- Get link
- X
- Other Apps
Posted by
Tiki liki
on
- Get link
- X
- Other Apps
![]() |
| রাখি |
আর কয়েকদিন বাদেই রাখি বন্ধন উৎসব। শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালন করা হয়। এই দিনটি হলো ভাই আর বোনের দিন, বোন তার ভাইয়ের হাতে রাখি পরিয়ে দেয়, এই রাখির মানে হলো ভাই তার বোন কে রক্ষা করবে।
![]() |
| এই হলো রাখি |
এই রাখি বন্ধন উৎসব নিয়ে পৌরাণিক গল্প যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা। আজকে সেই গল্পটা কিংবা ঘটনাই বলবো। আগে পৌরাণিক গল্প থেকে শুরু করি। জানা যায় একশো টি অপরাধ করার পর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন শিশুপালের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল তখন, শ্রী কৃষ্ণের আঙুলে কেটে রক্ত বের হয় হয়, সেই দেখে দ্রৌপদী নিজের শাড়ি ছিঁড়ে শ্রী কৃষ্ণের আঙুলে বেঁধে দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ করেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীকে রক্ষাকরার অঙ্গীকার করেছিল।
![]() |
| দ্রৌপদী শ্রীকৃষ্ণের হাতে কাপড়ের টুকরো বেঁধে রক্ত বন্ধ করছেন। |
এখানে বলে রাখা দরকার যে শিশুপালের মা কে শ্রী কৃষ্ণ কথা দিয়েছিল যে একশোটি অপরাধ করার পরই শিশুপালকে শান্তি দেবে, সেই জন্য একশোটি অপরাধ করার পর এই যুদ্ধ। আবার এই ঘটনা আরও একটা দিক জানা যায় শ্রী কৃষ্ণের বোন শুভদ্রা, কিন্তু শুভদ্রা একটু হিংসে হতো দ্রৌপদীকে। একদিন তো শুভদ্রা জিজ্ঞেস করলো কৃষ্ণ কে কেন তুমি দ্রৌপদীকে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসো ? শ্রীকৃষ্ণ বললেন ঠিক সময়ে বুঝতে পারবে। হলোও তাই আগে যেই ঘটনার কথা বললাম সেই ঘটনা, কিন্তু পার্থক্য হলো শুভদ্রা কোন কিছু খুঁজে পাচ্ছিলেন না শ্রীকৃষ্ণের আঙুললের রক্ত বন্ধ করার জন্য, কিন্তু দ্রৌপদী নিজের শাড়ি ছিঁড়ে শ্রীকৃষ্ণে আঙুল বেঁধে দিয়েছিলেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ শুভদ্রা কে বলেছিল এবার বুঝলে তো ! এই রাখি সম্পর্কে আরো একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করতে হবে,
রাক্ষস রাজ বালি কে হারিয়ে বিষ্ণু তিনটি জগত অধিকার হলেন। এখানে বালির একটু পরিচয় দিয়ে রাখা দরকার, রাক্ষসরাজ বালি হলো প্রহ্লাদের নাতি প্রহ্লাদ আর হিরণ্যকশিপু গল্প আগেই বলেছি, কিন্তু প্রহ্লাদের নাতি হওয়া সত্ত্বেও রাক্ষস রাজ বালি কোনো বিষ্ণু ভক্তি ছিল না। সেই জন্য প্রহ্লাদ তাকে অভিশাপ দিয়েছিল, এবং অভিশাপ কার্যকরী হয়েছিল। রাক্ষস ও দেবতাদের মধ্যে যুদ্ধ হয়, তার ফলে অনেক কিছু ঘটে সেই গল্প অন্য একদিন বলবো, আবার মূল গল্পে ফিরি, বালি তো হেরেই গেছিলেন কিন্তু তিনি বিষ্ণু কাছে বর চাইলেন, বললেন তিনি যেন তার প্রাসাদেই থাকেন। বিষ্ণু রাজি হলেন, যার ফলে নিজের বরে আটকে গেলেন ভগবান বিষ্ণু। ঐ দিকে মা লক্ষ্মী চিন্তা পড়ে গেলেন কি করা যায়, মা লক্ষ্মী নারদ মুনি সঙ্গে আলোচনা করলেন শেষে ঠিক হলো মা লক্ষ্মী রাখি পাঠাবেন দৈত্যরাজ বালি কে, পাঠালেন ও আর উপহার হিসাবে চাইলেন ভগবান বিষ্ণু যেন বৈকুণ্ঠ ফিরে আসেন। এই ঘটনাটি ভগবত পুরাণ এবং বিষ্ণু পুরাণে উল্লেখ করা হয়েছে। রাখি বন্ধন সম্পর্কে আরো একটি গল্পে রয়েছে, এই গল্পটি 1975 সালে তৈরি বিখ্যাত সিনেমা Jai Santoshi Maa তে দেখানো হয়েছে।
![]() |
| গনেশ |
