ভালবাসার চিহ্নের ইতিহাস

বর্তমানে জনপ্রিয় চিহ্ন 

 

হার্ট শেপ কেক, হার্ট শেপ চকলেট, হার্ট শেপ বিস্কুট, কিন্তু এই চিহ্নটি এত পরিচিত পেল ? এখানে বলেছি লাল পান , কারণ আর শব্দ খুঁজে পেলাম না। হ্যাঁ লাল পানের কথা শুনলেই তাস খেলার কথা মনে পড়বে কিন্তু এখানে হার্ট শেপ কিভাবে ভালবাসা চিহ্ন হিসেবে ঘোষণা করা হলো সেই কথাই আলোচনা করা হয়েছে । 


লাল পান ! হ্যাঁ মানে হৃদয় চিহ্ন হিসেবে সব যায়গায়, এই লাল পান কে  চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার হয় । কিন্তু এর উৎপত্তি কিভাবে শুরু হলো ? মানে হৃদয় দেখতে তো আর পান পাতার মত হয় না । হার্টশেপ বা লাল পান ছাড

ভালোবাসার প্রতিক , এই লাল পান তাস খেলা তেও আছে , গুরুত্বপূর্ণ কার্ড তাস খেলাতেও । সেখানে ও সিম্বল ব্যবহার করা হয়েছে, তো মানুষের হৃদয় তার ওরকম দেখতে না পান পাতার মত কথা হচ্ছে এই সিম্বলটা আসলে কোথা থেকে ? কি করেই বা এত জনপ্রিয় হলো ? এই হার্টশেপ  এর পিছনে কতগুলি ধারণা  আছে । তবে কোন ধারণা সঠিক, সেটা সেইটা জানা যায় না । কিন্তু সবচেয়ে জনপ্রিয় ধারণা হলো , মানুষের হৃদপিন্ড আঁকা বাঁকা অংশ গুলি কে আলাদা করলে যেই ছবিটি পাওয়া যায়, সেটা আকৃতিটা ভেসে ওঠে সেইটা অনেকটা সুন্দর । আবার অনেক গ্রীক ও রোমান দার্শনিকরা মনে করেন মানুষের দেহের কেন্দ্রস্থল হলো হৃদয় । এই ধারণা পরে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল । এছাড়া গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল মনে করতেন, মানুষের হৃদয় হলো, চিন্তা ভাবনা আবেগ ও নীতির উৎস স্থল। মিশরীয় চিন্তা ভাবনার সঙ্গে এর মিল পাওয়া যায়। আসলে এই ব্যাপারটি কোন ভিত্তি বা উপযুক্ত প্রমাণ নেই সব কিছুই দাঁড়িয়ে আছে আপেক্ষিক ধারণার উপর। মন বলতে আমরা বুঝি হৃদয় কিন্তু আসলে তো সেটা মস্তিষ্ক ।

মানুষের হৃদপিন্ড 


 আমরা সাধারণত মন বলতে হৃদয় কি বুঝি আর সেখান থেকে তৎকালীন সময় বিভিন্ন চিত্রশিল্পীদের আঁকায় এই চিহ্নটি প্রকাশ পায় । আরেকটি ধারণা রয়েছে , সপ্তম শতাব্দীতে সিরেন রাজ্যের রাজধানীতে সিলিফিয়াম নামক একটি গাছে পাতা নাকি এই চিহ্নের মত দেখতে ছিল কিন্তু এখন সেই কাজ বিলুপ্তপ্রায় । ক্যাথলিক চার্চেও এই চিহ্নটি নিয়ে বক্তব্য রয়েছে ষোলোশ শতকে সেন্ট মার্গারেট এই চিহ্নটি স্বপ্নে দেখেছিলেন, সেন্ট মার্গারেট দেখেছিলে কাটা দিয়ে হৃদয় চিহ্নটি ঘেরা ছিল এবং পরবর্তীকালে প্রভু যীশুর পবিত্র হৃদয় ছিল হল এটি ।

