- Get link
- X
- Other Apps
Posted by
Tiki liki
on
- Get link
- X
- Other Apps
![]() |
| পাংখাপুলার থেকে আজকের ফ্যান |
এখন যা গরম পড়েছে সেই তার জন্য পাখা ছাড়া এক সেকেন্ডও থাকা যাচ্ছে না। এখন না হয় অনেকে বাড়িতে বাতানোকুল যন্ত্র বা A.C. আছে, আবার কোন কোন কুলার ব্যবহার করা হয়। আর সিলিং ফ্যান সিলিং ফ্যান টেবিল ফ্যান, তো সারাক্ষণ চলছে , এই গরমে বারবার মনে পড়ছে ব্রিটিশ ভারতে একটি জীবিকার কথা যার নাম পাংখাপুলার। এই জীবিকা কিভাবে সৃষ্টি হল। কি করেই বা নামটা আসলো পাংখাপুলার, সেইসব কথা আগেই বলা হয়েছে কিন্তু তখন যে বিষয়টা বলা হয়নি সেইটা হল পাংখা পুলারদের প্রতি ব্রিটিশদের অত্যাচার ।
ভারতবর্ষে ব্রিটিশরা শোষণ তো করতই অত্যাচারো করতো। কিন্তু পাংখা পুলারদের প্রতি অত্যআচ ছিল অভাবনীয় । ব্রিটিশরা কোনো ভাবেই ভারতের আবহাওয়া সাথে মানিয়ে নিতে পারেনি, এই জন্য তারা সবসময় ভগবানের নালিশ জানাতো, কারণ ইংল্যান্ডের রাণীর কাছে নালিশ জানিয়ে কোনো লাভ হবে না, কারণ প্রকৃতি তো ভগবানের তৈরি । দড়ি দেওয়া পাখা ছিল ইংরেজদের বাড়িতে, অফিস, স্কুল, আদালত, বসার ঘর, শোয়ার ঘর এমনকি স্নানের ঘরেও দড়ি টানা পাখা থাকতো । কিন্তু এই পাংখা পুলারদের যথেচ্ছ ভাবে ব্যবহার করতো ইংরেজরা কোন কোন সময় তারা পাখার দড়ি টানতে টানতে, খিদে এবং জল চেষ্টায় অজ্ঞান হয়ে যেত। কিন্তু ব্রিটিশরা তাকে সেই অবস্থা ফেলে, অন্য আরও একজন বহাল করতো । বলা যেতে পারে পাংখা পুলারদের সাথে কৃতদাস দের মত ব্যবহার করতো ব্রিটিশরা । পাংখাপুলার দের স্থান ছিল ঘরের বাইরে । আবার দেখা যায় কয়েকজন ঠিকাদার পাংখাপুলার ব্যবস্থা করতেন।
![]() |
| ঘরের বাইরে পাংখাপুলার |
লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো, যে বা যারা পাংখাপুলার জীবিকা গ্রহন করতো, তারা উঠে এসেছিল সমাজের হতদরিদ্র পরিবার থেকে । বলা হয় সেই সময় এপ্রিল মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পাংখা পুলারদের কাজ ছিল, তবে কতজন পাংখা পুলার নিজদের বাড়ি ফিরতে যেতে পারতো সেই বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে । 1902 সালের TOI এর তথ্য অনুযায়ী কলকাতায় দশ হাজার থেকে পনেরো হাজার মানুষ পাংখাপুলার কাজে নিযুক্ত হতো । অনেক সময় দেখা যেত ডাকাতরা অপেক্ষা করতো, লুঠ করার জন্য পাংখাপুলার বড়িফেরার রাস্তায় কারণ, তারা জানতো বছরের ওই সময় পাংখাপুলার দল শহর থেকে বাড়ি ফেরার সময় । একটা অন্ধকার দিক তো বলাই হয়নি এখনো এই পাংখা পুলারদের ব্যাপারে, অনেক সময় দেখা গেছে ব্রিটিশ বিনাদোষে পাংখাপুলার বেধরক মেরেছে, আবার এও দেখাগেছে অনেক সময় তো ব্রিটিশরা এমনি যে মারতে মারতে পাংখাপুলারের প্রাণ চলে গেছে । অবশ্য এই নিয়ে কোন বিচার সভা বসেনি । তবে লর্ড কার্জন অবশ্য চেষ্টা করেছিল অনন্ত একজন কে, পাংখাপুলারের হত্যার জন্য একজনকে শাস্তি দেওয়ার । কিন্তু এর ফল হলো