ভারতে তিনশো বছর আগেও ক্রিকেট খেলা হতো

প্রথম ক্রিকেট খেলা 

 

ক্রিকেট বিশ্বকাপ এই বছরের মতো শেষ হবে আজকেই, এই বার ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজনকারী দেশ হলো ভারত। কিন্তু সবাই আমরা জানি যে ক্রিকেট খেলা ব্রিটিশরা তৈরি করেছে। কিন্তু যদি বলি ভারতের কোথায় ক্রিকেট 

প্রথম খেলা হয়েছিল ? হ্যাঁ ঠিক দেখছেন ক্রিকেট ভারতেই খেলা হয়েছিল ইংল্যান্ডের পরই। 

কিন্তু যেই খেলা আবিষ্কার হলো ইংল্যান্ডে আর তারপর মনে হয় প্রথম দেশ হলো ভারত, যেখানে এই খেলা হয়েছিল। ICC ওরফে International Cricket Council ওয়েবসাইট থেকে জানতে পারছি যে, বিশেষজ্ঞদের মতে দক্ষিণ পূর্ব ইংল্যান্ডে বাচ্চাদের মাধ্যমে এই খেলা শুরু হয়েছিল। পরর্বতী কালে 1611 সালে প্রাপ্তবয়স্কদের খেলা হয়ে যায়। জানা যায় সেই বছরের অভিধান ক্রিকেট খেলা কে ছেলেদের খেলা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই খেলাটি ইংল্যান্ডের গ্রামের মধ্যে খুব প্রচলিত ছিল এবং সাতেরো দশকের মাঝামাঝি ইংল্যান্ডে প্রথম contory team তৈরি হয়। কিন্তু এই যে বলছি ক্রিকেট খেলা হয় প্রথম ভারতের কোন যায়গায় সেই তথ্য নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি রয়েছে। জানা যায় তিনশো বছর আগে ভারতে তখন পুরোপুরি ভাবে ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিনত হয়নি তখন ব্রিটিশরা ছিল ব্যাবসায়ি। দক্ষিণ গুজরাটের ঐ গ্রামটি হলো টঙ্কারি বন্দর, ঐ গ্রামে ব্রিটিশরা একটি বন্দর এবং কাস্টম হাউস আর স্থাই পুলিশ স্টেশনে চালু করেছিল। এবং ছিল একটি লাইট হাউস। ওখানেই ধাধার নদীর তীরে 1721 সালে এখানে প্রথম ক্রিকেট খেলা হয়েছিল। যায়গাটা হলো ভাদোদারা থেকে আশি কিলোমিটার দূরে। এবার প্রশ্ন উঠতে পারে কেন তারা এখানে এসেছিলেন ? একটি উত্তর হলো ব্যাবসার জন্য। আর দ্বিতীয় হলো, জানা যায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দুটি জাহাজ একটির নাম এমিলিয়া স্লুপ এবং অন্যটি হলো হান্টার গ্যালি ডিসেম্বর মাসে দুই তারিখে বোম্বে মানে এখনকার মুম্বাই থেকে রওনা হয় ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্য। জাহাজ গুলি মধ্যে ছিল অনেক ভারতীয় পন্য। তাদের ভয় ছিলো যে কানহাজী আংরের মারাঠা নৌবাহিনী তাদের আক্রমণ করতে পারে। আবার কাঠিয়াবাড়ি এবং সুলনাতপুরের প্রতিকুল আক্রমণ এড়ানোর জন্য ঐ দুটি জাহাজ কাম্বে উপসাগর তীর পারকরে কিন্তু হয়তো এর জন্য দুটি জাহাজই বসন্তের জোয়ার পায় না। যার ফলে তারা ধাধার নদীতে পৌছে যায়। দুই জাহাজের ক্যাপটেন হিয়ারিং এবং ডোগেট এর উপর দায়িত্ব ছিল জাহাজ গুলি কে কাম্বে উপকূল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার। হয়তো তারা জানতে না যে ধাঁধার নদীর পলি জমে যাওয়া অঞ্চলে ভালো তুলো চাষ হতো, আর উৎপাদন হতো জাম্বুসার পরগোনায়। লেফটেন্যান্ট স্টিভেনসন ও রেথেবোনের নেতৃত্বে জাহাজের কর্মীরা একদিনের জন্য জাহাজ থেকে নামে শারীরিক কসরত ও ক্রিকেট খেলার জন্য। এই তথ্যটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জানতো না। বোঝাই যাচ্ছে জাহাজে বিশেষ লোকজন ছিল না। এই সময় হয় দুটি জাহাজের উপর আক্রমণ, আক্রমণ করেছিল কুলি রা তারা ভেবেছিল জাহাজে নিশ্চয়ই অনেক সোনা হীরে জহরত রয়েছে। এই ঘটনার কথা জানতে পারি, 1737 সালের "A compendious history of the Indian wars."

