- Get link
- X
- Other Apps
Posted by
Tiki liki
on
- Get link
- X
- Other Apps
![]() |
| লাল দিঘী |
কিছুদিন হলো গরম একটু কমছে অবশেষে বৃষ্টি হয়েছে। কিছুদিন আগে এক বিখ্যাত সংবাদপত্রের online ভার্সনে একটি সাক্ষাৎকার দেখছিলাম, একজন অধ্যাপক সাক্ষাৎকার বিষয় ছিল এতো গরম কেন বাড়ছে ? সব শেষে তিনি বললেন শুধু গাছ লাগালেই হবে না জলাশয় সংখ্যা বাড়াতে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কারণ ব্যাখা করলেন। কিন্তু কত আর জলাশয় পুকুর আমারা দেখতে পাই ? কলকাতা পুরসভার মতে এখন কলকাতায় পুকুর বা জলাশয়ের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারের কাছাকাছি। তবে এককালে কলকাতায় জলাশয়ের সংখ্যা ছিল 8731. তাহলে দেখা যাচ্ছে যে পাঁচ হাজারের মতো পুকুর বা জলাশয়ের কলকাতা থেকে পুরোপুরি হারিয়ে গেছে। আরো বলা হয় যে প্রতিবছর নাকি 150 টি পুকুর কোনো কারণে বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতো গেল শুধু কলকাতার কথা বাকি জেলাগুলোর কথা ছেড়েই দিলাম। এবার বলি কলকাতার কিছু বিখ্যাত পুকুর বা জলাশয়ের কথা। কলকাতার বিখ্যাত জলাশয় বা পুকুরের কথা বলতেই প্রথমেই আসবে লালদীঘি। লালদীঘি নাম ও কে এই জলাশয় খনন করেছে সেই নিয়ে নানা ধরনের মত পাওয়া যায়। জৈনিক লাল চাঁদ বসাক এই জলাশয়টি খনন করে ছিলেন বলে তাই তার নামানুসারে এই দিঘীর নাম হয় লাল দিঘী। আবার অন্য একটি মতানুসারে পুরোনো কেল্লার রঙ লাল ছিলো বলে এই দিঘীর নাম হলো লালদীঘি। প্রাণকৃষ্ণ দত্ত তার কলিকাতা ইতিবৃত্ত জানিয়েছেনএই দীঘির অন্য একটি ইতিহাসের বর্ণনা দিয়েছেন। তার মতে, গোবিন্দপুরের মুকুন্দরাম শেঠ বা তার পুত্রেরা এই দীঘি খনন করিয়ে থাকবেন। এই দীঘির ধারে তার কাছারি অবস্থিত ছিল। দোলের দিন রংখেলার পর দীঘির জল লাল হয়ে যেত বলে দীঘির নামকরণ হয় লালদীঘি। অষ্টাদশ শতকে ট্যাঙ্ক স্কোয়ার বা লালদীঘি-সংলগ্ন চত্বরটি ছিল ‘শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত’। এই দীঘির আয়তন ছিল ২৫ একর। ডাচ অ্যাডমিরাল স্ট্যাভার্নিয়াস ১৭৭০ সালে এই অঞ্চল পরিভ্রমণের পর লেখেন, ‘সরকারের আদেশক্রমে কলকাতাবাসীদের শুদ্ধ ও মিষ্টি পানীয় জল সরবরাহের উদ্দেশ্যে এই দীঘি খনন করা হয়। একাধিক জলের উৎস দীঘির জল সর্বদা সব স্তরে রাখতে সাহায্য করে। এটির চারিদিক রেলিং দিয়ে ঘেরা। তাই কেউ এই দীঘির জল ব্যবহার করতে পারে না।’ পূর্বে দীঘিটি আরও বড়ো ছিল। ওয়ারেন হেস্টিংসের আমলে দীঘিটি পরিষ্কার করে এর পাড় বাঁধিয়ে দেওয়া হয়। এই দীঘির জল সেই সময় ছিল শহরের সবচেয়ে মিষ্টি জল। পৌরসংস্থার জল সরবরাহ পরিষেবা চালুর আগে এই দীঘিই শহরের ইউরোপীয় বাসিন্দাদের জলের চাহিদা মেটাত। লাল দিঘী নিয়ে আরো কিছু ঘটনা না বললে ঠিক হবে না, শোনা যায় একবার এক মহিলা সম্ভবত এক মেমসাহেব লাল দিঘীর একটি গাছ থেকে ফুল তুলেছিল সেই জন্য তাকে পুলিশ একটাকা জরিমানা করে, এই ঘটনা ঘটে 1849 সালে। আরো শোনা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একবার ঠিক করা হয় লাল দিঘী কে ভরাট করা হবে। "ভারতবর্ষ' পত্রিকায় লেখা হয়, 'কলিকাতা ডালহৌসী স্কোয়ার বা লালদিঘী যে স্বানে অবস্থিত সে স্থানটিতে মোটর দাঁড়াইবার বা বিমান আক্রমণ হইতে রক্ষা পাইবার অন্ত একটি সুপ্রশস্ত খাঁটি তৈরী করিবার উদ্দেশে পুকুরটি ভরাট করার প্রস্তাব চলিতেছে। লালদিঘীর চারি পাড়ে বহু সরকারী ও বেসরকারী আপিস আছে, হুতরাং সে অঞ্চলে মোটর গাড়ির ভিড় হওয়াটা অসঙ্গত নয় এবং এককালে বহু মোটর গাড়ি দাঁড় করাইয়া রাখাও অপরিহার্য্য। তাছাড়া অফিস আদালত বহু লোক অধ্যুসিত হওয়ায় এ অঞ্চলে বিমান আক্রমণ হওয়াটাও অসম্ভব নয়। কাজেই এ স্থানে প্রস্তাবিত ঘাঁটি হওয়া দরকার, সুতরাং হইবেও, কিন্তু লালদিঘীর সহিত ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর আমলের ফোর্ট উইালয়দের স্মৃতি জড়িত, কাজেই অনেকে এই প্রস্তাবে দুঃখিত হইবেন।
![]() |
| বতর্মানে লাল দিঘী |
'বলা বাহুল্য, লালদিঘী ভরাটের প্রস্তাব কার্যকর হয়নি।
![]() |
| গোল দিঘী |
এবার বলি গোল দিঘীর কথা, গোল দিঘী নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। শোনা যায় কলকাতা নাকি একটি না তিনটি গোল দিঘী ছিলো। ললিত কুমার এই লিখেছেন,
মির্জাপুর পার্ক, কলেজ স্কোয়ার এমনকি ওয়েলিংটন স্কোয়ারকে তিনি গোল দিঘী বলতে শুনেছেন। আমরা রাধারমণ মিত্রের কলিকাতা দর্পণে দেখতে পাই, 1925 সালের অক্টোবর মাসে আঠেরো তারিখে কলেজ স্কোয়ারের নাম পাল্টে রাখা হয়েছিল বিদ্যাসাগর উদ্যান। যেদিন এই নতুন নাম করেন হয়, সেই দিন ডাক্তার সুকুমার সেন তার বক্তব্যে বলেন যে কলেজ স্কোয়ার নামটি আসল নয়, এই জায়গায় আসল নাম হলো গোল দিঘী। তিনি আরো বলেন যে দিঘীটি গোল বলে এর নাম গোল দিঘী না এখানে গোল পাতা জন্মাতো বলে এর নাম গোল দিঘী। রাধারমণ মিত্র এই দিঘীর নামকরণ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। অবশেষে এই দিঘীর আসল নামকরণ জানতে পারেন। তিনি জানিয়েছেন যে শিশির ভাদুড়ীর কাছ থেকে তিনি নামকরণ এর আসল কারণ জানতে পারেন। ঠিকই ধরেছেন ইনি সেই বিখ্যাত অভিনেতা শিশির ভাদুড়ী । উনি বঙ্কিম চাটুজ্যে স্ট্রিটের এক বইএর দোকানে প্রায়া আসতেন, সেখানে রাধারমণ মিত্র তাকে জিজ্ঞেস করেনা গোলদিঘী তো চৌকো কিন্তু তাও নাম কেন গোল দিঘী? তখন ভাদুড়ী মশাই জানান যে গোল দিঘী আগে গালাকৃতি ছিল। পরে 1912 - 13 সালে মাটি ফেলে চৌকো করা হয়েছে। রাধারমণ মিত্র তার কলিকাতা দর্পণে আরো জানিয়েছেন যে 1825 সালে মেজর শালচ একটি ম্যাপ তৈরি করেন সেখানে তৎকালীন কলকাতায় কর্নয়ালিস স্ট্রিট, কলেজ স্কোয়ার, ওয়েলিংটন স্ট্রিট, ওয়েলেসলি স্ট্রিট এর উল্লেখ্য আছে আর তার সাথে একটা করে স্কোয়ার বা ট্রাঙ্ক মানে পুকুর দেখানো হয়েছে সেই ম্যাপে। ওয়েলেসলি স্কোয়ারের পুকুর চৌকো, ওয়েলিংটন স্কোয়ারের পুকুর ওভাল আকৃতির একমাত্র কলেজ স্কোয়ারের পুকুরের আকৃতি গোল দেখানো হয়েছে ঐ ম্যাপটিতে।
