- Get link
- X
- Other Apps
Posted by
Tiki liki
on
- Get link
- X
- Other Apps
![]() |
| বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত দেবী মৃণ্ময়ী |
ভারতে তথা বাংলায় দুর্গাপুজো বিভিন্ন ভাবে উদজাপন করা হয়, বাংলার বাইরে ও গুজরাটের দিকে এই উৎসব কে নবরাত্রি বলা হয়, নয়দিন ধরে দেবী দুর্গার সঙ্গে অসুরের লড়াই পর দশদিনের দিন দেবি বধ করে অসুর করে। আবার সেই দিন দশেরা পালন করা সেই দিন শ্রী রামচন্দ্র রাবন কে বধ করে। তবে ভারতের ঐতিহাসিকরা বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন কবে দেখে শুরু হয়েছে সেই নিয়েও বিভিন্ন মত পার্থক্য রয়েছে। জানা গেছে ভারতের দক্ষিণ অঞ্চলে মানে দ্রাবিড় সভ্যতায় দেবীদের পুজো প্রচলন ছিল, মানে দ্রাবিড় সভ্যতা ছিল মাতৃতান্ত্রিক। দ্রাবিড় সভ্যতায় অনার্য ছিল মাতৃতান্ত্রিক, অনার্যরা দেবীদের পুজো করতেন তারা দেবীদের আদ্যাশক্তির প্রতীক রূপে। বলা হয় ভারতে মাতৃশক্তির আরাধনা অনেক আগে থেকে ছিল, ঐতিহাসিকেরা মনে করেন বাইশ হাজার বছর আগে ভারতের প্যালিওলিথিক জনগোষ্ঠি থেকেই দেবী পুজোর প্রচলন শুরু হয়েছিল। হরপ্পা,মহেন্জোদারো, সিন্ধু সভ্যতার সঙ্গে মাতৃতান্ত্রিক সভ্যতার আরো বিকাশ ঘটে। পরিবারের মা হলো প্রধান শক্তি। উপরুক্ত তিন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল নদী কে কেন্দ্র করে পরবর্তী কালে নদী কে তারা মা বলে সম্বোধন করতো বলে মনে হয় ( সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত ধারনা )
এবার আসি আমাদের বাংলায়, বলা হয় যে বাংলার সবচেয়ে প্রাচীন দুর্গাপুজো হলো বিষ্ণুপুরের দুর্গাপুজো। বিষ্ণপুরে রয়েছে পোড়ামাটির মন্দির থেকে টেরাকোটা। বিষ্ণুপুরের এই পুজো নাকি শুরু হয় 997 সালে। এখন যাকে আমরা বিষ্ণুপুর বলে জানি সেখানে আগে ছিল বন আর জঙ্গলে ভরা সেখানে এক মল্লরাজা তার রাজধানী তৈরি নির্দেশ দেন। তার আগে একটু মল্ল রাজাদের কথা না বললেই নয়, মল্ল রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মল্ল রাজা আদি মল্ল। মল্লরাজ বংশ প্রতিষ্ঠার পর তাদের অধিষ্ঠিত অঞ্চল গুলিকে একসঙ্গে মালভূমি বলা হতো, এই মালভূম অঞ্চলের মধ্যে ছিল বীরভূম, বাঁকুড়া, বর্ধমান, তথা সাঁওতাল পরগনা তথা মেদিনীপুর প্রমুখ অঞ্চল। সেই সময় তাদের রাজধানী ছিল প্রদ্যুম্নপুরে বর্তমানে বাঁকুড়া কাছাকছি এই যায়গা, আদি মল্লের সময় থেকেই এটি ছিল মল্ল রাজবংশ রাজধানী, কিন্তু হঠাৎ করে মল্ল রাজা জগৎ মল্ল মল্ল রাজবংশের রাজধানী বিষ্ণুপুরে নিয়ে যায়। এর কারণ অবশ্য ছিল, কারণটি একটি উপকথার মাধ্যমে জানা যায়। জগৎ মল্ল একদিন শিকারে বেরিয়েছেন, যায়গাটি ছিল বিষ্ণুপুরে