জানা যায় রাখি পূর্ণিমার দিনে গনেশের বোন মনশা গনেশ কে রাখি পরাতে গেছে, সেই দেখে গনেশ ছেলেরা বায়না ধরেছে তারাও রাখি পড়বে তাদের বোন চাই, ছেলেদের বায়না মেটাতে গনেশ ঈশ্বরিক আগুন থেকে সৃষ্টি করলো মা সন্তোষী কে। মা সন্তোষী গনেশ দুই ছেলে অর্থাৎ শুভ ও লাভে হাতে রাখি পরিয়ে দেয়। তাই পুরাণ মতে গনেশের মেয়ে হলো মা সন্তোষী। বালি কে নিয়ে আরো একটা গল্প আছে, এই বালি হলো বনররাজ বালি, রামায়ণে যেই বালির কথা জানতে পারি। মা লক্ষ্মী এক গরিব মহিলার ছদ্মবেশে বালির রাজপ্রাসাদে এসেছিল, বালি তার রাজপ্রাসাদে দরজা খুলে দেয় ছদ্মবেশ রুপি মা লক্ষ্মীর জন্য। খুশি মা লক্ষ্মী বালি হাতে তার শাড়ির টুকরো বেঁধে দেয়।
![]() |
| যম এবং যমুনা বা যমী |
ভাই বোনের কথা যখন হচ্ছে তখন, মৃত্যুরাজ যম আর তার বোন যমুনাকে বাদ দিয়ে যাওয়া যায় না। বলা হয় যমুনা তার ভাই যম কে রাখি পরিয়ে দেয়, আর যম যমুনা কে অমরত্ব দান করে। এবং আরো বলে, যে বোন তার ভাই কে রাখি পরাবে, আর ভাই তার বোন কে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেবে, তবে সেই ভাই রক্ষা করবে সয়ং যমরাজ। রাখি নিয়ে আরো একটি গল্প প্রচলিত আছে, শ্রী রাম ফুলের রাখি বেঁধে দিয়েছিলেন তার বানর সেনাবাহিনীর হাতে।
এবার ইতিহাস রাখির কথা বলি, শুরু করা যাক গ্রীক সম্রাট আলেকজান্ডার কে দিয়ে ম্যাসিডোনিয়ার সিংহাসন যখন দখল করলেন আলেকজান্ডার তখন তার বয়স ছিল কুড়ি।
![]() |
| সম্রাট আলেকজান্ডার |
সমস্ত পৃথিবীকে তিনি জয় করবেন এটাই ছিল তার স্বপ্ন। পৃথিবী জয় করার আগে আলেকজান্ডার শত্রুদের আস্তে আস্তে নিকেশ করলেন। ম্যাসিডোনিয়ার কিছু অঞ্চলে বিদ্রহ শুরু হয়েছিল, সেগুলি দমন করলেন গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডার। এবার শুরু হলো তার স্বপ্নকে সত্যি করার কাজ, মানে পৃথিবীকে জয় করা। এশিয়া মহাদেশে আসলেন আলেকজান্ডার, তারপর বিশাল সেনা নিয়ে পারস্য জয় করলেন, হারালেন পারস্য সম্রাট তৃতীয় দারিয়ুস কে। 326 খ্রিষ্টাপূর্বাব্দে সিন্ধু নদী পার করে ভারতে পা রাখলেন আলেকজান্ডার। অনেক রাজাই বিনা যুদ্ধে আলেকজান্ডারের বশ্যতা স্বীকার করে নিলেন আবার অনেকে যুদ্ধ করলেন কিন্তু হেরে গেলেন আলেকজান্ডারের কাছে। আলেকজান্ডারের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন ঝিলামরাজ পুরু, ঝিলামরাজ পুরু কিন্তু প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলেন গ্রিক সম্রাট কে, কিন্তু এই রকম অবস্থায় গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডারের স্ত্রী রোক্সানা রাখি পাঠিয়ে ছিলেন পুরু কে, আর অনুরোধ করেছিলেন তিনি যেন আলেকজান্ডারকে আঘাত না করে।
![]() |
| রোক্সানা |
পুরু রোক্সানা কে তার বোন মনে করেছিলেন এবং আলেকজান্ডার কে বাগে পেয়েও আঘাত করেন নি। কিন্তু অবশেষে পুরু যুদ্ধে হেরে যান।
![]() |
| পুরু |
কন্তু পুরু বীরত্ব দেখে খুশি হন আলেকজান্ডার এবং পুরুকে মুক্তি দেন। পুরু সাথে আলেকজান্ডারের যুদ্ধ হয়েছিল হিদাস্পেস নদীর ধারে সেই নদীটি বর্তমানে ঝিলম নদী নামে পরিচিত।
![]() |
| হুমায়ূন |
মোঘলদের সময়েও ভারতে রাখি পালন করা হতো। ভারতে তখন মোঘল সম্রাট হুমায়ূন রাজত্ব কাল চলছে, 1535 খ্রিষ্টাব্দে হুমায়ূন চিতোরের রাণী কর্ণাবতীর কাছ থেকে একটি প্রস্তাব ও রাখি পেলেন।
![]() |
| রাণী কর্ণাবতী |
