- Get link
- X
- Other Apps
Posted by
Tiki liki
on
- Get link
- X
- Other Apps
![]() |
| কলকাতার সিংহমুখি কল |
জল মানে জীবন। বর্তমান সময়ে পানীয় জল খুব সহজেই সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। আগে যেমন ভিস্তিওয়ালার মানুষের কাছে পানীয় জল পৌঁছে দিতো, এখন অবশ্য ভিস্তিওয়ালার বদলে কোনো একটি দোকানের কর্মচারী প্লাস্টিকের বোতলের মাধ্যমে পানীয় জল পৌঁছানোর কাজ করে। তবে ব্রিটিশ আমলে কলকাতায় পানীয় জলের জন্য কুয়ো অথবা একধরনের কলের ব্যবস্থা ছিল, সেইটা এখনো আছে। কিন্তু যেই কলের কথা বলছি তাকে বলা হতো সিংহ কল। দুএকটা হয়তো দেখাও যেতে পারে। কিন্তু কলকাতা এই কল আসার বহু আগে থেকেই যেকোন জলের জন্য সাধারণ মানুষে থেকে তৎকালীন জমিদার বাড়ির মানুষেরা গঙ্গা নদীর উপর নির্ভর করতো। জানা যায় সেই সময় এক ব্যবসায়ী বৈষ্ণবচরণ শেঠ ঘড়া ঘড়া গঙ্গা জল বিভিন্ন বাড়িতে সাপালাই করতেন, বলাই যেতে এখনকার মতোই খানিকটা। তখন কলকাতার সব বাড়িতে অনেক বড় বড় কলসি করে গঙ্গা জল ধরে রাখা হতো। এছাড়া কলকাতায় তখন জল সাপ্লাইয়ের কাজ করতো বা বলা ভালো বাড়ি বাড়ি জল ফেরি করতো ভিস্তিওয়ালারা। কলকাতায় এখনো রয়েছে খুব কম সংখ্যক ভিস্তিওয়ালা। সেই সময় কলকাতায় অনেক গুলি জলাশয় তৈরি করেছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তার মধ্যে অন্যতম হলো হলো লালদিঘি এবং গোলদিঘি।
![]() |
| লাল দিঘী |
মহেন্দ্র দত্ত জানিয়েছেন বড়লোকদের বাড়িতে তিনটে পাত কুয়ো থাকতো, তিনটি পাত কুয়োর আবার আলাদা আলাদা কাজে ব্যবহার হতো। রান্নাঘরের কাছে থাকতো একটা পাতকুয়ো, আবার বাড়ির মাঝখানে বা মাঝ উঠোনে আরো একটি কুয়ো থাকতো আর সদরবাড়িতে আরো একটি কুয়ো থাকতো। কুয়ো গুলোতে আবার কচ্ছপ রাখা থাকতো কারণ হলো কচ্ছপ গুলো জলের পোকা খেত। যার ফলে জল পরিষ্কার থাকতো এই ছিল কুয়োতে কচ্ছপ রাখার ধারনা। আবার এই কথাও উল্লেখ করেছেন মহেন্দ্রনাথ দত্ত যে অনেক ব্যাঙ রাখতো কুয়োর জলে পোকা খাওয়ার জন্য। গঙ্গা জলের কথা আগেই বলেছি, গঙ্গা জল রাখা হতো পানীয় জলের জন্য, কারণ তখন গঙ্গা জলে পোকা হতো না। টালার জলের কল বসার আগে গঙ্গা জলই ছিল শুদ্ধ বা খাওয়ার উপযোগী। 1803 সালে তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলি কলকাতায় বিশুদ্ধ পানিয় জলের জন্য একটি বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন কিন্তু সেইটা কার্যকরি হয়নি।
![]() |
| লর্ড ওয়েলেসলি |
