- Get link
- X
- Other Apps
Posted by
Tiki liki
on
- Get link
- X
- Other Apps
![]() |
| গ্রীক অর্থডক্স চার্চ |
আমাদের প্রিয় শহর কলকাতায় কিংবা বাংলায় অনেক মানুষ এসেছিলেন এবং আসছেন। যদি প্রাচীন কাল থেকে শুরু করলে দেখা যাবে গাঙ্গ বা হুগলি নদীর মাধ্যমে ডাচ, আর্মেনিয়ান, পর্তুগিজ এবং ব্রিটিশরা আমাদের বাংলায় ঘাঁটি গড়ে তুলেছিল, এককথায় দেখতে গেলে দেখা যাবে পুরো ইউরোপে আমাদের বাংলায় ছড়িয়ে গেছিলো।
তখন যদি ইউরো লিগ হতো তাহলে সেটা আমাদের এখানেই হতো বলে মনে হয়। কিন্তু জানেন গ্রীকরা আমাদের কলকাতায় এসেছিলো, হ্যাঁ গ্রীকদের কথা বলতেই, সেই দুর্ধর্ষ যোদ্ধা রাজা আলেকজান্ডার কথা তো মনে পরবেই যিনি ভারতে এসেছিলেন কিন্তু ভারত দখল করেন নি। হ্যাঁ সেই গ্রীকদের কথাই বলছি। গ্রীকদের চার্চ, গ্রীক সেমেট্রি এবং গ্রীকদের কথা স্মরণ করে তৈরি ফাউন্টেন রয়েছে আমাদের কলকাতায়। বলাহয় আলেকজান্ডার ভারতে এসে পুরুর রাজ্য আক্রমণ করে এবং পুরু কে বন্দি করার পর তিনি জানতে চান পুরু সাম্রাজের বাইরে আর কি রয়েছে, তখন এক দুত জানায় যে এর একটি মরুভূমি রয়েছে আর তারপর গঙ্গা নামে একটি নদী রয়েছে,তারপর আরও একটি রাজ্য রয়েছে। সেই রাজ্যের নাম গঙ্গারিদায়ী, মনে করা হয় সেই গঙ্গারিদায়ী নাকি আজকাল বাংলা।
মেগাস্থিনিসের ইন্ডিকাতে গঙ্গারিদায়ী ওরফে আজকের বঙ্গদেশ উল্লেখ আছে। তবে মেগাস্থিনিসের ইন্ডিকার সত্যি কোনো অস্তিত্ব আছে কিনা সেই বিষয়ে যঠেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। জানা যায় গ্রীকরা আমাদের বাংলায় বানিজ্য করতে এসেছিল বর্তমানে তমলুক আগে যার নাম ছিল তাম্রলিপ্ত বন্দরে জাহাজ থেমেছিল। এই তমলুক বা তাম্রলিপ্ত কে গ্রীকরা বলতো "তামালিট"। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে বাংলায় গ্রীকদের বানিজ্য বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এবার আশাযাক ব্রিটিশ শাসনাধীন বাংলায়া, আরো ভালো ভাবে বললে কলকাতায়। কলকাতায় তো অনেক চার্চ আছে, এই চার্চ টি তাদের মধ্যে অন্যতম সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি, তিনি কোনা যুক্ত ছাদ। প্রশ্ন উঠতে পারে কি এর বিশেষত্ব! এই চার্চটির বিশেষত্ব হলো এটি একটি গ্রীক চার্চ আর এই চার্চটি একমাত্র গ্রীক চার্চ ভারত তথা এসিয়ার মধ্যে।
![]() |
| বর্তমানে সেই চার্চ |
তাহলে বুঝতেই পারছেন এর স্পেশালিটি। এই চার্চটির তৈরি একটা গল্প আছে, 1770 সাল নাগাদ গ্রীস থেকে বহু মানুষ ব্যবসা করতে বিভিন্ন দেশে যাচ্ছিল তাদের মধ্যে একজন ছিল প্যানাইওটিস আলেকজান্দ্রোস আরগিরিস ( বিভিন্ন যায়গায় নামান্তর দেখা যায় ) ক্যাপ্টেন থ্রনহিলের সঙ্গে কলকাতায় আসছিলেন আরগিরিস দোভাষীর কাজ করতেন, (হোমসের কথা মনে পড়ে গেল) সমুদ্র ঝড় আরম্ভ হলো জাহাজ প্রায় ডুবে যাবে, এরকম অবস্থায় আরগিরিস প্রার্থনা করলেন যদি ঠিক ভাবে কলকাতায় পৌঁছাতে পারি তবে একটি চার্চ বানাবো। অবশেষে ভালো ভাবেই কলকাতায় পৌছালেন আরগিরিস। এবার শুরু হলো চার্চ বানানোর কাজ, আগে তো জমি লাগবে চার্চের জন্য সেই জন্য আরগিরিস সঙ্গে আরও গ্রীক বনিকরা জমির জন্য