- Get link
- X
- Other Apps
Posted by
Tiki liki
on
- Get link
- X
- Other Apps
![]() |
| বাংলা পঞ্জিকা |
কথায় আছে হাতে, পাঁজি মঙ্গলবার।
আগ তো নববর্ষ মানে কেনা হত পঞ্জীকা বা পাঁজি। কবে একাদশী, আমাবশ্যা সেই সব একটাই উত্তর পঞ্জিকা । যদি প্রশ্ন ওঠে যে পঞ্জিকা বা পাঁজি বয়স কত ? হিসেবে করে বলা যেতে পারে দুশো বছরেরও বেশি পুরনো বাংলার পঞ্জিকা ।
তিথি, বার, নক্ষত্র, যোগ ও করন এই পাঁচটি বিষয় কে একসাথে বলা হয় পঞ্চাঙ্গ । এই পঞ্চাঙ্গের উপর ভিত্তি করে লেখা হয় পঞ্জিকা।
পঞ্জিকা শব্দটি সংস্কৃত শব্দ থেকে এসেছে , ইংরাজিতে পঞ্জিকাকে বলা হয়, Almanac ( অ্যালামনাক )
সেকালের পঞ্জিকা লেখা হত হাতে, আর সেই সব নিয়ে ব্রাহ্মণরা বাড়িতে বাড়িতে শুনিয়ে পয়সা আয় করতো । তখনকার সময়ে জমিদার বাড়িতে বসতো পঞ্জিকা পাঠের আসর । কারণ সেই সময় শিক্ষার অগ্রগতি হয়নি , তিথি নক্ষত্র জানতে জমিদারের বাড়ি লোকে লোকারণ্য । তাহলে আবার প্রশ্ন ওঠে, সবচেয়ে পুরনো পঞ্জিকা কোনটি ? পন্ডিতরা বলেন, পঞ্জিকা নাকি যীশু খ্রীষ্টের জন্মের 1850 বছর আগে থেকে চলছে । সবচেয়ে পুরনো যেই পঞ্জিকা নাম পাওয়া যায়, সেইটা হলো 'বেদাঙ্গ জ্যোতিষ পঞ্জিকা ' । আর ষোড়শ শতকে দিকে প্রথম বাংলা পঞ্জিকা রচনা করেন পন্ডিত রঘুনন্দন। বাঙালির কাছে এই পঞ্জিকাটি নবদ্বীপ পঞ্জিকা নামে পরিচিত ছিল । তবে হাত লেখা পঞ্জিকায় অনেক ভুলভ্রান্তি থাকায়, মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র নবদ্বীপের শ্রেষ্ঠ পন্ডিত রামচন্দ্র বিদ্যানিধি ঠিক করতে দেন । এইটাই পরে
' চন্দ্রের অনুমত্যনুসারে ' কিংবা ' নবব্দীপাধিপতির অনুমত্যনুসার ' বলে রাখা ভাল এইটাও হাতে লেখা । আরো জানা যায় যে এর দাম ছিল দুই আনা ।
চৈত্র মাস শেষ হতেই গ্রামের চন্ডীমন্ডপে ঠাকুর মশাইরা, সুর করে পঞ্জিকা পাঠ করতেন । পুরুত মশাইরা গ্রামে গ্রামে প্রচার করে বেরাতেন যে পঞ্জিকা পাঠ শুনলে খুব পুনঃ লাভ করে, তারা নাকি সব তীর্থের দর্শনের লাভ একসঙ্গে পায় । পুরুত মশাইরা পঞ্জিকার মাহাত্ম্য বোঝানোর জন্য
' বর্ষারম্ভে স্বয়ং মহাদেব কৈলাসে বসে পার্বতীকে নতুন পঞ্জিকা পাঠ করে শোনাতেন । ' পুরুত মশাইরা বলতেন পঞ্জিকার কথা মনে চলতে, পঞ্জিকা সব বলে দেওয়া আছে , কবে নখ কাটতে হয় , কোন দিন দাঁড়ি গোঁফে কাটা উচিত । টিকটিকির হাঁচির মানে কী ! সবই পঞ্জিকা তে বলে দেওয়া আছে । এক কথায় বলা যায় ইনসাইক্লোপিডিয়া । একমাত্র মৃত্যুর সময় নাকি পঞ্জিকা কাজ করতো না, সেই জন্য মানুষের মুখে মুখে একটা কথা প্রচলিত ছিল,
'যমের বাড়িতে নেই পুঁজিপুথিঁ'
এখনকার মত আগেকার দিনেও দুধরনের পঞ্জিকা ছিল, পূর্ণাঙ্গ পঞ্জিকা আর পকেট পঞ্জিকা, আকারে ছোট ছিল হাফ বা পকেট পঞ্জিকা । কিন্তু দুটো পঞ্জিকায় ভেতরে জিনিস একই থাকতো । বাংলা নববর্ষের পরে দোকানে, হাঁটে এছাড়াও গ্রামেগঞ্জে ঝুড়িতে করে পঞ্জিকা বিক্রি করতো । জানা যায় পঞ্জিকা কেনার পর বাড়িতে বিশেষ অনুষ্ঠান হতো, জানা যায় পুরুত মশাইরা কে ডেকে, জেনে নেওয়া হতো, কবে মল মাস, শুভ দিন কবে কবে আরো অনেক কিছু । তারপর পুরুত মশাইকে দক্ষিণা ও ভূজ্জি দেওয়া হতো । তাহলে একই বলবো পঞ্জিকা পুজো !
