- Get link
- X
- Other Apps
Posted by
Tiki liki
on
- Get link
- X
- Other Apps
![]() |
| বেক বাগান |
কলকাতার বিভিন্ন রাস্তার নামের আছে বিভিন্ন ইতিহাস। কলকাতার অনেক রাস্তা এবং এলাকার নামকরণ করা হয়েছে, বিভিন্ন সাহেবের নামে, তবে এখন আর সাহেব নেই কিন্তু রাস্তা রয়েছে। আবার অনেক রাস্তা বিভিন্ন জমিদারদের নামে আছে যেমন রাজা শুবোধ মল্লিক স্কোয়ার। আর স্বাধীনতা পর বিভিন্ন রাস্তা বা রাজপথের নাম বদল করা হয়েছে বিভিন্ন স্বাধীন আন্দোলনের নেতাদের নামে। আবার যেহেতু কলকাতায় অনেক বাগান ছিল, সেই জন্য অনেক রাস্তার নামকরণ হয়েছে বাগান দিয়ে, যেমন হাতি বাগান বলা হয় 1756 সালে সিরাজদ্দৌলা কলকাতা আক্রমণ করে। সেই সময় বাংলার শেষ নবাব সিরাজদ্দৌলার হাতি রাখা হয়েছিল এই অঞ্চলের একটি বাগানে সেখান থেকেই এই অঞ্চলের নাম। আবার আর একটা মত বলছে এই অঞ্চলে একজনের বাগান বাড়ি ছিল, তার পদবি ছিল হাতি সেখান থেকেই হাতিবাগান পরে নাকি মেহতাব চাঁদ মল্লিক সেই বাগান বাড়িটি কেনেন। আর এই মেহতাব চাঁদ মল্লিক হাতিবাগান বাজার তৈরি করেছিলেন। আরো একটা বাগানের নামে এলাকায় আছে আমাদের কলকাতায়। রুস্তমজী কাওয়াসজীর বাগান বাড়ি ছিল এই অঞ্চলে আর উনি ছিলেন পার্সি, তাই অঞ্চলের নাম পার্সি বাগান। সেই রকম আর একটা এলাকার নাম হলো বেক বাগান। যতদুর জানা যায় বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার পার্ক সার্কাস অঞ্চলের মধ্যে পরে এই বেক বাগান। এখানকার মানুষেরা বিশেষ করে স্থানীয় দোকানদার একে বলে ঢঙের বাজার। তবে কেন এমন নাম সেই উত্তর এখনো পাইনি। কিন্তু যেটা পেয়েছি সেটা ভারি interesting, Wikipedia তে বেক বাজারে নামের উল্লেখ থাকলেও, কেন এই নাম বা কার নামে এইরকম নাম হয়েছে সেটা নেই। অবশেষে ঐতিহাসিক P. Thankappan Nair বেক বাগান নামের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা করেছেন। নায়ার জানিয়েছেন, শ্লাচ ( schlach ) সাহেবের কলকাতার মানচিত্রে এই যায়গাটিকে বলা হয়েছে "বেগ সাহেব কা বাগিচা" এখানে শ্লাচ সাহেবের কথা বলে রাখা দরকার Major J. A. Schlach
![]() |
| কলকাতার মেপ |
লটারি কমিটির জন্য শহর জরিপ এবং পরিবেশ কথা মাথায় রেখে মানচিত্রটি তৈরি করেছিলেন। এই বাগানটি নাকি খুব বড় এবং ছড়ানো ছিল, পুরনো কলকাতায় এই রাস্তাটিকে নাকি বেগ বাগান লেন ( Baig Bagan Lane ) বলা হয়েছে, আমার ধারণা "বেগ" আসলে বড় বলে বলা হয়েছে। তাহলে এই সিদ্ধান্তে আসাই যায় যে, কলকাতার এই অঞ্চলের নাম সাহেবরা রেখেছিল। কিন্তু আবার প্রশ্ন থেকেই যায় কার নামে ? প্রথম দিকে নাম রাখা হয় বেক বাগান রো। এই রাস্তা টি লোয়ার সার্কুলার রোড অব্দি বিস্তৃত ছিলো। এই বেক বাগান এর বেক হলো গিয়ে হায়দার বেগ খান।
![]() |
| হায়দার বেগ খান |