প্রভু যীশুর পবিত্র হৃদয় 


কিনেটি প্রেমের প্রতিনিধিত্ব হিসেবে লাভ করেছিল । কিন্তু এই ঘটনার অনেক আগে থেকেই এই আকৃতি পরিচিত ছিল। পরবর্তীকালে ক্যাথলিক এই চিহ্নটির পরিচিত এবং প্রসারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল । আরো প্রাচীন উদাহরণ হিসেবে দেখা যে সিন্ধু সভ্যতার সময় একটি উদাহরণ পাওয়া যায়, যে হার্ট আকৃতির একটি লকেট বা দুল পাওয়া যায়। আবার ডুমুর পাতায় এই আকৃতির সঙ্গে এমবসড । একই সঙ্গে ডুমুর, আইভি ও লিলি ফুলের পাতাগুলি অভিজাতিক চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করা হতো ।

সিন্ধু সভ্যতার পাওয়া হার্ট আকৃতির লকেট 

 তাহলে ধরে নেওয়া যায় যে শুধু মাত্র ভালবাসার চিহ্ন হিসেবেই নয় অন্য আরো কিছু বোঝাতে এই চিহ্নটি ব্যাবহার করা হতো । আগেই বলেছি সেই সিলিফিয়াম পাতার কথা, এই বিলুপ্ত পাতাটি নাকি, উত্তর আফ্রিকায় পাওয়া যেত এই বিলুপ্ত পাতাটি। এই পাতাটির নাকি ঔষধি গুণ ছিল। এবং আরো বলা হয়েছে যে এই পাতাটির হৃদয় আকৃতির বীজ তাদের মুদ্রায় ব্যাবহার হয়েছিল। সময় সাথে সাথে হৃদপিণ্ডের অলংকরণ বদলাতে থাকে । তবে ত্রয়দশ শতাব্দির পর্যন্ত প্রেম সঙ্গে হৃদয় চিহ্নটির কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি । কিন্তু এখন এই সময় প্রেম রোমান্স ও ভালবাসার সঙ্গে হার্ট বা হৃদয় চিহ্নটির অতপ্রত ভাবে জড়িত। প্রেমে সঙ্গে হৃদয় চিহ্নটির পরিচয় হয় 1250, এ জানা যায় যে একটি ফরাসি পান্ডুলিপি Roman de la poire তে 

Detail of Roman de la poire manuscript, 1201-1300


( রোমান দে লা পোয়ারে ) এই পান্ডুলিপি তে দেখানো হয়েছে যে এক যুবক তার প্রেমিকাকে পান ফলে দিয়ে প্রোপজ করছে , হ্যাঁ বলতেই পারেন এখানে সেই হার্ট চিহ্ন কোথায়, যেই পাইন ফলটি দিয়ে প্রপোজ করেছিল, সেই পাইন ফলটি টি নাকি হৃদয়ের মত দেখতে ছিল । চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত নাকি এই হৃদয় চিহ্নটি ও উল্টো আঁকা হতো, কিন্তু পঞ্চদশ শতাব্দী এই চিহ্নটি পাল্টে সোজা হয়ে ছিল, সেই চিহ্নটি আজকের ব্যাবহিত হার্ট শেপ হিসাবে পরিচিত, তাস খেলাতেও আমরা এই চিহ্নের ব্যাবহার দেখতে পাই । ভালবাসা দিবস মানে ভ্যালনটাইন‌ ডে হিসাবে পালন করা হয় । সেই সাধু কে সন্মান জানাতে পালন হয়ে থাকে। জাপানে প্রাচীনকালে  হৃদয়ের চিহ্নকে ইনোম বলা হয় । জাপানে এর অর্থ বন্য শুয়োরের চোখ, আবার এর মানে মন্দ আত্মা থেকে রক্ষা করা, ভাবতে অবাক লাগে একটা চিহ্নের বিভিন্ন জায়গায় কত অর্থ । এই চিহ্নটি জাপানের বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দির, দূর্গ এই সব যায়গায় খোদাই করা আছে । এমনকি জাপানি তোরয়ালের হাতলে দেখতে পাওয়া যায় । মধ্য যুগের শেষের দিকে , হৃদয়ের আকৃতির সংমিশ্রণ ঘটেছিল । যদিও আকৃতিটি অনেক পুরোনো এবং এই আকৃতিটি প্রাচীন এপিওগ্রাফি, স্মৃতিসৌধ ও গ্রন্থে ব্যাবহার করা হয়েছে । 13 ও 14 শতকে এর প্রাথমিক উদাহরণ পাওয়া যায় । 14 শতকে হৃদয়ে ছবির সাথে এখনকার হৃদয় চিহ্ন কোনো মিল নেই, কিন্তু জ্যামেতিক অনেক আগের পাওয়া যায়, কিন্তু ঐ জ্যামেতিক চিহ্ন একটি হৃদয়ের আকৃতি কে বোঝায় না। 

