- Get link
- X
- Other Apps
Posted by
Tiki liki
on
- Get link
- X
- Other Apps
![]() |
| বাঙালির ছাতা |
বৃষ্টিতে শুরু হয়েছে কিন্তু ছাতা কোথায় গেল ? চিল্টুর মনে পড়লো ছাতা সে আবার বন্ধুর বাড়িতে ভুলে রেখে এসেছে, এই ছাতা নিয়ে দুমাসে চারটে ছাতা হারালো চিল্টু । মা বলে রেখেছে আর যদি ছাতা হারায় নতুন ছাতা কিনে সেই ছাতা ওর পিঠে পড়ব। আর মা যদি জানতে পারে, পিঠে ভাঙবে ছাতা ।
আবার ছাতা তবে এবার বাংলার ছাতার কথা । এমনিতেই তীব্র রোদ কিন্তু এখন চলছে আষাঢ় মাস, মানে এই সময় বৃষ্টি এসে গরম থেকে একটু আরাম দেবে । বৃষ্টি মানে কিশোর কিশোরী অথবা মাঝ বয়সী সবার, হাতে থাকবে ছাতা । ছাতা ব্যবহার কিভাবে শুরু এই website এ আছে, ছাতার কথা! লিখে search করলেই পাওয়া যাবে । কিন্তু আবার কেন ছাতার কথা বলছি অনেক ভাবছেন, আজকে বাঙালির ছাতার কথা বলবো। বাঙালি কিন্তু ব্যবসা করতে পারে এবং অনেক আগের থেকেই পারে, একটা প্রচলিত কথা আছে বাঙালি নাকি ব্যবসা করতে জানে না, এই কথাটি সম্পূর্ণ ভুল । চাঁদ সওদাগর, মতিলাল শীল, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, আলামোহন দাশ সহ অনেকেই প্রমাণ করে দিয়েছে যে বাঙালিরাও ব্যবসা করতে পারে । এর মধ্যে আরো একজন নাম হলো মহেন্দ্র লাল দত্ত । ঠিক ধরেছেন মহেন্দ্র লাল দত্ত অ্যান্ড সন্স এর ছাতা । যখন মহেন্দ্র বাবু ঠিক করেন যে তিনি ছাতার ব্যবসা করবেন, তখন ছাতা ছিল আভিযাত্যের প্রতীক । গুগল বলছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ছাতা তৈরি হয় চীনে, চীনের Shangyu শহরে নাকি হাজারের উপর ছাতা তৈরি কারখানা আছে । তবে ছাতা কিন্তু প্রথম তৈরি হয় মিশরে ।
![]() |
| মহেন্দ্র লাল দত্তরের ছাতার বিজ্ঞাপনের ছবি |
মহেন্দ্র লাল দত্ত যখন ছাতার ব্যবসা শুরু করেন তখন ছাতা ছিল, সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে। ছাতা ব্যবহার করতো ইংরেজরা অথবা বাবুরা । তখন তো ভারতে ব্রিটিশ আধিপত্য, আর মহেন্দ্র লাল দত্ত ছিলেন বেনিয়াটোলার জমিদার বাড়ির ছেলে, সেই সময় জমিদার বাড়ির ছেলেরা কাজ কর্ম করতেন না, তাদের লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ সরকার তাবেদারী করে রায়বাহাদুর খেতাব আদায় করা । কিন্তু মহেন্দ্র লাল দত্তর ছিল অন্য স্বপ্ন, সাধারণ মানুষ কাছে পৌঁছেদেবেন তার তৈরি ছাতা ।
বিদেশ থেকে আমদানি না করে এই ছাতা তৈরি কারখানা বানালেন 1882 সালে 26 নং বেনিয়াটোলা লেনে নিজের বাড়িতেই। এই কাজে পাশে পেয়েছিলেন তার স্ত্রী রাধারাণী দেবীকে। রীতিমত নিজের নামে ব্র্যান্ডিং করলেন, আর কোম্পানির নাম রাখলেন Mohendra Dutt & Sons .
