- Get link
- X
- Other Apps
Posted by
Tiki liki
on
- Get link
- X
- Other Apps
![]() |
| হালিশহর |
আর কয়েকদিন বাদেই কালী পুজো একই সঙ্গে দীপাবলি। বাঙালির তো বারো মাসে তেরো পার্বণ কারণ এর পর ভাই ফোঁটা আর নানারকম পার্বণ।
আজকে একটু যাব কলকাতার বাইরে, মানে আমাদের বাংলার এক জেলায়। সেই জেলাটির এখনকার নামটা পরে বলবো আগে প্রাচীন নামটা বলি। কুমারহট্ট ছিল এই জেলার বা যায়গাটির এককালে। হয়তো অনেক পরিচিত এই নামটির সঙ্গে। কেন এমন নাম ? এই নাম নিয়ে দুটি গল্প পেয়েছি। বলা হয় কোনো এক সময় এখানে কুমোড়দের বিশাল হাট বসতো। কেনা বেচা হতো মাটির হাঁড়ি, কলশি। আবার যেহেতু গঙ্গার ঘাট ছিল এখানে তাই বজরায় আর বড় বড় জাহাজে মাটির জিনিস এখানে ছড়িয়ে পড়তো দুর দুরান্তের কিংবা বিদেশে। আবার বলা হয় যে সংস্কৃত ভাষা চর্চা অন্যতম প্রধান ছিলো এই শহর জনপদটি।
![]() |
| কুমোর |
বলা হয় রাজকুমারেরা এখানে আসতেন শুধু মাত্র সংস্কৃত পড়ার জন্য। সেই জন্য নাম হয়েছে "কুমারহট্ট" তবে না না এই নামের অন্য একটি ব্যাখা রয়েছে, সেটা ব্যাখায় যুক্তি রয়েছে। ইতিহাসবিদরা বিভিন্ন পুঁথি ও প্রত্নতত্বের মাধ্যমে বলেছেন যে পাল বংশের রাজা, রাজা কুমার পাল নাম অনুসারে এই অঞ্চলের নাম হয়েছে "কুমারহট্ট"। ঐতিহাসিকরা এও বলেছেন যে তাম্রলিপ্ত এখনকার মেদিনীপুর থেকে পাল রাজারা চলে এসেছেন গঙ্গার এপারে মানে সপ্তগ্রামে, তারা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। আর গঙ্গার ওপারে ঠিক করলেন বন্দর বা জাহাজঘাটা বানাবেন। সেই অনুযায়ী গঙ্গার ওপারে তৈরি হলো জাহাজ ঘাট, পাল রাজারা ঐ জাহাজঘাটা কে বলতো "নৌ বিতান " যখন জাহাজঘাটা তৈরি হচ্ছিল তখন বন্দর বা জাহাজঘাটা কে কেন্দ্র করে আস্তে আস্তে বসতি ও গড়ে উঠেছিল। এই জাহাজ ঘাটা বা নৌ বিতানে প্রায় সময় আসতেন পাল রাজা কুমার পাল, সেই জন্য যায়গার নাম হয় কুমারহট্ট। পাল রাজাদের পর এই কুমারহট্ট চলে আসে সেন রাজবংশের হাতে। সেনরা সপ্তগ্রাম ও দখল করে ছিলো। ঐতিহাসিকরা বলেছেন যে সেন বংশের রাজা বিজয় সেন এই কুমারহট্টতেই তার রাজধানী করেছিলেন, তার নাম ছিল বিজয়পুর এখন অবশ্য বীজপুর নামে পরিচিত।
মাটির নিচে থেকে প্রত্নতত্ববিদরা অনেক নিদর্শন পেয়েছেন যাকিনা সেন যুগের বলে জানা যায়। অর্থাৎ এর থেকে প্রমাণিত যে কুমারহট্টে পাল এবং সেন এই দুই রাজবংশ এখানে রাজত্ব কায়েম করেছিলো। এবার কুমারহট্ট চলে আসে মুঘল সাম্রাজ্যের হাতের মুঠোয়, জানা যায় লক্ষন সেন পর 1298 সালে মুঘলর সপ্তগ্রাম দখল করে। "আইন ই আকবরি" তে কুমারহট্টের উল্লেখ আছে। আরো জানা যায় যে মুঘল শাসকরা সপ্তগ্রাম কে সাতগাঁও সরকার নাম দেয়, আর এই সাতগাঁও সরকার অন্যতম ছিল কুমারহট্ট। বলা হয় বর্গি আক্রমণ সময় অনেক মানুষ কুমারহট্ট চলে এসেছিল। আর তাদের মধ্যে ধনী ব্যক্তিরা বড় বড় প্রাসাদের মতো পাঁচিল ঘেরা বাড়ি তৈরি করলেন, আবার অনেক সৌধ তৈরি হয়েছিল কুমারহট্টে। আগেই বলেছি আইন ই আকবরি কথা, সেখানে কুমারহট্ট কে হাভেলি শহর হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই কারণে কুমারহট্ট কে সিটি অফ হাভেলিস বলা হয়েছে। এখানে বলে রাখা দরকার যে সেন বংশের ছিল শৈব, তাই কুমারহট্টে প্রচুর পরিমাণে শিব মন্দির ও পাওয়া যায়। অনেক মনে করেন এই হাভেলি নাম থেকে এখনকার হালিশহর নামটি এসেছে। কুমারহট্ট কে নিয়ে আরো একটা তথ্য পাওয়া যায়, এই তথ্য অনুযায়ী মুঘলরা একজন বিদ্রোহী আফগান শাসক যার নাম ছিলো মীর আহম্মদ বাগ, তাকে এই কুমারহট্ট নির্বাসিত করেছিলো। এই মীর আহম্মদ বাগ কুমারহট্টে মস্তবড় প্রাসাদ তৈরি করলেন আর প্রাসাদ কে রক্ষার জন্য একটি খাল কাটলেন যা কিনা আজকের বাগের খাল নামে পরিচিত। কিন্তু খাল এখন আছে কিন্তু প্রাসাদ আর নেই এমনকি প্রাসাদের চিহ্ন পর্যন্ত পাওয়া যায় না। এই কুমারহট্টে সঙ্গে নাম জড়িয়ে আছে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর। বলা হয় শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর দীক্ষাগুরু ছিলেন শ্রীপদ ঈশ্বরপুরির জন্মস্থান ছিল এই কুমারহট্ট। একবার পুরী থেকে নবদ্বীপ ফিরছিলেন শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু, ফেরার পথে পড়েছিল কুমারহট্ট। তখন যেহুতু জলপথ বেশি ব্যাবহার করা হতো তাই স্বাভাবিক কুমারহট্ট পড়বেই। কুমারহট্টের নাম শুনে চৈতন্য মহাপ্রভু ঠিক করলেন কুমারহট্টে যাবেন, তিনি জানতে তার গুরু এখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তাই গুরুর বাড়ির দেখবেন। কুমারহট্টে এসে গুরু কথা ভেবে খুব কেঁদেছিলেন চৈতন্য মহাপ্রভু। তিনি বলেন 'এ মৃত্তিকা মোর জীবন -ধন-প্রাণ' আর সেই মুহূর্তে সেই মাটি নিজের জিভে ছোঁয়ালেন, আর অনেকটা মাটি নিজের সঙ্গে নিলেন। এই দেখে তার শিষ্যরাও সেই মাটি নিলেন। কুমারহট্টের মানুষ তো চৈতন্য মহাপ্রভু দেখে অবাক হয়েছেন আর চৈতন্য মহাপ্রভু মাটি নেওয়া দেখে সবাই অনেক মাটির তুললেন সেই যায়গা থেকে, যার ফলে গর্ত হয়ে যায় আর দেখা যায় জল। সেই জন্য আস্তে আস্তে জল জমতে থাকে তৈরি হয় একটি পুকুর। সেই যায়গটি নাম হয় চৈতন্য ডোবা কারণ শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর হাতে প্রথম খোড়া হয়েছিল তাই এই নাম।
![]() |
| চৈতন্য ডোবা |
তবে এই বিষয়টি নিয়ে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। কুমারহট্টের কথা বলা শেষ হবে না, যদি না বলা হয় কবি ও সাধক রামপ্রসাদ সেন এর কথা। জানা যায় 1720 সালে কবি ও সাধক রামপ্রসাদ সেন কুমারহট্টে জন্মগ্রহণ করে। রামপ্রসাদ সেন বাবা ছিলেন চিকিৎসক, চিকিৎসক হিসেবে ভালো নাম ডাক ছিলো রামপ্রসাদের বাবার রামপ্রসাদ সৎ দাদা নিধিরাম সেন ও ছিলেন চিকিৎসক কিন্তু রামপ্রসাদ এই সব মন ছিল না তার ধ্যান জ্ঞান ছিলো গান লেখা ও গাওয়া আর তিনি ছিলেন কালী সাধক। রামপ্রসাদ স্ত্রী ছিলেন সর্বাণী, তাদের চার সন্তান ছিলো, কিন্তু রামপ্রসাদ সেন জীবন ছিল বিভিন্ন টানাপোড়েন।
![]() |
| রামপ্রসাদ সেন ও তার স্ত্রী সর্বাণী |