কারণ হিসাবে বলা হয় প্রতিবেদন ত্রুটি পূর্ণ ছিল তার সাথে সেই সময়ের পাবলিক ড্রেন গুলি কে হুগলির পশ্চিম দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয় যার ফলে উত্তর কলকাতায় প্রচুর পরিমাণে জলদূষন দেখা যায় এবং ট্যাঙ্ক জলও দূষিত হয়ে পড়ে এবং সেই জন্য কলেরা ও আমাশয়ের মতো মহামারি দেখা যায়। 1804 সালে লটারি কমিটি তৈরি হয়, যারা তৎকালীন কলকাতার পানীয় জল সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। লটারি কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল Justice of the peace এর উপর, কিন্তু কে এই ব্যাক্তি সেইটা জানতে পারিনি। টলারি কমিটি পানীয় জলের সরবাহের জন্য কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছিল, প্রথমত তারা মধ্য কলকাতা ও উত্তর কলকাতায় অনেক গুলি ট্যাঙ্ক খনন করে 1805 থেকে 1836 সালে মধ্যে। এরমধ্যেই 1820 সালে পানিয় জলের জন্য যন্ত্রাংশের ব্যবহার শুরু হয়।
![]() |
| ছবিতে তৎকালীন কলকাতার চাঁদপাল ঘাট |
সেই সময় চাঁদপাল ঘাটে ছোট্ট একটি বাষ্প চালিত পাম্প স্থাপন করা হয় গঙ্গা নদীর জল জনসাধারণের পানীয় যোগ্য করে তোলার জন্য বিশুদ্ধ করতে। আগেই বলেছি সেই সময় গঙ্গা নদী ছিল এক অন্যতম যেকোন কাজে জলের উৎস। কিন্তু গঙ্গার জল পান করার জন্য বিশুদ্ধ করার কী আছে ? প্রশ্ন উঠতে পারে এখানে বলা দরকার যে ব্যবসায়ী বৈষ্ণবচরণ শেঠ গঙ্গা জলকে পান করার জন্য বিশুদ্ধ করে তুলতেন। এপ্রিল থেকে যেহুতু বর্ষা কাল শুরু হয়ে যেত, যার ফলে বৃষ্টি জল নদীতে মিশে জল হয়ে যেত নোনতা এবং ঘোলাটে। এই জল কে ফিল্টার করা হতো পেগু বলে একধরনের বয়াম পাওয়া যেত তার মধ্যে একবছরের জন্য এই ঐ জলে মধ্যে লাল গরম রড ডুবিয়ে দেওয়া হতো। তারপর সেই জলকে বালি ও কাঠকয়লার মাধ্যমে ফিল্টার করা হতো। তাছাড়া সুতির কাপড়ের মাধ্যমেও ঐ জলে ফিল্টার করা হয়। অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে নদীর জল পান করার উপযোগী ছিল। কারণ মনে রাখা দরকার যে ঐ নদীর উপরেই সব কাজ নির্ভর করতো তা সে কাপড় কাঁচার থেকে শুরু করে মড়া পোড়ানো পর্যন্ত। তবে ইউরোপিয়ানরা যখন কলকাতায় পাকাপাকি ভাবে বসবাস করতে আরম্ভ করেন তখন 1709 সালে পুরনো ফোর্ট উইলিয়ামের জনৈকো গ্যারিসন ব্রিটিশদের জন্য আলাদা করে মিষ্টি জলের জন্য ট্যাঙ্ক ব্যবস্থা করে ছিলেন। এছাড়াও আরো অনেক প্রাইভেট ট্যাঙ্ক এর ব্যবস্থা ছিল এবং তারা বৃষ্টি জল কে ধরে রেখে ফিল্টার কে ব্যবহার করে সেই জল পান করতো বলে জানা যায়। লটারি কমিটি পানিয় জলের জন্য আরো অনেক গুলি ট্যাঙ্ক খনন করেছিল, 1808 থেকে 1837 সালের মধ্যে কর্নওয়ালিস স্ট্রিট এখনকার বিধান সরণি রোড, সার্কুলার রোড, শ্যামবাজার, কলেজ স্কোয়ার, ওয়েলিংটন স্কোয়ার সহ আরো কিছু জায়গায় ট্যাঙ্ক খনন করা হয়। তবে যতদূর মনে করা এই ট্যাঙ্কের জল সাধারনত ব্রিটিশ এবং তৎকালীন জমিদার ব্যবহার করতো। কারণ সাধারণ মানুষের জন্য সেই সময়ে নেটিভ টাউন গুলিতে কিছু কিছু ব্যাক্তিগত জলের ট্যাঙ্ক খোল হতো। তবে একটি তথ্য জানা যায় কলকাতায় তৎকালীন সময়ে 800 টা জলের ট্যাঙ্ক ছিল, আর 1888 সালে ভবানীপুর এলাকায় নাকি 823 টি জলের ট্যাঙ্ক ছিল, তবে তার মধ্যে কতগুলি সাধারণ মানুষের আর কতগুলি ব্রিটিশদের তা জানা যায় নি। চাঁদপাল ঘাটের পানিয় জলের জন্য পাম্পিং মেশিন বসানো হয় কলকাতায় তৎকালীন কলকাতার কিছু জায়গায় পাম্পিং মেশিনের পরিস্রুত জল পাঠানো হয় এই জায়গুলি ছিল ফেয়ারলি প্লেস, কোর্ট হাউস স্ট্রিট, ধর্মতলা অঞ্চল, চৌরঙ্গী, পার্ক স্ট্রিট সহ আরো কিছু অঞ্চলে এই জল পান করা হতো। 