- Get link
- X
- Other Apps
Posted by
Tiki liki
on
- Get link
- X
- Other Apps
![]() |
| দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিমান অবতরণ করছে রেড রোড এ |
আমাদের প্রিয় শহর কলকাতা, আর এই কলকাতা অনেক রাস্তার নাম হয়েছে নতুন করে, আবার কোনো রাস্তার নাম নতুন দেওয়া হলেও সেই রাস্তা কে পুরোনো নামাই ডেকে আসছে। সেই রকম এক রাস্তা হলো ইন্দিরা গান্ধী সরনী, কেউ কেউ হয়তো চিনতে পারছেন কোন রাস্তা কথা বলছি। সবাই এই রাস্তা কে চেনে রেড রোড হিসাবে। তবে এই রাস্তা কেন রেড রোড বলা হয়, এই বিষয় নিয়ে দুটো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। প্রথম তথ্য হিসেবে বলা হয় বসন্ত কালে এই রাস্তায় নাকি পলাস ও কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে তখন যেত মনে হয় রাস্তার রঙ লাল হয়ে গেছে। আর দ্বিতীয় তথ্যটি হলো একটি ব্রিটিশ নথি থেকে জানা 1720 ব্রিটিশরা যখন এই রাস্তা তৈরি করেছি, তখন এই রাস্তার মাটির রং ছিল লাল সেই হিসেবে রেড রোড। P Thankappan Nair রেড রোড সম্পর্কে তার বই A History of Calcutta's Streets বলেছেন "The broad gravelled walk on the west side of that of it (Race Course) which is known as the Red Road, is called Secretary's Walk, and was constructed in 1820" এছাড়াও তিনি শঙ্খ ঘোষের রেড রোড কবিতার লাইন গুলি ও উল্লেখ করেছেন। কিন্তু রেড রোড কেন তৈরি করা হয়েছিলো ?
সেই সম্পর্কে জানতে গেলে কিছু তথ্য খুঁজে পাচ্ছি। অনেক মনে করেন যে ঔপনিবেশিক ভারতের এই রাস্তাটি আবার নাম ছিলো দ্যা কোর্স আবার এই রাস্তাটিকে সেক্রেটারিস ওয়াক ও বলা হতো। ইন্ডান এক্সেপ্রেসর তথ্য থেকে জানতে পারি 1914 সালে ইংল্যান্ডের একটি সংবাদপত্রে একটি চিঠি প্রকাশিত হয়েছিল যেখানে বলা হয়েছিল এই রাস্তাটির নাম পাল্টানোর কথা। কিন্ত এই রাস্তাটি তৈরি হয়েছিল কারণ, রাস্তাটি যেখানে অবস্থান করছেন তার পাশেই রয়েছে ময়দান আর ময়দানের পাশে ফোর্ট উইলিয়াম, ব্রিটিশ সরকার প্রধান দুর্গ। এই রাস্তাটির ফলে খুব তাড়াতাড়ি দক্ষিণ কলকাতা ও আলিপুর সাথে যুক্ত হতো। কারণ হিসেবে বলা হয় আলিপুরে ও তার আশেপাশে ছিল ব্রিটিশদের বিনোদনের যায়গা। ফলে এই রাস্তাটি খুব কাজের ছিলো। আবার আরো একটা তথ্য পাওয়া যায় The Telegraph এ এখানে বলা হয়েছে 1912 সাল পর্যন্ত বেলভেড হাউস
![]() |
| বেলভেড হাউস |
( বতর্মানে ন্যাশনাল লাইব্রেরী ) ছিলো সেই সময় লেফটেন্যান্ট গভর্নরের বাড়ি আর তার কাজের যায়গা ছিলো রাইটার্স বিল্ডিং, এই রাস্তা তার যাতায়াতের সুবিধা করেছিলো। কিন্তু এই রাস্তায় নাকি কোনো নেটভ যাতায়াত করতে পারতো না, শুধু যাতায়াত করতো সাহেবরা। জানা যায় লর্ড ডালহৌসি ইচ্ছে অনুযায়ী এই রাস্তা দুপাশে সুন্দর গাছ দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হয়েছিলো।
