- Get link
- X
- Other Apps
Posted by
Tiki liki
on
- Get link
- X
- Other Apps
![]() |
| 49th Bengal Regiment |
কলকাতা আমাদের প্রিয় শহর দেখেছে দুটি বিশ্বযুদ্ধ। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তো কলকাতায় আক্রমণ করেছিল জাপানি বোমারু বিমান। আমাদের কলকাতায় যুদ্ধ গুলো কে মনে রেখে এবং সেই সব যুদ্ধে যারা প্রাণ দিয়েছিল, তাদের কে মনে রেখে কয়েকটি স্মৃতি সৌধ তৈরি করা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো কলেজ স্কোয়ারের বেঙ্গলি ওয়ার মেমোরিয়াল। আসলে একটা ভুল ধারণা রয়েছে বাঙালি যুদ্ধ করতে পারে না। এই ধারণা যে কত বড় ভুল তার প্রমাণ দেয় এই স্মৃতি সৌধের নাম গুলো। এই কারণে জন্য অবশ্যই তৎকালীন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কে দায়ী করা যেতে পারে। আসলে 1857 সালের সিপাহী বিদ্রোহ বা মহা বিদ্রোহের পর ব্রিটিশরা ভারতীয়দের সমারিক ও অসামরিক এই দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত করে দিয়েছিল, আসলে তারা সাধারণ ভারতবাসী কে দেখাতে চেয়েছিল যে যারা যুদ্ধের জন্য ফিট, উপযুক্ত আর একদল ছিল যারা যুদ্ধের জন্য একবারে উপযুক্ত না। অনেকে আবার জাতি তত্ত্বের অস্তিত্ব কে খাড়া করে। তাদের মতে এটি ছিল বেঙ্গল আর্মি যে বিদ্রোহ করেছিল এবং পাঞ্জাব আর্মিকে এটি চূর্ণ করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু অবশেষে ব্রিটিশ সরকার আলাদা করে একটি রেজিমেন্ট তৈরি করে। প্রথমদিকে অবশ্য ব্রিটিশরা বাঙালিদের জন্য আলাদা আর্মি বা্ রেজিমেন্ট তৈরি করতে চাইনি, কিন্তু অবশেষে 1916 সালের আগস্ট মাসের সাত তারিখ বেঙ্গল রেজিমেন্ট তৈরি হয়। বাংলার মানুষের জন্য এটি একটি দারুন খবর ছিল, আর সেই সময় জাতীয় নেতারা যুবকদের উৎসাহিত করেছিল সেনাবাহিনী তে যোগদান করতে, আসলে সেই সময় জাতীয় নেতারা ভেবেছিলো ব্রিটিশদের পক্ষে যোগদান করলে ভারতের স্বাধীনতা ফিরে পাবে । এই বেঙ্গল রেজিমেন্ট অনেক বিখ্যাত মানুষ অংশগ্রহণ করেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলো বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আর জানেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এই রেজিমেন্ট অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু জানা যায় সুভাষচন্দ্র বসুর দুর্বল দৃষ্টি শক্তির জন্য তিনি এই রেজিমেন্ট অংশগ্রহণ করে পারেননি। 1917 সালের পয়লা জুলাই বেঙ্গলি ডবল কোম্পানি বা BDC. যার আনুষ্ঠানিকভাবে নাম হয়েছিল 49th Bengal Infantry Regiment বা বেঙ্গল ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্ট অথবা 49 তম বাঙালি। এই রেজিমেন্টি জনপ্রিয় হয় বাঙালি পল্টন নামে, যা তৈরি হয়েছিল করাচিতে।
![]() |
| এখানে লেখা রয়েছে শহীদের নাম |
এই 49th Infantry Regiment লড়াই করতে পাঠানো হয়েছিল, গালিপলি এবং উত্তর ও পূর্ব আফ্রিকায় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর পাশাপাশি এই বাহিনীও যুদ্ধ করেছিল। জানা যায় যে, সেই যুদ্ধগুলিতে তাদের মধ্যে 47,746 জন নিহত বা নিখোঁজ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিল এবং 65,000 আহত হয়েছিল এবং তুর্কি বাহিনীর কাছে ইরাকে ব্রিটিশ বাহিনীর আত্মসমর্পণের পরে, 49 তম বাঙালি পল্টন অবিলম্বে মেসোপটেমিয়ায় পাঠানো হয়েছিল। সেই