ইনি ছিলেন ওধ বা অগধে নবাবের এর মন্ত্রীদের মধ্যে অন্যতম। এই হায়দার বেগ সাহেব কলকাতায় অগধে নবাবের একটা উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিলেন 1787 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। জানা যায় যে এই হায়দার বেগ খান অগধের অনেক প্রশাসনিক ব্যাপার বা বলা ভালো পুরো অগধের প্রশাসনকে তিনি সামলেছেন, যখন অগধের নবাব ভাইজার আসাফুদ-দৌলা কে নবাব পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।হায়দার বেগ খান সাহেবকে 1776 সালের আগস্ট মাসে অগধের নিরক্ষর মন্ত্রী হাসন রাজা খানের সহায়তার জন্য নিযুক্ত করা হয়। হায়দার বেগ খান সাহেব কে তার কাজের দক্ষতার জন্য 1789 সালে তাকে একটি উচ্চতর মন্ত্রী করা হয়।
![]() |
| আসাফুদ-দৌলা |
হায়দার বেগ খান সাহেব কলকাতায় এসেছিলেন 1787 সালের ফেব্রুয়ারি মাসের চার তারিখে, কলকাতায় এসেছিলেন ছয় কোম্পানি সেনা আর একশো পঞ্চাশ জন ঘোড়শয়ার নিয়ে কলকাতায় পৌছান। হায়দার বেগ খান কলকাতায় পৌছালে ক্যাপ্টেন জন কেনাওয়ে ( Captain John Kennaway ) কোম্পানির সৈন্যদের নিয়ে তার সঙ্গে ছিলেন মুর্শিদাবাদের নবাব মোবারিকুল দৌলা এবং আরো সব দেশয়ীরাজারা দেখা করতে এসেছিলেন। সেই সময় ক্যালকাটা গেজেট লিখেছিলো এই সপ্তাহের মধ্যে হায়দার বেগ খান কলকাতায় এসে পড়বেন, সেই জন্য জনৈক মিস্টার বারওয়েল বাড়ি হায়দার বেগ খান এর জন্য মিস্টার গ্লাডুইন বাড়িটি নিয়েছেন। এই খবরটি দেখেই বোঝা যাচ্ছে তে হায়দার বেগ খান কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে।
![]() |
| ক্যালকাটা গেজেট |
1787 সালের 5th April ক্যালকাটা গেজেট লিখছে যে হায়দার বেগ খান কয়েকদিন মধ্যেই কলকাতা ছাড়বেন, কিন্তু তার আগে নবাবের তরফে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বুঝিয়ে দেওয়া অগধের অবস্থা। লক্ষ্য করুন এখনো অব্দি উল্লেখ করিনি কেন, হায়দার বেগ সাহেব সুদূর অগধ থেকে কলকাতায় এসেছিলেন। জানা যায় তিনি নবাবের হয়ে তৎকালীন ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিসের সঙ্গে দেখা করতে। দেখা করার উদ্দেশ্য ছিল কর দেওয়া এবং অগধ থেকে যাতে একটু কম কর কোম্পানি তোলে সেই বিষয়ে আলোচনা করা। এখানে বলে রাখা দরকার যে এক জার্মান চিত্রশিল্পী, নাম Johann Zoffany ভারতের বিভিন্ন যায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন এবং সেই সময় মানে 1786 সালে দিল্লি আগ্রা ঘুরে পাটনা হয়ে কলকাতায় এসেছিলেন, ঠিক একই সময়ে হায়দার বেগ সাহেব কলকাতায় এসেছিলেন কর্নওয়ালিসের সঙ্গে দেখা করতে। আর মজার ব্যাপার হলো দুজনে পথ ছিলো একই। এইরকম সময় Johann Zoffany একটি ছবি আঁকেন যার নাম ছিল The "Embassy of Hyderbeck to Calcutta". জানা যায় লর্ড কর্নওয়ালিস ও ওয়ারেন হেস্টিংস হায়দার বেগ সাহেব খুব পছন্দ করতেন, কারণ তো আগেই বলেছি নবাব তার রাজত্ব এর দায়িত্ব দিয়েছিলেন এই হায়দার বেগ খান এর উপর, লর্ড কর্নওয়ালিস খান সাহেব বুদ্ধিমত্তা ও প্রশাসনিক ব্যাপারে তার অভিজ্ঞতা জন্য বাংলা প্রেসিডেন্সির মন্ত্রীদের মধ্যে হায়দার বেগ খান কে রেখেছিলেন।