সেই বই

 বই থেকে এই বইয়ের লেখক নাম জানা যায় ক্লিমেট ডাউনিং, ইনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চাকরি করতেন 1715 সালে 1723 অব্দি। ইনি অনেক কিছুই করতেন তাই ডাউনইং সাহেব কে মাল্টিটাক্সার বলা হয়েছে। ইনি নাবিক ছিলেন, shipman ছিলেন, আবার gun man ও ছিলেন। ডাউনিং সাহেব আরো লিখেছেন যে যখনি জাহাজ কোনো যায়গায় দাঁড়াতো তখন তারা, বিভিন্ন খেলা ধুলা ও শরীর চর্চা করতেন। এই খেলাধুলার মধ্যে ক্রিকেট ও ছিল, উনি আরো বলেছেন যে ধাধার নদীতে তারা জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আর এই অপেক্ষায় সময়ে তারা জাহাজ থেকে চরে নেমে ক্রিকেট খেলছিলেন। ডাউনিং সাহেব এই কথা ও উল্লেখ করেছেন যে, তারা যখন ক্রিকেট খেলছিলেন তখন অনেক স্থানীয় মানুষ তাদের খেলা দেখছিলেন। এমন কি এই খেলা দেখতে এসেছিলেন ঘোড়ায় চড়ে কয়েক জন মানুষ, তাদের হাতে ছিলো তলোয়ার এবং বাঁশের তৈরি লাঠি। ডাউনিং সাহেব জানিয়েছেন যে তাদের দুই জাহাজে মানে এমিলিয়া স্লুপ এবং হান্টার গ্যালি কয়েকজন ভারতীয় ছিলো, তারা এই খেলা কখনো দেখিনি, তাই তারা এই খেলা দেখছিলো তারা অবশ্যই খেলায় যোগ দেয়নি কারণ তারা এই খেলা কথা শোনেনি আর দেখেনি। কিন্তু জাহাজ কয়েকজন ইউরোপীয় ছিল তারা এই খেলায় যোগ দিয়েছিলেন। 

ডাউনিং সাহেব 


যেই সময়ের কথা হচ্ছে, ততদিনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জাহাজ ভারতের সমুদ্রে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, ব্রিটিশদের ভারতের সুতীর বা বস্ত্রের প্রতিখুব লোভ ছিলো, তখনো কোম্পানি সুরাটে ঢুকতে পারিনি কিন্তু বোম্বাই তে তখন প্লেগ মহামারি চলছিলো তাই কোম্পানির তখন ঘরবাড়ি ছিলো সমুদ্র। ডঙ্গায় তখন একদিকে ছিল মোঘল আর অন্য দিকে মারাঠ, আবশ্য ডাউনিং সাহেব ভাদোদারার রুস্তম আলী খানের খুব তারিফ করেছেন। মারাঠা অবশ্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথেই ছিলো। তখন ব্রিটিশদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো, ডাচ ও আর্মেনিয়ানরা। কিন্তু ব্রিটিশদের প্রভাব ছিল বেশি। ভারতীয় সিল্ক ও সুতি ইংল্যান্ডে রপ্তানি হতো। একটা ঘটনা কথা জানা যায় ভারতীয় পন্যের জন্য লন্ডনে দর্জিরা দাঙ্গা হাগাঙ্গা করেছিল, এক মহিলার গায়ে অ্যাসিড ছুঁড়ে ছিল তিনি ভারতীয় পণ্য তৈরি পোশাক পড়েছিল। তবে সত্যি কী জাহাজ গুলি আক্রমণ হয়েছিল কিনা এই নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। জানা যায় নদীর তীরে জাহাজ গুলির নোঙর করা হয়, এখানে আবার বলা হয়েছে জাহাজ গুলি 20 জন ইউরোপীয় ও 50 ভারতীয় ছিলো। যেহুতু জাহাজ অনেক পন্য ছিলো সেই জন্য জাহাজ গুলি রক্ষার জন্য আলাদা ব্যবস্থা ছিল। আর ঐ দিকে জাহাজের কর্মীরা মিলিটারি ড্রিলে অংশগ্রহণ করতে এবং ড্রিলের শেষে তারা ক্রিকেট খেলতো। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, আগে যে আক্রমণ কথা বলা হয়েছে সেইটা কী সম্পূর্ণ মিথ্যে ! তার উত্তর হিসাবে বলা যায় বিভ্রান্তি রয়েছে সেই কথা আগে বলা হয়েছে। ডাউনিং সাহেব জানিয়েছেন বড়দিন উপলক্ষে ধাঁধার বুকে লেফটেন্যান্ট রেথবোন একটি ময়ূরের উপরে গুলি চালানোর জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন। তবে গুলি চলেছিল কি না সেই কথা জানিনা।

