কী করে তৈরি হলো কুইন্স ম্যানশন?

Queens Mansion 

 

আজকে ও পার্ক স্ট্রিট! কারণ আমাদের বাঙালিদের শীতকালে অন্যতম প্রিয় যায়গা গুলির মধ্যে অন্যতম হলো পার্ক স্ট্রিট। বড়দিন আর নতুন বছরে বিশেষ করে 31 ডিসেম্বর আর পয়লা জানুয়ারি তো পার্ক স্ট্রিটে দুর্গাপুজোর মতো খালি মানুষের মাথা দেখা যায় আবার মাঝে মাঝে লাল রঙের সান্তা দাদুর টুপি ও দেখা যায়। এই কিন্তু জানেন আজকে যে পার্ক স্ট্রিট আমারা দেখছি, প্রথম দিকে কিন্তু আদেও এই রকম ছিল না আজকের পার্ক স্ট্রিট। আগে পার্ক স্ট্রিট ছিল বাদাম গাছের জঙ্গল, আবার অনেকে মনে করেন আলমন্ড গাছের জঙ্গল ছিল। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন কলকাতায় আসল তখন পার্ক স্ট্রিটের চেহারা পাল্টে গেল, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের নিজেদের বাড়ি ঘর বানিয়ে ওয়িট টাউনে পরিনত হয়েছিল। পরবর্তী কালে পার্ক স্ট্রিট গোরস্থান কা রাস্তা হয়েছিল। আজকে পার্ক স্ট্রিটের যেখানে লরেটো হাউস দাঁড়িয়ে আছে সেই বাড়িটি এক সময় বাংলার গভর্নর জেনারেল হেনরি ভ্যানসিটার্টের বাগানবাড়ি ছিল 1760 থেকে 1764 মধ্যে পরবর্তীতে 

হেনরি ভ্যানসিটার্টে

সেই বাড়িটি হয়ে যায় এলিজা ইম্পের সুপ্রিম কোর্ট মানের ফোর্ট উইলিয়ামের যেইটা সুপ্রিম কোর্টে বর্তমান কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি।

এলিজা ইম্পে

 এই বাড়িটির পাশে অনেক হরিন ছিল তাই সেখান যায়গাটির নাম হলো পার্ক স্ট্রিট। বর্তমান তথা সেই সময় একটি স্থাপত্য বা বিল্ডিং এখনো পার্ক স্ট্রিটে দাঁড়িয়ে আছে, সেই টা হলো কুইন্স ম্যানশন। এই স্থাপত্য টি কিন্তু ব্রিটিশদের তৈরি নয় এটি তৈরী করেছিলেন, একজন আর্মেনিয়ান। এই আর্মেনিয়ান সাহেব হলেন জোহানেস ক্যারাপিট গালস্টন, ইনি কলকাতার অনেক স্থাপত্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। 

জোহানেস ক্যারাপিট গালস্টন


1859 সালে ইরানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, এবং খুব কম বয়সে তৎকালীন ক্যালকাটায় চলে আসেন উচ্চ শিক্ষার জন্য। গালস্টন সাহেব সেই সময় আর্মেনিয়ান কলেজ ভর্তি হন, এবং পরবর্তী সময়ে তিনি সেন্ট জেভিয়ার্সে যান। গালস্টন সাহেব অন্ত্যত বুদ্ধিমান ছিলেন এবং তার অধ্যবসায় ও ছিল, যার ফলে তিনি টাঁকশাল তৈরি করেছিলেন এবং তিনি ছিলেন সেই সময়ে রিয়েল এস্টেট টাইকুন এবং ঘোড়া দৌঁড়ে অত্যন্ত উৎসাহি ব্যাক্তি এই কথা বলা হয় যে ভারতে জোহানেস গালস্টনের নাম উল্লেখ না করে ভারতে ঘোড়দৌড়ের কোনও বিবরণ সম্পূর্ণ হবে না।

জোহানেস ক্যারাপিট গালস্টন এবং তার ঘোড়া 

 তিনি কলকাতায় এমন এক বলা যেতে পারে রাজত্ব সৃষ্টি করেছিলেন যে সেই সময়ের বড়ো ধনী ব্যক্তি তাকে হিংসে করতো। শোনা যায় তিনি নাকি খুব বিনয়ী মানুষ ছিলেন,গ্যালস্টাউন কলকাতায় সবচেয়ে বড় রেসের ঘোড়ার মালিক হবেন এবং ইংল্যান্ডে তার আস্তাবল রয়েছে। তার আস্তাবলগুলি কিংবদন্তি ছিল এবং তার ঘোড়াগুলি প্রায়ই ঘোড়দৌড় ঝাড়তে পারত। 

