কলকাতার কলোসিয়াম Gillander House

Gillander House

 

কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় বিশেষ করে ক্লাইভ স্ট্রিটে, অনেক বিল্ডিং রয়েছে যেগুলো হেরিটেজ হিসেবে বিবেচনা করা যেতেই পারে। এইসব বিল্ডিং এর মধ্যে অন্যতম হলো গিলিন্ডার হাউস। কলকাতার এই স্থাপত্য কে ব্যক্তিগত ভাবে আমার রোমের কলোসিয়ামের কথা মনে পড়ে যায়। আমার তো মনে হয় কলকাতার কলোসিয়াম বলাই ভালো। 1819 সাল নাগাদ আরবুথন্ট অ্যান্ড কোম্পানি তাদের ব্যবসা করতে কলকাতায় এসেছিলেন এবং এই বাড়িটি তৈরি করেছিলেন।

এই বাড়িটির সামনের দিকটা অর্ধচন্দ্রাকৃতি, ঠিক হয়েছিল একজন ম্যানেজিং এজেন্ট থাকবে কলকাতায়, যে এখানে থেকে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করবে। প্রথম দিকে এই কোম্পানিট একটি পার্টনারশিপ কোম্পানি হিসেবে গড়ে উঠেছিল, এই কোম্পানিটির দুই পার্টনারের হলেন F.M. Gillanders এবং G.C. Arbuthnot. তবে সেই সময় ভারতে একটি কোম্পানি আইন ছিল সেটা হলো Indian Companies Act VII 1913. পরবর্তী কালে 1935 সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি এটি একটি লিমিটেড কোম্পানিত পরিণত হয়। ধারণা করা যেতে পারে Indian Companies Act VII 1913 পাস করতে হতো যেকোনো নতুন কোম্পানিকে। সেই সময় এইখানে বড় বড় কোম্পানির অফিস ছিল, যেমন ক্যামিকাল, চা, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আরো বড় বড় কোম্পানির অফিস। বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্সের খুব কম প্রতিষ্ঠাটের মধ্যে এই স্থাপত্য যা কী না এখন একই নামে কাজ করে চলেছে। এই বাড়িটি তৈরি হয় 1909 সালে আর এই বাড়িটি ডিসাইন করেছিলেন ব্রিটিশ স্থপতি হ্যারি স্টুয়ার্ট গুডহার্ট-রেন্ডেল দ্বারা ডিজাইন করা হয়েছিল, যিনি একজন প্রকৌশলী হওয়ার পাশাপাশি একজন সুরকার ছিলেন। 

হ্যারি স্টুয়ার্ট গুডহার্ট-রেন্ডেল

শোনা যায় তিনি যখন ট্রিনিটি কলেজে সঙ্গীত অধ্যয়নরত ছিলেন তখন জিলান্ডার হাউস ডিজাইন করতে বলা হয়েছিল, যা সম্ভবত ব্যাখ্যা করবে কেন তিনি এমন একটি অনন্য এবং আইকনোক্লাস্টিক ডিজাইন নিয়ে এসেছেন। আগেই বলেছি এই স্থাপত্য টির সামনে দিক আধা খানা চাঁদ, এই বাড়িটি কিন্তু চারতলা এবং এই বাড়িটিতে রয়েছে দুটি টাওয়ার যা এই স্থাপত্য টি কে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এই আধখানা বিল্ডিং টি কে দুটি টাওয়ারের মাধ্যমে দিয়ে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। দুটি টাওয়ারি গম্বুজ আকৃতির এবং দুটি টাওয়ার ই সামনে অর্ধচন্দ্রাকৃতি স্থাপত্যের সামনের দিকে দেখা যাওয়ায় অনেক সময় মনে কোনো এক রাজার মুকুট।

Gillander House দুটি পিলার 

 গম্বুজ যুক্ত টাওয়ার গুলি সোজা এবং এর জানালা গুলি আয়তকার এবং কারুকাজ বিহীন। কিন্তু জানালার কাঁচ গুলি ছিল মাছের আঁশের আকৃতি, এবং ধারণা করা যেতেই পারে কাঁচ লাল নীল হলুদ রঙের ছিল কারণ সেই সময় এইরকম কাঁচে ব্যবহার দেখা যেত বিভিন্ন বিল্ডিং এ আর এই বাড়িটি জানালা গুলি ছিল সীসার তৈরি।


 এই বাড়িটির আরো একটি বিশেষ অংশ হলো বাড়িটির গেট, এই বিল্ডিং ঢুকতে গেলে এই গেট দিয়ে ঢুকতে হয়,গেটটি কালো রঙের এবং গেটটির মধ্যে দুটি ঢাল রয়েছে এবং সেই ঢালে দুটি সিংহের মাথা ঢালাই করে লাগানো হয়েছে উল্লেখ্য যে গেটিটি পুরো মেটেলের তৈরি। 

সেই গেট 

কাছ থেকে 

ভবনটির প্রবেশ পথে শোনা যায় মার্বেল পাথরের জাল বা বলা ভালো latticework রয়েছে এবং সেগুলোকে ধরে রেখেছে স্কোয়াট পিলার। এই বাড়িটি আরো একটি সৌন্দর্য হলো নিচতলার জানালার খিলানের বা কার্নিশ উপর দুটি হাতি শুঁড় তুলে দাঁড়িয়ে আছে, মানে মনে হচ্ছে যেন যারা যারা এই ভবনটিতে আসছে তাঁদের welcome জানাচ্ছে এবং এই জানালার উপরে latticework রয়েছে। এবং হাতি গুলো কিন্তু পাথরের, এই ভবনটিতে প্রচুর পরিমাণে পাথরের ব্যবহার দেখা যায়, বিশেষ করে বাইরের দিকে। 

সেই জানালা এবং হাতি 

এই ভবনটিতে আশে পাশে অনেক বড় বড় ভবন রয়েছে কিন্তু এই Gillanders House এর এমনি মহিমা যে এই রাস্তা দিয়ে যেতে হলে এই ভবনটির উপরে চোখ সবার আগে পড়বে। ষাটের দশকে Gillanders, Arbuthnot & Co কোথারি গ্রুপ অফ কোম্পানির একটি অংশ হয়ে ওঠে, যার নেতৃত্বে ছিলেন এ কে কোঠারি। আগের মতো এখন আর নেই এই ভবনটির উপরে উজ্জ্বল আধুনিক অফিস রয়েছে। শোনা যায় 2014 সালে নাকি এখানে আগুন লেগেছে ছিল কিন্তু বিশেষ কোনো ক্ষতি হয়নি এই ভবনটির। একশো বছর পরেও Gillanders House এখনো দাঁড়িয়ে আছে আমাদের শহর কলকাতার বুকে, উত্থান পতনের সাক্ষী হয়ে আছে এই বিখ্যাত ভবনটি।

ছবি সূত্র - internet 

তথ্য সূত্র - https://www.tutorialathome.in/heritage-commercial-buildings/gillander-house


http://double-dolphin.blogspot.com/2015/03/gillander-house-clive-street.html

Comments