প্রতীকী ছবি 

জাম্বুসার থেকে একটা অনেক মানুষের মিছিল ধাঁধার নদীর তীরে টাঙ্কারি অঞ্চলে এসেছিল কী হয়েছে নদীর তীরে দেখার জন্য, প্রথমে ভাবাহয়েছিল আক্রমণ করতে এসেছিলো, আসলে সবার কৌতূহল ছিলো এখানে কোনো আক্রমণ হয়নি। হ্যাঁ কয়েকজনের হাতে হাতিয়ার ছিলো। কৌতুহলী মানুষরা দেখেছিলো কামানের গোলার মতো একটা জিনিস মাটিতে মারছে, সেই গোলাকার জিনিস টি কাঠের তৈরি অনেক তলোয়ার মতো জিনিস দিয়ে সেই গোলাকার জিনিস টি কে মারছে, দুজনের হাতে কাঠের তৈরি তলোয়ারের মতো জিনিস টি রয়েছে। ছুড়ে দেওয়া গোলাকার জিনিসটা ঐ তলোয়ারের মতো কাঠ দিয়ে আঘাত করলে, এক অপরের দিকে ছুটে যাচ্ছে আঘাত না করে। তখন টাঙ্কারি অঞ্চলের কিংবা ভারতের মানুষ জানত না যে এই খেলাটির নাম ক্রিকেট। আবার অনেকে মনে করেন যে আঠারো শতকে ব্রিটিশ সৈন্যদের দ্বারা কেরলেই ভারতের প্রথম ক্রিকেট খেলা হয়েছিল। তবে এই তথ্যটির উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়া যায় না। এবার আরো একটা কথা হচ্ছে যে ক্রিকেট খেলা হয়েছিল ভারতের গুজরাটে, কিন্তু গুজরাটের ঠিক কোন যায়গায় ক্রিকেট খেলা হয়েছিলো ? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বলাহয় গুজরাটের খাম্বাট বন্দরে 1721 সালে ক্রিকেট খেলা হয়। এই বন্দরটি মোগল যুগেও খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। এই খাম্বাটের আগের নাম ছিল কাম্বে, এই নামটি রেখেছিলেন নবাব ইয়াবার আলি খান। এই বন্দরে অনেক জাহাজ নোঙর করতো, বলা হয় এরকমই এক জাহাজে ব্রিটিশরা এসেছিল আর অবসর সময়ে তারা ক্রিকেট খেলতো। 

খাম্বাট বন্দর

তবে টাঙ্কারি না খাম্বাট বন্দরে প্রথম ক্রিকেট খেলা হয়েছিল সেইটা জানিনা খাম্বাট থেকে টাঙ্কারি দূরত্ব দুই ঘন্টার একটু বেশি। তবে তিনশো বছর আগে গুজরাটে প্রথম ক্রিকেট খেলা হয় আর দেখুন আজকে ও World Cup Final হচ্ছে গুজরাটেই ।


ছবি সূত্র - internet

তথ্য সূত্র - TOI

https://scroll.in/article/1013180/how-east-india-traders-brought-cricket-to-indian-shores-300-years-ago-this-fortnight







Comments