- Get link
- X
- Other Apps
Posted by
Tiki liki
on
- Get link
- X
- Other Apps
![]() |
| দুর্গা পুজো |
পুরনো কলকাতায় প্রবাদ আছে উমা মর্ত্যে এসে গয়না পরে জোড়াসাঁকোর দাঁ বাড়িতে , ভোজন করে কুমোরটুলির মিত্র বাড়িতে আর রাত জেগে নাচ দেখে শোভাবাজার রাজবাড়িতে।
বাংলায় দুর্গাপূজা খুব বিখ্যাত আরো বিখ্যাত বিভিন্ন রাজবাড়ির দুর্গাপুজো, প্রবাদ অনুসারে আজকে বলবো শিবকৃষ্ণ দাঁ বাড়ির কথা। গোকুল চন্দ্র দা ছিলেন এই বাড়ির পূর্বপুরুষ। গোকুল চন্দ্র দাঁ আদি বাড়ি বর্ধমান জেলার মেমারী সন্নিহিত সাতগাছিয়াতে। আর এই গোকুল চন্দ্রের কোনো সন্তান ছিলো না। কলকাতায় আসার পর তিনি হলধর দত্তের ছোট ছেলে শিবকৃষ্ণ দাঁ কে দত্তক নেন , শিবকৃষ্ণ তখন বয়স ছিলো চার বছর।
![]() |
| দাঁ বাড়ির দুর্গা |
আনুমানিক 1840 সাল থেকে দাঁ বাড়িতে দুর্গাপূজা শুরু হয়। দাঁ পরিবারের বৈষ্ণব রীতি অনুযায়ী দুর্গা পুজো হয়। সেই সময় শিবকৃষ্ণ দা কে কুবেরের সঙ্গে তুলনা করা হতো। জানা যায় শিবকৃষ্ণ দাঁ মশাই আসানসোলে কয়লা খনি ও তার আশেপাশের অঞ্চল কিনে নেন, যার ফলে রেললাইন স্থাপনের বরাত পান, ব্রিটিশ সরকারের কাছে। এছাড়া ও তার অনেক রকমের ব্যাবসা ছিলো। আর ব্যাবসার একটা লাভের অংশে তিনি দুর্গাপুজো আরম্ভ করেন। এখানে বলে রাখা তিনি সোনার পৈতে পরতেন।শোনা যায় শিবকৃষ্ণ দাঁ কে খুব সুন্দর দেখতে ছিল আর তিনি সোনার গয়না পড়তে ভালোবাসতেন ও সাজতে ভালোবাসতেন। সেইরকম একদিন দুর্গা ঠাকুর কে সোনার গয়না পরিয়ে সাজানো হয়েছিল। দেবী দুর্গার শাড়ি বোনা হতো, সোনা এবং রুপার সুতো দিয়ে আর শাড়িতে থাকতো নানারকম দামি পাথর। দুর্গা ঠাকুরের চালচিত্র থাকতো তামা ও পিতল ও বিভিন্ন ধাতুর ব্যাবহার। শিবকৃষ্ণ দাঁ প্যারিস আর জার্মানি থেকে সোনালী রং করা ধাতু এনে উমার জন্য বিশেষ গয়না করতে দেন , এই গয়নার নকশায় ছিল অ্যান্টিক টাচ। এই সবকিছু আসতো ইউরোপ থেকে, আর হ্যাঁ বলা থাকতো গয়না ও শাড়ির নকশা কিন্তু এক না হয়। তাই প্রতিবছর দুর্গা ঠাকুরের শাড়ি ও গয়নায় আলাদা নকশা করা হতো। তখনকার কলকাতায় এইরকম দুর্গা পুজো কেউ দেখেনি। বর্তমান সময়ের গয়নার নকশা দুর্গা ঠাকুরের সাজে ভর্তি করা হয়েছে ।
![]() |
| প্রতীকী ছবি |
এই বাড়ির দুর্গা ঠাকুর হয় একচালার। আর সেখান থেকে বলা হয় মর্ত্যে এসে আগে, জোড়াসাঁকোর দাঁ বাড়িতে মা দুর্গা সাজেন। এখনো দাঁ বাড়িতে পুজো হয়ে থাকে, শোনা যায় প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর জোড়াসাঁকোর দাঁ বাড়ির দুর্গা পুজো সঙ্গে পাল্লা দিতেন।
![]() |
| প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর |
একটা ঘটনা কথা না বললেই নয়, জোড়াসাঁকোর দাঁ বাড়ি কে টেক্কা দেওয়ার জন্য প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর গয়না শুদ্ধ দুর্গা ঠাকুর বির্সজন করে। এই বছর সম্ভব তো জোড়াসাঁকোর দাঁ বাড়ির দুর্গা পুজো 183 বছরে পড়বে।