1848 সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার বিশুদ্ধ পানিয় জলের জন্য আইন প্রণয়ন করে। 1854 সালে আরো পাম্পিং লাইন প্রসারিত করা হয়, আর এর জন্য সরকারের ও জনগণ ব্যায়ভার বহন করে। সেই সময় বিভিন্ন ট্যাঙ্ক গুলি কে মেরামত করা হয়েছিল আর এই সব করতে পঁচিশ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। সেই সময় মানে 1865 সালে কলকাতায় কলেরার প্রকপ ঘটেছিল, সেই সময় 200 জনের বেশি মানুষ কলেরার মারা গেছিল। এদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পানীয় জলের চাহিদা বাড়ছিল, সেই জন্য তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার 1870 সাল নাগাদ মে মাসের দিকে কলকাতার রাস্তায় বসলো সিংহের মুখ যুক্ত কল।
এমনি পানিয় জলের জন্য বিভিন্ন জায়গায় পাম্পিং স্টেশন শুরু করা হয়েছিল আর প্রায় বাড়ি কাছেই সিংহের মুখ যুক্ত কল বসায় ট্যাঙ্ক থেকে জল বয়ে আনতে হবেনা। শুধু মাত্র কলকাতায় নয় ব্রিটিশদের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শিমলা তে এইরকম সিংহ মুখি কল লাগানো হয়েছিল এবং এখনো দেখতে দেখতে পাওয়া যায়।
![]() |
| শিমলার সিংহ মুখি কল |
সেই সময় শহরে একটি হাওয়া উঠলো এই সিংহ কলের যে ওয়াশার রয়েছে তা তৈরি করতে নাকি গো-চর্ম লাগে। ব্যাস চারিদিকে এই কথা chinese whisper রটে গেল তবে এর কিন্তু কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সাহেবরা একটু ভয় পেল আবার না সিপাহী বিদ্রোহের মতো গণ বিদ্রোহ শুরু হয়ে যায় সেই জন্য তারা কলকাতার মানুষ কে বোঝানোর ব্যবস্থা করলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হল না। সেই জন্য সিংহ কলের গায়ে লেখা ছিল জল যেন অপচয় না হয়। তাই আজও কোনো কোনো কলের গায়ে আবছা হয়ে যাওয়া ফরমানের মধ্যে থেকে ‘Waste Not’ শব্দটি পড়ে নেওয়া যায়।
![]() |
| তীর চিহ্ন দিয়ে দেখানো হয়েছে |
কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো এখনো অনেক জায়গায় জলের কল খোলা থাকে দিনের পর দিন, সেই সময় কলকাতা মনে করে সিংহ কলের কথা।
ছবি সূত্র - internet
তথ্য সূত্র - https://www.bongodorshon.com/home/story_detail/story-of-lion-marked-kal
https://thecalcuttablog.in/2017/06/13/quenching-the-capital-how-calcutta-got-its-water-supply/
- Get link
- X
- Other Apps







Comments