কলকাতায় রয়েছে প্রথম জাপানি বৌদ্ধ মন্দির

Nipponzan Myohoji Buddhist Temple

 

কলকাতা, আমাদের কলকাতা বিভিন্ন ধর্মের সমাগম হয়েছে। আমাদের কলকাতা বৌদ্ধ ধর্মের ও সমাগম হয়েছে তার উল্লেখযোগ্য প্রমাণ হলো Nipponzan japanese Buddha Tample ওরফে নিপ্পনজান জাপানি বৌদ্ধ মন্দির। এই বৌদ্ধ মন্দিরটি হলো কলকাতার প্রথম জাপানি বৌদ্ধ মন্দির। ভারতের সঙ্গে কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মের যোগাযোগের কথা সবাই জানে, বলা হয় সম্রাট অশোকের সময় তৎকালীন বাংলায় বৌদ্ধ ধর্ম ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের কলকাতায় প্যাগোডাও রয়েছে। এই প্যাগোডা টি দেখতে পাওয়া যায় ইডেন গার্ডেনে। না স্টেডিয়ামের কথা বলছি না, স্টেডিয়ামের পেছনদিকে ইডেন গার্ডেন পার্ক রয়ছে সেখানে এই প্যাগোডা টি দেখতে পাওয়া যায়। এবার বলি জাপানি বৌদ্ধ মন্দিরের কথা, এই মন্দিরটি দেখতে পাবেন রবীন্দ্র সরোবরের পূর্ব দিকে ঢাকুরিয়া ফ্লাইওভারের পাসে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কথা উঠলো যখন এখানে বলে রাখা দরকার যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর 1916 সালে কবিগুরু জাপানে গিয়ে বেশকিছু বক্তব্য রাখেন। আবার ভারতের বিপ্লবী রাসবিহারী বসু ব্রিটিশ গর্ভামেন্টের চোখে ধুলো দিয়ে জাপানে আশ্রয় নেয় এবং তিনি জাপানের মানুষ কাছে তুলে ধরেন আমাদের অতিপ্রিয় মুরগির হালকা ঝোল আর ভাত, জাপানে এর নাম ছিল নাকামুরা কারী। আবার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কে ভারতকে স্বাধীন করার জন্য জাপান সরকার সাহায্য করেছিল। দেখাই যাচ্ছে কলকাতা সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক কত পুরনো। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে এই মন্দিরটি কিভাবে বা কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন? জানা যায় জাপানের মানুষ 522 খৃষ্টাব্দ থেকে বৌদ্ধ ধর্ম পালন করে চলেছে, নিচিদাতসু ফুজি ছিলেন একজন জাপানি বৌদ্ধ সন্যাসী এবং দার্শনিক। ইনি নিচিরনের লেখারদ্বার বিশেষ ভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন, তিনি বিশ্বাস করতেন বৌদ্ধ ধর্মের লোটাস সুত্রের উপর, বুদ্ধের দেওয়া শেষ দিকে দেওয়া শিক্ষার মধ্যে অন্যতম হলো এই লোটাস সুত্র। নিচিরন বিশ্বাস করতেন এই লোটাস সুত্রের মধ্যেই রয়েছে সত্য ও জ্ঞান অর্জনের অন্যতম ও একমাত্র উপায়। জনশ্রুতি রয়েছে যে নিচিরন ভারতে লোটাস সুত্র প্রচার করতে চেয়েছিলেন। আর সেই জন্য 1931 সালে নিচিদাতসু ফুজি কলকাতায় এই বৌদ্ধ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 

নিচিদাতসু ফুজি Nichidatsu Fujii


এই মন্দিরটি যখন প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন নিচিরনএর মৃত্যুর 650 বছর হয়ে গেছে। এই বৌদ্ধ মন্দিরটি জন্য জমি দান করেন বলদেও দাস বিড়ালার ছেলে শিল্পপতি যুগল কিশোর বিড়লা। বলা হয় নিচিদাতসু ফুজি যখন কলকাতায় এসেছিলেন তখন শহরের রাস্তায় ড্রাম বাজিয়ে শহরবাসী জানান " নমু মাইহো রেঙ্গে কিও " এর মানে হলো আমি আশ্রয় নি বা আত্মসমর্পণ করি। লোটাস সুত্রের অন্যতম নিয়ম। 1933 সালে নিচিদাতসু ফুজি সাথে মহাত্মা গান্ধীর সাথে দেখা হয়, জানা যায় গান্ধীজির নিচিদাতসু ফুজির অহিংস নীতি কে খুব ভালো লেগেছিলো। এরপর শুরু হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ব্রিটিশদের হয়ে ভারত এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। জাপান যেহেতু মিত্র শক্তির সঙ্গে ছিল না তাই, ভারতে বসবাসকারী জাপানি মানুষ ভারত থেকে চলে যেতে বাধ্য হলো। এমনকি তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ভারতে বসবাসকারী জাপানি মানুষদের ভারত ত্যাগ করার নির্দেশ এমনকি বৌদ্ধ মন্দিরটি জবরদখল করার চেষ্টা করে। কিন্তু এই চেষ্টা সফল হয়নি স্বামী ধীরানন্দ শাস্তির জন্য, এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ইনি কিন্তু হিন্দু সন্যাসী ছিলেন, তিনি ব্রিটিশদের এই জবরদখলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার এই বৌদ্ধ মন্দির জবর দখল করতে পারেন নি। যুদ্ধের পর নিচিদাতসু ফুজি ভারতে ফিরে আসেন এবং উড়িষ্যায় ও রত্নগিরি তে বৌদ্ধ স্তুপ নির্মাণ করেন। 1978 সালে নিচিদাতসু ফুজি নেহুরু পুরস্কারে ভূষিত হন। এই বৌদ্ধ মন্দির দোতলা এবং এই মন্দিরটি দুধসাদা রঙে রাঙানো আর আরো নজর কাড়ে সোনালী রঙের বর্ডার গুলো। বৌদ্ধ মন্দিরটির একদম উপরে রয়েছে সাঁচী স্তূপের মতো একটি গম্বুজ, আর চারটি কোনে রয়েছে ছোট ছোট চারটি গম্বুজ। বৌদ্ধ মন্দিরটিতে ঢুকলেই চোখে পড়বে শিলালিপি যার উপর জাপানি ভাষায় খোদাই করা আছে সেই লোটাস মন্ত্র। 

সেই মন্ত্র


প্রবেশ দ্বারটির পাশে বসে দুটি জাপানি সিংহের মূর্তি। মন্দিরটির ভেতরে ঢুকলে দেখা যায় ভগবান বৌদ্ধের মার্বেল পাথরের মূর্তি পিতলের প্রদীপ জ্বলছে। দেওয়ালে রয়েছে জাপানি ভাষায় বিভিন্ন ক্যালিওগ্রাফি এবং তার সাথে রয়েছে নিচিদাতসু ফুজির একটি ছবি। 

মন্দিরের ভেতরে 

এই রকম আরো অনেক বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে আমাদের কলকাতায়। 


ছবি সূত্র - internet

তথ্য সূত্র - https://www.telegraphindia.com/my-kolkata/places/the-nipponzan-myohoji-buddha-mandir-in-kolkatas-dhakuria-has-a-sanchi-like-stupa/cid/1865090

Comments