ইন্দো ইউরোপীয় স্টাইল এ তৈরি এই মন্দির

দক্ষিণেশ্বর মন্দির 


আমাদের বাংলার মন্দির গুলি কিন্তু, ভারতের বাকি সব মন্দির থেকে আলাদা, স্থাপত্য দিক থেকেও আলাদা। অবশ্য দক্ষিণ ভারতের কিংবা উত্তর ভারতের মন্দির গুলি স্থাপত্য দিক দিয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। পন্ডিতেরা মনে করেন যে 800 AD থেকে 1500 AD মধ্যে ভারতীয় মন্দির প্রচুর পরিমাণে তৈরি হতে থাকে। অনেক মনে করেন জৈনরা ভারতে মন্দির তৈরি আইডিয়া এনেছিল পরবর্তী কালে হিন্দুরা সেই ধারাবাহিকতায় চালিয়ে নিয়ে যায়। আমাদের ভারতের উত্তর থেকে দক্ষিণ আর পূর্ব থেকে পশ্চিমের মন্দির বিভিন্ন স্টাইল আছে, এবং সেগুলির আলাদা আলাদা নাম রয়েছে, উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় উত্তর ভারতের মন্দিরের স্টাইল কে বলা হয় নগর স্টাইল, দক্ষিণ ভারতের স্টাইল কে বলা হয় পিরামিড স্টাইল, আরো রয়েছে। তবে আমাদের বাংলার মন্দিরের স্টাইল কে বাংলা স্টাইল বলা হয়, বাংলার স্টাইল এর বিশেষত্ব হলো চালা। মানে চাল পশ্চিমবঙ্গের সেই সময় বাড়ি গুলি চাল ছিল বাঁসের এবং খরের চাল আর সাইড । এবার আসি আমাদের বাংলার বিখ্যাত মন্দির গুলি দিকে, তার মধ্যে অন্যতম হলো দক্ষিণেশ্বর মন্দির। জানবাজারের রাণী রাসমণি, যিনি কৈবর্ত বর্ণের সদস্য ছিলেন, উনিশ শতকে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বিভিন্ন ধরনের মানবিক কর্মকাণ্ডের জন্য অত্যন্ত বিখ্যাত ছিলেন। ধার্মিক মায়ের প্রতি তার অনুরাগ প্রকাশ করার জন্য, তিনি 1847 সালে কাশীতে তীর্থযাত্রা করার সিদ্ধান্ত নেন।তিনি তার চাকর, সরবরাহ এবং আত্মীয়দের বহন করার জন্য 24টি নৌকায় ভ্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। এমন কিছু গল্প আছে যা বলে যে রানি রাশমনি তীর্থযাত্রা শুরু করার আগের রাতে দেবীকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন।দেবী কালী রূপে আবির্ভূত হলেন এবং তাকে বললেন যে তার বারাণসীতে যাওয়ার দরকার নেই। পরিবর্তে, গঙ্গা নদীর তীরে নির্মিত একটি মন্দিরে তার মূর্তি স্থাপন করার পরে তাকে কেবল কালীর পূজা করতে হয়েছিল। দেবী ছবিটিতে নিজেকে প্রকাশ করার পরে মন্দিরে পূজা স্বীকার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।স্বপ্ন তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল এবং রানীকে মন্দির নির্মাণের জন্য জমি খুঁজতে বাধ্য করেছিল। তিনি জন হেস্টি নামে এক ইংরেজের কাছ থেকে ২০ একর জমি কিনেছিলেন। জমিটি পূর্বে সাহেবান বাগিচা নামে পরিচিত ছিল এবং দক্ষিণেশ্বরে অবস্থিত ছিল যা তখন একটি ছোট গ্রাম ছিল। মন্দিরের বিশাল কমপ্লেক্সটি 1847 থেকে 1855 পর্যন্ত আট বছরে নির্মিত হয়েছিল।জমির একটি অংশ মুসলমানদের দ্বারা সমাধিক্ষেত্র হিসাবে ব্যবহৃত হত এবং কচ্ছপের মতো আকৃতি ছিল এবং তন্ত্রের ঐতিহ্য অনুসারে, শক্তির ভগবানের উপাসনার জন্য এটিকে ভাল বলে মনে করা হত। পুরো মন্দিরটি তৈরি করতে সে সময় প্রায় নয় লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। 1855 সালের 31শে মে স্নানযাত্রার দিন, অবশেষে মন্দিরে দেবী কালীর মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল। এই কালী মূর্তি তৈরি করেন নবীন ভাষ্কর, হল শ্রী শ্রী জগদীশ্বরী। এই মন্দির টাইলস গুলো এসেছিল বেনারসি থেকে। দক্ষিণেশ্বর মন্দির কে নবরত্ন মন্দির ও বলা হয়।

কেন বলছি ইন্দো ইউরোপীয় স্টাইল 


ঐতিহাসিকরা দাবি করেছেন খুব কম নবরত্ন মন্দির রয়েছে আমাদের পশ্চিমবঙ্গে। যদি ধরে নেওয়া হয় যে এই মন্দির ডিজাইনের দায়িত্ব দেওয়া হয় জন ম্যাথিউর উপর তিনি ছিলেন ম্যাকিন্টোস বার্ন কোম্পানির একজন, বোঝাই যাচ্ছে তিনি সাহেব ছিলেন। তাঁর করা মন্দিরের ডিজাইন দেখে রাণি রাসমণির খুব ভালো লাগে এবং পরবর্তী কালে ম্যাকিন্টোস বার্ন কোম্পানি কে এই মন্দির গড়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই মন্দিরটি প্রমাণ দিচ্ছে এখানে ইন্দো ইউরোপীয় স্টাইল। ইন্দো ইউরোপীয় শৈলী তে তৈরি নাট মন্দিরের দরজার স্টাইল। ব্রিটিশ কলকাতার বিভিন্ন বিল্ডিং এ এই ধরনের দরজার স্টাইল দেখা যায়। আর মন্দিরের চূড়ার কথা বলতে গেলে দেখাযায় মন্দির চূড়ার পাশে যে ছোট ছোট চূড়া গুলি রয়েছে গ্রীক শৈলী এঁদের কুপোলা বলে কিন্তু, ভারতের মন্দির শৈলীতে এদের শিখর। কিন্তু দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের ছোট ছোট চূড়া বা শিখরে এক ইন্দো ইউরোপীয় ও ইন্দো ইসলামী শৈলী দেখা গেছে। তবে এই বিষয়ে নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। 

ছবি সূত্র -  পুরনো কলকাতার চলচিত্র 

তথ্য সূত্র - https://www.howrahonline.in/guide/dakshineswar-temple-in-howrah

https://www.getbengal.com/details/how-a-christian-donated-land-for-the-temple-of-bhabatarini-in-dakshineswar

https://www.dakshineswarkalitemple.org/history.html

Comments