- Get link
- X
- Other Apps
Posted by
Tiki liki
on
- Get link
- X
- Other Apps
আর কয়েকদিন বাদেই শিক্ষক দিবস। 5th September স্বাধীন ভারতের প্রথম উপ রাষ্ট্রপতি ও দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণননের জন্মদিনের দিন শিক্ষক দিবস পালন করা হয়। মাঝে মাঝেই মনে হয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষক কে বা কারা ছিলেন। কবিগুরু তো দেখিয়ে ছিলেন কোন বন্ধ ঘরের থেকে খোলা আকাশের নিচে পড়াশুনার আলাদাই মজা। সেই জন্য তিনি তৈরি করেন শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী। রবীন্দ্রনাথ প্রথম শিক্ষক বা মাস্টার মশাই কে ছিলেন? সেই উত্তর অবশ্য নিজেই দিয়ে গেছেন কবিগুরু। তার আত্মজীবনী জীবনস্মৃতি তে উল্লেখ করেছেন। যদি কবিগুরুর প্রথম মাস্টার মশাই কথা বলতে হয় তাহলে, প্রথমেই নাম আসবে তিনি কৈলাস মুখুজ্যে। ইনি কবিগুরু কে বিভিন্ন রকমের মজার ছড়া শোনাতেন, তখন অবশ্যই রবীন্দ্রনাথ শিশু।
![]() |
| ছোট্ট রবি |
কবিগুরুর ভাষায় "সেই কৈলাস মুখুজ্যে আমার শিশুকালে অতি দ্রুতবেগে মস্ত একটা ছড়ার মতো বলিয়া আমার মনোরঞ্জন করিত। সেই ছড়াটার প্রধান নায়ক ছিলাম আমি এবং তাহার মধ্যে একটি ভাবী নায়িকার নিঃসংশয় সমাগমের আশা অতিশয়। উজ্জ্বলভাবে বর্ণিত ছিল। এই যে ভুবনমোহিনী বধূটি ভবিতব্যতার কোল আলো করিয়া বিরাজ করিতেছিল, ছড়া শুনিতে শুনিতে তাহার চিত্রটিতে মন ভারি উৎসুক হইয়া উঠিত।" রবীন্দ্রনাথ প্রথম স্কুল ছিলো ওরিয়েন্টাল সেমিনারি।
![]() |
| রবীন্দ্রনাথের প্রথম স্কুল |
স্কুলে ভর্তি নিয়েও গল্প আছে। শিশু রবি দেখছে বাড়ির সব ছেলেরা সকাল বেলা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে স্কুল যাচ্ছে উনি খালি বাড়িতে থাকছেন তা তো হবে না। কি করা যায় ভাবলেন শিশু রবি, জুড়লেন কান্না। ব্যাস সেই কান্নার জোড়েই কবিগুরু স্কুলে ভর্তি হলেন। কিন্তু তখন স্কুলে ভর্তির বয়স হয়নি রবি ঠাকুরের। স্কুলের নাম তো আগেই বললাম। জানা যায় কবিগুরু জীবন স্মৃতি বলেছেন, কী পড়াশোনা শুনো হয়েছিল মনে নেই কিন্তু পড়া না পাড়লে কি শাস্তি দেয়া হতো সেইটা মনে আছে, যে পড়া না পাড়বে তাকে বেঞ্চের উপর দাঁড়াতে হতো, না কান ধরে বেঞ্চের উপর দাঁড়ানো মত শাস্তির কথা কবি বলেন নি। শাস্তি ছিলো বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে দুটো হাতে কে প্রসারিত করে, তার উপর অনেক গুলো শ্লেট একসাথে চাপিয়ে দেওয়া হতো। আরো দুটি স্কুলে পড়াশোনা করে কবিগুরু, তবে শেষ পর্যন্ত তিনি বাড়িতে পড়াশোনা করেছিলেন কারণ তার স্কুলে যেতে ভালো লাগতো না। তার স্মৃতি চারনায় কবি বলেছেন, নর্মাল স্কুলের শিক্ষক তাদের পড়াতে আসতেন, সেই শিক্ষক ছিলেন নীলকমল ঘোষাল, কবিগুরু বলছেন বেত যদি মানুষরুপে জন্মগ্রহণ করে তবে ওনার মতো হবে। নীলকমল ঘোষাল বর্ণনা করেছেন কবি, শুকনো ছিপছিপে চেহারা আর গালার তীক্ষ্ণ। এনার পড়াবার সময় ছিল, সকাল ছয়টা থেকে সাড়ে নটা পর্যন্ত। এনার কাছে কবি লিখেছিলেন বস্তুবিচার, চারুপাঠ্য এবং মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদ বধকাব্য। কবি জানাচ্ছেন স্কুলের থেকে বাড়িতেই বেশি পড়তে হতো, অনেক সময় কবির সেজদাদা মানে হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষকে ভুমিকায় অবতীর্ণ হতেন কবি বলছেন "আমাদিগকে বিচিত্র বিষয়ে শিক্ষা দিবার জন্য সেজদাদার বিশেষ উৎসাহ ছিল। ইস্কুলে আমাদের যাহা পাঠ্য ছিল বাড়িতে তাহার চেয়ে অনেক বেশি পড়িতে হইত। ভোর অন্ধকার থাকিতে উঠিয়া লংটি পরিয়া প্রথমেই এক কানা পালোয়ানের সঙ্গে কুস্তি করিতে হইত।"
