ভুলে যাওয়া আর্মেনিয়ান ঘাট

আর্মেনিয়ান ঘাট 

 কলকাতার বুকে বয়ে চলেছে মা গঙ্গা। আর এই গঙ্গা নদীকে ঘিরে রয়েছে বিভিন্ন ঘাট। রাধারমণ মিত্রের কলিকাতা দর্পণে অনেক ঘাটের কথা উল্লেখ রয়েছে। সে ঠাকুর বাড়ির ঘাট কিংবা রুস্তমজির ঘাট। আবার কোন ঘাট পুরুষদের ঘাট আর কোন ঘাট মহিলাদের সেই বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। তবে যদি গঙ্গার ঘাটের কথা বলতেই হয় তবে প্রথমে বলতে হবে চাঁদপাল ঘাটের কথা। এখানে কিন্তু আছে, আসলে প্রথমে তো ব্রিটিশরা কলকাতায় পা রাখেনি, ব্রিটিশদের আগে পা পড়ে আর্মেনিয়ানদের। শোনা যায় গ্রেট আলেকজান্ডার যখন ভায়া আর্মেনিয়া হয়ে ভারতের দিকে অগ্রসর হয়, তখন কিছু আর্মেনিয়ান যুবক আলেকজান্ডারের 

সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ভারতে চলে আসে। পরবর্তীকালে আর্মেনিয়ান ব্যবসায়ীরা ভারতে যাতায়াত শুরু করে, কোনো কোনো আর্মেনিয়ান ব্যবসায়ীরা স্থায়ী ঠিকানা হয়ে যায় কলকাতা। কিন্তু ব্যবসা বাণিজ্য করতে হবে, আর তখন ব্যবসা বাণিজ্য অন্যতম ছিল জল পরিবহন আর সেই জন্য তৎকালীন কলকাতায় তৈরি হয়েছিল আর্মেনিয়ান ঘাট। এই ঘাটটি তৈরি করেছিলেন অবশ্যই আর্মেনিয়ান ব্যবসায়ী ম্যানুয়াল হাজার মালিয়ান 1734 সালে। ইনি আবার হুজুরিমাল নামে পরিচিত ছিল। কলকাতায় আর্মেনিয়ান মূল ব্যবসা ছিল মশালার। বলা হয় বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের ডকিং মোকাবিলা করার জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়। সেই সময় জনসাধারণ এই আর্মেনিয়ান ঘাট কে বলতো আরমানি ঘাট। এই ঘাটটির অবস্থান হচ্ছে হাওড়ার মল্লিক বাজার মানে ফুলের বাজার পাশে এই ঘাটটির অবস্থান। এই ঘাট ছিল লোহায় মোড়া এবং সুন্দর ভাবে ডিসাইন করা ঘাটটি খুব জনপ্রিয় হয়েছিলো সেই সময় জনসাধারণের মধ্যে। তবে কে এই ঘাট টা ডিসাইন করেছিল সেটা জানা যায় নি। শুধু মাত্র ব্যবসা বাণিজ্য হতো না এই ঘাটটি তে, আর সব ঘাটের মতো এই ঘাটে স্নান, পুজো সবই হতো। এরপর ভারত তথা বাংলায় ঘাঁটি গড়ল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা কে হারিয়ে। 1854 সালে 15 আগস্ট ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানি হাওড়া ও হুগলির মধ্যে দিনে দুবার পরিবহন ব্যাবস্থা শুরু করে, তার মধ্যে অবশ্য বালি, শ্রীরামপুর এবং চন্দননগরে ফেরি গুলি দাঁড়াত। ফার্স্টক্লাস টিকিটের দাম ছিল তিন টাকা আর তৃতীয় শ্রেণীর মানে thard class টিকিটের দাম ছিল সাত আনা। এই আর্মেনিয়ান ঘাটেই ছিল টিকিট কাটার অফিস। 