এখন আমরা যে হৃদয় চিহ্নের সাথে পরিচিত, সেটা স্ক্যালোপড আকৃতির, এর উপরে একটা গর্ত আছে , 14 শতকের গোড়াতে এইটা প্রথম দেখা গেছিল, প্রথমে নাকি হালাকা গর্ত ছিল, সেটা দেখা যাবে । এর অন্যতম উদাহরণ হিসেবে বলাহয় ফ্রান্সেস্কো দা বারবোনিয়ার ডকুমেন্টি ডি আমোরে ।

সিস্টারসিনিয়া মঠে যা কিনা ব্রাসলসে অবস্থিত । সেখানে একটি পান্ডুলিপিতে স্পষ্ট উদাহরণ মেলে । পারস্যের তৎকালীন রাজধানীতে  Ctesiphon ধ্বংসাবশেষের খনন কার্জ থেকে বিভিন্ন স্টুকো রিলিফ এবং প্যানেলে হৃদয়ে আকৃতির একটি গোলাপ পাওয়া যায় 1530 সালে । লুথার লাজারাস স্পেংলালের কাছে এই চিহ্নটির একটি ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন সেটা এখানে হবুহু তুলে ধরা হলো - "হৃদয়ে একটি কালো ক্রস, যা তার স্বাভাবিক রঙ ধরে রাখে, যাতে আমি নিজেই মনে করিয়ে দিতাম যে ক্রুশবিদ্ধ বিশ্বাস আমাদের রক্ষা করে৷ 'যে ব্যক্তি হৃদয় থেকে বিশ্বাস করে সে হবে ন্যায়সঙ্গত" 

18 শতকে হৃদয়ের ছবিতে দুটি চেম্বারের মধ্যে মাঝখানে মধ্যমণিটি দেখা যাচ্ছে । ছবি তে চ্যান্টিলি কোডেক্স এ হৃদয় চিহ্নের আকারে লেখা চ্যানসন বেলে, বোন, সেজ এগুলির রচয়িতা ছিলেন বাউড কর্ডিয়ার । আধুনিক কালে 19 শতক থেকে এই প্রতিকটি ভ্যালন্টাইন্স ডে কার্ড , চকলেট, ক্যান্ডি এই সব জায়গায় ব্যাবহার করা হয় । এর পর থেকেই এই হৃদয় এর চিহ্নটি হতে থাকে । 1977 সালে I ❤️ NY তে লোগোগ্রাফ হিসাবে ব্যাবহার হয় । এর পর থেকেই ওষুধ, বিভিন্ন হৃদয়ের সমস্যা, কলেস্টেরল এই সব জায়গায় এই চিহ্নটির ব্যাবহার শুরু হয় যায়। এখন তো social media এই চিহ্নটি খুবই ব্যাবহার করা যায় । এমনকি বিভিন্ন রঙের এই হৃদয় চিহ্নটি ব্যাবহার হচ্ছে, আবার এই সব রঙের মানে ও নাকি আলাদা । কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এই চিহ্নটির উৎপত্তি, কিভাবে, কবে, সৃষ্টি হয়েছে এই নিয়ে কোনো কিছু জানা যায়না উপরে আলোচনার মাধ্যমেই বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই । তাই এই বিষয়ে কৌতূহল ছিল আছে থাকবে । তাই এই ভালবাসার মাসে চেষ্টা করলাম কিছুটা হলেও জানতে চেষ্টা করলাম । 


ছবি সূত্র - internet

তথ্য সূত্র - wikipedia

https://www.artandobject.com/news/history-heart-shape


https://www.daily-bangladesh.com/feature/165077






Comments