![]() |
| হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর |
কবি জানিয়েছেন তিনি বেশি দিন ওরিয়েন্টাল সেমিনারি পড়েনি তারপর তিনি নর্মাল স্কুল চলে আসেন। নর্মাল স্কুলের স্মৃতি ভালো না।
নর্মাল স্কুলের এক শিক্ষক ছিলেন, নাম হরনাথ পন্ডিত, তার ভাষা এতোটাই বাজে ছিল যে তার ক্লাসে কবিগুরু চুপচাপ বসে থাকতেন। এইরকম একদিন নর্মাল স্কুলে বাংলার পরীক্ষা হলো, এই পরীক্ষা তত্ত্বাবধানে ছিলেন মধুসূদন বাস্পপতি। কবি সবার থেকে বেশি নম্বর পেলেন, বলা হলো ইচ্ছে করে বেশি নম্বর দেওয়া হয়েছে, তাই আবার পরীক্ষা দিতে রবীন্দ্রনাথ কে কিন্তু এবার ও বেশি নম্বর পেলেন আর দ্বিতীয় বার পরীক্ষা তত্ত্বাবধানে ছিলেন সুপারিনটেনডেন্ট। কবির ভাষায় "এবার স্বয়ং সুপারিন্টেণ্ডেন্ট পরীক্ষকের পাশে চৌকি লইয়া বসিলেন। এবারেও ভাগ্যক্রমে আমি উচ্চস্থান পাইলাম।"
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর আত্মজীবনী তে মাস্টার মশাইদের কথা উল্লেখ করেছেন কয়েক জনের কথা তো আগেই বলেছি, এবার বলি কবির বিজ্ঞান মাস্টার মশাই এর কথা, রবিবার করে এই মাস্টার মশাই আসতেন পড়াতে, এনার নাম ছিল সতীনাথ দ্ত্ত। কবি বলেছেন
" যে-রবিবার সকালে তিনি না আসিতেন, সে- রবিবার আমার কাছে রবিবার বলিয়াই মনে হইত না। "
কবি জানিয়েছেন তার এক মাস্টার মশাই এর কথা, এনার নাম ছিল অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায়। ইনি মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলেন, কবির টিউনস টিচার। এই অঘোর বাবু কোনো দিন তিনি কামাই করেন নি। কবি একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন "সন্ধ্যা হইয়াছে; মুষলধারে বৃষ্টি পড়িতেছে; রাস্তায় একহাঁটু জল দাঁড়াইয়াছে। আমাদের পুকুর ভরতি হইয়া গিয়াছে; বাগানের বেলগাছের ঝাঁকড়া মাথাগুলা জলের উপরে জাগিয়া আছে; বর্ষাসন্ধ্যার পুলকে মনের ভিতরটা কদম্বফুলের মতো রোমাঞ্চিত হইয়া উঠিয়াছে। মাস্টারমহাশয়ের আসিবার সময় দু’চার মিনিট অতিক্রম করিয়াছে। তবু এখনো বলা যায় না। রাস্তার সম্মুখের বারান্দাটাতে চৌকি লইয়া গলির মোড়ের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকাইয়া আছি। “পততি পতত্রে বিচলতি পত্রে শঙ্কিত ভবদুপযানং” যাকে বলে। এমন সময় বুকের মধ্যে হৃৎপিণ্ডটা যেন হঠাৎ আছাড় খাইয়া হা হতোস্মি করিয়া পড়িয়া গেল। দৈবদুর্যোগে-অপরাহত সেই কালো ছাতাটি দেখা দিয়াছে। হইতে পারে আর কেহ। না, হইতেই পারে না। ভবভূতির সমানধর্মা বিপুল পৃথিবীতে মিলিতেও পারে কিন্তু সেদিন সন্ধ্যাবেলায় আমাদেরই গলিতে মাস্টারমহাশয়ের সমানধর্মা দ্বিতীয় আর কাহারো অভ্যুদয় একেবারেই অসম্ভব।" এই অঘোর বাবু কবিদের একবার মেডিকেল কলেজের পোস্টমর্টামের