সময় মানে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মেসোপটেমিয়ার সবচেয়ে অব্যাবস্থিত থিয়েটারে 49তম বাঙালি পল্টন কে পাঠানো হয়েছিল। আসলে 49তম বাঙালি পল্টনের যাওয়ার কথা ছিল আজিজিয়েহ থেকে কুক-এল-আমারা থেকে বসরা শহরের কাছে তনুমা পর্যন্ত, কিন্তু তাদের হতাশ হতে হয়। সেই সময় এই ঘটনা কে ব্রিটিশরা নাম দিয়েছিল রাজদ্রোহীর ধারনা। আসলে 49তম বাঙালি পল্টনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে নিজেদের পদ নিয়ে অসন্তোষ। বাঙালি পল্টনের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র ছিলেন সুবেদার মেজর শালিন্দ্রনাথ বসু , জমাদার আর এল মুখার্জি এবং সুবেদার এ কে মিত্র। কিন্তু তাদের জুনিয়রা এই তিন অফিসার কে টেন্টের মধ্যে ঘুমন্ত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ করে। আসলে 49 তম বাঙালি পল্টনের সৈন্য ধারণা হয়েছিল তাদের কোনো সময় পদান্নতি হবে না আর সেই কারণেই তার মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিল, আসলে ভারতীয়রা কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারের পদান্নতি হাওয়া সম্পূর্ন ভাবে ছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের হাতে। 1917 সালের সেপ্টেম্বরে তারা বাগদাদে পৌঁছানোর সাথে সাথে তাদের গ্যারিসন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু, মানসিক অস্থিরতার পাশাপাশি, এলাকার ক্ষতিকর ও ক্ষতিকর আবহাওয়ার কারণে সৈন্যরা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিল। 1918 সালের নভেম্বর মাসের 11 তারিখে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন এইটা খালি একটা বিরতি ছিল আসলে একটাই বিশ্বযুদ্ধ হয়েছিল, তবে এই নিয়ে অনেক মতবিরোধ রয়েছে। বেঙ্গল রেজিমেন্ট কে ভেঙে দেওয়া হয় এবং 1920 সালের আগস্ট মাসের 31 তারিখে এই রেজিমেন্টের কোনো অস্তিত্ব রাখা হয়নি। তবে কলকাতার কলেজ স্কোয়ারে যে সাদা মার্বেল পাথরের স্তম্ভটি দাঁড়িয়ে আছে তার চারিপাশ দিক দিয়ে ঘেরা আর মার্বেল স্তম্ভটির উপরে একটি পেডিমেন্ট আছে। তার নিচে ব্রিটিশ মুকুট দেখা যায় এবং তার নিচে লেখা আছে ৪৯ জন বাঙালি। তার নীচে একটি ফুলের মোটিফ এবং একটি পুষ্পস্তবক রয়েছে। গোড়ায়, পূর্ব দিকে " ইন মেমরি অফ মেম্বারস অফ দ্য 49 তম বেঙ্গলি রেজিমেন্ট যারা 1914-1919 সালের মহান যুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন, ঈশ্বর, রাজা ও দেশের গৌরব " মার্বেল স্তম্ভটির তিন দিকে রয়েছে শহীদ ব্যাক্তিদের নাম তার সঙ্গে তাদের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার আর রয়েছে তাদের রাঙ্ক নাম্বার। এবং তার সাথে রয়েছে তাদের মৃত্যুর তারিখ। এবং এও লেখা কোথায় তাদের বাড়ি ছিল, যেমন ঐ মার্বেল স্তম্ভটিতে লেখা আছে 49 তম রেজিমেন্টের সৈনিকদের বাড়ি ছিল কলকাতা, চব্বিশ পরগনা, ত্রিপুরা, বরিশাল, বগুড়া, বর্ধমান, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, পাবনা, মেদিনীপুর, ময়মনসিংহ, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া এবং ঢাকা। তবে এই কথা এখন জানা যায় নি কে এই স্তম্ভটি বানিয়ে ছিল এবং কে এর ভাষ্কর্য করেছিল? তবে এই কথা বলাই যায় যে কোনো ব্রিটিশ এই স্তম্ভটি বানিয়ে ছিল। কলকাতা এখনো মনে রেখেছে 49তম বেঙ্গল রেজিমেন্ট কে।
ছবি সূত্র - internet
- Get link
- X
- Other Apps



Comments