উল্টো, বরং সেই সময় ভারতে বসবাসকারী ব্রিটিশরা লর্ড কার্জন উপর রেগে গেলেন এবং প্রতিরোধ গড়ে উঠলো তার বিরুদ্ধে । বৈদ্যুতিক পাখা আশার আগে অব্দি, পাংখাপুলার জীবিকা ছিল, এবং তাদেরকে এরকম আরো অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল । কিন্তু এখন পাখা আছে ঠিকই কিন্তু পাংখাপুলার নেই, এই পাখা চলে বিদ্যুৎএর সাহায্য । তবে বৈদ্যুতিক পাখা আগে একধরনের পাখা ব্যবহার করা হতো, তার নাম ছিল "থার্মান্টিডোট" এই যন্ত্রটি নাকি ঘর 10 ডিগ্রি অব্দি ঘর ঠান্ডা করতে পারতো, কিন্তু এই যন্ত্রটির বসাতে সেই সময় অনেক বেশি খরচ হত, ঘরে বসানোর ঝামেলা ও ছিল অনেক বেশি । তবে এই যন্ত্রটি চালানোর জন্য একটি কুলির দরকার হতো, বাইরের একজন কুলি দ্বারা পায়ে চলা। বাক্সের দুপাশে খুস-খুস ঘাসের পর্দা যা ক্রমাগত ভেজা রাখা হত ।
![]() |
| থার্মান্টিডোট |
এবার সরাসরি চলে, আসি আমাদের বাড়ির পাখায় , এই গরমের দাবদাহে প্রত্যেকের বাড়িতে পাখা ঘুরছে, আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এখন যে আমরা পাখার হাওয়া খাচ্ছি, এই হাওয়া সাথে লেগে আছে একজন বাঙালির, নাম ক্ষীরোদবীহারি চক্রবর্তী। পূর্ব বঙ্গের নারায়ণগঞ্জ বন্দর গ্রামে তার বাড়ি ছিল, বলা ভালো ওখানে জন্মগ্রহণ করেন ক্ষীরোদবীহারি । ইনি কিন্তু প্রথম থেকেই ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী, কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হন ক্ষীরোদবীহারি চক্রবর্তী, কিন্তু খুব কম বয়েস থেকেই তিনি সক্রিয় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন । জানা যায় একদিন ব্রিটিশ পুলিশের তাড়া খেয়ে একটি কার্গো জাহাজে লুকিয়ে পড়েন ক্ষীরোদবীহারি ।
![]() |
| কার্গো জাহাজ |
দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন ক্ষীরোদবীহারি । কিন্তু পেট তো চালাতে হবে, জাহাজে পে মাস্টারের চাকরি নেন ক্ষীরোদবীহারি । জাহাজেই তার সঙ্গে পরিচয় হয়, বিভিন্ন ইলেকট্রিক কারিগরদের সাথে।
তাদের কাছ থেকেই শিখে নেন, ইলেকট্রিকের বিভিন্ন কাজ কর্ম, ফ্যান কিভাবে সারাই করতে, কিভাবে করতে ওয়ারিং, আরো অনেক ইলেকট্রিকের কাজ কর্ম শিখে গেছিলেন ক্ষীরোদবীহারি । এর পর একটু টাকা পয়সা জমিয়ে দেশে ফিরলেন ক্ষীরোদবীহারি চক্রবর্তী । কলকাতায় ফিরে ঠিক করলেন ইলেকট্রিক ফ্যান কারাখানা তৈরি করবেন । কিন্তু একটা কারাখানা তৈরি করা তো সহজ ব্যাপার নয়, কারখানা তৈরি জন্য লাগে প্রচুর অর্থ, কিন্তু ক্ষীরোদবীহারি কাছে ছিল না সেই অর্থ । তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন সেই সময় বড় বড় ব্যাক্তিবর্গরা এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন, ময়মনসিংহের মহারাজা রাজেন্দ্রকিশোর, পাইকপাড়ার কুমার অরুন সিংহ আরো অনেকে । 1918 সালে তৈরি হয় ক্লাইভ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড । 1919 সালে তৈরি হয় ক্লাইভ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির ফ্যান ।