মেওয়ার বা চিতোরের রানা সাঙ্গা ওরফে সংগ্রাম সিংহ, যিনি পরিচিত ছিলেন মহারানা সাঙ্গা নামে, ওনার মৃত্যুর পর মেওয়ার রাজ্যের দায়িত্ব নেয় রাণী কর্ণাবতী, কিন্তু সেই সময় তো কোনো রাণী নেতৃত্বে রাজ্য চলছে সেই কথা তো ভাবাই যেত না, তাই রাণী কর্ণাবতী তার বড় ছেলে বিক্রমজিত নামে শাসন চালাচ্ছিলেন।
![]() |
| রানা সাঙ্গা |
এইরকম সময়ের গুজরাটের বাহাদুর শাহ জাফর দ্বিতীয় বারের জন্য মেওয়ার আক্রমণ করলেন এবং বিক্রমজিত কে পরাজিত করেন, এইরকম পরিস্থিতি তে কর্ণাবতী অন্যান্য রাজ্যের সাহায্য চাইছিলেন, তিনি মোঘল সম্রাট হুমায়ূন কিছে প্রস্তাব ও রাখি পাঠিয়ে ছিলেন। বলে রাখা দরকার যে বাবর 1527 খ্রিষ্টাব্দে রানা সাঙ্গা কে পরাজিত করেছিলেন। হুমায়ূন রাখি পেয়ে খুশি হলেন প্রস্তাবে সাড়া দিলেন কিন্তু একটু দেরী হয়ে গেছিল হুমায়ূনের। যতক্ষন তিনি পৌঁছান তখন সব শেষ হয়ে গেছে, চারিদিকে মৃতদেহ ভরা কর্ণাবতী বাহাদূর শাহের বাহিনীর হাত থেকে নিজেকে ও সমস্ত স্ত্রীদের রক্ষার জন্য জহর ব্রত করেছেন। মানে আগুনে ঝাঁপ দিয়েছেন। হুমায়ূন বাহাদুর শাহ জাফর কে পরাজিত করেন চিতোর পুনরুদ্ধার করেন।
![]() |
| বাহাদুর শাহ জাফর |
তাহলে কি হুমায়ূন চিতোর নিজের দখলে রেখেছিল? না চিতোর বা মেওয়ার পুনরুদ্ধার করার পর বিক্রমজিত কে রাজ সিংহাসনের বসিয়ে ফিরে আসেন। রাখি বন্ধনের সঙ্গে বাংলার বিশেষ সম্পর্ক। ভারত তখন পরাধীন। ব্রিটিশ সরকার ভালো ভাবে ভারতেকে হাতের মুঠোয় এনেছে। ততদিনে মহাবিদ্রোহ হয়ে গেছে। কলকাতা তখন ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী, বিপ্লবী সমিতি গুলি ব্রিটিশ সরকারের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছে। তার মধ্যে অন্যতম অনুশীলন সমিতি, শিক্ষিত যুবকেরা এই সব বিপ্লবী সমিতির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এইরকম হতে থাকলে তো ব্রিটিশ সরকার কে ভারত থেকে পাততাড়ি গোটাতে হবে। এইরকম পরিস্থিতি তে তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জন ঠিক করলেন বাংলা ভাগ করার 1905 সালের 19 জুলাই বাংলাকে ভাগ হলো।
![]() |
| লর্ড কার্জন |
কারণ হিসেবে ব্রিটিশ সরকার দেখিয়ে ছিল প্রশাসনিক কাজে অসুবিধার জন্য এই রকম সিধান্ত। সেই সময় বাংলা ছিলো বাংলা বিহার আসাম ও শ্রীহট্ট মিলিয়ে, বাংলা হয়ে ছিল বিপ্লব ও বিদ্রোহীদের আঁতুরঘর। এই ঐক্য বিদ্রোহ কে দমন করার জন্য এইরকম ব্যবস্থা নিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার।
![]() |
| তৎকালীন বাংলার map |
যেদিন এই বিলটি পাস হয়েছিল সেদিন রাখি বন্ধন উৎসব, রবীন্দ্রনাথ ও ঠাকুর বাড়ির তরুণরা সবাই শোভাযাত্রায় করলো পায় হেটে আর সবাইকে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে রাখি পরিয়ে দিল। ব্রিটিশদের বুঝিয়ে দিল বাংলা এক, সেই অমোঘ বাণী 'বাংলার মাটি বাংলার জল' এইরকম প্রতিবাদ ব্রিটিশ সরকার ভাবতেও পারিনি।
অবশেষে 1911 সালে ছয় বছর, পর বাংলা ভাগের প্রস্তাব রদ করলেন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ।
![]() |
| লর্ড হার্ডিঞ্জ |
এই ভাবেই প্রতিবছর রাখি বন্ধন উৎসব হয়ে দাঁড়িয়েছে সম্প্রীতি উৎসব।
ছবি সূত্র - internet
তথ্য সূত্র - Time's of India
https://www.prohor.in/the-rakhi-bandhan-initiative-against-bengal-partisan
Bengal Partisan
History
History of Bengal
History of india
Lord Lord Karjan
Mythology
Rabindranath Tagore
Rakhi
Raksha Bandhan
- Get link
- X
- Other Apps
















Comments