ঘরে নিয়ে গেছিলেন, আবার একবার কবির বাড়িতে কবিদের দেখানোর জন্য ঠোঙা করে কন্ঠনালী নিয়ে এসেছিলেন এবং ব্যাখাও করেছিলেন, আসলেন তিনি তো মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলেন। এইরকম অনেক মাস্টার মশাইদের কথা উল্লেখ করেছেন জীবন স্মৃতি তে। বিশেষজ্ঞদের মতে রবীন্দ্রনাথ প্রিয় শিক্ষক ছিলেন ফাদার ডি পেনেরান্ডা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষকদের কথা তো এতক্ষন এবার বলি কবির শান্তিনিকেতনে বিভিন্ন শিক্ষার কথা, রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে জুজুৎসু শিক্ষা আরম্ভ করেছিলেন। আসলে জাপান সফরে সময় রবীন্দ্রনাথ জুজুৎসু দেখে খুব ভালো লেগেছিলো, এবং ঠিক করলেন শান্তিনিকেতনে এই শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন ছাত্র ছাত্রীদের। বিশেষ করে ছাত্রীদের এই শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া অন্তত গুরুত্বপূর্ণ, তারা নিজেদের আত্মরক্ষা নিজেরাই করতে পারবে। জুজুৎসু শিক্ষা ফলে আত্মরক্ষা তো হবেই তার সাথে ছাত্র ও ছাত্রীদের আত্মবিশ্বাস ও বাড়বে।
![]() |
| জুজুৎসু |
কিন্তু যখন শান্তিনিকেতনে জুজুৎসু শেখানোর কথা ভাবা হয়েছিল তখন মৃণালিনী দেবীর গয়না বিক্রি করে চলেছিল শান্তিনিকেতনের আশ্রম ও স্কুল। 1905 সালে জাপান থেকে এসেছিলেন জুজুৎসু শিক্ষক সানো জিন্নোসুক। সানো জিন্নোসুক খুব যত্ন নিয়ে শিক্ষার্থীদের জুজুৎসু শেখাতেন আর জুজুৎসু শেখার উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। সানো জিন্নোসুক বাংলাও শিখে ফেলেছিলেন শান্তিনিকেতনে এসে। কিন্তু সেই সময়ে হয়তো অর্থকষ্টের কারণে সানো জিন্নোসুক আর শিক্ষক হিসেবে রাখা হয়নি শান্তিনিকেতনে।
![]() |
| ছাত্রদের সঙ্গে সানো জিন্নোসু ছবি ঋণ আনন্দবাজার পত্রিকা |
কিন্তু কবি ঠিক করে রেখেছিলেন শান্তিনিকেতনে জুজুৎসু শেখাবেনই। কানাডা থেকে ফেরার পথে আবার জাপানে গেছিলেন কবি, আর জাপানের প্রাচ্য সংস্কৃতির অন্যতম প্রবক্তা কুনিহিকো ওকুরাকে জানিয়েছিলেন শান্তিনিকেতনে স্থায়ী ভাবে জুজুৎসু শিক্ষক পাঠানোর জন্য। 1929 সালে বিশ্বভারতী তে জুজুৎসু শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন শিনজো তাকাগাকি। কবি চেয়েছিলেন শুধু শান্তিনিকেতনের ছেলে মেয়েরা না, পুরো বাংলার মেয়েরা এই শিক্ষায় শিক্ষিত হোক। জুজুৎসু শেখার জন্য আলাদা জাপান থেকে আলাদা ধরনের কাপর আনিয়ে জাপানি কায়দায় সেলাই করা হয়। কারা এই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ছিলেন নৃপেন্দ্রনাথ দত্ত, গোরা বসু সহ অভিভাবক দের পারমিশন নিয়ে ছাত্রীরাও শিখেছিলন জুজুৎসু। ছাত্রীদের মধ্যে ছিলেন খুকু মানে অমিতা সেন ইনি বিখ্যাত গায়িকা ছিলেন এছাড়া উমা দত্ত, কুসুমিকা পাল, যমুনা সেন সহ প্রমুখ।
সব শিক্ষকদের প্রণাম ।
ছবি সূত্র - internet
তথ্য সূত্র - জীবন স্মৃতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
History
Jujutsu Martial Arts
Rabindranath Tagore
Sarvepalli Radhakrishnan
Teacher's day
Teacher's of Rabindranath Tagore
Visva Bharati
- Get link
- X
- Other Apps






Comments