ভারত তথা বাংলার প্রথম সংবাদপত্র নাম কী ?

James augustus hicky

 

Calcutta বা কলকাতা ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কেরানি বা রাইটার দের স্বপ্নের শহর। যদি এখন বিশেষ করে ভারত থেকে কিছু নিয়ে গিয়ে যদি ইংল্যান্ড এ কিছু করে নেওয়া যায়! আর এখানেই আসে জেমস্ আগস্টাস হিকির কথা। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন ভারত তথা বাংলার ( তবে তিনি বাংলায় কোনো খবরের কাগজ প্রকাশ করেন নি ) সংসদপত্রের যদি কাউকে বলতে তাহলে সেটা ইনি! জানা যায় হিকি ভারতে এসেছিলেন 1772 সালের এপ্রিল মাসের 4 তারিখে। প্রথমেই যেই লাইনটির কথা উল্লেখ করে ছিলাম ঠিক সেই স্বপ্ন নিয়ে ভারতে এসেছিলেন জেমস আগস্টাস হিকি, তিনি চেয়েছিলেন রাইটার্সদের থেকে বেশি কিছু অর্জন করতে। জুতো সেলাই থেকে চন্ডী পাঠ কলকাতায় এসে সব কিছুই করেছেন এই জেমস হিকি। 

একটু দাঁড়ান 

**শুভম দাসের মস্তিষ্ক অস্ত্রোপচারের জন্য তহবিল সংগ্রহে সাহায্য করুন**  

আমাদের অত্যন্ত কাছের বন্ধু শুভম দাস, বর্তমানে গুরুতর মস্তিষ্কজনিত সমস্যার সম্মুখীন এবং জরুরি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। চিকিৎসকের মতে, অস্ত্রোপচারের আনুমানিক ব্যয় *১১ লাখ টাকা*, যা তার পরিবারের পক্ষে বহন করা অসম্ভব।  

আপনার সাহায্যই পারে শুভমের জীবনের আশার আলো হয়ে উঠতে। অনুগ্রহ করে আপনাদের সাধ্যমত যেকোনো পরিমাণ অর্থ দিয়ে সাহায্য করুন এবং এই বার্তাটি আপনার বন্ধু এবং পরিবারের মধ্যে ছড়িয়ে দিন।

আপনার সামান্য অনুদান শুভমের জীবনে আশীর্বাদ সমতুল্য । আপনাদের একান্ত সহযোগিতা কাম্য ।