![]() |
| প্রতীকী ছবি |
এবার আসি প্রবাদের দ্বিতীয় অংশে মানে কুমোরটুলি মিত্র বাড়িতে। কুমোরটুলির মিত্র বাড়ি খুবই বিখ্যাত স্বাধীনতার আগের থেকেই। অভয়চরন মিত্রে কথা বলার আগেই তার প্রপিতামহ গোবিন্দরা মিত্রের কথা না বলেল অন্যায় হবে। জানা যায় সেই সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কলকাতা ব্যাবসা শুরু করে দিয়েছে। আর কয়েকটি গ্রাম কিনে নিয়েছে, কিন্তু যারা সেই সব গ্রামে থাকছেন তাদের থেকে tax আদায় করতে হবে আর তাই সৃষ্টি হলো জমিদার পদের বা Revenue Collector এর। কিন্তু এখানে ও সমস্যা দেখা দিলো যারা রেভিনিউ কালেক্টার ছিলেন সবই ইউরোপীয়। তারা না জানে এখনকার ভাষা আর না জানে আদপ কায়দা। তাই আবার ইস্টি ইন্ডিয়া কোম্পানি ঠিক আলাদা আরো একটি পদ তৈরি করার, আর এই পদে থাকবেন দেশীয় মানুষ এই পদের নাম ছিলো ডেপুটি রেভিনিউ কালেক্টার বা ব্ল্যাক জমিদার সেই সাদা ও কালো মানুষের তত্ত্ব। যাই হোক এই পদে আসীন হলেন গোমিন্দোরাম মিত্র। সেই সময়ের কলকাতায় একটা ছড়া খুব প্রচলিত ছিল।
গোবিন্দরামের ছড়ি,
বনমালী সরকারের বাড়ি,
উমিচাঁদের দাড়ি,
আর জগৎসেঠের কড়ি।
ছড়া দেখেই বুঝতে পারছেন গোবিন্দরামের ছড়ি খুব ফেমাস ছিলো।
জানা যায় সেই সময় গোমিন্দোরাম নিজস্ব লেঠেল বাহিনী ছিলো মানে খাজনা আদায় করতে এই লেঠিল বাহিনীকে কাজে লাগাতেন। কিন্তু সবাই খাজনা কি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে পৌঁছাতো ? কারণ সেই সময় কুমোরটুলির অঞ্চলে বিড়াট বড় বাড়ি তার সাথে লেঠেল বাহিনী আর নবরত্ন মন্দির ছিলো গোমিন্দোরামের। আর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বেতন ধার্য করেছিলেন তিরিশ টাকা। সহজ বোঝাই যাচ্ছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নজর এড়িয়ে অনেক কিছু করেছিলেন এই গোবিন্দরাম মিত্র। শুধু কি তাই আরো একটা বাগান বাড়ি ছিলো গোবিন্দরামের।
![]() |
| Upper Circular road |
বর্তমানে Upper Circular road কাছে ছিল সেই বাগান বাড়ি নাম ছিলো নন্দন বাগান। তখন এই এলাকার নাম ছিলো নাকি হালসীবাগান।
মোট কথা অসৎ উপায়ে অনেক কিছু আয় করেছিলেন গোবিন্দরাম মিত্র। এরপর কোম্পানিকে অনেক বলে বলে গোবিন্দরাম মিত্র তার মাইনে বাড়ায়, হয় পঞ্চাশ টাকা। তবে গোমিন্দোরাম মিত্র চিৎপুর তৈরি করেন নবরত্ন মন্দির, এই মন্দিরটির উচ্চতা ছিলো বর্তমান শহীদ মিনার বা মনুমেন্ট থেকেও বড়। এই মন্দিরটি আবার ব্ল্যাক প্যাগোডা নামে পরিচিত ছিলো কিন্তু 1737 সালে 30 সেপ্টেম্বর বঙ্গাপসাগর একটি ঘুর্নিঝড় সৃষ্টি হয়েছিল, সেই ঝড় আছড়ে পড়েছিল কলকাতায়। ঝড় থেমে যাওয়ার পর সার রাত ধরে চলে মুষলধারে বৃষ্টি, এবং ভূমিকম্প জন্য মন্দিরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
![]() |
| গোবিন্দরামের নবরত্ন মন্দির |