পিটিসন জমা দিলেন। সেই ভারতের গর্ভনর জেনারেল ছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস। কলকাতার আমড়াতলা স্ট্রিটে 1778 সালে আরগিরিসের চার্চের ভিত্তি স্থাপন হয় কিন্তু দুঃখের বিষয় হল 1777 সালে ঢাকায় মৃত্যু হয় প্যানাইওটিস আলেকজান্দ্রোস আরগিরিসের। কিন্তু চার্চের কাজ থেমে থাকেনি আরগিরিসের এস্টেট থেকে তিরিশ হাজার টাকা এবং ব্রিটিশ ও গ্রীক ব্যবসায়ীদের অবদানের মাধ্যমে 1780 সালে তৈরি হয় এই চার্চটি। কলকাতার প্রথম গ্রীক অধিবাসী প্যানাইওটিস আলেকজান্দ্রোস আরগিরিসের নিয়ে আরো একটি গল্প শোনা যায়, ওয়ারেন হেস্টিংস মিশরের ব্রিটিশদের ব্যবসা বাণিজ্য করার অনুমতি পাওয়ার জন্য আরগিরিসকে মিশরের কায়রোতে পাঠিয়েছিলেন একটি কূটনৈতিক কাজে, সেই কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছিলপ্যানাইওটিস আলেকজান্দ্রোস আরগিরিস, আর সেই জন্য ওয়ারেন হেস্টিংস চার্চের জন্য জমি দান করেছিলেন। আবার এও বলা হয় আরগিরিসকে ওয়ারেন হেস্টিংস মোচা এবং জেন্ডা নামক দুটি যায়গায় পাঠিয়েছিলেন একটি গোপন কূটনৈতিক কাজে। ফেরার সময় সমুদ্র ঝড় হলে চার্চ তৈরির প্রার্থনা করেন আরগিরিস ভালো ভাবে কলকাতায় পৌছালেন তিনি চার্চ তৈরি করেন। কোন গল্পটা সত্যি সেইটা জানি না, কিন্তু চার্চ টি সত্যি এইটা বলতে পারি।
![]() |
| চার্চের ভিতরে |
এই চার্চটি গ্রীক অর্থডক্স চার্চ নামে পরিচিত। কিন্তু আমড়াতলা স্ট্রিটে চার্চটিকে দেখা যায় না, 1925 সালে চার্চ কতৃপক্ষ চার্চটিকে সরিয়ে নিয়ে আসে এখন যেখানে চার্চ টি দেখা যায় মানে কালীঘাট ট্রামডিপোর কাছে। গ্রীকদের এই চার্চ টি ডোরিক রীতিতে তৈরী। এই কথা চার্চের দেওয়াল থেকেই জানা যায়।
এখানে বলে রাখা দরকার যে আরগিরিসের সমাধি রয়েছে কলকাতার একমাত্র গ্রীক গোরস্থানে। এবার বলি এই গ্রীক গোরস্থানের কথা, এই কবরস্থান টি ফুলবাগান অঞ্চলে রয়েছে।
![]() |
| গ্রীক কবরস্থানের গেট |
ভারতের স্বাধীনতার পরে কলকাতায় আর কোনো গ্রীক অধিবাসী নেই। এই কবরখানার সবচেয়ে পুরনো কবর হলো আরগিরিসেরই । এছাড়া ও আরো কিছু মার্বেল ফলক যুক্ত সমাধি রয়েছে। জানা যায়, কবরস্থানে একটি চ্যাপাল রয়েছে কিন্তু সেটি তালা বন্ধ, কারণ পাদ্রি মারা যাওয়া পর থেকেই এই চ্যাপাল বন্ধ হয়ে যায় কারণ আর কোনো গ্রীক অধিবাসী কলকাতায় নেই।
![]() |
| গ্রীক কবরস্থানের আর একটি সমাধি |
1777 সাল থেকে 1973 পর্যন্ত এই কবরস্থান চালু ছিলো। শেষ কবর দেওয়া হয় 2003 সালে এক ব্যাক্তিকে যিনি গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের দিক্ষিত ছিলেন। এই কবরস্থানটি ছাব্বিশ কাঠা জমির উপর তৈরি হয়েছিল, আর এখানে কবরের সংখ্যা তিনশোটি। আবার কেউ কেউ বলে কবরের সংখ্যা একশো কুঁড়িটা।
![]() |
| আরগিরিসের সমাধি |
শুধু গ্রীক কবরস্থান বা চার্চ নেই কলকাতায়, একটি বিল্ডিং রয়েছে যার সঙ্গে গ্রীকদের যোগসুত্র পাওয়া যায়।
![]() |
| Ralils Building |
