ভারতের প্রথম তৈরি ক্রিসমাস কেক

 

প্লাম কেক

ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি চলে এসেছে, ঠান্ডা পড়েছে তবে অতবেশি না। এইরকম ঠান্ডায় কে কলকাতার বাইরে বলে "গুলাবি ঠান্ড" আর কিছুদিন পরেই চলে আসবে পঁচিশে ডিসেম্বর যিশুর জন্মদিন, এখন অবশ্য নতুন নাম হয়েছে যিশু পুজো। কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে ঐ দিন লোকে লোকারণ্য দুর্গাপুজোর মতো ভিড় খালি দেখা যায় লোকের মাথা। এই সময় কলকাতার তথা ভারতবর্ষের বিভিন্ন যায়গায় কেক বিক্রি হয়, তবে পুরনো দিনে কিন্তু আজকালকার মতো ক্রিম কেক বিক্রি হতো না। সেই সময় তৈরি হতো প্লাম কেক। তবে এটি ক্রিসমাস কেক হিসাবে বেশি পরিচিত ছিল। যখন ব্রিটিশরা ভারতে জাঁকিয়ে বসেছিল তখন তো আর ক্রিসমাস সাহেবরা ভারতেই পালন করতো, যার ফলে ভারতে তৈরি হতো ক্রিসমাস কেক। তবে ভারতে ক্রিসমাস কেক তৈরি করেছিলেন মাম্বলি বাপু, এই মাম্বালি বাপু মশাই ছিলেন কেরলের একটি বিস্কুট কোম্পানির তবে কোম্পানি না বলে বিস্কুট বেকারির মালিক বলা ভালো। 

মাম্বালির বাপুর বেকারি


সেই সময় মাম্বলি মশাই এর বেকারি ছিল উত্তর কেরালার তেলিচার বর্তমানের থ্যালাসেরিতে। তখন বছরটি ছিল 1880 মাম্বলি তার সাধের একটি বেকারি বানিয়ে ছিলেন তার প্রথম নাম ছিল বোর্মা। তিনি বর্মা দেশ থেকে বিস্কুট তৈরির শিল্প শিখে এসেছিলেন বলে হয়তো তার তৈরি বিস্কুট বা বেকারির নাম ছিল বোর্মা। সেই সময় তিনি কেরলের একজন বিখ্যাত বেকার হয়ে ওঠেন উল্লেখ এখানে কিন্তু বেকার হিসেবে বোঝানো হয়েছে যারা কেক বিস্কুট এইসব তৈরি করেন। সেই সময় মাম্বলি বাপু 40 ধরনের বিস্কুট তৈরি করেছিলেন, সেই সব বিস্কুটের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রাস্ক, বান এবং রুটি বিস্কুট। এখন এই দোকানটি এখন Mambally Royal Biscuit Factory দেশের প্রাচীনতম কার্যকরী বেকারি। এইরকমই একসময়ে 1883 সালে এক সাহেব আসেন কেরালায়, তখন ক্রিসমাসের সময় তবে ক্রিসমাসের কদিন বাকি ছিল। 

