সংবিধানের ছবি এবং অন্যান্য

ভারতের সংবিধান 


এবার 73 তম প্রজাতন্ত্র দিবস। তাই একটু ইতিহাস দেখাযাক কিভাবে প্রজাতন্ত্র দিবস শুরু হলো আর কিভাবেই বা ভারতীয় সংবিধান কার্যকর হলো । 


200 বছরের পরাধীনতা পেরিয়ে স্বাধীন হয়েছে ভারত বর্ষ এবার একটু একটু করে ঘুরে দাড়াচ্ছে ভারত । স্বাধীন দেশে নীতি ও আইন কানুন পাকাপোক্ত করার জন্য দরকার সংবিধান। 1950 সালে 26 জানুয়ারি ভারতে প্রথম সংবিধান লাগু হয়েছিল।

যেকোনো গনতন্ত্রিক দেশের, সংবিধান হলো তার মূল অংশ। 26 জানুয়ারি কে Republic Day বলা হয়। এই  কথাটি এসেছে লাতিন শব্দ "REPUBLICA" থেকে, এর জনগণ সংক্রান্ত বিষয়। গনতান্ত্রিক দেশ গুলি মূলত সংবিধান অনুযায়ী চালিত হয় । গনতান্ত্রিক দেশ গুলির সংবিধান রচনা করে সেই দেশের সাধারণ মানুষ, কিন্তু দেশের সব মানুষের পক্ষে তো সেই ভাবে, সংবিধান রচনার করা সম্ভব হয় না, তাই 1946 সালে মন্ত্রী মিশন বা ক্যাবিনেট মিশন পরিকল্পনায় গণপরিষদ কথা বলা হয় ।

সংবিধান রচনার দায়িত্ব দেয় একটি কমেটির উপর, সেই কমিটির নাম গণপরিষদ ।

1946 সালে জুলাই মাসে প্রদেশের আইন সভাগুলি এই সদস্যদের দ্বারা গণপরিষদ গঠিত হয়। এই গণপরিষদের সদস্য সংখ্যা ছিল 385.

এই গণপরিষদ বা সংবিধান সভার প্রথম অধিবেশন বসে 1946 সালের 9 ডিসেম্বরে দিল্লি তে । গণপরিষদের মূল নীতি ছিল ভারতের স্বাধীনতার পাশাপাশি , আর্থ সামাজিক স্বাধীনতা দরকার।

এই গণপরিষদের কয়েকটি নীতি ছিল, 

এই গণপরিষদে অনেক বিশিষ্ট মানুষ ছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতমরা হলেন সর্দার বল্লভভাই পাটেল, জওহরলাল নেহরু, ডাক্তার ভি আর আম্বেদকর, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী, প্রমুখ । খসড়া সংবিধানের মূল ও দায়িত্ব ছিল ডাক্তার বি আর আম্বেদকরের উপর । 1947 সালের 15 আগস্ট ভারতে স্বাধীন হয় । ভারতীয় গণপরিষদের লক্ষ্য ছিল সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কাঠামো করে দেওয়া। সংবিধানে গান্ধীজির চিন্তাধারা ও পাশ্চাত্যের উদারনৈতিক মতবাদের প্রভাবে রয়েছে । 

গণপরিষদের সদস্যরা 


এরপর 29 আগস্ট সংবিধান খসড়া কমিটি গঠিত হয় । এই কমিটির সভাপতি ছিলেন ডাক্তার বি আর আম্বেদকরের। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, এন গোপালগোস্বামী আয়েঙ্গার, আল্লাদি কৃস্বামী আয়ার, কে এম মুন্সি, ডি পি খৈতান এবং বি এল মিত্র সহ প্রমুখ । 21 ফেব্রুয়ারি 1948 সালে গণপরিষদের কাছে  খসড়া কমিটি, সংবিধানের খসড়া পেশ করে । অনেক  আলপ আলোচনার পর, এবং কিছু সংশোধনের পর 1949 সালে 26 নভেম্বর গণপরিষদে সংবিধান গৃহীত হয় । ভারতীয় সংবিধান বিশেষজ্ঞ গ্রেনভিল অস্টিন বলেন যে ভারতের সংবিধান যা কিনা সামাজিক বিপ্লবের চূড়ান্ত লক্ষ্য পূরণ করে ।