কিন্তু তিনি সেই সময় রাজা বা রাজকুমার দের সাথে একই সারি দাঁড়াতেন। কিন্তু সব সময় সবার সময় ভালো যায় না, গালস্টন সাহেবের ও তাই হলো ঘোড়া দৌঁড়ে সব খোয়ালেন তিনি। এতক্ষণ গালস্টন সাহেব এত কথা কেন বললাম কারণ পার্ক স্ট্রিট কুইন্স ম্যানশন তার তৈরি। তিনি এই ধরনের ম্যানশন তৈরি করেছিলেন ইউরোপের বাসিন্দাদের ব্যবহারের জন্য রাসেল স্ট্রিট এবং পার্ক স্ট্রিটের ক্রসিংয়ে একটি কোণায় গালস্টন সাহেব তৈরি করেন এই বিলাসবহুল বহুল বাড়িটি তৈরি হয় 1920 সালে, এই বাড়িটি তৈরি করতে খরচ হয়েছিল ছয় লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা। সেই সময় কলকাতার অন্যতম বিলাসবহুল বাড়ি ছিল এটি, এই বাড়িটি ছিল ছয় তলা। গ্রাউন্ড ফ্লোরে ছিল বিভিন্ন দোকান আর উপর তলায় ছিল অ্যাপার্টমেন্ট, বলা হয় সেই সময় এই বাড়িটি ছাদ থেকে হুগলি নদী অসাধারণ দৃশ্য দেখা যেতো। রাস্তার কোনায় এই ছয় তলা বিল্ডিং টি যুক্ত হয়েছে। এই ছয়তলা বাড়িটি একসাথে হয়েছিল রাস্তার কোনে, ঠিক একই রকমের স্থাপত্য দেখা যায় লন্ডনে সেই বাড়িটি London wall Building নামে পরিচিত। 

তবে হয়তো গালস্টনের সাহেব এই লন্ডন ওয়াল দেখে বাড়িটির নকশা তৈরি করেছিলেন, তবে হ্যাঁ আমাদের পার্ক স্ট্রিটের গালস্টনের বাড়িটি স্থাপত্য দিক থেকে তেমন কিছু না বলে মনে করা হয়, আর সব ইউরোপীয় বিল্ডিং এর মতো কুপালা রয়েছে এবং ইন্দো ইউরোপীয় স্টাইল লক্ষ্য করা যায় এই বাড়িতে, তবে বাড়িটি কঠিন অলঙ্করণ সহ একটি বিল্ডিংয়ের বাইরের চেহারা কার্যকারিতা এবং প্রয়োজনীয়তার পথ দিচ্ছিল, যখন একটি বিল্ডিংয়ের প্রকৌশল এবং ব্যবহার তার নান্দনিক চেহারার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছিল বলে মনে করা হয়। এই বাড়িটি তৈরি হয়েছিল যেখানে স্যার হেনরি রাসেলের নিজস্ব বাড়ি ছিল যার নামে কলকাতার দুটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে এবং এখানেই বা বলা ভালো এই বাড়িতে রোজ্ আইলমার মারা গেছিল। জানা যায় 1924 সালে বেঙ্গল ক্লাব এই ফ্ল্যাট গুলি ভাড়া নেয়, কিন্তু বছরের বেশিরভাগ সময় ফ্ল্যাট গুলি ফাঁকা থাকতো সেই জন্য খানিকটা বাধ্য হয়ে তাই ক্লাবটি সেগুলি বিক্রি করতে বাধ্য হয়। সেই সময় এই বিল্ডিং এ অনেক বিখ্যাত দোকান ছিল যেমন মির্তা লিনা যারা মহিলা পোশাকের জন্য বিখ্যাত ছিল এছাড়া যারা প্রথম কলকাতার রাস্তায় আলো লাগিয়েছিল ওরিয়েন্টাল গ্যাস কোম্পানি।

সেই গ্যাস ল্যাম্প 

 বিখ্যাত জুয়েলার্স সাহনি অ্যান্ড সন্স এবং ছিল বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির ডিলার, হেয়ারড্রেসার এএন জন এবং মিডলটন ইঞ্জিনিয়ারিং আরো ছিল ইম্পেরিয়াল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার একটি অফিস। গালস্টন হাউস এটি পরিচিত ছিল কিন্তু 1953 সালে, রাণী এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেক উপলক্ষে গ্যালস্টোন ম্যানশনের নাম পরিবর্তন করে রাণীর ম্যানশন রাখা হয়। পার্ক স্ট্রিটের এই স্থাপত্য টি এখনো সেই কলকাতার কথা মনে করিয়ে দেয় আমাদের কে।

ছবি সূত্র - internet 

তথ্য সূত্র - https://www.telegraphindia.com/my-kolkata/places/going-back-in-time-on-a-park-street-walking-tour/cid/1903678

https://www.telegraphindia.com/my-kolkata/people/jockey-to-real-estate-mogul-the-story-of-an-armenian-in-colonial-calcutta/cid/1940821

Comments