![]() |
| ছাপা পঞ্জিকা |
ছাপা পঞ্জিকা প্রথম ছাপা হয় 1818 সালে বাংলার ১২২৫ সনে । এই নাম ছিল 'রামহরি পঞ্জিকা' সেই সময় বাঙালি জাতির কাছে পঞ্জিকার চাহিদা, এখনকার সময় থেকে অনেক বেশি ছিল, তাই অনেক মানুষ পঞ্জিকা ছাপার কাজে যোগ হতে থাকে । এরপর থেকে বিভিন্ন নামের পঞ্জিকা বাজারে আসতে থাকে । 1820 সালে প্রকাশিত হয়, "বিশ্বম্ভর দেবের পঞ্জিকা" ঠিক এর পর বছর মানে 1821 সালে শোভাবাজার রাজবাড়ি থেকে একটি পঞ্জিকা প্রকাশ পায়, এই পঞ্জিকা প্রকাশ করেছিল গৌরচন্দ্র বিদ্যালঙ্কার , তাই এই পঞ্জিকাটিকে গৌরচন্দ্র বিদ্যালঙ্কারের পঞ্জিকা হিসাবেই জানা যায় । তবে এই এতো গুলো পঞ্জিকার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছিল 'নূতন পঞ্জিকা' । এই পঞ্জিকাটি শ্রীরামপুরের চন্দ্রদয় প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়েছিল 1827 সালে তবে এতগুলো পঞ্জিকার মধ্যে এই পঞ্জিকাটি কেন জনপ্রিয় হয়েছিল, প্রশ্ন থাকতেই পারে । কারণ হচ্ছে ছবি, হ্যাঁ এই প্রথম পঞ্জিকাতে ছবি ব্যাবহার করা হয় । লক্ষী , গনেশ, দূর্গা আরো বিভিন্ন দেব দেবী ছবি ছাপা হলো পঞ্জিকাতে, আরো বিভিন্ন রাশিচক্রে ছবি ছাপা হয়েছিল পঞ্জিকাতে । আসলে বাংলার মুদ্রণের জগতে অন্যতম ছিলেন পঞ্চানন কর্মকার, তার নাতি ছিলেন, কৃষ্ণচন্দ্র কর্মকার তিনি ছিলেন 'নূতন পঞ্জিকা' প্রকাশনার প্রধান, তার প্রেস থেকেই প্রকাশিত হয়েছিল এই পঞ্জিকা ।
![]() |
| নূতন পঞ্জিকা |
আবার তিনি ভাল ছবি আঁকাতেন, ব্যবসায়িক বুদ্ধি ছিল প্রচুর যার ফলে নতুন মাত্রা পায় পঞ্জিকা বিক্রি । কিন্তু ছাপা পঞ্জিকা, প্রথম দিকে মানুষ ভালো ভাবে গ্রহণ করেনি । তাদের প্রিয় ছিল হাতে লেখা পঞ্জিকা, সেই পঞ্জিকা আলাদা নাম ছিল । ঐ পঞ্জিকা বলা হতো পাঁজিপুথিঁ । সেই সময় সাধারণ মানুষ মানে করতো ছাপা পঞ্জিকা ব্যবহার করা ঠিক নয় , কিন্তু প্রকাশরা যখন গণৎকারদের অনুমতি ও নাম দিয়ে পঞ্জিকা ছাপালে, সাধারণ মানুষ ছাপা পঞ্জিকা কিনতে শুরু করে ।
![]() |
| নূতন পঞ্জিকায় দেব-দেবীর ছবি |
পঞ্জিকা বিখ্যাত ও মানুষের কাছে জনপ্রিয় করার জন্য পঞ্জিকা সাথে ডায়রেক্টরিকে যুক্ত করা হয় । এই কাজটি প্রথম করেছিল এক বাঙালি উদ্যগপতি, কিশোরীমোহন বাগচী। ইনি ছিলেন 'পিএম বাগচী এন্ড কোম্পানির' মালিক, তিনি থাকতেন উত্তর কলকাতার দর্জিপাড়া অঞ্চলের 19 নম্বর গুলু অস্তাদ লেন এ । কিশোরীমোহন বাগচীর পঞ্জিকা তে তিথি নক্ষত্রের পাশাপাশি, সরকারি দপ্তরের নাম ঠিকানা, অফিসার, বিচারকদের নাম ঠিকানা দেওয়া থাকতো । আরো থাকতো ভারতের ডাক ও তার বিভিন্ন তথ্য আরও অনেক কিছু । 1840 সালে যৌথ উদ্যোগে কলকাতার ট্রাফট সোসাইটি ও চার্চ অফ ইংল্যান্ড কতৃপক্ষে একটি পঞ্জিকা প্রকাশ করে । কিন্তু তাদের ঐ পঞ্জিকা বেশি চলেনি, এবং বন্ধ হয়ে যায় ।