ডা: বি আর আম্বেদকরের 


তৎকালীন ভারতের সংবিধানে মোট 365 ধারা ছিল আর 8 টি তপসিলি ছিল । সংবিধান তৈরি করতে সময় লেগেছিল 

দুবছর এগারো মাস আর সাতেরো দিন। পৃথিবী তে আর কোনো সংবিধান তৈরি করতে এত সময় লাগেনি। এই জন্যই ভারতের সংবিধান পৃথিবীর বৃহত্তম লিখিত সংবিধান। 1950 সালের 26 জানুয়ারি কার্যকারী হয় ভারতের সংবিধান। আবার 1929 সালে পরাধীন ভারতে 26 জানুয়ারি দিনটিকে তৎকালীন জাতীয় কংগ্রেস স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছিলে ।পরাধীন ভারতে মতিলাল নেহেরু সংবিধানের খসড়া বানিয়ে ছিলেন, কিন্তু তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ছুড়ে ফেলে দেয় । ভারতের সংবিধান  সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র এবং ভারতের সংবিধান কে নারী-পুরুষ জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে । এই কথাগুলো বইয়ের প্রথম কিংবা দ্বিতীয় পৃষ্ঠা থাকে । বর্তমানে ভারতের সংবিধানে 470 টি  এবং বহু উপধারা রয়েছে, তার সাথে রয়েছে 12 তফসিল রয়েছে আর এই ধারা গুলি কে 25 টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

 । ভারতের সংবিধান পৃথিবীর বৃহত্তম এবং লিখিত সংবিধান । 1976 সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ভারতের সংবিধান কে ধর্মনিরপেক্ষ বলা হয়েছে। ভারতের সংবিধান নাগরিকদের মৌলিক অধিকার দেওয়া হয়েছে । মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি সংবিধান কিছু মৌলিক কর্তব্য রয়েছে । 1976 সালের 42 তম সংবিধান সংশোধন অনুযায়ী 10 টি মৌলিক কর্তব্য রয়েছে , আবার 84 তম সংবিধান সংশোধন অনুযায়ী কর্তব্য রয়েছে মৌলিক কর্তব্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে 11 টি । 

রাজেন্দ্র প্রসাদ হাতে সংবিধান 


আর মৌলিক অধিকার গুলি হলো সাম্যের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার, শোষনের বিরুদ্ধে অধিকার, ধর্মিয় স্বাধীনতার অধিকার, সংস্কৃতির ও শিক্ষার অধিকার ও সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকার।

সেই দিক থেকে ও ভারতের সংবিধান অন্যতম । 


ভারতের সংবিধানে বিভিন্ন সময়ে সংশোধন করা হয়েছে। 1950 সাল থেকে 2020 অবধি ভারতের সংবিধান কে মোট 104 বার সংশোধন করা হয়েছে । ভারতের সংবিধানে একথা বলে দেওয়া হয়েছে, যে কিভাবে সংশোধন করতে হবে। তাহলে সত্যি অবাক হতে সংবিধান নির্মাতা কত, দুরের কথা ভেবে সংবিধান তৈরি করেছিলেন। ভারতের সংবিধানে তিন প্রকারের সংশোধনীর কথা বলা হয়েছে। 



তবে কি ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারত সংবিধান বলে কিছু ছিল না ! ছিল তবে সেটা সংবিধান না, তার নাম ছিল ভারত শাসন আইন।  বিশ্বযুদ্ধ সময় ব্রিটিশরা বলেছিল যে , ভারত যদি বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ পক্ষে থাকে তাহলে ব্রিটিশ সরকার ভারতকে স্বাধীন করে দেবে। কিন্তু ঘটনা ঘটলো উল্টো, 1932 সালে লন্ডনে নভেম্বর মাসে তৃতীয় গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, জাতীয় কংগ্রেস সহ অন্যান্য দলের সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের।

সেইখানে ভারতের দল গুলি কিছু ভারতের শাসনতন্ত্রে কিছু পরিবর্তন ঘটাতে চাইছিল, কিন্তু একথা ব্রিটিশ সরকার পুরোপুরি নাকচ করে দেয় ।