যদি সাহায্য করেন তাহলে খুব উপকার হয় 


প্রথমে কলকাতা এসে ব্ল্যাক টাউন ঢোকেন হিকি সাহেব, শোনা যায় ব্ল্যাক টাউনে ডাক্তার হিসাবে কাজ করেছেন হিকি সাহেব, কাউর ফোঁড়া ফাটা না কিংবা এই সব ডাক্তারি করতেন হিকি সাহেব। এই রকম করে ডাক্তার হিসাবে পসার জমিয়ে তিনি জাহাজ কিনলেন, এখানে বলে রাখা ভালো যে হিকি সাহেব কিন্তু মোটেই খবরের কাগজ প্রকাশ করার জন্য কলকাতা এসেছিলেন না, তিনি চেয়েছিলেন ক্যালকাটা তৎকালীন ভারতের রাজধানী তে ভালো ব্যবসা করতে। তিনি দুটি জাহাজ করার জন্য কিনেছিলেন, আমদানি রপ্তানির ব্যবসা। তার সেই জাহাজ দুটি তিনি পাঠালেন মালপত্র ভর্তি করে তৎকালীন মাদ্রাজ এখনকার চেন্নাই এ। কিন্তু হিকি সাহেব এর ভাগ্য ছিল খারাপ, কিংবা তার ভাগ্যে লেখা ছিল ভারতের প্রথম খবরের কাগজের সম্পাদক হওয়া। সে যাইহোক চেন্নাই যাওয়ার পথে তার জাহাজের মালপত্র গেল নষ্ট হয়ে কারণ ঝড় বৃষ্টি। এর ফলে দেনার দায়ে ডুবে গেল হিকি সাহেব, নিজের বাড় ছিল আর কিছু ছিল সব বিক্রি করেও দেনা তার চুকাতে পারলেন না হিকি সাহেব, ব্যাস মামলা দায়ের হলো তার নামে। এক তো টাকা নেই অন্যদিকে যাও বা উকিল রাখলেন কেস লড়ার জন্য, তার সাথেই করলেন ঝগড়া, উকিল দিলেন কেস ছেড়ে আবার অনেকে বলেন হিকি সাহেব নিজেই নাকি উকিল কে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। সে যাইহোক হিকি সাহেব নিজেই লড়লেন কেস! কিন্তু জেল হলো হিকি সাহেবের। কিন্তু কে জানত হিকি সাহেবের এই জেল যাত্রা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। সেই সময় ব্রিটিশ শংসধনাগারে বা জেলের নিয়ম ছিল বন্দি নিজের খরচ নিজেকেই নিতে হবে, হিকি সাহেব ঠিক করলেন তার শেষ সবকিছু বিক্রি করে দেবেন, বাড়ির যা ছিল তার তো বিক্রি করলেন আর দুহাজার টাকা জমানো ছিল তার এক বন্ধুর কাছে, সেই টাকা নেই এই আইরিস ম্যান কারাগারে মধ্যে টাইপ কিনলেন এবং তার সাথে জেলের মধ্যেই টাইপিং প্রেস তৈরি করলেন। হিকি সাহেবের টাইপিং প্রেস চলতো সকাল থেকে মাঝ রাত অবধি। জেলের মধ্যেই আস্তে আস্তে হিকি সাহেবের টাইপিং প্রেস এর ব্যবসা বেশ ভালো ভাবাই চলতে শুরু করে দেয়। এমতাবস্থায় হিকি সাহেব ছাড়া পেলেন দেনার মামলা থেকে, অবশ্য তাকে সাহায্য করেছিল এক ব্রিটিশ উকিল। ছাড়া পেয়ে হিকি সাহেব তার ছাপাখানা ব্যবসা আরো বাড়িয়ে নিয়ে যায়। এক ইংরেজ সেনাবাহিনীর একবড় কর্তা হিকি কে একটি বড় অর্ডার দিলেন, সেই অর্ডার টি হলো সেই সময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সব সংশোধিত নিয়মকানুন ছাপার কাজ। তার আগে অবশ্য হিকি সাহেব হ্যান্ডবিল, বিজ্ঞাপন, দলিল, দিনপঞ্জি, বিমার ফর্ম ছাপাতেন। কিন্তু হিকি সাহেবের ছাপাখানার কম্পিটিশন ছিল! ওয়ারেন হেস্টিংস এর দুই বন্ধু মিলে ছাপাখানা খুলেছিলেন তাদের কেই ছাপাখানা জন্য দলিল পত্র দিতেন। কিন্তু শোনা যায় হিকি সাহেবের ছাপাখানা থেকে নাকি ব্রিটিশ সেনাবাহিনী কর্মীদের ভাঙিয়ে নিতেন, শুধু তাই নয় হিকি সাহেবের বিভিন্ন বিল ও আটকে দিত ব্রিটিশ সরকার। এবার হিকি সাহেব ঠিক করলেন খবরের কাগজ প্রকাশ করবেন তার ছাপাখানা থেকে, এখানে বলে রাখা দরকার যে সেই সময় হিকি সাহেবের ছাপাখানা ছিল ৬৭ নম্বর রাজাবাজার এলাকায়। প্রথম থেকেই হিকিস গেজেট ব্রিটিশ বিরোধী কথাই বলতো, আর ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে ছিল হিকিস গেজেট।

হিকির গেজেটের সংবাদ পত্র


 হিকির গেজেট এ ব্রিটিশ সরকারি কর্মচারীরা চিঠি লিখে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করতেন। যেমন হিকির বেঙ্গল গেজেট একটি খবরে প্রকাশ হয়েছে "যে যারা না লড়ে ফিরে গেল তারা পুরষ্কার পেল আর আমরা শুকোচ্ছি" আরো একটি খবরে বলছে "যাদের চেনাশোনা আছে তাদের প্রমোশন হচ্ছে আমার বারো চোদ্দো বছর মরছি"। হিকি সাহেবের হিকিস বেঙ্গল গেজেট এর পাতার সংখ্যা ছিল চার আর দাম ছিল এক টাকা। এই খবরের কাগজ ব্রিটিশ থেকে বাঙালি তথা ভারতীয়রা। হিকির খবরের কাগজে ব্রিটিশ বিরোধী তার পাশাপাশি সেই সময় কলকাতার বিভিন্ন ঘটনা যায়গা পেত। হিকি সাহেব ছিলেন জিনি বারবার ভারতের হয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন তার খবরের কাগজ হিকিস বেঙ্গল গেজেট এ, একটি খবরে হিকি সাহেব জানাচ্ছেন ব্রিটিশ রাজত্বে সব নাগরিক কী সমান বিচার পাবে ? আবার হিকি তার খবরের কাগজ জানাচ্ছেন যে কলকাতার উন্নতির জন্য 14% কর বসানোর অধিকার কী আছে?, হিকি সাহেব তার কাগজে ফাঁস করে দিয়েছিলেন যে ওয়ারেন হেস্টিংস যেমন চিঠি জ্বাল করছে তেমনি নন্দকুমার ও চিঠি জ্বাল করেছিল কিন্তু ফাঁসি তে ঝুলতে হলো নন্দ কুমার কে !