তখন সেটি ছিল ঘনজঙ্গল। সেই জঙ্গলে রাজা মশাই একটি হরিন দেখেলেন, হরিণীটিরে পিছনে ধাওয়া করতে আরো ঘনজঙ্গলে চলে গেলেন রাজামশাই তারপর হঠাৎ হরিন টি অদৃশ্য হয়ে গেল। তার যায়গায় দেখা গেল একটি শারস পাখি দেখা দিল, সেটিও অদৃশ্য হয়ে বট গাছ এবং পরে বাজ পাখিতে পরিণত হল। রাজা জগৎ মল্ল হতবাক তাঁর মুখ থেকে কথা পর্যন্ত বের হচ্ছে না, তিনি স্তম্ভ হয়ে গেছে। আবার সেই বট গাছ দেখা দিল এবং সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছে এক নারী, আর তখন রাজা একদেবীর আওয়াজ শুনতে পেল। সেই নারী কন্ঠ বলেছেন তাকে বললেন যে তিনি মৃন্ময়ী দেবী, দেবী দুর্গার অন্য নাম। তিনি জগৎ মল্লকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে তিনি তার সক্ষম শাসনে খুশি, কিন্তু তাকে তার রাজধানী যেখানে বন ছিল সেখানে স্থানান্তর করার নির্দেশ দেন। তিনি তাকে চারুলতা বা বটগাছের কাছে একটি জায়গা দেখিয়ে বলেছিলেন যে জায়গাটি খনন করলে দেবীর একটি ছোট মূর্তি প্রকাশ পাবে। জগৎ মল্লকে সেখানে একটি মন্দির নির্মাণের পাশাপাশি মূর্তিটি হৃদয়ে রেখে একটি মাটির মূর্তি তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। রাজা প্রদ্যুম্নপুরে ফিরে আসেন, তার নতুন রাজধানী নির্মাণের জন্য তার সমস্ত কর্মী ও সম্পদ সংগ্রহ করেন। আজ মৃন্ময়ী মন্দিরের অবস্থান ঠিক যেখানে মূর্তিটি পাওয়া গিয়েছিল। হাজার বছর পুরোনো গঙ্গা নদীর বদ্বীপের মাটি দিয়ে তৈরি হয় মা দুর্গা সহ তার ছেলে মেয়ে অর্থাৎ লক্ষী, সরস্বতী, কাতৃিক, গণেশ। তবে হ্যাঁ গঙ্গা নদীর মাটি কিন্তু মালভূমে নিয়ে যেতে হয়েছিল।জগৎ মল্লের অধীনে, দুর্গার সংযোজন ছিল একটি অনন্য উদ্ভাবন, যা পরবর্তীতে বাংলার বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়ে। অরণ্য বিষ্ণুপুরের সমৃদ্ধ শহরকে পথ দিয়েছিল, দুর্গাপুজো এর প্রাণশক্তিতে পরিণত হয়েছিল। রাজপরিবারের কোনো সদস্য যখনই মৃন্ময়ী দেবীর স্বপ্ন দেখেন তখনই দুর্গা মূর্তিটি পুনরায় রং করা হয়। দুর্গার একটি পৃথক পটচিত্র প্রতি বছরও পূজা করা হয়। বটগাছের পাতা মন্দিরটি কে আরো প্রাণবন্ত করে রেখেছে।
![]() |
| সেই মন্দির |
স্থানীয় বলে থাকে যে লতা বেড়েছে সেই সঙ্গে বেড়েছে মন্দির প্রাণশক্তি। স্থানীয়রা বিশ্বাস করে যে এই গাছের পাতা যদি কেউ খায় তার ও প্রাণশক্তি বাড়বে, এর মানে কিন্তু অমর হবে না। বিষ্ণুপুরের দুর্গাপুজো কিন্তু আর সব দুর্গাপুজোর আলাদা এখানে পুজো শুরু হয় জিটা বা জয়া অষ্টমী থেকে, বাকি দুর্গাপুজোর অনেক আগে থেকে। দেবী করে প্রথমে বের পাতা দিয়ে পুজো করা হয় এবং তার পর বিভিন্ন ফল দিয়ে পুজো করা হয়। এখানে মৃণ্ময়ী দেবীর পাশাপাশি