বারান্দায় রোদ্দুর এখন আর আসে না!

 

বারান্দা


এর আগে কলকাতার খড়খড়ি যুক্ত জানালার কথা জানিয়েছিলা, আজকে ও ওরকম কিছুর গল্প বলার ইচ্ছে রয়েছে। আজকে বলি কলকাতা বিভিন্ন বারান্দার কথা, এখন তো কলকাতার ইটের জঙ্গলে এবং এসি জন্য বারান্দা তো দেখাই যায় না। দুকামারর ফ্ল্যাট বাড়িতে আর আরম কেদারায় বসাই যায় না। কিন্তু কলকাতার কিছু যায়গায় এখনো সেই প্রাচীন আমলের বারান্দা দেখা যায়, অনেকেই বলে সেই জায়গা টি হলো উত্তর কলকাতা। এতক্ষন ধরে যে বারান্দা বলছি কিন্তু এই বারান্দা শব্দ আসলে বাংলা শব্দ? না এটি বাংলা শব্দ না। এই বারান্দা শব্দটি এসেছে পর্তুগিজ শব্দ ভেরান্দা থেকে, আসলে আমাদের বাংলায় তো কম বিদেশি আসেনি, এসেছে এবং উপনিবেশ তৈরি করছে। আর তার ফলস্বরূপ ওদের শব্দ আমাদের শব্দে ঢুকে পড়েছে আর এভাবেই অনেক পর্তুগিজ শব্দ যেমন ভেরান্দা, জানালা আমাদের বাংলার শব্দের ঢুকে পড়েছে।

তবে আমাদের বাংলায় বারান্দার আসল শব্দ হলো "অলিন্দ" আক্ষরিক অর্থে অলিন্দ দেখতে গেলে কোনো রাজবাড়িতে দেখা সম্ভব। তবে বেশিরভাগ মানুষ জানিয়েছেন যে ব্রিটিশ আমলে কলকাতার বাড়িগুলোর স্থাপত্য শিল্পের দারুণ কাজ দেখা যায়, যদি আলাদা করে বলতে হয় তাহলে বারান্দার রেলিং গুলি চোঁখ কেড়েছে। এখানে বলে রাখা দরকার যে তৎকালীন ক্যালকাটা ছিল ওয়াইট টাউন এবং ব্ল্যাক টাউনে মধ্যে বিভক্ত। বলাই বাহুল্য যে ওয়াইট টাউন বারান্দা গুলি হবে অনেক বেশি শৈল্পিক এবং কারুকার্য ভরা, কিন্তু ব্ল্যাক টাউনের বারান্দার রেলিং গুলিও চোখে পড়ার মতোই। ব্রিটিশ আমল এবং তার পরবর্তী কালে কলকাতার বাড়ির বারান্দা রেলিং গুলি তৈরি হতো cast iron বা ঢালাই লোহা ব্যবহার করে ইউরোপে ১৮৪০; এবং ৫০ এর দশকে এই লোহার ব্যবহার খুবই ভালো ভাবে শুরু হয়, এখানে বলে রাখা দরকার তখন কিন্তু ভারতের পরাধীন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রাজত্ব কায়েম করছে এবং তাদের মাধ্যমে ভারত cast iron ব্যবহার শুরু হয় ভারতে। ঢালাই লোহাতে কার্বনের পরিমাণ ২% থেকে ৪% পর্যন্ত বেশি।

Cast iron এর কাজ 


 জানা যায় সেই সময়ে ইট আসতো মার্টিন বার্ন কোম্পানি থেকে আর সেগুন কাঠের দরজা ও জানালার ফ্রেম আসতো বর্মা থেকে, ওয়াইট টাউন তো বটেই ধরে নেওয়া যেতেই পারে যে কলকাতার তৎকালীন বড়লোক ( এখানে নেটিভ বড়লোক দের বোঝানো হয়েছে ) বাড়ি গুলো তে সম্ভবত এগুলো লাগানো হতো। জানা যায় যে সেই সময় ইউরোপ থেকে বারান্দা গ্রিল তৈরির জন্য কলকাতা ইউরোপীয় কারিগরদের আমদানি করা হয়। বড়লোক বা বলা ভালো অভিযাত দের বাড়ির বারান্দার গ্রিলে ছড়িয়ে পড়েছিল গ্রীক কলসি অথবা মুকুট কিংবা জলপাই পাতা, কোনো কোনো বারান্দার গ্রিলে আবার তিনটি লৌহশিল্প দেখা যেত। আরব এদ্রিসির বলেছেন যে "হিন্দুরা লোহা তৈরিতে পারদর্শী ছিল এবং হিন্দুওয়ানি বা ভারতীয় ইস্পাতের চেয়েও বেশি কিছু খুঁজে পাওয়া অসম্ভব"। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো স্টার থিয়েটারের বর্তমানের বিনোদিনি থিয়েটারের গ্রিল।

বিনোদিনী থিয়েটার


 জানা যায় এখনো অনেক বাড়ি নিচ থেকে উপর পর্যন্ত এই ধরনের লৌহশিল্প দেখা যায়, তবে এই কাঠের খোদাইয়ের উপর ঢালাই করা হয়েছিল। আসল শিল্পকর্ম লোহার কাজ নয়, বরং কাঠের খোদাইয়ের কাজ, যেখানে গলিত লোহা ঢেলে শক্ত করে মাস্টারপিসে পরিণত করা হয়। ঢালাই লোহা এবং পেটা লোহার কাজের মধ্যে একটা স্পষ্ট পার্থক্য আছে যা একই সাথে ঢালাই লোহা এবং পেটা লোহা উভয়ের কাজ সহ ব্যালাস্ট্রেড দেখলে বোঝা যায়।

ব্যালাস্ট্রেড


 পেটা লোহার কাজে সূক্ষ্মতার অভাব থাকে এবং কখনও পেটা লোহার কাছাকাছিও যায় না। নিরাপত্তার জন্য, অনেকেই পেটা লোহা এবং পেটা লোহা একসাথে ব্যবহার করছেন। কলকাতার অনেক বারান্দায় বালাস্ট্রেড কাজ দেখা যায় অনেক সময় ঢালাই লোহা দিয়ে তৈরি হয় বালাস্ট্রেড, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই বালাস্ট্রেড তৈরি হয় পাথরের।

তবে একটু ধারনা দিয়ে রাখা দরকার বালাস্ট্রেড ব্যাপারে, বালাস্ট্রেড দেখতে অনেকটা ফুলদানি মতো, আর যার উপর রেলিং থাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বারান্দা বা ছাদের রেলিং হিসেবে ব্যবহার হয়। এই রকম গ্রিল যুক্ত বারান্দা অনেক কলকাতার অনেক ঝড় জলের সাক্ষী হিসাবে দাড়ি আছে, কিছু দিন আগে ভয়াবহ ঘুর্নিঝড় আমফানের সাক্ষী রয়েছে। 

ছবি সূত্র - internet 

তথ্য সূত্র - https://calcuttawalks.wordpress.com/2020/08/23/for-the-love-of-balconies/

https://pedantictraveler.blogspot.com/2010/03/poetry-in-iron-charm-of-old-kolkata.html

Comments