মাম্বালি বাপু


সেই সাহেবের নাম ছিল মারডক ব্রাউন ইনি একজন ব্রিটিশ প্লান্টার ছিলেন ইনি আবার দারুচিনি খেতের মালিক ও ছিলেন। ইনি মাম্বলি বাপুর বেকারি ঢুকলেন আর তার হাতে ছিল একটি দামী প্লাম কেক যেটা তিনি এনেছিলেন ইংল্যান্ড থেকে, সেই সাহেব মাম্বলি বাপু কে ঐ কেকটি টেস্ট করে দেখে, ঐরকমি একটা কেক বানিয়ে দিতে বললেন। যেহেতু মাম্বলি মশাই কেক এর ব্যাপারে জানতে না সেই জন্য সেই সাহেব মাম্বলি বাপুকে কেক সম্পর্কে দশ মিনিটের একটি বক্তিতা দেন আর তার সাথে দেন কেক তৈরির উপকরণ যার মধ্যে ছিল যার মধ্যে ছিল খেজুর, কিশমিশ এবং অন্যান্য শুকনো ফল। তবে লক্ষ্য করে দেখা যায় এখন অনেক এই সব জিনিসপত্র খায় জলখাবার হিসেবে যাকে বলে এখন বলে মুসলি খালি ময়দা সহ আর কিছু উপাদান থাকে না। যাই হোক যা বলছিলাম ঐ সাহেব মাম্বলি বাপুকে একটি ফরাসি ব্রেন্ডি দিয়েছিলেন কেক এ মেশানোর জন্যে, এখন আমরা ঐ ব্রেন্ডি কে চিনি Mahe হিসাবে। কিন্তু বাপু ঠিক করলেন সাহেব তো শেখালেন কেক বানানো, কিন্তু এই দেশেই যখন কেক হবে তবে তো দেশীয় টাচ্ দেওয়া দরকার, তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন এই কেকেই তিনি ভারতীয় টাচ্ দেবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ "তিনি ধর্মাদমের একজন কামারের কাছ থেকে ছাঁচটি সংগ্রহ করেছিলেন এবং দারুচিনি, জায়ফল এবং লবঙ্গের মতো মশলা সংগ্রহ করেছিলেন। তিনি অ্যারাক , কাজু, আপেল এবং কদালিপাঝাম , একটি কলার জাত দিয়ে তৈরি স্থানীয় ব্রু যোগ করে রেসিপিটিতে একটি দেশি স্পর্শ যোগ করেছিলেন। কেক এ এই ভারতীয় টাচ্ মাম্বলি বাপুর জন্য একটি শীল মোহর তৈরি করে দেয়, 20 ডিসেম্বর, 1883-এ, বাপু তার সৃষ্টি ব্রাউনের কাছে উপস্থাপন করেছিলেন, যিনি এটির স্বাদ গ্রহণ করার পরে এটিকে "চমৎকার" এবং তার কাছে থাকা সেরা কেকগুলির মধ্যে একটি হিসাবে Certified করেছিলেন!

আবার তাঁর বংশধরেরা জানিয়েছেন মাম্বালি বাবু ব্রেন্ডির ব্যবহার না করে, কাজু আপেলের তৈরি স্থানীয় ব্রুয়ের সাথে কেকের ব্যাটার মিশিয়েছিলেন। আগেই বলেছি সেই কেক খাওয়া পর তো অসাধারণ লেগেছিল ব্রাউন সাহেব এর, তিনি আরো একডজন এই কেক তৈরি করতে বলেন বাপু কে এতটাই ভালো লেগেছিল এই কেক! এভাবেই ভারতে প্রথম ক্রিসমাস কেক তৈরি করা হয়েছিল। এখনো সেই দোকানে চলছে এবং মাম্বালি বাপুর বংশধরেরা এখনো সেই প্রথা ধরে রেখেছে এবং বিভিন্ন জায়গায় আউলেট খুলেছে, একটি সূত্র থেকে জানা যায় মাম্বালি বাপুর তৈরি রেসিপির কেকর এর অর্ডার সবচেয়ে বেশি আসে কলকাতা, মুম্বাই ও চেন্নাই থেকে। কলকাতার কেক কথা বা ক্রিসমাসের কেক কথা বললে নাহুম এর কথাই মনে পড়বেই কিন্তু ভারতের প্রথম ক্রিসমাস কেক তৈরি বা আবিষ্কারের কথা বললেই মনে পড়বেই মাম্বালি বাপুর কথা!

ছবি সূত্র - internet 

তথ্য সূত্র - https://m.economictimes.com/magazines/panache/history-on-a-plate-how-a-kerala-trader-became-the-first-indian-to-bake-a-cake/articleshow/96493555.cms

https://www.bbc.com/news/world-asia-india-64062202

https://www.thehindu.com/food/mamballys-royal-biscuit-factory-plum-cake-thalassery-legacy/article68994721.ece

Comments