1882 সাল থেকে শুরু হলো তার ছাতার ব্যবসা, তখনকার বাবু এই কাজ কে খুব ভালো চোখে দেখেনি তাও আবার বনেদি বাড়ির ছেলে করছে ব্যবসা ! 1882 সাল থেকে 1909 সাল প্রায় সাতাশ বছর এই ব্যবসা দারুন ভাবে সারা ফেলে দিয়ে ছিল । তখন কলকাতার বুকে ব্রিটিশ সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যবসা করছেন মহেন্দ্র লাল দত্ত, কিন্তু হঠাৎ মারা যান মহেন্দ্র লাল দত্ত ।
আত্মীয়স্বজন ষড়যন্ত্র করে,ঠিক করলেন ব্যবসা কোনো এক মাড়োয়াড়ি ব্যবসায়ী কাছে বিক্রি করে দেবেন, কে আর দেখবে বা শুনবে আর মহেন্দ্র দত্তের ছেলেরাও ছোট, সুযোগ আছে করা যাক সুযোগ সদ্ব্যবহার । এই সময় রুখে দাঁড়ালেন রাধারাণী দেবী । তার স্বামী ব্যবসাকে তিনি বেহাত হতে দেবেন না । মামলা করলেন আদালতে, তার পরলোকগত স্বামীর ব্যবসা ও ব্র্যান্ডের উপর তিনি ও তার ছেলেদের ছাড়া কাউর অধিকার নেই । আদালত রায় ঘোষণা করলো রায় গেল তার পক্ষে উপযুক্ত প্রমাণ দেখিয়ে মামলা জিতে নেন রাধারাণী দেবী । সেই সময় যখন মহিলারা থাকতো বাড়ির অন্দর মহলে, বাড়ির বাইরে বের হওয়া ছিল নিষেধ । সেই সময় এক এক বিধবা স্বামীর ব্যবসা বাঁচাতে কতকিছু করছিলেন, ভাবতেও অবাক লাগে । শুধু কি তাই নিজের ছেলেদের মানুষ ও করেছেন একই সঙ্গে, একসঙ্গে বললাম কারণ মহেন্দ্র লাল দত্তরের চলে যাওয়ার পর তার ব্যবসার হাল তিনি ধরে রেখেছিলেন, তার সময়ে মহেন্দ্র লাল দত্তের ছাতা কলকাতার বাইরে ছড়িয়ে পড়ে ছিলো।
![]() |
| মহেন্দ্র লাল দত্ত |
14 বছর ধরে ছেলেকে মানুষ করা এবং ছাতার ব্যবসা টানা চালাচ্ছিলেন রাধারাণী দেব , এরপর ব্যবসার দায়িত্ব নেয় 16 বা 17 বছর বয়সী মহেন্দ্র লাল দত্তরের বড় ছেলে ভবানী দত্ত 1923 সালে । এরপর পূর্বপুরুষদের তৈরি Mohendra Dutt & Sons এখনো চলছে রমরমিয়ে । ছাতার পাশাপাশি রেনকোট এবং ব্যাগ তৈরি করছে এই সংস্থা, এবং ছাতা তৈরিতে আধুনিকীকরণ হয়েছে ।
![]() |
| Mohendra Dutt & Sons এর তৈরি Bag |
বাঙালির ছাতার কথা যখন বলছি তখন আরো একজন বাঙালির কথা না বলাটা ঠিক হবে না । হয়তো বুঝতেই পেরছেন, হ্যাঁ কে সি পালের কথা বলছি । আগে টিভি তে বিজ্ঞাপন দেখা তো গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা কে.সি.পালই ভরসা।
![]() |
| কে. সি. পালের ছাতার বিজ্ঞাপনের ছবি |
এই ছাতা ব্যবসা শুরু করেন কে সি পালের বাবা তুলসিদাস পাল । আর ব্যবসা শুরু করেন যখন তখন ভারতে ব্রিটিশ রাজ চলছে, অন্যদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছে । জাপান ও অংশ গ্রহণ করেছে যুদ্ধে, জাপানি বোমারু বিমান চক্কর খাচ্ছে কলকাতা আকাশে । আবার খিদিরপুরে বোমা ফেলেছে জাপানি বিমান । ঐ দিকে সিঙ্গাপুরে রয়েছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, রাসবিহারী বসু তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন জাপানে আজাদ হিন্দ ফৌজের ভার তুলে দেওয়া জন্য । হ্যাঁ সালটা 1942 ।
