- Get link
- X
- Other Apps
Posted by
Tiki liki
on
- Get link
- X
- Other Apps
![]() |
| কবিগুরুর |
বর্তমানে বিশেষ করে পুরুষদের স্টাইল হলো গাল ভর্তি চাপ চাপ দাড়ি রাখা। বিশেষ করে বলিউড তারকা রনবীর সিংয়ের কোনো এক সিনেমায় ঐ রকমের দাড়ি রেখেছিল, আর তার পর থেকে শুরু এই স্টাইল। পাঁচ ফুটের দাড়ি কথা আগেই বলেছি, কিন্তু এই স্টাইল বা ফ্যাসনের জন্য দাড়ি। মানে এক কথায় ট্রেন্ডিং, এটাই এখন চলছে। কিন্তু এই স্টাইলে দাড়ি চল ফ্যাসন চালু করেছিল একজনক বাঙালি, না রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নন, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজকে সেই গল্পটা বলি ।
ঠাকুরবাড়িতে ঠিক করা হয় নাটক হবে।ভালো কথা কী নাটক করা যায়, ঠিক হলো ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নববাবুবিলাস নাটক টি করা হবে, এই নাটক টি আবার ব্যাঙ্গোকৌতক নকশা।
বাংলার বাঘ আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এই রচনাটিকে প্রথম বাংলা উপন্যাস মর্যাদা দিয়েছিল, এটি প্রকাশ পেয়েছিল 1825 সালে। কিন্তু সবাই এই রচনাটিকে ব্যাঙ্গোকৌতক মনে করেন। সে যাই হোক অনেক বলেন নাটক টি করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর আবার অনেক ধারনা এই নাটকটির মূল উদ্যোক্তা ছিলেন গিররীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঠাকুরদা ছিলেন গিররীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ঠাকুরবাড়ির কড়া নির্দেশ ছিল যে নাটকে কোনো পরচুলা ব্যবহার করা হবে না, তাই যাদের রোল অনুযায়ী কারোর গোঁফ দাড়ি দরকার হলে, সেটা তাদের নিজেদের বাড়াতে হবে, ঈশ্বর মুখার্জি এই নাটকে একটি রোল পেয়েছিলেন। ইনি আবার ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাগ্নে। দারোয়ান রোল যখন আবার নকল গোঁফ দাড়ি চলবে না, তাই গোঁফ দাড়ি বাড়াতে শুরু করলেন ঈশ্বর মুখোপাধ্যায়, দাড়ি রাখলেন আবার গালপাট্টা স্টাইলের। চুল কিংবা দাড়ি সবকিছুরই যত্ন নিতে হয়, 'চিবুকের উপর সিঁথি কেঁটে দুভাগ করে কানের অবধি চড়িয়ে দেওয়া দাড়ি হলো গালপাট্টা'। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নজরে পরে এই দাড়ির। তিনি ভাবলেন এইরকম দাড়ি রাখবেন। জানা যায় আগে কখনো দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর দাড়ি রাখতেন না, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর দাড়িহীন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছবি দেখেছেন বর্ধমানের রাজার কাছে ।
![]() |
সেই সময় দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বাঙালির স্টাইল আইকন ! দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়ে একটা গল্প আছে, শোভাবাজার রাজবাড়ির থেকে নেমন্তন্ন এসেছে, সবার আগ্রহ কী পোশাক পড়বেন বা কেমন হবে তার সাজ পোশাক দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর পড়লেন মুক্তো বসানো মখমলের জুতো আগা সাদা পোশাক আর মাথায় পাগড়ি । আর মজার কথা হলো সেদিন সবার পাগড়ি তে মুক্তো ছিল আর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর মুক্তো ছিল পায়ে।
![]() |
| দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই সময়ের ছবি |
বয়স বাড়ছে, এখন দেবেন্দ্রনাথ মহর্ষি, তিনি এখন ব্রাহ্ম ধর্মের প্রচারক তাই দাড়ি এখন গালপাট্টার বদলে ঝুল দাড়ি আর সোনার চশমা। তখন সেই স্টাইলে মজেছিল বাংলার ছেলেরা। সেই তখন থেকে ঠাকুর বাড়ির অনেকেই এমন কি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঝুল দাড়ি রাখতেন। অনেকে এই দাড়ি কে বলতো দাবিন্দ্রীক দাড়ি ।
![]() |
| মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর |
রবীন্দ্রনাথের দাড়ি বরাবরই বিখ্যাত, জানা যায় প্রথম দিকে কবিগুরু দাড়ি গোঁফ রাখতেন না। কবিগুরুর বিয়ের সময় নাকি ওনার দাড়ি ছিলো না, ছিলো শুধু খুব যত্ন করে কাঁটা গোঁফ।
বিয়ের পর নাকি দাড়ি রাখা শুরু করেন, জানিনা এই কথাটি কতটা সত্যি কিংবা পুরোটাই মিথ্যে ?! আবার এই কথা শোনা যায় তার মত অন্য কেউ ওরকম গোঁফ দাড়ি রাখালে তিনি নাকি রেগে জেতেন, আবার বলি এই কথা গুলো প্রচার নাকি অপ্রচার সেইটা জানিনা। অমিও দত্তের লেখা থেকে জানতে পারছি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি বৈঠকের কথা, ওখানে কথাসাহিত্যিক বলছেন "তোমরা জানো ’ত রবীন্দ্রনাথ ও রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়-এর সঙ্গে যে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব ছিলো তা এখন বিবাদে পরিণত হ’য়েছে, রবীন্দ্রনাথ প্রবাসী সম্পাদক—রামানন্দবাবুর ওপর খুব চটে গেছেন। কারণ রামানন্দবাবু বিলেতের বিভিন্ন জায়গায় রবীন্দ্রনাথের নাম নিয়ে খুব সম্বর্ধনা নিচ্ছেন, মালা পরছেন আর হাততালি পাচ্ছেন। সবাই বললে, এ আবার কী কথা। রামানন্দবাবু আর রবীন্দ্রনাথ তো একরকম দেখতে নয়। শরৎচন্দ্র বললেন আরে গন্ডগোল করেছে ওই গোঁফ-গাড়ি।রবীন্দ্রনাথের গোঁফ-দাড়ির সাইজ ও রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের গোঁফ-দাড়ির সাইজও প্রায় এক। আর মুখ! ওদের কাছে সব ভারতীয়র মুখ প্রায় এক, যেমন আমরা চিনেম্যান বা জাপানিদের এক রকম দেখি। গোঁফ-দাড়ি দেখেই ওরা রবীন্দ্রনাথকে চিনত, রামানন্দ বাবুর গোঁফ-দাড়ি দেখে রবীন্দ্রনাথ বলে ওরা তাঁকে সম্মান জানাচ্ছে।"
![]() |
| রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় |
বিশ্বকবির দাড়ি নিয়ে এক লজ্জার ঘটনা ঘটে আমাদের কলকাতায় রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন তার মৃত্যু হোক তার প্রিয় শান্তিনিকেতনে, কিন্তু বিধাতা কারোর ইচ্ছে রাখেনা, রবীন্দ্রনাথের ও রাখেনি তার মৃত্যু হয়েছে ছিল কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি তে । ইন্দিরা দেবী কে 1930 সালের 25 অক্টোবরে লেখা একটি চিঠিতে কবিগুরু লিখেছিলেন
"আমার শ্রাদ্ধ যেন ছাতিম গাছের তলায় বিনা আড়ম্বরে বিনা জনতায় হয়-শান্তিনিকেতনের শালবনের মধ্যে আমার স্মরণসভা মর্মরিত হবে, মঞ্জরিত হবে, যেখানে যেখানে আমার ভালোবাসা আছে, সেই সেইখানেই আমার নাম থাকবে" তিনি তার বন্ধু নির্মলকুমারি বলেছিলেন "তুমি যদি সত্যি আমার বন্ধু হও, তাহলে দেখো আমার যেন কলকাতার উন্মুক্ত কোলাহলের মধ্যে, 'জয় বিশ্বকবির জয়' 'জয় রবীন্দ্রনাথের জয়' 'বন্দেমাতরম' এইরকম জয়ধ্বনির মধ্যে সমাপ্তি না ঘটে' কবিগুরু অনুমান করেছিলেন