- Get link
- X
- Other Apps
Posted by
Tiki liki
on
- Get link
- X
- Other Apps
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জামাই ষষ্ঠী । আর কদিন পরেই জামাই ষষ্ঠী, জামাই রা নতুন ধুতি পাঞ্জাবি পরে, হাতে মিষ্টি হাঁড়ি নিয়ে জামাই রা যায় শ্বশুর বাড়িতে । একটা রমরমা ব্যপার হয় সেই দিনটিতে, এমনকি 2020 সালেও রমরমিয়ে পালিত হয়েছে জামাই ষষ্ঠী, তবে জামাই রা শ্বশুর বাড়িতে যায়নি ঠিকই কারণ সেই সময় ছিল lockdown কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে খুব ভালোভাবেই পালিত হয়েছে এই উৎসব ।
শাশুরি জামাইয়ের জন্য হরেক রকমের খাবারের আয়োজন করেন, নিয়ম অনুযায়ী নতুন হাত পাখা দিয়ে বাতাস করা, পাঁচ রকমের ফল, একশো আটটি দুব্বা আরো কতো কিছুই না হয় এই দিনটিতে । আবার কথায় বলে ' যম জামাই ভাগনা তিন নয় আপনা ' যাই হোক ।
নিউজ চ্যানেল গুলো তে দেখানো হয়, সেলিব্রেটি জামাইয়ের কিভাবে জামাই ষষ্ঠী পালন হচ্ছে । কি কি তাদের মেনু সেই দিনে । তাই কি এভাবে জামাই ষষ্ঠী শুরু হয়ছে সেই নিয়ে আজকের গল্প ।
জামাই ষষ্ঠী কিভাবে সৃষ্টি হল, এইটা নিয়ে একটা গল্প আছে । গল্পটি না বললেই নয়, লৌকিক গল্প অনুযায়ী এক বাড়ির বউ খাবার খেয়ে নিয়ে বিড়ালের নামে দোষ দিত, বারবার ঐ বউ খাবার খেয়ে নিয়ে আর দোষ চাপায় বিড়ালের ঘাড়ে । বিড়াল মা ষষ্ঠীর বাহন, বিড়াল এই নিয়ে মা ষষ্ঠীর কাছে নালিশ জানায়, তো এমনই একদিন সেই বউ এর শ্বাশুড়ি ব্রত পালনের জন্য মিস্টি, পায়েস রান্না করলো আর পাহারা দিতে বলল বউ কে । ব্যাস যা হওয়ার কথা ছিল তাই হলো, বউ সব কিছু খেয়ে তো নিলো আর দোষ চাপালো বিড়ালের উপর । শ্বাশুড়ির সন্দেহ না হওয়ার জন্য, বিড়ালের মুখে একটু দই লাগিয়ে দিল ।
![]() |
| দেবী ষষ্ঠী |
ঐ দিনটি ছিল জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী । বিড়াল তো মার খেল । মনের দুঃখে বিড়াল কাঁদতে কাঁদতে, মা ষষ্ঠী কে নালিশ করলে, মা ষষ্ঠী বললেন নিশ্চই প্রতিকার করবেন । এই সব ঘটনার কয়েক মাস পর, সেই বউ এর একটি ছেলে সন্তান হলো । একদিন সেই বউ দেখলেন তারা সন্তান নেই, এই ভাবে সাত ছেলের ও এক মেয়ে হয়, কিন্তু কোন সন্তান থাকে না । সেই বউ এর শ্বাশুড়ি, পাড়ার লোকজন তাকে গালমন্দ করলো, অলক্ষণা বলে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় । মনের দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে সেই বউ হাঁটতে হাঁটতে বনে চলে আসে, সেই সময় এক বৃদ্ধার ছদ্মবেশে মা ষষ্ঠীর ঐ বউ এর সামনে আসেন এবং তার দুঃখের কারণ জানতে চাইলে বউ তার দুঃখের কথা বলে । তখন মা ষষ্ঠী তার আগের অন্যায় কথা মনে করিয়ে দেয়, তখন ক্ষমা চায় সেই বউ, এবং মা ষষ্ঠী ক্ষমা করেন, এবং বলেন যে ভক্তিভরে মা ষষ্ঠীর পুজো করলে তার সাত ছেলে ও এক মেয়ে কে ফিরে পাবে । বন থেকে বাড়িতে গিয়ে মা ষষ্ঠী পুজো করলে সেই বউ একে তার ছেলে মেয়ে কে ফিরে পায় । দেবী ষষ্ঠী কে, আমারা বায়ু পুরাণে দেখতে পাই । বায়ু পুরাণে দেবী ষষ্ঠী কে 49 টি দেবীর মধ্যে অন্যতম বলা হয়েছে । আবার যাজ্ঞবল্কস্মৃতি অনুযায়ী শিব উমার সন্তান হলো স্কন্দ, এই স্কন্দের পালিকা মাতা হলো এই দেবী ষষ্ঠী । অন্যদিকে হরপ্পাতেও প্রাগৈতিহাসিক যুগে এমন দেবী মূর্তি পাওয়া গেছে, তার থেকে নৃতত্ত্ববিদরা মনে করেন সিন্ধু সভ্যতাতে দেবী ষষ্ঠী মতো এক দেবী ছিলেন । নৃতত্ত্ববিদ ঐতিহাসিক সুধীর রঞ্জন দাস এই দেবীর উৎস কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে সেই নিয়ে গবেষণা রেখে গেছেন । আবার পুরাণে ফিরি, পদ্মপুরাণ বলছে, দেবী ষষ্ঠী স্কন্দের স্ত্রী । তাহলে যদি ধরে নেওয়া হয় সিন্ধু সভ্যতায় যে দেবীর কথা বলা হয়েছে সেই দেবী আসলে দেবী ষষ্ঠী, তাহলে খুব ভুল হবে না । এখানে বলে রাখা দরকার যে শুধু আমাদের বাংলায় দেবী ষষ্ঠীর পুজো হয় না কিন্তু, বাংলার বাইরে বিহার উড়িষ্যার বিভিন্ন অঞ্চলে দেবী ষষ্ঠী কে পুজো করা হয় ।
বিহারে দেখা যায় যে সন্তানের জন্মের ছয় তম দিনে ছ'ঠী মাতার যে পুজো হয়, সেই দেবী মা ষষ্ঠী । আবার কলিঙ্গ বা উড়িষ্যা তে সন্তানের জন্মের ছয় বা এগারো তম দিনে দেবী ষষ্ঠীর পুজো হয় । দেবী ষষ্ঠী কিন্তু বাংলার মঙ্গল কাব্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান আছে । আগে বলেছি, স্কন্দের স্ত্রী দেবী ষষ্ঠী, তাই কল্প সাহিত্যর মধ্যে অগ্নিবেশ্য গৃহ্যসূত্র, কঠক গৃহ্যসূত্র গ্রন্থে স্কন্দের স্ত্রী দেবী ষষ্ঠীর সাধনা করা নিয়ম আছে, কিন্তু আলাদা ভাবে দেবী ষষ্ঠীর নিয়ম বিধি পাওয়া যায়, 'মানব গৃহ্যসূত্র' গ্রন্থে । আবার এই নিয়ম বিধির আলাদা নাম ও আছে, সেটা হলো ষষ্ঠীকল্প । বলা হয়ে থাকে যে দেবী ষষ্ঠী পুজো অনেক পুরনো, বলা যেতে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগেও দেবী ষষ্ঠী পূজিতা হতেন।
দেবী ষষ্ঠীর কিন্তু শুধু মাত্র জৈষ্ঠ্য মাসে পুজো হয় না, আষাঢ় মাস কোড়া ষষ্ঠী, চৈত্র তে নীল ষষ্ঠী, বৈশাখ মাসে ধূলা ষষ্ঠী আবার আশ্বিন মাসে দূর্গা ষষ্ঠী, পৌষে পেটাই ষষ্ঠী, ফাল্গুন মাসে অশোকা ষষ্ঠী, মাঘ মাসে শীতল ষষ্ঠী,
ভাদ্রে মন্থন ষষ্ঠী, শ্রাবণ মাসে লোটন ষষ্ঠী, অগ্রহায়ণ মাসে মূলা ষষ্ঠী,