জানা যায় রামপ্রসাদ কে চাকরি করতে পাঠানো হয়, দুর্গাচরণ মিত্রের কাছারি তে, রামপ্রসাদ সেন বাংলা, ফার্সি ও সংস্কৃতি ভাষায় দক্ষ ছিলো। জানা যায় হিসেবের খাতায় একদিন ভুল করে গান লিখে ফেলেছিলেন রামপ্রসাদ। তার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তাকে দুর্গাচরণ মিত্রের কাছে নিয়ে যায়। রামপ্রসাদ বুঝে গেছিলেন যে তার চাকরি যেতে বসেছে। হ্যাঁ চাকরি গেছিল ঠিকই তবে অন্য কারণে, দুর্গাচরণ মিত্র মশাই রামপ্রসাদ গান শুনে ও দেখে বুঝতে পেরেছিলেন রামপ্রসাদ আসল কাজ হলো সাধনা করা। তাই রামপ্রসাদ কে প্রতি মাসে তিরিশ টাকা বৃত্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। আর তাকে কবিরঞ্জ উপাধি দেয়, আর বলেন কুমারহট্টে ফিরে যেতে। যার জন্য কয়েক দিন ভালো ভাবে দিনে কেটেছিল রামপ্রসাদের, কিন্তু দুর্গাচরণ বৃত্তি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি কারণ, 1741 সালে দুর্গাচরণ মিত্র আলীবর্দী খাঁ সভায় জহুরি হিসাবে যোগদেন করেন কিন্তু মুর্শিদাবাদ থেকে রামপ্রসাদ বৃত্তি চালু ছিলো। কিন্তু বর্গী আক্রমণের ফলে সেই বৃত্তি বন্ধ হয়ে যায়। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের সঙ্গে রামপ্রসাদ সেন খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রামপ্রসাদ কে সভাকবি হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন কিন্তু রামপ্রসাদ সেন সেই আহ্বান বিনিত ভাবে প্রত্যাখান করেন। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের অনুরোধে রামপ্রসাদ সেন বিদ্যাসুন্দর কাব্য রচনা করেছিলেন। রামপ্রসাদ সেন গান কে এখন আমরা রামপ্রসাদি গান বলে থাকি, রামপ্রসাদ গানে উঠে এসেছে সেই সময় নানা কথা, যেমন 1742 এবং 1752 বর্গী আক্রমণ, 1739 মহাপ্লাবন, 1769 মন্বন্তর এবং 1757 পলাশির যুদ্ধ। বলা হয় রাজা রামমোহন রায়ের অনেক আগেই রামপ্রসাদ সেন সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে ছিলেন। এছাড়া ও বলাহয় একবার কলকাতা থেকে রামপ্রসাদ যাচ্ছিলেন তখন চিতে ডাকাত তাকে বন্দী করে দেবী চিত্তেশ্বরী বলি দতে যায় তখন রামপ্রসাদের গান শুনে নিজের ভুল বুঝতে পারে চিতে ডাকাত । আরো একটি শোনা যায় রামপ্রসাদ সেন এর গান শুনে সর্বমঙ্গলা মন্দির দেবী দক্ষিণমুখী থেকে পশ্চিমুখী হয়ে যায়। বলা হয় 1787 সালে কালী মুর্তি বিসর্জনের সঙ্গে নিজে গঙ্গায় বিলীন হয়ে যায়। কুমারহট্টে কিন্তু রাণী রাসমণির বাড়ি ছিলো।
![]() |
| রামপ্রসাদ সেন এই ছবিটি এঁকে ছিলেন অ্যার্থার উইলিয়াম ডেভিস , আর এই ছবিটি পাওয়া যায় Mother of My Heart, Daughter of My Dreams: Kali and Uma in the Devotional Poetry of Bengal বইতে |
এখন কুমারহট্টে নাম হালিশহর কারণ আগেই বলেছি, কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর লেখায় প্রথম হালিশহর উল্লেখ মেলে “বামদিকে হালিশহর দক্ষিণে ত্রিবেণী/ যাত্রীদের কোলাহলে কিছুই না শুনি”।
ছবি সূত্র - internet
https://www.bongodorshon.com/home/story_detail/haveli-city-to-halishahar-history-tells-us
- Get link
- X
- Other Apps





Comments