![]() |
| এলিট সিনেমা ও হিন্দুস্তান ইন্সুরেন্স কোম্পানি |
কলকাতার এলিট সিনেমা, তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে হিন্দুস্তান ইন্সুরেন্স কোম্পানির বিরাট বিল্ডিং, তার এক কোণে ছিল ক্লাইভ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডে অফিস ছিল । সেই সময় বিদেশি পাখা সাথে রীতি মত পাল্লা দিয়ে চলেছিল ক্ষীরোদবীহারি ক্লাইভ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি পাখা, বিদেশি কোম্পানির পাখা কেও বিপাকে ফেলে দিয়ে ছিল বাংলার ফ্যান । কিন্তু কিভাবে যেন হঠাৎ মাঝপথেই বন্ধ হয়ে যায়, ক্লাইভ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড । পর পর দুটো যুদ্ধ, এরপর অনেক লোকশান হয় ক্ষীরোদবীহারির কোম্পানির, শেষে নিলামে ওঠে এই কোম্পানি, বিক্রি হয়ে যায়ক্লাইভ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি । থেমে থাকেননি ক্ষীরোদবীহারি চক্রবর্তী, তিনি আবার 1932 সালে হিন্দুস্তান পার্কের কাছে, একটি জমিতে তৈরি করেন নতুন ফ্যান কোম্পানি, নাম দেন ক্যালকাটা ফ্যান । এই ফ্যান চলেছিল রমরমিয়ে, ভারতের স্বাধীনতা পর ও ফ্যান চলেছিল অনেক দিন । যখন ক্ষীরোদবীহারি আগের কোম্পানি মানে ক্লাইভ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড, ছিল তখন উৎপাদন বেড়ে যাওয়াযর জন্য বকুল বাগানে একটি ট্রেনিং স্কুল তৈরি করেন, ছেলারা ট্রেনিং নিতো তার সাথে অনেক মেয়ারা কারণ তখন দেশে ছিল স্বদেশী হাওয়া, জানা যায় ক্যালকাটা ফ্যান ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল । ক্ষীরোদবীহারি তিন ছেলে, কিন্তু বড় ছেলে রবীন্দ্রের হঠাৎ নিরুদ্দেশ ও মেজ ছেলে সমরেন্দ্রের 1940 সালে প্লেন দুর্ঘটনার মৃত্যু, ক্ষীরোদবীহারি মন ভেঙে যায়। সেই জন্য আবার ক্যালকাটা ফ্যান উপর কালো মেঘ জমেছিল । কিন্তু ছোট ছেলে সৌরেন্দ্র ক্যালকাটা ফ্যান এগিয়ে নিয়ে যায়, সৌরেন্দ্র সরাসরি ভাবে স্বাধীনতা জড়িয়ে পড়েছিল, জেল ও খেটেছিল । কিন্তু এই ক্যালকাটা ফ্যান কে ইংরেজ সরকার সেনা দফতরের ফ্যান সরবরাহে চুক্তি দেয় । ব্রিটিশদের সেনা বিভাগে ফ্যানের চাহিদা তুঙ্গে, যারফলে ক্যালকাটা ফ্যান ও ভালই চলছে । বিদেশ ও রপ্তানি হতো এই ফ্যান । তাই যখন কোন বাংলায় ব্যবসায়ীদের ইতিহাস লেখা হবে তখন ক্ষীরোদবীহারি চক্রবর্তী ও তার ছেলে নাম লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে । আসলে এই ভাবে পাংখা পুলারদের থেকে সৃষ্টি হল এখনকার ফ্যানের । তাই এই প্রচন্ড গরম তাপপ্রবাহে ছাদের দিকে তাকালেই মনে পরে পাংখা পুলারদের আর বাংলার ফ্যানের নির্মাতা ক্ষীরোদবীহারি চক্রবর্তী কথা ।
ছবি সূত্র - internet
তথ্য সূত্র -TOI ও https://www.bongodorshon.com/home/story_detail/pankha-pullers-of-kolkata
- Get link
- X
- Other Apps





Comments