তবে এখানে বলে রাখা দরকার যে 1847 সালের আগে পর্যন্ত এই ঘাটে নৌকা বা ফেরি গুলির কোনো নির্দিষ্ট ভাড়া এবং কত জন লোক একটি ফেরি বা নৌকায় চড়তে পারবে সেই বিষয়ে কোনো নিয়ম ছিল না। যার ফলে বহু নৌকা ডুবি হয় অনেক মানুষ প্রান হারান। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বণিক এবং কলকাতার বাগশ অ্যান্ড কোম্পানি প্রধান জন বাগশ এবং তাঁর স্ত্রী ও বড় মেয়ে এই আর্মেনিয়ান ঘাট নৌকা ডুবির জন্য প্রান হারায়। তাদেরকে সমাধিস্থ করা কলকাতার সাউথ পার্ক স্ট্রিট গোরস্থানে। হাওড়া প্লাটফর্ম থেকে রেল এবং লঞ্চ বা স্টিমারের জন্য টিকিট কাটার ব্যবস্থা করা হয়, সেই সময় আর্মেনিয়ান ঘাট আরো জমজমাট হয়ে উঠেছিল, যখন আসামের কাছাড়ে যাওয়ার জন্য এখান থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। কিন্তু আর্মেনিয়ান ঘাট থেকে আসামের যাওয়ার জন্য জাহাজ চলাচল ব্যার্থ হয়। তার বদলে জগন্নাথ ঘাট থেকে আসামের যাওয়ার জাহাজ পরিষেবা চালু হয়।  

এদিকে 1854 থেকে 1874 সালে কালকাতা স্টেশন আর্মেনিয়ান ঘাটের জন্য টিকিট কাটার ব্যবস্থা ছিল আর আগেই বলেছি হাওড়া প্লাটফর্মে রেল এবং লঞ্চ বা স্টিমারের জন্য টিকিট কাটার ব্যবস্থা ছিল। 1873 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ট্রাম কোম্পানি আর্মেনিয়ান ঘাটে ফেরি যাত্রীদের যাতাওয়াত এর সুবিধার জন্য শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট স্ট্রিট অবধি 2.4 মাইল ঘোড়ায় টানা ট্রাম রুট চালু করে, তবে সেটা ছিল ট্রায়াল পরিসেবা। হাওড়ায় 1874 সালে পন্টুন ব্রিজ চালু হলে আর্মেনিয়ান ঘাট থেকে রেলওয়ে কোম্পানির ফেরি পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। আর ট্রাম কোম্পানির ট্রায়াল পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়, বলা হয় যে

বউবাজার স্ট্রিট, ডালহৌসি স্কোয়ার এবং স্ট্র্যান্ড রোড হয়ে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত নতুন মিটার-গেজ ঘোড়ায় টানা ট্রাম ট্র্যাক স্থাপন করে।

সেই ট্রাম


 1902 সালে পরিষেবাটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে লেফটেন্যান্ট কর্নেল এফ. এস টেইলর এর এই নোট থেকে জানা যায় "is observed that, on the completion and opening of the

Hooghly Floating Bridge, the passenger station at Armenian Ghat was closed, but the landing-stages are still

used to a limited extent, chiefly when the bridge is opened for the passage of ships. Colonel Taylor suggested that "the site be now restored to Government for transfer to the Port Trust, who can utilize it most advantageously; but, he stated, "the Agent and the Board of Directors are

desirous of retaining it as an office for the Traffic Manager, East Indian Railway Company." Colonel Taylor was also of opinion that the interests of the public will best be met by "leaving the landing-stage and approaches to Armenian Ghat in the hands of the East Indian Railway Company, and transferring the remainder of the site to the Port Commissioners, on condition that compensation be paid by the Commissioners to the Company for the buildings surrendered, and that the Port Commissioners construct a new approach road and remove a portion of the covered way as shown on the plan"


স্ট্রান্ড ব্যাঙ্ক রোডের উপর এখন ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানি তৈরি আর্মেনিয়ান গুদাম ঘরটি এখন দেখা যায়। এখন ম্যানুয়াল হাজার মালিয়ান তৈরি আর্মেনিয়ান ঘাট টি অন্যতম হেরিটেজ হিসেবে রয়েছে এবং সেই কাঠামোটি কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের অধীনে পরে। কিন্তু আর্মেনিয়ান ঘাটের ইতিহাস মলিন হয়ে যাচ্ছে দিনের পরদিন আর কোনো নৌকা বা ফেরি চলাচল করে না এই ঘাট থেকে। 


ছবি সূত্র - internet

তথ্য সূত্র - https://puronokolkata.com/2015/05/28/armenian-ghat-calcutta-1734/

 https://ekolkata.blogspot.com/2019/07/dip-into-armenian-ghat.html

Comments