মহারাজা নন্দকুমার 


 আসলে এই সব খবরের কারণে ব্রিটিশ সরকার এর মুখ পুড়ছিল সারা বিশ্বের কাছে। ওয়ারেন হেস্টিংস এই সব দেখে হিকির কাগজ বন্ধ করার নির্দেশ দিলেন হলো ও তাই। হিকি সাহেবের গবেষক অ্যান্ড্রু ওটিস জানিয়েছেন যে হিকি সাহেব এই ঘটনার পর হেস্টিংস বিরুদ্ধে 44টি আর্টিকেল লেখেন। এই সবকিছুর প্রমাণ দিয়েছিলেন হিকি সাহেব তার কাগজে। হিকি সাহেব যে তৎকালীন গভর্নর জেনারেল হেস্টিংস বিরুদ্ধে এতো কিছু লিখছেন কিন্তু, হেস্টিংস হিকির বিরুদ্ধে জোড়ালোভাবে কিছু করতে পারছেন না, কারণ তৎকালীন ব্রিটিশ কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন ফিলিপ ফ্রান্সিস।

ওয়ারেন হেস্টিংস 


 হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন যার সঙ্গে ডুয়েল হয়েছিল ওয়ারেন হেস্টিংসের, কলকাতায় এখন সেই জায়গাটির নাম ডুয়েল এভুনিউ। কিন্তু 1781 সালে ফ্রান্সিস সাহেব চলে গেলেন ইংল্যান্ডে, ব্যাস হাতে চাঁদ পেল হেস্টিংস! ঠিক ঐ বছরই হেস্টিংস হিকি সাহেব কে অ্যারেস্ট করলেন, তার বিরুদ্ধে হেস্টিংস মামলা করলেন মানহানির এবং আরো অনেক মামলা দায়ের হলো হিকি সাহেবের বিরুদ্ধে, সেই সময় যেই সব সাহেবদের বিরুদ্ধে হিকি সাহেব তার কাগজে সরব হয়েছিল তারা সবাই হেস্টিংস এর পাশে এসে দাঁড়ালেন। ব্যাস সব কিছুই হিকি সাহেবের বিরুদ্ধে গেল। আবার জেলে যেত হলো হিকি কে। এর পর অবশ্য জেল থেকে হিকি তার খবরের কাগজ চালালেন কিন্তু হেস্টিংস যে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিলেন সেই ক্ষতিপূরণ হিকি সাহেবের দেওয়া ক্ষমতা ছিল না, অবশেষে হিকির ছাপাখানা নিলামে উঠলো বন্ধ হলো কলকাতার প্রথম খবরের কাগজ, সালটি ছিল 1783 আর তারিখ ছিল 10 এপ্রিল। জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিল জেমস আগস্টাস হিকি, কিন্তু তখন তার সব শেষ, হিকি ঠিক করলেন চীনে যাবেন, চীন যাওয়ার জাহাজে উঠলেন হিকি কিন্তু মাঝ রাস্তায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন জেমস আগস্টাস হিকি। সাল টা জানা যায় সেটা ছিল 1802 কিন্তু তারিখ জানা যায় না। মাঝ সমুদ্রে হিকির দেহ ভাসিয়ে দেওয়া হলো। ইতিহাসবিদ পার্থ চ্যাটার্জি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে হিকির "বৃহত্তর তাৎপর্য রয়েছে: উভয়ই ইঙ্গিত করে যে তিনিই ভারতে প্রথম যিনি প্রকাশ্যে দাবি করেছিলেন যে ব্রিটিশ প্রজাদের অবিচ্ছেদ্য অধিকার রয়েছে, এবং তিনিই ভারতে প্রথম যিনি ব্রিটিশ শাসনের সমালোচনা করার জন্য একটি পাবলিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছিলেন।" হিকি সাহেব যখন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তার খবরের কাগজ প্রকাশ করছিল অন্যদিকে আরো সব সংবাদপত্র ব্রিটিশ সরকারের জিহুজুরি করতো এখনকার সময় হলে তাদেরও হয়তো একটা নাম থাকতো। এখন কলকাতা তথা ভারতবর্ষ হিকিস বেঙ্গল গেজেট কে মনে রেখেছে। 

ছবি সূত্র - internet 

তথ্য সূত্র - https://www.getbengal.com/details/james-augustus-hicky-the-british-of-calcutta-who-spoke-against-imperial-rule

https://blogs.eisamay.indiatimes.com/gautambasumullick/james-augustus-hickey-a-tortured-journalist-part-1/

https://historicalleftovers.wordpress.com/2020/08/15/%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%AE%E0%A6%B8-%E0%A6%85%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B8-%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BF/

https://indianexpress.com/article/explained/explained-history/world-press-freedom-day-india-first-newspaper-9306034/

Comments