার অনেক বিখ্যাত রাস্তা রয়েছে, তার মধ্যে আছে ওলি গলি আরো অনেক কিছু। কিন্তু কয়েকটি বিখ্যাত রাস্তার নাম এখনো অজানা থেকে গেছে, সেগুলো অন্যতম হলো পুতুরেতলা লেন। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজি পরেও এই যায়গায়টির নাম এরম কেন সেটা আর জানতে পারলাম না। তবে অবশ্য এখন এই জায়গাটির নাম পাল্টে হয়েছে "তালতলা"

কিন্তু একটা জিনিস খুব কমোন সেইটা হল "দ্য ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিট" এই নাম কিন্তু খুবই স্পষ্ট, কিন্তু ভালোর যোগ্য হয়ে উঠেছে। ভাবছিলাম একবার ওখানে কাউকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে হয় "আচ্ছা মশাই একটু বলুন তো এই জায়গাটা কোথায়" মনে ভাবনা আপাতত মনেই রাখলাম। এবার আসল গল্পে ফেরা যাক, জানা যায় 1861 সালের আগস্টের প্রথম দিনে মনমোহন ঘোষের দ্বারা শুরু হয়। 1861 সালে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৃষ্টপোষকতায় কেশব চন্দ্র সেন দ্য ইন্ডায়ান মিররের পাক্ষিক পত্রিকা শুরু করেন। এখানে বলে রাখা দরকার যে এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন ব্যারিস্টার মোনমহন ঘোষ, তবে এর উল্টো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় P. T Nayar বইতে এখানে বলা হয়েছে ব্যারিস্টার মোনমহন ঘোষ ও মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এই পত্রিকার চালিয়ে নিয়ে গেছিলেন এবং কেশব চন্দ্র সেন ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছাত্র হয়তো ব্রাক্ষ্ম সমাজের বড় কিছু এবং পরবর্তীতে তিনি এই পত্রিকার অন্যতম সহযোগী হয়ে ওঠেন। P T Nayar এর বইতে লেখা রয়েছে পরবর্তীতে জানা যায় কেশব চন্দ্র সেন ইন্ডায়ান মিররের কে ভাগ করে নেয়। কেশব চন্দ্র সেন এর এই পত্রিকার বের হতো রোজ, মানে 1870 অব্দি। এই পত্রিকাটি  দাঁড়িয়ে গেছিল একটি দৈনিক পত্রিকায় এবং এই পত্রিকাটি পঞ্চানন নম্বর ক্রিক রো থেকে রোজ প্রকাশিত হতো আর 1912 সাল অবধি এর দাম ছিলো দুই আনা। এই কথা গুলো সহ আরো কিছু কথা রয়েছে P T Nayar বইতে। সেই ক্ষেত্রে বলা খুব সম্ভব নয় যে কখন আলাদা হয়েছে কী হয়নি! 

কেশব চন্দ্র সেন 

1863 সালে কেশব চন্দ্র সেন কে পাক্ষিক পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে বাছাই করা হয়। যেহেতু তিনি এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তিনি 1867 সাল অবধি, এই পত্রিকার সম্পাদক ভার সামলানোর পর তিনি। এরপর তিনি ব্রাহ্ম সমাজের নেতা প্রতাপ মজুমদারকে তিনি এই পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেন এবং প্রতাপ মজুমদার 1879 সাল অবধি তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন, পরবর্তীতে সেন মশাই আবার দ্য ইন্ডিয়ান মিররে ফিরে আসেন। তবে এই সেন কিন্তু কেশব চন্দ্র সেন সেন নন ইনি হলেন নরেন্দ্রনাথ সেন। 

নরেন্দ্রনাথ সেন 


এই নরেন্দ্রনাথ সেন এই পত্রিকার সঙ্গে অনেক দিন যুক্ত ছিলেন। এই নরেন্দ্রনাথ সেন কে পাক্ষিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল পত্রিকার সম্পাদক এর, সেই কথা Nayar বইতে উল্লেখ নেই। হয়তো কোনো অজানা কারণে বা ওনার কাছে তথ্য অভাবের জন্য এই রকম ঘটনা ঘটেছিল। নরেন্দ্রনাথ সেন রবিবার দিন একটি বিশেষ সংখ্যা রাখতেন, এই সংখ্যা বিষয় বস্তু ছিল বিভিন্ন ধর্মীয় আলোচনা আর এই সংখ্যা সম্পাদক ছিলেন বাবু কৃষ্ণ বিহারী সেন। এবার একটু নরেন্দ্রনাথ সেন কে স্মরণে আনতে হবে, বলা হয় ইনি ছিলেন একজন লিবারাল হিন্দু, শুধু তাই নয় অন্যান্য ধর্মের সম্পর্কে জানতে তিনি খুব ভালবাসতেন। সেন মশাই এর বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে খুব ইচ্ছে ছিল। ( হয়তো কিছু সেই সময় জানতে পেরেছিলেন )

জানা যায় নরেন্দ্রনাথ মশাই প্রতিষ্টা করে ছিলেন Theosophical Society of Bengal. এখানে জানিয়ে দেওয়া দরকার নেই যে নরেন্দ্রনাথ সেন যেই বাড়িতে থাকতেন তার নাম ছিল আর্যকুটির। 

আর্য কুটির 

1855 সালে বস্টনের রেভানেল্ড চালস ডাল ব্রাহ্মদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং কেশব চন্দ্র সেন এর সাথে যোগাযোগ করেন। আর জানা যায় যে কেশব চন্দ্র সেন একটি স্কুল তৈরি করেন ছেলেদের জন্য এবং সেটা ছিল তার বাড়ির মধ্যে। এরপর অনেক জল বয়ে যায় গঙ্গা থেকে,

সেই সিংহ 

 1947 সালে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে এর কয়েক বছর পর 1951 সালে বঙ্গীয় সাহা সমিতি সম্পত্তি কিনে নেয় পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা খরচ এবং হোস্টেল বানায়। এখনো নাকি ধর্মতলা পাশে তারাতলা অ্যাভিনিউয়ে খিলান যুক্ত গেটটি দেখা যায়, 

সেই মার্বেল পাথরের মলক

যার উপের রাজকীয় সিংহের মূর্তি দেখা যায়। পরবর্তীতে কলকাতা কর্পোরেশনের এই জায়গাটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করে এবং অধ্যাপক হিরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় 2001 সালের পয়লা জুলাই দ্য ইন্ডিয়ান মিররে সম্পাদক নরেন্দ্রনাথ সেন কে সম্মান দেখিয়ে তার নামে ঐ এলাকায় একটি মার্বেল পাথরের ফলক উন্মোচন করেন। এই গেটটি কে বলা হয় "বাঘওয়ালা বাড়ি" 

এখনো রয়েছে এই গেট এবং ধুলো বিছানো কলকাতার স্মৃতি।

ছবি সূত্র - internet 

তথ্য সূত্র - P T Nayar,

https://www.getbengal.com/details/the-mecca-of-journalism-lies-in-neglect

Comments