এখানে বলে রাখা দরকার যে বর্গী আক্রমণের সময় কলকাতাকে বাঁচাতে খাল কাঁটা হয়েছিল, গোমিন্দোরাম মিত্রের বাগান বাড়ি এই খাট কাঁটার রাস্তায় পড়ে ছিল কিন্তু, এই বাড়িটির জন্য খাল কাঁটার রাস্তাটি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। এইরকম ভাবে ভালো চলছিল কিন্তু এই সময়ে 1752 সালে Revenue Collector হিসাবে আসেন হলওয়েল সাহেব। গোবিন্দরামের এতো সম্পতি দেখে হলওয়েল সাহেব চোখ কপালে উঠলো, আর মনে মনে ভাবলেন কুছ তো গড়বড় হ্যায়। হলওয়েল সাহেব গোবিন্দরাম কাছে জানতে চাইলেন তার আয় ব্যায়ের হিসাবে, আর এও বললেন সত্যি না বললে তিনি তাকে জেলে দেবেন কিংবা ফাঁসি। বলা হয় হলওয়েল সাহেব জানিয়েছিলেন কোম্পানির সাহেবদের, কিন্তু কোন কাজ হয়নি। কারণ সেই সব সাহেবদের অনেক আগেই গোবিন্দরাম মিত্র নিজের আয়ত্বে নিয়েছিলেন। এই গোবিন্দরাম মিত্রের প্রপৌত্র হলেন অভয়চরন মিত্র। জানা যায় গোবিন্দরাম মিত্রের আমলে দুর্গা পুজো শুরু হয়, কিন্তু এই পুজোর জাঁকজমকপূর্ণ হয় অভয়চরন মিত্রের আমলে।
![]() |
| সেই নবরত্ন মন্দির |
![]() |
| অভয়চরন মিত্র প্রতিষ্ঠিত সিদ্ধেশ্বরী কালী বাড়ি |
![]() |
| সিদ্ধেশ্বরী কালী মূর্তি |
শোনা যায় অভয়চরন মিত্রের আমলে দুর্গা পুজোর ভোগে লাড্ডুর সাইজ নাকি কামানের গোলা মত হতো। শুধু তাই নয় জিলিপির সাইজ নাকি রথের চাকার মতন হতো আবার ভোগের সংখ্যা ছিলো শতাধিক। বলা হয় অভয়চরন মিত্রের বাড়িতে দুর্গাপুজোর ভোগে তিরিশ থেকে পঞ্চাশ মণ চালের নৈবেদ্য হতো এছাড়া লুচি, নাড়ু, মিষ্টি, নিমকি আরো অনেক কিছু হতো বলে জানা যায়। এই অভয়চরন মিত্র ছিলেন তৎকালীন চব্বিশ পরগনার কালেক্টারের দেওয়ান।
তিনি এই কাজের জন্য প্রশংসিত হয়েছিলেন ব্রিটিশদের কাছে। শোনা যায় তিনি কুলগুরেকে লাখ টাকা দান করেছিলেন। এছাড়া ও বাগবাজারে যে সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরটি রয়েছে সেটিও কিন্তু অভয়চরন মিত্রের তৈরি। তবে এখনো কুমোরটুলির অঞ্চলে এখনো একটি রাস্তা নাম অভয়মিত্র স্ট্রিট।
![]() |
| অভয়মিত্র স্ট্রিট |
কিন্তু কুমোরটুলির অঞ্চলে কোথায় যে অভয়চরন মিত্রের বাড়িটি ছিলো সেটা এখনো যায়নি।
এবার তৃতীয় অংশ হলো দেবীর রাত জেগে নাচ দেখার কথা, সেইটা জানা যাবে শ্রী কৌশিক মজুমদার প্রণীত এই সব দিনরাত্রি বইটির মাধ্যমে।
পুরোনো কলকাতার এই ছড়াটির মাধ্যমে আমরা জানতে পারি কলকাতার তিনটি প্রাচীন পরিবার ও তাদের দুর্গোপুজোর কথা জানতে পারি। তবে হ্যাঁ দাঁ বাড়ির দুর্গা পুজো এবং শোভাবাজার রাজবাড়ি দুর্গা পুজো এখনো চলছে। 2021 সালে ইউনেস্কোর তরফ থেকে দুর্গাপুজোকে ইনট্যানজিবল হেরিটেজ হিসাবে নথিভুক্ত করে।
ঋণ স্বীকার - শ্রী কৌশিক মজুমদার
ছবি সূত্র - internet
কলকাতার বাবু বৃত্তান্ত লোকনাথ ঘোষ
Abhay Mitra St
Durgapuja
Gobindoram Mitra
God Druga
Heritage
History
History of calcutta
Jorasanko Shib Krishna Daw Bari
Kumartuli
- Get link
- X
- Other Apps











Comments