আসলে চার্চিল কোনো ভাবেই ভারতকে স্বাধীনতা দিতেই চাইছিল না।

1935 সালে ব্রিটিশ সরকার ভারত শাসন আইন প্রনয়ণ করে । 1933 সালে পার্লামেন্টে উভয় কক্ষের, সদস্যদের নিয়ে গঠিত জয়েন্ট সিলেক্ট কমিটি গঠন হয়, বলাইবাহুল্য যে এখানে ব্রিটিশ প্রাধান্য বেশি ছিল ঐ কমিটির কাছে ব্রিটিশ সরকার 1935 সালে ভারত শাসন আইন প্রনয়ণ করে। কিন্তু ভারত স্বাধীন হওয়ার পর , ভারত নিজস্ব সংবিধান রচনা করে । 

1935 সালের ভারত শাসন আইন ছিল ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতের শেষ সংবিধান।  


সেই মত কাজ শুরু হলো , সংবিধান লিখতে হবে হাতে , পাশাপাশি পাতায় থাকবে নকশা ও অলংকরণের মিশ্রন অনেকটা আগেকার দিনে তাল পাতার পুঁথির মত । লেখার দায়িত্ব নিলেন বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার প্রেম বিহারি রায়যাদা সাকসেনা । জানিয়ে রাখি প্রেম বিহারি রায়যাদা সাকসেনা এই কাজের জন্য এক টাকায় তিনি পারিশ্রমিক নেন নি।

সংবিধান ক্যালিগ্রাফি করছেন প্রেম বিহারি রায়যাদা সাকসেনা 

লেখার পর এবার সংবিধানকে ছবি দিয়ে সাজানোর পালা তার দায়িত্ব কে নেবে ? এই ছবি দিয়ে সাজানোর দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী জাহারলাল নেহেরু নিশ্চিন্তে দিলেন  শান্তিনিকেতনের কলাভবনের মাস্টারমশাই নন্দলাল বসুর হাতে । এই কাজের যোগ্য সঙ্গতদেন তার অন্যতম প্রিয় ছাত্র জব্বলপুরের বেহর রাম মনোহর সিংহ । তখন শান্তিনিকেতন কলাভবন এর ছাত্র দায়িত্ব পেয়ে কাজ শুরু করে দেন,  নন্দলাল । তৈরি করেন একটি নান্দনিক প্রচ্ছদ সংবিধানের পাতায় পাতায় ভারতের ছবি। যেমন মহেঞ্জোদারো, বৈদিক গুরুকুল, রামায়ণ মহাভারত,গৌতম বুদ্ধ , মহাবীর জীবন , সম্রাট অশোক বিক্রমাদিত্যের রাজসভা, নালন্দা, আকবর মুঘলের শিল্পস্থাপন নীতি, শিবাজী, গোবিন্দ সিংহ, টিপুঁ সুলতান, ঝাঁসিয রানী লক্ষ্মীবাঈ , নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের লড়াই, সব মিলিয়ে 22টি ছবি, এক বাঙালি শিল্পির দক্ষতা নিপুণ দক্ষতায় সেজে উঠেছিল বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম সংবিধান । 

নন্দলাল বসু 

251 পৃষ্ঠার সংবিধানের ওজন 750 কিলোগ্রাম । সংবিধানের প্রথম প্রতিলিপি ছিল দুটি, একটি হিন্দিতে লেখা অন্যটি ইংরেজিতে লেখা। 

ভারতের সংবিধানে ছবি 


প্রতিবছর এই দিনটি প্রধান আকর্ষণ হল দিল্লির রাজপথে প্যারেড , এখন অবশ্য রাজপথে নতুন নাম কার্তব্য পথ।  কার্তব্য পথ থেকে ইন্ডিয়া গেট অবধি চলে এই প্যারেড । এই অনুষ্ঠানে সামরিক বাহিনী, নৌ বাহিনী, এবং বায়ু সেনা ভারতের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ঐতিহ্য প্রর্দশন করে।  

আর প্রতিবারের মতো এবারও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মিশেরের প্রেসিডেন্ট। 


ছবি সূত্র - internet

তথ্য সূত্র - wikipedia এবং বন্ধু জয়দীপ 

https://www.anandabazar.com/lifestyle/some-unknown-and-interesting-facts-about-republic-day-dgtl/cid/1325530


https://bangla.aajtak.in/desh/story/republic-day-india-2022-and-its-unknown-history-significance-prb-337440-2022-01-26?utm_source=atweb_story_share


https://www.bongodorshon.com/home/story_detail/history-of-indian-republic

Comments