![]() |
| Embassy of Hyderbeck to Calcutta |
লর্ড কর্নওয়ালিস ও হায়দার বেগ খানের প্রথম সাক্ষাৎকাতের ছয় বছরের মাথায় 1792 সালে মারা যান। সেই সময় কর্নওয়ালিস এবং হেস্টিংস খুব বিপদের মধ্যে পড়ে যায়। কাকে দেওয়া যায় হায়দার বেগ যায়গাটা, অবশেষে ঠিক করা হয় যে আলাম বলে এক জনৈক ব্যাক্তিক কে হায়দার বেগ যায়গায় বসানো হবে। এই আলম আমার অগধের নবাবের মন্ত্রী সভার এক মন্ত্রী ছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু লর্ড কর্নওয়ালিস মনে করতেন হায়দার বেগ যে যায়গাটি তৈরি করেছিলেন, সেই যায়গাটি আলমের জন্য নয়। তার মানে হায়দার বেগ সাহেব নিজের কাজের মাধ্যমে লর্ড কর্নওয়ালিসের মনে বেশ ভালো যায়াগা তৈরি করছিলেন। আর সেই জন্য ব্রিটিশরা ঠিক করছিলো কলকাতার একটি রাস্তার নামকরণ করা হবে এই হায়দার বেগ এর নামে। হায়দার বেগ এতটাই ব্রিটিশদের মনে দাগ কেটে ছিলো মে কোনো সাহেব নামে রাস্তার নামকরণ না করে একজন দেশীয় মন্ত্রীর নামে রাস্তার নামকরণ করে। নায়ার জানিয়েছেন হায়দার বেগ কে সম্মোধন করা হতো বাগ সাহেব (Baig Shahib) আর এখন বেক বাগান। আগের বলেছি কলকাতা মানচিত্রে এলাকাটির নাম ছিল বেগ সাহেব কা বাগিচা। জানা যায় হায়দার বেগ খান কলকাতায় এসে যে বাড়িটায় উঠেছিলেন সেই বাড়িটি বাগান অনেক বড় ছিল এবং সেগুলো সেই সময় সাধারণ ছিলো বলে মনে করা হয়, কারণ কোনো রাজপদস্থ কর্মচারী বা রাজপরিবারের লোকজন কিংবা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বড় অফিসারেরা কলকাতায় আসলে ঐ সব বাড়িগুলোতে থাকতে দেওয়া হতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেগ সাহেব কা বাগিচা নাম ছোট হয়ে হয় বেক বাগান। যেহেতু বাগিচা বাংলায় হয় বাগান তাই নাম হয় বেক বাগান।
হয়তো অনেকেরই জানা হয়ে ওঠে নি কে হায়দার বেগ খান, আর কেন ব্রিটিশরা এই এলাকার নাম এইরকম রেখে ছিলো। বর্তমানে বেক বাগানে অনেক বাজার দোকান রয়েছে, তারমধ্যে অনেক বাকারি রয়েছে আর অনেক দোকান আবার ব্রিটিশদের তৈরি বাড়িগুলোর মধ্যে তৈরি হয়েছে।
সব শেষে একটাই কথা বলা যায় আমাদের কল্লোলিনী কলকাতা এই সব যায়গাকে আগলে রেখেছে আর সেই জন্যেই বলে কলকাতা তুমি ও হেঁটে দেখ কলকাতা.....
ছবি সূত্র - internet
তথ্য সূত্র - Historian P. Thankappan Nair
Oudh and the East India Company (1785-1801)’, Purnendu Basu
- Get link
- X
- Other Apps






Comments