![]() |
| লর্ড ডালহৌসি |
জানা যায় 1717 সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দুর্গ বানানোনর জন্য অনেক জঙ্গল পরিষ্কার করে, তারপর তৈরি হয় ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ তারসাথে তৈরি হয় কাস্টম হাউস। এর সাথে যুক্ত আরো অনেক বড় বড় সৌধ তারসাথে যুক্ত হয়, সামারিক অফিস। যেহুতু দুর্গ তাই তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য 360 ডিগ্রী জুড়ে কমান বসানো হয়েছিল। এই সবকিছুর জন্য জঙ্গল পরিষ্কার করে হয়েছিল, শুধু তাই নয় এর জন্য অনেক গাছ ও কাঁটা পড়েছিল। বলা হয় সেই জন্য নাকি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির খুব নিন্দা ও হয়েছিল।
![]() |
| রেড রোড এবং ফোর্ট উইলিয়াম |
জানা যায় সেই সময় এই রাস্তা উপর দিয়ে খোলা ঘোড়ার গাড়ি করে যাতায়াত ভালো লাগতো না সাহেবদের। কলকাতার গরম তার উপর মাথার সরাসরি সূর্যের আলো সাহেবদের ভালো লেগেছিলো না সেই জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি খুব নিন্দা হয়েছিল আর সেই জন্য হয়তো লর্ড ডালহৌসি এই রাস্তার দুপাশে গাছ লাগানো ইচ্ছে প্রকাশ করেছিল। ভারতের স্বাধীনতা পর 15 আগস্ট ও 26 জানুয়ারি রেড রোড এ প্যারেড হয়। কিন্তু ভারতের স্বাধীনতা আগে ও এই রাস্তায় প্যারাড হয়েহয়েছিল, জানা যায় 1911 - 1912 ইংল্যান্ডের রাজা পঞ্চম জর্জ ও তার স্ত্রী মেরি ওফ টেক ভারত সফরের সময় কলকাতায় এসেছিলেন, সেই সময় রেড রোড এ প্যারেড হয়েহয়েছিল। জানা যায় রাস্তার দুপাশে তোরণ তৈরি করা হয়েছিলো । কুচকাওয়াজ সময় কেউ মাঝখানে না চলে আসে, সেই জন্য বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী পাঁচিল দেওয়া হয়েছিল ঠিক এখন যেমন হয়। এছাড়া অস্থায়ী বসার যায়গা তৈরি করা হয়, ঠিক এখন যেমন করা হয় রেড রোডে কোনো অনুষ্ঠানে সময়। 1921 সালে রেড রোড ও অস্থায়ী দর্শক আসন তৈরি করা হয় প্রিন্স ওফ ওয়েলসের ভারতের সফরের সময়।
![]() |
| রেড রোডে প্যারেড |
জানা যায় 1900 সালেও দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় বোয়ার যুদ্ধের শেষে ব্রিটিশ সেনা বাহিনী জয়ী হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার প্রজাতন্ত্র ও ওরেন্জ ফ্রী স্ট্রেট এর বিরুদ্ধে। সেই জয় উযাপন হয়েছিল আমাদের কলকাতায় রেড রোডের উপর। কিন্তু সবাই খুব ভালো ভাবেই জানি যে, রেড রোড এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সময় যুদ্ধ বিমান অবতরণ করতো। কিন্তু তার অনেক আগেই বলা হয় 1910 সালের জানুয়ারি মাসে ব্রিটিশ ইন্ডায়ার তরফ থেকে রেড রোড এ প্রথম প্লেন চালানো হয়, এবং সেইটা সফল হয়।
![]() |
| দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়ে প্লেন নামছে রেড রোডে |