মানে বলা বারো মাসে ষষ্ঠী পুজো হয় ।
মহাভারতের ও ষষ্ঠী পুজোর উল্লেখ আছে ।
![]() |
| জামাই ষষ্ঠী খাওয়া দাওয়া |
বাংলায় জামাই ষষ্ঠী একটু বেশি গুরুত্বপূর্ণ আগেই বলেছি, আরো একটা গল্প আছে । সেই গল্পটি এইরকম, আগেকার দিনে নিয়ম ছিল যে যতদিন না পর্যন্ত বিবাহিত কন্যারা সন্তান লাভ করছে ততদিন পর্যন্ত তারা বাপের বাড়ি তে যেতে পারবে না । বিবাহিত মেয়ের মা বাবাও চাইছে মেয়ে জামাই কে দেখতে, কিন্তু উপায় কি ! মেয়ের বাবা ঠিক করলেন সমাজের বড় মাথার কাছ থেকে কোনো উপায় পাওয়া যায় কি না । সমাজের বড় মাথারা ঠিক করলেন জৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী কে জামাই ষষ্ঠী হিসাবে পালন করা হবে, সেই জামাই ও মেয়ের নিমন্ত্রণ করা হবে, তাহলে বিবাহিত মেয়ের মা বাবা নিজের মেয়ে কেও দেখতে পারবেন, ব্যাস সেই থেকে এখনকার সময়ও চলে আসছে জামাই ষষ্ঠী ।
জামাই ষষ্ঠী উপলক্ষ্যে বিশেষ মিষ্টি ও তৈরি হয় । জলভরা সন্দেশ তো এই জামাই ষষ্ঠী উপলক্ষ্যেই তৈরি হয়েছিল, হুগলির জমিদার সূর্য মোদকে বললেন এমন একটি মিষ্টি তৈরি করো, যার মাধ্যমে জামাইকে বোকা বানানো হবে আর জামাইয়ের সম্মান ও থাকবে । জানা যায় জমিদার বাড়ির মহিলা মহল এই আর্জি জানিয়েছিল জমিদারের কাছে, মহিলা মহল কেও তো খুশি করতে হবে । সূর্য মোদকে অনেক ভেবে চিন্তে একটা মিষ্টি বানালেন মিষ্টির ভেতরে গোলাপ জল কিন্তু বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই । জামাইকে দেওয়া হলো সেই মিষ্টি, সবার টেনশন হচ্ছে কি হয়, জামাই মিষ্টিতে কামাড় বসালো আর মিষ্টির ভেতরে গোলাপ জল গিয়ে পড়লো জামাইয়ের পাঞ্জাবি তে, জমিদার বাবু সহ সবাই হেসে উঠলো । এরপর থেকে শুরু জলভরা সন্দেশের এর চল ।
![]() |
| জলভরা সন্দেশ |
জমাই ষষ্ঠী কে নিয়ে কিন্তু আরো একটি কথা না বললেই নয়, শ্রী কৌশিক মজুমদার প্রণীত 'ধন্য কলকেতা সহর' বইটি থেকে জানা যায় বাংলার প্রথম টকি ছবির নাম 'জামাইষষ্ঠী'
![]() |
| বাংলার প্রথম টকি ছবির poster |
এই ভাবেই পালন হয়ে চলেছে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ ।
ছবি সূত্র - internet
তথ্য সূত্র - শ্রী কৌশিক মজুমদার প্রণীত ধন্য কলকেতা সহর,
https://www.itihaserhaatchani.com/2021/06/jalbhara-surjya-kumar-modak-jamai-sasthi-special.html?m=1
https://prohor.in/devi-shashti-is-mentioned-in-mythology
https://www.literacyparadise.com/2021/06/History-and-Mythology-of-Jamai-Sasthi-in-Bengal.html?m=1
- Get link
- X
- Other Apps





Comments