রেডিওর ইতিকথা !

জন রুজ স্টেপলটন 


 13 ফেব্রুয়ারি বিশ্ব রেডিও দিবস উপলক্ষে পালিত হয়। 2013 রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে সর্বসম্মতি পেয়েছিল।

রেডিও আমাদের টেবিলে বা পকেটে এমনকি মোবাইল ফোনে রেডিও থাকে তাই বর্তমানে রেডিওর ব্যাবহার  অনেক কমে গেছে । পকেট রেডিও এক সময় খুব জনপ্রিয় ছিল । তবে রেডিও কে আবিষ্কার করেছে এইটা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে গুগলে টাইপ করলে অনেকের নাম পাওয়া যায়। Guglielmo Marconi, NikolaTesla, Reginald Fessenden,

William Dubilier কিন্তু এখনো একজনের নাম আসে না, তিনি একজন বাঙালি জগদীশচন্দ্র বসু ।তিনি প্রথম দেখিয়ে ছিলেন গাছের ও প্রাণ আছে । হ্যাঁ তিনি গোটা একটা রেডিও আবিষ্কার করেন নি ঠিকই কিন্তু যেটা তিনি আবিষ্কার করেছিলেন সেটা হলো রেডিও তরঙ্গ রিজিভ করার মেশিন তার নাম হলো, কোহেরার । তিনি সেটা জার্নালে নিজের নাম দিয়ে প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু পেটেন্টে নেন নি, ব্যাস এই ভুলটা করে বসলেন, যার ফলে বেদেশি এক বিজ্ঞানী নিজের নামে পেটেন্টে করে নেন । বিশ্বের অনেক দেশেই বিশেষ করে রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের দেশ গুলিতে 7 May রেডিও ডে উদযাপন করা হয় । 

জগদীশচন্দ্র বসু 

কিন্তু আমাদের কলকাতার বেতার সম্প্রসারনের সঙ্গে সম্পর্ক আছে টাইটানিক জাহাজের । যেদিন টাইটানিক জাহাজের সঙ্গে হীম শৈলের ধাক্কা লাগে, সেই সময় বিপদের সঙ্কেত পৌঁছে গেছিল সেই সময় সমুদ্র থাকা জাহাজ গুলোর কাছে। টাইটানিক তো ঢুবে গেল তার সাথে মৃত্যু হলো পনেরোশর বেশি যাত্রির, কিন্তু ঐ রেডিও সঙ্কেত জন্য বেঁচে গেছিলেন সাতেরোশোর বেশি যাত্রী । উদ্ধার কারি জাহাজ কার্পেথিয়া যখন টাইটেনিক জাহাজের উদ্ধার হওয়া যাত্রি নিয়ে যখন নিউ ইয়র্ক পৌঁছালো তখন এক ব্রিটিশ পোস্ট মাস্টার নাম হার্বার্ট স্যামুয়েল বলেছেন এই উদ্ধার কার্যের কৃতিত্ব একজনের, তিনি হলেন মিস্টার মার্কোনি । এই  মার্কোনির কোম্পানি টাইটানিক জাহাজে রেডিও রুম তৈরি করে, তবে এই রেডিও রুম হাতে কলমে তৈরি করেছিলেন রুজ স্টেপলটন । রুজ স্টেপলটন ছেলে তিনি আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফাইটার পাইলট ছিলেন নাম স্কোয়াড্রন লিডার বেসিল জেরাল্ড স্টেপলটন । তিনি নিজের জীবনিতে তার বাবার দুটো বিখ্যাত কাজের কথা উল্লেখ করেছেন, অনুমান করা কঠিন না, এক টাইটানিক জাহাজের রেডিও রুম তৈরি করা, আর দ্বিতীয় টা কলকাতা বা বলা ভালো ভারতে রেডিও সম্প্রচার ব্যাবস্থা শুরু করা । এই জন রুজ স্টেপলটন জন্ম ফেব্রুয়ারি মাসের 4 তারিখে 1885 সালে, 1903 সালে মার্কোনি কোম্পানি চাকরি নেন তিনি। এই মার্কোনি কোম্পানি সেই সময় সব জাহাজে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাবসা ছিল, টাইটানিক তার মধ্যে অন্যতম। 1917 সালে দক্ষিণ আফ্রিকার থেকে ইংল্যান্ড যাওয়ার এক জাহাজ ডিউটি করেছিলেন স্টেপলটন , সেখানেই দেখা হয় দুজনের । যিনি স্টেপলটন স্ত্রী হতে চলেছেন তার সঙ্গে, সোনার মেডেল জেতা উদীয়মান শিল্পী মার্টিল নাটাল বোরল্যান্ড, লন্ডনে যাচ্ছিলেন বড় সুযোগ জন্য । সেই সবের হাতছানি আর পা বাড়ানি  মার্টিল নাটাল বোরল্যান্ড । ততদিনে রেডিও তে মানুষের বাইবেল পাঠ এবং গান এই সব সম্প্রচারে সফল হয়েছে  লি ডি ফরেস্ট এবং রেজিনাল্ড ফেসেনডেন ।