জানা যায় এই প্লেটি ছোট ছিলো, আর প্লেনটির ডিজাইন করে ছিলেন W.E. Debrunner. ইনি ছিলেন ইলেকট্রিক অ্যান্ড অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তিনি মালিক ছিলেন Continental Electric and Motor Car কোম্পানির। বলে রাখা দরকার ইনি কিন্তু রেড রোড প্রথম প্লেন চালিয়েছিলেন। ঐ প্লেনটির লম্বায় ছিল কুড়ি ফিট আর প্লেনটি বডি ছিল কাঠের আর প্রোপেলারও ছিলো কাঠের। ঐ প্লেনটির ইঞ্জিন ছিলো মোটরসাইকেলের। প্রথমবারেই প্লেনটি কিন্তু উড়েনি, বল হয় কিছু টেকনিক্যাল ফল্ট হয়ে ছিলো। কিন্তু সেই দিনেই ঠিক ঠাক করে সেই প্লেনটি আকাশ ওড়ে তবে ওটা ছিলো ট্রায়াল সেই জন্য কোনো যাত্রী প্লেনে ছিলো না। এবার বলি যখন রেড রোড শুধু মাত্র যুদ্ধ বিমান অবতরণ করার জন্য ব্যাবহার হতো, তখন কলকাতার হাওয়ায় বারুদে গন্ধ। একদিকে চলেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অন্যদিকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে ভারত ছাড়ো আন্দোলন। ব্রিটিশ সরকার তখন খাবি খাচ্ছে, এইরকম পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ ভারতের আগের রাজধানী কলকাতা আক্রমণ করেছিলো জাপানি বোমারু বিমান। খিদিরপুরের বন্দর এলাকা তছনছ করে দিয়েছিল জাপানি বোমা। প্রাণ গিয়েছিল অনেক মানুষের। ডালহৌসি, মানিকতলা, টালা, হাতিবাগান ইত্যাদি এলাকাও কেঁপেছে জাপানি বোমার অভিঘাতে। P.T. Nair উল্লেখ করেছেন সেই সময় ব্রিটিশ সরকার কাউন্টার করার পরিস্থিতি ছিল না। ব্রিটিশদের বিমান ঘাঁটি টি ছিল ব্যারাকাপুরে, সেইটা কলকাতা থেকে দুরে ছিল। সেই জন্য জাপানি বিমানকে আঁটকানো যাইনি, সেই জন্য তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ঠিক করে একটা অস্থায়ী বিমান ঘাঁটি দরকার, আর সেই জন্য কলকাতার রেস কোর্সের কাছে Ellenborough Ground মানে ময়দানে এই বিমান ঘাঁটি তৈরি হয়। রেড রোড এর অনেক যুদ্ধ বিমান অবতরণ করে। শুধু কিন্তু বিমান ওঠানামা করতো না বরং অনেক বিমান এখানে পার্কিং করা থাকতো।
![]() |
| বর্তমানের রেড রোড |
তবে এখানে একটা অসুবিধা ছিলো কলকাতার শীতের কুয়াশা পাইলট ঠিক করে দেখতে পেত না। আবার Robert H Farquharson তার বই "For Your Tomorrow Canadians and the Burma Campaign উল্লেখ করেছেন রেড রোডে মোটেই প্লেন চালানো জন্য উপযুক্ত ছিলো না। তিনি আরো বলেছেন কলকাতার কুয়াশার জন্য পাইলট ঠিক করে রাস্তাটি দেখতে পেত না, আরো বলছেন যে প্লেন নামানো ও উঠানোর জন্য যেই মাপের রাস্তা দরকার, তার থেকে বেশি বড় ছিল রাস্তার মাপ এবং রাস্তার চার পাশে বড় বড় বাড়ি। তবে যাই হোক এখন রেড রোড যে কতবড় ঐতিহ্যবাহী রাস্তা সেটা আর বলে দেওয়ার দরকার নেই। আর তাই বলে কলকাতা তুমিও হেঁটে দেখ, কলকাতা.....
ছবি সূত্র - internet
তথ্য সূত্র - P Thankappan Nair
- Get link
- X
- Other Apps







Comments