সেই বিল্ডিংটির নাম হলো রালিস বিল্ডিং (Ralils Building) আসলে পাঁচ ভাই ছিল তারা গ্রিসে একটা কোম্পানি তৈরি করে, তাদের মধ্যে একভাই নাম নাকি Pandia তিনি ঠিক করেছিলেন ভারতেও নিজেদের ব্যবসাকে ছড়িয়ে দেওয়ার, সেই জন্য কলকাতায় ও মুম্বাইতে ( তৎকালীন বোম্বে ) নিজের অফিস খোলেন। কিন্তু পুরনো কলকাতার অধিবাসীদের রালিস সিলিং ফ্যানের কথা নিশ্চয়ই মনে পড়বে হেয়ার স্ট্রিটের কাছে এই বড় বড় পুরোনো থাম যুক্ত Ralli’s Building টি দেখে এখন ওই বিল্ডিং এ রয়েছে লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অফিস।
![]() |
| Panioty Fountain |
সব শেষে বলি কলকাতায় গ্রীকদের আরো একটি স্থাপত্য কথা বলে, এই স্থাপত্যটি একটি ফোয়ারা যার নাম প্যানিওটি ফাউন্টেন (Panioty Fountain) প্যানিওটি নামটি এসেছে ডেমেট্রিয়াস প্যানিওটি থেকে। এই প্যানিওটি হলো আরগিরিসের প্রৌপ্রত্র, এককথায় বলতে গেলে নাতি। প্যানিওটি কলকাতায় নিজের কেরিয়ার শুরু করেছিল রাইটার হিসেবে, কিন্তু প্যানিওটির উথ্যান ছিলো চমকপ্রদ।
![]() |
| ডেমেট্রিয়াস প্যানিওটির সমাধির ফলক |
উনি গভর্নর জেনারেল লর্ড রিপনের সহকারী সেক্রেটারি পদে নিযুক্ত হন, ওনার স্ত্রী এর নাম ছিল প্যেরেনে ( Perrine ) ইনি লেডি ডাফরিনের দোভাষীর কাজ করতেন যিনি আবার ভাইসরানী ছিলেন। লর্ড রিপনের পরে বহু ভাইসরয় হয়ে কাজ করেছিলেন। 1895 সালে সিমলায় ডেমেট্রিয়াস প্যানিওটি মৃত্যু হয়। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে এই ফোয়ারা কে বানালো! এই ফোয়ারাটি বানিয়ে ছিলেন লর্ড কার্জন, ডেমেট্রিয়াস প্যানিওটির মৃত্যুর তিন বছর পর ওনাকে স্মরন করে। এই ফোয়ারাটি এখন আছে, ধর্মতলার কার্জন পার্কে। যেখানে ওই ফোয়ারাটি রয়েছে আগে ঐ যায়গাটির নাম ছিল ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিট। যখন ফোয়ারাট চালু ছিল তখন অনেক মানুষের তৃষ্ণা মেটাতো ফোয়ারাটি। চারটি থামযুক্ত ফোয়ারাটি মার্বেল পাথরের তৈরি, এই মার্বেল পাথর জয়পুর থেকে আনানো হয়েছিল। এই ফোয়ারাটিতে ইন্দো সারাসেনিকের কাজ দেখা যায়, এখানে বলে রাখা দরকার যে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, রাষ্ট্রপতি ভবন এমনকি মুম্বাই এর তাজ হোটেল ও এই নির্মান শৈলী দেখা যায়। এখানে আরো একটা তথ্য দিয়ে রাখি সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা পরশ পাথরে এই ফোয়ারা কে দেখাযায়।
![]() |
| পরশ পাথরে সেই দৃশ্য |
গ্রীক কবরস্থান এবং এই ফোয়ারা টি খুব অজত্নে পড়ে আছে আর প্রতিদিন জানাচ্ছে কলকাতায় গ্রীকদের বসবাসের ইতিহাস। এই শহরে যে কত মানুষ এসেছে সেই সব ঠিকানা এখনো রেখে দিয়েছে আমাদের তিলোত্তমা কলকাতা।
ছবি সূত্র - internet
https://www.getbengal.com/details/panioty-kolkatas-marble-drinking-water-fountain-by-the-greeks
https://www.bongodorshon.com/home/story_detail/one-day-kolkata-was-also-the-city-of-the-greeks
https://www.peepultree.world/livehistoryindia/story/living-culture/kolkatas-greeks-a-fading-memory
Greek cemetery
Greek Heritage of Kolkata
Greek history of kolkata
Greek in Kolkata
Greek Orthodox Church
Heritage
History
Panioty Fountain
Rallies Building
- Get link
- X
- Other Apps










Comments