এইরকম কিছু ঘটবে, এবং ঘটেও ছিল তাই। বার বার সেই দিন কলকাতার উন্মুক্ত জনতা কে বলা হয়েছিল ঠাকুরবাড়ির থেকে এই গুলো না বলতে, কিন্তু কথায়? ভিড় বার বার বলেছে 'জয় রবীন্দ্রনাথের জয়' 'বন্দেমাতরম' । জানা যায় সেই দিন মনে হচ্ছিল কোনো কিছুর উদযাপন হচ্ছিলো কলকাতায়। আর সবচেয়ে লজ্জার বিষয় ছিল, সেই দিন। জানা যায় যখন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির থেকে বিশ্বকবির নিথর দেহ বাইরে নিয়ে আসা হয়, কলকাতা রাজপথে শুধু মানুষের মাথা। অনেকে তো প্রণাম করার অছিলায় কবিগুরু পায়ের নখ, কেউ তো আবার চুল দাড়ি ছিঁড়ে নিয়েছিল মেমন্টো হিসাবে রেখে দেবে বলে। এই সবকিছুর উল্লেখ পাই নির্মলকুমারী মহলানবিশের ‘বাইশে শ্রাবণ’ বইতে। দাড়ি নিয়ে আরো একটা কথা জানা যায়, কবিগুরু নিজের আত্মজীবনী 'জীবনস্মৃতি' বলেছিলেন তার প্রথম প্রেমের কথা, 1878 সালের ঘটনা, রবীন্দ্রনাথ তখন বোম্বে অর্থাৎ এখনকার মুম্বাই তে যেই বাড়িতে কবিগুরু কে থাকতে হয়েছিল, সেই বাড়িতে একটি মেয়ে এসেছিল সে তখন বিদেশে ঘুরছিল তার নাম আন্না তড়খড়, কবি তার নাম রেখেছেন 'নলিনী' আন্নার ও এই নামটি ভালোই লেগেছিল। কবি আন্না জানিয়েছিলেন তিনি কবিতা লেখেন, আন্না ও মেনে নিয়েছিল। আন্না কবিগুরু কে বলেছিলেন “কবি, তোমার গান শুনলে আমি বোধ হয় আমার মরণদিনের থেকেও প্ৰাণ পেয়ে জেগে উঠতে পারি।” আর কবি লিখেছেন মনে পড়ছে তার মুখেই প্ৰথম শুনেছিলুম আমার চেহারার তারিফ। কবিগুরুর কে আন্না বলেছিলেন "আমার একটা কথা তোমাকে রাখতেই হবে, তুমি কোনো দিন ও দাড়ি রেখোনা, তোমার মুখের সীমানা যেন কিছুতেই ঢাকা না পড়ে।’ এই রকম আরো অনেক ঘটনা জানা যায়। যেমন রবীন্দ্রনাথ অনেক বিজ্ঞাপন লিখেছিলেন, বিভিন্ন জিনিসপত্র বিজ্ঞাপন লিখেছেন কবি, এমনকি বিদেশি জিনিস বিজ্ঞাপনে দেখা যায় কবিকে, সেইটা শুধুমাত্র বিশ্বভারতী জন্য। ফোটো স্টুডিও, জুতো, গোডরেজ সাবান, হারমোনিয়াম, কুন্তলীন কেশ তেল, মিস্টির দোকান, ঘি, দই, বোর্নভিটা, ভারতীয় রেল, বিদেশি এয়ারলাইন্স, ছাপাখানা আরো কতকিছু।
![]() |
| বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে রবীন্দ্রনাথ |
একবার "ভারত" ব্লেড কোম্পানি গেছে রবীন্দ্রনাথ কাছে তাদের ব্লেড বিজ্ঞানের জন্য, জানা যায় রবীন্দ্রনাথ তাঁর সাদা দাড়িতে হাত বুলিয়ে বলেছিলেন "এই দাড়ি নিয়ে আমি যদি বিজ্ঞাপন করি তাহলে কেউ কি তোমাদের ব্লেডের ধারে আস্থা রাখবে ? না আমাকে করবে বিশ্বাস ?"
এইরকম কত গল্প কত ইতিহাস রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ কে নিয়ে।
প্রতিবার শ্রাবণ আসলেই বাঙালি ও কলকাতা তিলোত্তমা বারবার খুঁজতে থাকে কবিগুরু কে !
ছবি সূত্র - internet
তথ্য সূত্র - https://inscript.me/rabindranath-tagore-and-his-unknown-facts
https://inscript.me/rabindranath-tagores-funeral-was-a-shameful-memory-for-bengalis
https://eisamaygold.timesgroup.com/people/dari-diye-jay-chena/1663681046319
https://www.prothomalo.com/onnoalo/eyvyegiwkr
https://www.anandabazar.com/rabibashoriyo/collage-of-memories-of-rabindranath-tagore/cid/1280096
- Get link
- X
- Other Apps








Comments