এরপর 1857-58 সালে তৈরি হয়, ভার্নাকুলার লিটরেচার কমিটি। তারা প্রথম প্রাকশ করেন তথ্য সমৃদ্ধ ও সুমুদ্রিত পঞ্জিকা । এখানে প্রথম বাংলার 309 টি মেলার সঠিক বিবরণ পাওয়া যায় । এবং মানুষ কাছে এই পঞ্জিকাটি খুব বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেনি । এই ভার্নাকুলার লিটরেচার কমিটি সদস্য, পাদ্রি লং সাহেব জানিয়ে ছিলেন কলকাতায় এক লাখ পঁয়ত্রিশ হাজার পঞ্জিকা বিক্রি হয়েছিল, পরে জানা যায় আরো বেশি, মানে আড়াই লাখ ।
![]() |
| ভার্নাকুলার লিটরেচার কমিটির তৈরি পঞ্জিকা |
ব্রিটিশরা দেখলো ভালো লাভ হচ্ছে , তাই তারা পঞ্জিকা তে বিদেশে ছবি দিয়ে শুরু করতে বলে, এর দায়িত্ব দেয়া হয় ব্রিটিশ কোম্পানি স্যান্ডার্স অ্যান্ড কোনস এর উপর, এই পঞ্জিকাটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল 304 আর দাম ছিল সাত আনা । কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন ওঠে, যদি পঞ্জিকা টি নাই চলে তাহলে আবার কেন নতুন করে ছাপানো হলো ?
বলা হয় এই সময়টা ছিল পঞ্জিকার স্বর্ণ যুগ । ঐ সময় ছিল পঞ্জিকা দাম ছিল এক টাকা, কিন্তু প্রকাশকদের পঞ্জিকা প্রকাশিত করার প্রতিযোগিতা এতটাই বেড়ে গেল, পঞ্জিকার দাম হয়ে গেছিল দু থেকে তিন আনা । আরো জানা যায় পঞ্জিকার ভেতরে প্রথম পৃষ্ঠায় রেলযাত্রার ছবি কিংবা ময়দানে বেলুন ওড়ানোর ছবি থাকলে সেই পঞ্জিকা বিক্রি হত হু হু করে । পঞ্জিকা সাথে ডায়রেক্টরি গুলি তে সেই সময় কলকাতার বিভিন্ন রাস্তার নাম, বাড়ির নাম এমনকি বাড়িতে বসবাসকারী মানুষের নামের উল্লেখ পাওয়া যায় ।
![]() |
| সেই সময় পঞ্জিকাতে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন |
একটি উদাহরণ হিসেবে বলাহয় চড়কডাঙা লেন , ঐ রাস্তার এক নম্বর বাড়িতে থাকতো বন্তি ও ঠাকুরবাটী আর দুই বাড়ির অধিবাসী ছিলেন যদুনাথ রায় তিন এবং চার বাড়ির অধিবাসী ছিলেন ব্রছনাথ সরকার ও আশ্বিনী কুমার ঘোষ । একশো বছর আগের কলকাতার কোন পাড়ার কোন বাড়িতে কারা থাকতেন সেগুলো জানা যায় 1915 সালে প্রকাশিত পিএম বাগচী এন্ড কোম্পানির পঞ্জিকা থেকে।
উনিশ শতকে পঞ্জিকা বিক্রি এতটাই বাড়লো যে একই প্রেস থেকে অনেক পঞ্জিকা প্রকাশ পেত । কলকাতার বেনিয়াটলা লেন থেকে প্রকাশ করে
" গুপ্তপ্রেস ফুল পঞ্জিকা "।
৩১ নম্বর অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিট থেকে প্রকাশ পায় বেণীমাধব শীলের ফুল পঞ্জিকা সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ।
তবে এখন অনেক বাড়িতেই বাংলার নতুন বছরের দিনে পঞ্জিকা কেনা হয়ে থাকে, তবে পঞ্জিকার কথা ভুলে যাবে অনেকই কিন্তু থেকে যাবে ইতিহাস ।
ছবি সূত্র - internet
তথ্য সূত্র - https://eisamay.com/editorial/post-editorial/old-kolkata/articleshow/50705531.cms
https://www.prohor.in/evolution-of-bengali-panjika
https://bn.banglapedia.org/index.php/%E0%A6%AA%E0%A6%9E%E0%A7%8D%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE








Comments