1920 সময় থেকে পৃথিবীর নানা জায়গায় শুরু হয়ে গেছে রেডিও স্টেশন, তাই মার্কোনি কোম্পানির কর্তারা দেরি না করে এই নতুন সুযোগের সদ্ব্যবহার করা। সেই সময় ভারতের রাজধানী কলকাতা ছিল না কিন্তু কলকাতা তখন সামর্থ্য ছিল সেই জন্য মার্কোনি কোম্পানি কলকাতা কে বেছে নিলেন তাদের অফিস করে তোলার ক্ষেত্রে, প্রথমদিকে অবশ্য পৃথিবীর বিভিন্ন রূপে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের কাজে যুক্ত ছিল এই কোম্পানি 1918 নাগাদ তাদের অফিস ছোট হয়ে গেছিল, তাই নতুন করে অফিস স্থানান্তরিত করা হলো কলকাতার ওল্ড পোস্ট অফিস স্ট্রিটে টেম্পাল চেম্বার্স বাড়িতে। শ্রীলঙ্কা থেকে কলকাতায় বদলি হয়ে আসেন স্টেপলটন। টেম্পাল চেম্বার্স বাড়িটির অন্য একটি ঘরে সপরিবারের  থাকতে শুরু করলেন স্টেপলটন । এই অফিস থেকে শুরু হল বেতার যোগাযোগ ব্যবস্থা পরীক্ষামূলক সম্প্রচার, প্রথমে গানের অনুষ্ঠান কথা ভাবা হলো কারণ খুব সহজ, মার্টিল স্টেপলটন  কন্ঠে ভেসে উঠলো কলকাতা বেতারের প্রথম গান আর এভাবে ইতিহাসে জায়গা করে নিল, মার্টিল স্টেপলটন ।

টেম্পাল চেম্বার্স

সেই সময়ে কলকাতার  গায়ক, সুরকার, গীতিকার হীরেন্দ্রনাথ বসু জন স্টেপলটনের সঙ্গে ভাগ করে নিলে অনুষ্ঠান পরিচালনা ও নির্দেশনা দায়িত্ব। জন স্টেপলটন শুরু করেন একটি ক্লাব যা কিনা সেই সময় ভেঙ্গে বেঙ্গল রেডিও ক্লাব নামে পরিচিত ছিল। জন স্টেপলটনের উদ্যোগের জন্য  1926 সালের বিবিসির পক্ষ থেকে সি সি ওয়ালিক পাঠানো হয়, বেতার সম্প্রচার কতটা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয় সেটা দেখার জন্য । মনে রাখা দরকার যে প্রথম দিকে, কিন্তু বেতার সম্প্রচার কোন আর্থিক ভাবকে মাথায় রেখে শুরু হয়নি। পরবর্তীকালে বেতার  সম্প্রচার বেসরকারি হওয়ার জন্য, এটা সম্পর্কে আর অনিশ্চয়তায় ভরা ছিল সেই জন্য 1932 সালে মে মাস থেকে পুরোপুরিভাবে বেতার সম্প্রচার সরকারীকরণ করা হয় মানে আমাদের অল ইন্ডিয়া রেডিও । এর পরে সেপ্টেম্বর 1958 সাল থেকে টেম্পাল চেম্বার্স  বাড়িটি থেকে এখন কার ঠিকানায় উঠে আসে । জন স্টেপলটন

প্রথমে ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং কোম্পানি এবং পরে অল ইন্ডিয়া রেডিও কলকাতার সঙ্গে  যুক্ত ছিলেন  তার কর্মজীবনে শেষ পর্যন্ত। 

1923 সালের নভেম্বর মাস থেকে রেডিও ক্লাব অফ বেঙ্গলি সদস্য ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স করে যে অধ্যাপক ডাক্তার শিশির কুমার মিত্র । তিনি ১৯২৫ নাগাদ কেমিস্ট্রি বিভাগের ঘরে একটি ট্রান্সমিটার বসিয়ে ওয়ারলেসে গান আবৃত্তি শুরু করে হীরেন্দ্র কুমার বসু উদ্বোধনী গানটি করেছিলেন । ওই মহাসিন্ধুর ওপার থেকে একই সংগীত ভেসে আসে... 