![]() |
| সেই ম্যাপ |
1833 সালে ট্যাসিনের ম্যাপেও মেজর শালচ মতো কলেজ স্কোয়ারের পুকুর এর আকৃতি গোল ছাপা হয়েছে।
![]() |
| হেদুয়ার সেই পুকুর |
এবার বলি হেদুয়ার কথা আবার রাধারমণ মিত্রের কলিকাতা দর্পণে দেখতে পাই কর্নওলিস স্কোয়ারের বাংলা নাম ছিল হেদো। আর হেদো বা হেদুয়া এসেছে হ্রদ শব্দ থেকে। ডাক্তার সুকুমার সেন বলেছেন হেদো মানে নাকি মজা পুকুর, বর্ধমান জেলায় নাকি এইরকম অনেক পুকুর বা দিঘী দেখতে পাওয়া যায়। আবার এই কথা জানা যায় যেই পুকুরটি থেকে এই জায়গায় নামটি এসেছে সেই পুকুর টি নাকি রাজা নন্দ কুমারের ছিল। পরে সাহেবরা এই পুকুরটির সংস্কার করে নাম রাখেন কর্নওলিস স্কোয়ার। শোনা যায় স্বামী বিবেকানন্দ বাড়িতে এই জল যেত। নগেন্দ্রনাথ বসু জানিয়েছেন সেই সময় হেদুয়া জল সবচেয়ে মিষ্টি ছিল। মহেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছেন হেদুয়া জল মিস্টি চাকরেরা সেই হেদুয়া জল আনতো, গঙ্গা জলে পোকা হতো না। কিন্তু হেদুয়ার জল কিছুদিন রাখলেই পোকা হতো। পরে কলের জলে একই ব্যাপার লক্ষ্য করেছেন মহেন্দ্রনাথ দত্ত।
![]() |
| মনোহর দাস তড়াগ |
এই পুকুরটি তৈরির উদ্দেশ্য ছিল গরুদের জলখাওয়ার জন্য। বর্তমানে অবশ্য গরুরা খুব প্রাধান্য পাচ্ছে খবরের শিরোনামে। সে যাই হোক পুকুর টির অবস্থান হলো, ময়দানের কাছে। পুকুরটি একটি নাম রয়েছে, পুকুরটির নাম হলো মনোহার দাস তড়াগ। এই তড়াগ কথার মানে হলো পুকুর বা জলাশয়। হিন্দি তে জলাশয় কে বলা হয় তালাব। জানা যায় গোপাল দাস শাহের ছেলে মনোহার দাস শাহ আঠেরো সালে শুধু মাত্র গরুদের পানিয় জলের জন্য এই পুকুর টি খনন করেছিলেন। পুকুর খননের উদেশ্য ছিল ময়দানে চড়তে আশা গরুরা এই পুকুরের জল খেয়ে তৃষ্ণা মেটাতে পারে। শুধু কী তাই প্রায় দুবিঘা জমির উপর এই পুকুর খনন করা হয়েছিল, এমনকি পুকুরের কাছে একশো বিঘে জমি কিনে সেখানে তৃণভোজী প্রাণী চড়ানো হতো। শুধু গরু অন্যান্য তৃণভোজী প্রাণী এই পুকুরের জল খেয়ে তৃষ্ণা মেটাতো। এই পুকুরের চার কোনায় অষ্টোভূজার চারটি মন্দির রয়েছে সেখানে শিব,দূর্গা,বিষ্ণু ও সূর্য মূর্তি ছিলো। এখন মন্দির গুলি আছে কিন্তু বিগ্রহ আর দেখতে পাওয়া যায় না। কয়েক বছর আগেও এই জলাশয় আবর্জনায় ও ঝোপ-ঝাড়ে ঢেকে ছিল। জঙ্গল ও নোংরা ভর্তি পুকুরটির পাশে কেউ ঘেঁষতেই চাইত না। তবে এখন এই পুকুরটি কে নতুন জীবন দান করা হয়েছে। চারদিকে রেলিং দিয়ে ঘিরে, সাইনবোর্ড লাগিয়ে, পাড় সুন্দর করে বাঁধিয়ে এমন ঝকঝকে করে তোলা হয়েছে যে এখন এটি চোখে না পড়াটাই আশ্চর্যের। পুকুরটির পূর্ব পাড়ে একটি বড় মার্বেল পাথরের ফলকে ইংরেজি, হিন্দি ও বাংলায় এই পুকুরের ইতিহাস লেখা আছে।