![]() |
| জাপানি বিমান |
জাপানি বিমানে ভয় ব্রিটিশরা তো জুজু আবার অনেক তো কলকাতার থেকে পালিয়ে যাচ্ছে, এই বুঝি পড়লো ঘাড়ে । কিন্তু বড়বাজার নিজের দোকান ফেলে নড়লেন না কে সি পাল ওরফে কার্তিক চন্দ্র পাল । এই ব্যবসা কে তো আরো বাড়াতে হবে, কে সি পালের ছাতারর কদর ছিলোও তেমনি আর ছিল টেকসই । পাঁচ বছরের মধ্যে হ্যারিসন রোডে অর্থাৎ এখনকার মহাত্মা গান্ধী রোডে আরো একটি দোকান খুলল কে সি পাল । প্রথম দোকান ছিল তাদের, বড়বাজারের পুরুষোত্তম রায় স্ট্রিটে ছিল তাদের প্রথম দোকান। তবে কে সি পাল মারা যান 1947 সালে নিজের ব্যবসার কতটা বড়ে চলেছিল সেইটা দেখে যাওয়া হয়নি কার্তিক চন্দ্র পালের আবার অনেক ধারণা তুলসিদাস পাল মারা যান 1947 কোনটা সঠিক জানি না । এরপর ব্যবসার হাল ধরেন কে সি পালের দুই ছেলে অনাথনাথ আর বিশ্বনাথ আর বাকি দুজন মানে আলোকনাথ আর দেবনাথ যথেষ্ট ছোট তখন। জানা যায় অনাথনাথ 24 বছর বয়স থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে এবং বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতেন, উনি ব্যবসার ব্যাপারে খুব সিরিয়াস ছিলেন।
![]() |
| কে.সি.পালের ছাতা |
তখন সদ্য দেশ স্বাধীন হয়েছে শিল্প বাণিজ্য বাড়ছে , কে সি পালের ছাতা কলকাতা এবং আমাদের বাংলার বাইরে বিহার, উড়িষ্যা, আসাম সব যায়গায় ছড়িপড়লো । একটা নামি যথেষ্ট ছাতা ব্যবহার করিদের কাছে
কে সি পাল অ্যান্ড সন্স , তাহলেই যথেষ্ট । কে সি পাল ছাতায় আধুনিকীকরণ এসেছে ব্যাগের ভেতর রাখার তিন ফোল্ডের ছাতা রয়েছে , রয়েছে রেণকোর্ট । আশি বছরের কাছাকাছি চলে আসলো এই ছাতা ।
স্বদেশি আর বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় ছাতা তৈরি করেছিলেন মহেন্দ্র লাল দত্ত আর 1942 সালে মানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ছাতা ব্যবসা করেছিলেন কে সি পাল ।
এখনো চলছে কে.সি.পাল কিংবা Mohendra Dutt & Sons ছাতা এই তো বৃষ্টি শুরু হলো সবার হাতে কিংবা ব্যাগে দেখা যাবে বাঙালির ছাতা !
আর সেই জন্যই বাঙালির প্রবাদ শীতকালে কাঁথা আর বর্ষাকালে ছাতা ।
ছবি সূত্র - internet
তথ্য সূত্র - https://shono.sangbadpratidin.in/bengal-and-bengali/two-bengali-entrepreneurs-introduced-umbrella-in-bengal/
- Get link
- X
- Other Apps







Comments