১৯২৬ - ২৭ নাগাদ যন্ত্র ও হেডফোনে বিক্রির উদ্দেশ্যে চালু হয় খুদে রেডিও স্টেশন। দুঘন্টার জন্য রোজ রোজ রেডিও সম্প্রচার হতো। ইউরোপীয় প্রোগ্রামে হেড ছিলেন জন স্টেপলটন, ভারতীয় প্রোগ্রামের হেড ছিলেন অমকৃষ্ণ বসু। বলেছি যে প্রথমে সময় রেডিও ছিল সম্পূর্ণভাবে বেসরকারি ।

যে জানা যায় যে সেই সময় মুম্বাইতে ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টং কোম্পানি নাম একটি কোম্পানি গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। ভারতে এই কোম্পানি গঠন করেন সুবিখ্যাত পারসি ব্যবসায়ী এস এম কি চিনয় । জেনারেল ম্যানেজার করার জন্য বিবিসি থেকে নিয়ে আসা হয় ই সি ডানস্টন কে । মুম্বাইয়ে রেডিও স্টেশন আবার ভারত সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল 1926 সালের 13th  সেপ্টেম্বর ।  1927 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এটা সম্প্রসারণের জন্য ও ট্রান্সমিটার বসানোর জন্য কলকাতা কাশিপুর অঞ্চলে তালা পার্কের গায়ে বেশ খানিকটা জায়গা আড়াইশো টাকা নিয়ে ভাড়া নেয়া হয়। 23 জুলাই 1927 

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র 

একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয় এই যুক্তি নাম ছিল ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং কোম্পানি লিমিটেড, এই চুক্তির পরে মুম্বাইয়ের স্টেশন থেকে সম্প্রচার শুরু হয় ওই রেডিও স্টেশনটির উদ্বোধন করেছিলেন সেই সময়ের ভাইসরয় লর্ড আরউইন । 1928 সাল নাগাদ কাজী নজরুল ইসলাম বেতারের সঙ্গে যুক্ত হন। আজায় কাজী মোতাহার হোসেনের কাছে লেখা নজরুলের একটি চিঠি থেকে । বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র কিন্তু বেতারের সঙ্গে যুক্ত হয় এই সময় সে ক্ষেত্রে মহালয়া করার বহু আগে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র বেতারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন, তবে প্রথমে তার কন্ঠ তৎকালীন কলকাতার ব্রডকাস্টিং কোম্পানির প্রোগ্রামের প্রযোজক নৃপেন্দ্রনাথ মজুমদার প্রাথমিকভাবে বাদ দেন, কৃষ্ণ ভদ্র বিশেষ ধরনের কণ্ঠের জন্য তাকে বেতারের নাট্যদল এর কাজে নেওয়া হয় বেতারের কাজে মন দেয়ার জন্য বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র রেলের চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন । ওই বছরই মানে 1928 সালেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র পরশুরামে "চিকিৎসা সংকট" নাট্যরূপ বেতারে প্রচারিত হয়েছিল। কি পরিচয় না ও প্রযোজনা দায়িত্বে তিনি ছিলেন। এর প্রখ্যাত মানুষ বেতারের সঙ্গে যুক্ত হন তার মধ্যে ছিলেন বাণীকুমার, বিজয় বসু প্রমুখ গুণি ব্যক্তি । 1929 সালে বেতাল কেন্দ্রে ছোটদের বৈঠকে সূচনা হয় জুন মাসে, এর প্রবর্তনের ছিলেন গল্প দাদার ছদ্মনামে তৎকালীন হাইকোর্টে অ্যাডভোকেট যোগেশচন্দ্র বসু ।

আকাশবাণী ভবন 

ব্রিটিশ ভারতে রেডিওতেই শোন  সুভাষচন্দ্রের বসুর দীপ্ত কণ্ঠে বলছেন  আমি সুভাষ বলছি । জন স্টেপলটন পাকাপাকি ভাবে অবসর নিয়ে নেয় 1942 সালে এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাস শুরু করেন । তবে কাটায় আমাদের কলকাতায় টেম্পেল চেম্বার্স বাড়িটি কি এখনো আছে ।


ছবি সূত্র - internet এবং Old Indian Photos

তথ্য সূত্র - https://banglalive.com/a-detailed-history-of-the-initiation-of-kolkata-radio-station/


https://aajkaal.in/news/state/know-some-unknown-facts-of-world-radio-day-8ini


https://www.anandabazar.com/rabibashoriyo/history-of-radio-broadcasting-in-kolkata/cid/1328700

Comments