দেবীর আরো তিনটি রুপের পুজো করা হয়, এই তিন রুপ হলো ঠাকুরানি, মেজো ঠাকুরানি এবং ছোট ঠাকুরানি। তাদের খালি শাড়ির রং আলাদা কিন্তু বাকি সব এক। মনে রাখা দরকার যে এগুলি কিন্তু পটচিত্র আর এর শীপ্লিরা হলেন ফৌজদারি পরিবারের সদস্য। পুজো শুরু হয় বড় ঠাকুরানী দিয়ে, বড় ঠাকুরানি কে স্নান করিয়ে বেল গাছের তলায় নিয়ে আসা হয় তারপর চতুর্থির দিন ছোট ঠাকুরানী কে আমন্ত্রণ জানানো হয়, তারপর পুজো করা হয় ষষ্ঠির দিন। অষ্টমীর দিন বিষ্ণুপুর রাজপরিবারের গৃহদেবী দেবী বিশালক্ষ্মীকে মূল মন্দিরে এনে একটি রূপোর থালায় রাখা হয়।
![]() |
| সেই কামান |
একটি কামান রয়েছে সেই কামান তারপর নয় বার চালানো হয় ( হয়তো এখন হয়না ) একটি অনুশীলন যা 16 শতকে রাজা ধরি মল্লের শাসনামলে শুরু হয়েছিল। এই পুজোর আরো একটি বৈশিষ্ট্য হলো যে পুরোহিত মশাই তার পিঠ থাকে দেবীর সামনে, মানে সাধারনত পুরোহিত দেবী মূর্তির সামনে দিকে পুজো করা হয়। আবার এই পুজোর কোনো অংশে পুরোহিত মশাই রাজ পরিবারের দিকে পিঠ দেখিয়ে পূজার্চনা করে, এটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বিজয়া দশমীর দিন পটচিত্র বিসর্জন দেওয়া হয়। মন্দির থেকে কখনো মূল মূর্তিটি নেওয়া হয় না, আজও সেই মূর্তি নিজের যায়গায় রয়েছে। কিন্তু এখানে কিন্তু পুজো শেষ হয় না দশমী থেকে দ্বাদশী পর্যন্ত আরো এক পুজো হয়। এই পুজো কে বলা হয় রাবণ কাটা পুজো, চারজন সাজে হনুমান, জাম্ববন, সুগ্রীব ও বিভীষণ তারা বিষ্ণুপুর জুড়ে নাচে এবং তার সাথে চলে গান ও ( Dj ) না।স্থানীয় মন্দিরে রাম, লক্ষ্মণ ও সীতার পূজা করা হয়। দশমীতে কুম্ভকর্ণ বধ অনুষ্ঠিত হয়; একাদশীতে ইন্দ্রজিৎ বধ হয়; এবং দাদাশীর রাতের শেষে রাবণ বধ পালিত হয়। এটি বিষ্ণুপুরের প্রাচীনতম দুর্গা পূজার দীর্ঘ উদযাপনের অবসান ঘটায়। এখন আর আগের মতো জমকালো হয় না এই পুজো, এই জমকালো অনুষ্ঠানের অবসান ঘটাতে থাকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমল থেকে। কোম্পানি মল্ল রাজবংশকে দমন করার পর এবং তাদের ভাতা বন্ধ করতে বাধ্য হয়, আর তারপর থেকেই আগেই বললাম পুজো জাঁকজমক বন্ধ হতে শুরু হয়। মৃন্ময়ী মূর্তিটি আজ একটি পুনর্নির্মিত মন্দিরে দাঁড়িয়ে আছে, স্থানীয়দের আবেগ এই পূজার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে আবদ্ধ ছিল যেমনটি তারা ছিল দেবী প্রথম মল্ল রাজবংশকে তার আশীর্বাদ প্রদান করার পরে। তবে এবার দেবী দুর্গার কাছে একটাই চাওয়া!
ছবি সূত্র - internet
Bishnupur
Durga Puja
Heritage
History
Intangible Cultural Heritage
Malla Dynasty
Oldest Durga Puja
UNESCO
- Get link
- X
- Other Apps



Comments