![]() |
| সেই ফলক |
১৯৪৮ সালের ১২ অক্টোবর বিজয়া দশমীর দিনে রাজ্যপাল ডঃ কৈলাশনাথ কাটজু এই ফলকের আবরণ উন্মোচন করেন বলে জানা যায়।
এবার বলি আরো এক পুকুর গল্প, এই পুকুর টি একসময় ছিল, এবং সেই জন্য হয়তো এই জায়গায়ার নামে পুকুর শব্দ টি রয়েছে। কলকাতায় অনেক গুলি যায়গার মধ্যে একটি যায়গার নাম মনোহর পুকুর। তখন কলকাতা ছিল জঙ্গলে ঘেরা ব্রিটিশরা এসেছে ঠিকই কিন্তু শহর গড়তে দেরী আছে, সেই সময় খুব বাঘের ও ডাকাতের আক্রমণ হত কলকাতায়। সেই রকমই একদিন এক ডাকাত সর্দার তার দলবল নিয়ে চলছে ডাকাতি করতে, কিন্তু যাওয়ার একটি ছোট্ট ছেলে কে খুঁজেপায় সর্দার। ছেলেটির কাছ থেকে জানা যায় বাঘের আক্রমণে তার পরিবারের সদস্যরা প্রাণ হারিয়েছে। ছেলেটিকে দত্তক নেয় সেই ডাকাত সর্দার এবং ছেলেটির নাম রেখেছিলেন হারাধন। হারাধন কে নিজের ডাকাত দলে না রেখে প্রাথগত শিক্ষায় শিক্ষিত করে সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনে ডাকাত সর্দার মনোহর। এই হারাধনের জন্য অনেক পাল্টে গেছিল ডাকাত সর্দার মনোহর। হারাধন কে মৃত্যুর আগে মনোহর বলেগেছিলো মানুষের সুবিধার জন্য একটি পুকুর ও কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে। কথা রেখেছিলেন হারাধন পুকুর ও কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর পুকুরটি নাম রাখেন তার দত্তক বাবার নামানুসারে মনোহর পুকুর। অনেক ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায় বর্তমানে দেশপ্রিয় পার্কের কাছে পুকুরটি ছিল। আবার অন্য সূত্র দাবি করেছে ঐ পুকুরটির উপর তৈরি হয়েছে দেশপ্রিয় পার্ক। ঠিক জানি না কোনটি সঠিক তথ্য।
শ্যামপুকুর লেন বা শ্যামপুকুর স্ট্রিট কলকাতায় এখনো রয়েছে, কিন্তু পুকুর টি আর নেই। এই বিষয়ে 1892 সালে নগেন্দ্রনাথ বসু জানিয়েছেন যে 1749 সালে ব্রিটিশ গর্ভামেন্টের কাগজে শ্যামবাজারের কথা জান যায়। এবং এও বলা হয় যে সেই সময় এখানে একটি বড় দিঘী ছিল, আর এই দিঘী বা পুকুরের নাম ছিল শ্যামপুকুর। কিন্তু গতবছর মানে 1891 পুকুরটি কে বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে কারণ পুকুরটি দূষিত হয়ে গেছিল। কলকাতায় আর যে কত জান অজানা পুকুর রয়েছে বা ছিলো। কিন্তু সবাই কে মনে রেখেছে আমাদের কলকাতা।
ছবি সূত্র - Internet
তথ্য সূত্র - কলিকাতা দর্পণে এবং কলিকাতা পউরকথআ
https://inscript.me/history-of-dharmatala-and-manohar-pukur-names-in-old-kolkata-city
- Get link
- X
- Other Apps








Comments