নেতাজি ও তাঁকে ঘিরে বিভিন্ন রহস্য !

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু 

 

কিভাবে শুরু করব বুঝতে পারছি না কিন্তু শুতে করতেই হবে। সেই জন্য প্রথম থেকেই শুরু করছি।

আজকে যার কথা বলবো তাকে সারা বিশ্ব চেনে, তিনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু । 

1897 সালের 23 জানুয়ারি সুভাষ চন্দ্র বসু উড়িষ্যার কটকে জন্ম গ্রহণ করেন।

মা প্রভাবতি বসু এবং জানকীনাথ বসু ।

প্রথমে কটকের ইউরোপীয় স্কুলে পড়াশোনা করলেও পরে তিনি রাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন । 

এরপর কলকাতা এসে প্রেসিডেন্সি কলেজ ভর্তি হলেন। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় তিনি চতুর্থ স্থান অধিকার করে কিন্তু চাকরির নিয়োগ পত্রকে অস্বীকার করেন । এই সুভাষচন্দ্র বসুর মধ্যে নিজের দেশের জন্য কিছু করে দেখানোর আবেগ জন্মেছিল । কারণ যে সময় তিনি বড় হয়েছেন তখন পুরো ভারতে ইংরেজ শাসন চলছে। এরপর নিয়ে জাতীয় কংগ্রেসের যোগ দেন এবং দেশকে স্বাধীন করার জন্য গান্ধীবাদী আন্দোলনে জড়িয়ে পরেন।

রাজনীতিতে আসার আগে তিনি নিজের দেশকে ভালোভাবে জানতে চেয়েছিলেন, সেই জন্য তিনি পুরো ভারতবর্ষে ঘুরে বেড়িয়ে ছিলে এবং নিজের দেশকে জানতে পেরেছে এবং দেশের মানুষের কথা বুঝতে পেরেছিলেন। সুভাষচন্দ্র বসুর গুরু ছিলে চিত্তরঞ্জন দাস। চিত্তরঞ্জন দাশের পর, সুভাষচন্দ্র বসু কলকাতা মেয়ার পদে নিযুক্ত হন । তিনি জাতিয়  কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছিলেন ছেলে দু দুবার । দ্বিতীয়বারে সভাপতির পথ তিনি ছেড়ে দেন কারণ তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল সীতারামাইয়া গান্ধীজীর প্রিয় পাত্র। সীতারামাইয়া হেরে যাওয়ার পর গান্ধিজি বলেছিলে ওর হার মানে আমারও হার এর ফলে জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যেই সুভাষ চান্দের সঙ্গে অসহযোগিতা করতে থাকেন । জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যেই সুভাষচন্দ্র বসু নতুন একটি  দল করে তোলেন সেই দলটির নাম  ফরওয়ার্ড ব্লক । সুভাষচন্দ্র বসু সশস্ত্র বিপ্লবের কথা বলে ছিলেন। তার বিখ্যাত উক্তি তোমারা আমায় রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধিনতা দেব । সুভাষচন্দ্র বসু কে বহুবার ইংরেজ পুলিশ গ্রেফতার করে, কিন্তু তাঁকে আটক রাখতে পারেনি। সুভাষচন্দ্র বসু বুঝেছিলেন দেশ স্বাধীন করতে হলে দেশের বাইরে বরতে হবে । কিন্তু দেশের বাইরে বেরোনো এতটা সহজ না , আর সারাক্ষণ ইংরেজ পুলিশের নজর তার দিকে। ইংরেজ পুলিশ সুভাষচন্দ্র কে House arrest করলেন।

এই গাড়ি করে সুভাষচন্দ্র বসু দেশ কে স্বাধীন করতে বেড়িয়েছিলেন 

1941 সালে 17 জানুয়ারি সুভাষচন্দ্র বসু জিয়াউদ্দিন এর ছদ্মবেশে এলগিন রোডের বাড়ি থেকে মাঝ রাতে বের হলেন। 18 জানুয়ারি গুমো ( Gomoh )  থেকে কালকা মেল ধরে, পেশাবর পৌঁছালেন আর সেখান থেকে কাবুল পৌঁছেছিলেন । কাবুলে তার গাইড ছিল ভগৎরাম তলোয়ার। কাবুলে তিনি ইতালিয়ন নাগরিক হিসেবে একটি পাসপোর্ট তৈরি করান , তিনি সহায্য পেয়েছিলেন পিয়েট্রো করনির। কাবুল থেকে তারমেজ্ হয়ে , সমরকন্দ পৌঁছেছিলেন। কোথায় যাচ্ছে সুভাষচন্দ্র ? বলছি  সমরকন্দ থেকে আবার ট্রেন ধরে মক্সো পৌঁছালেন। মক্সো থেকে আবার লুপ্তওয়াফে প্লেন ধরে জার্মানির রাজধানী বার্লিন পৌঁছালেন ‌। লিখতে বা পড়তে ততটা সহজ মনে হচ্ছে আদৌও অতটা সহজ ছিল না। 

সিনোর অরল্যান্ডো মাজোত্তা 

ব্রিটিশ পুলিশের নজর এড়িয়ে এতটা পথ অতিক্রম করা খুবই কষ্টকর, কিন্তু ভারতকে স্বাধীন করার জন্য, সুভাষচন্দ্র বসু সেটা করে দেখিয়ে ছিলেন । সুভাষচন্দ্র দেখা করলেন হিটলার সঙ্গে, কিন্তু জানিয়ে রাখা দরকার সুভাষচন্দ্র কিন্তু কোনো ভাবেই হিটলার চিন্তা ভাবনা কে‌ সমর্থন করতেন না। জার্মানি তে যেসমস্ত ভারতীয় সৈনিকরা বন্দি ছিলেন তাদের কাছে প্রস্তাব রাখলেন, নিজের দেশে কে স্বাধীন করার জন্য ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য । 

নেতাজির সঙ্গে হিটলারের দেখা 

প্রথমে দশ জন সৈনিক, এরপর 1941 সালে পুরো ব্যাটেলিয়ন সুভাষচন্দ্র কে অভিবাদন করলেন। আর এখানে 1942 সালে সৈনিকরা তাকে "নেতাজি" বলে অভিহিত করেন। অন্য দিকে জাপানে রাসবিহারী বসু অপেক্ষায় ছিলেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর। তখন প্লেনে করে জার্মানি থেকে জাপান যাওয়া বিপদ জনক, বিশ্বযুদ্ধ চলছে । ঠিক হল জাপানে নেতাজি যাবেন সাবমেরিনে করে । আফ্রিকা ঘুরে ম্যাডাগাস্কারের 400 মাইল দুরে , অন্য আরেকটি সাবমেরিন চড়ে জাপানে পৌঁছাবেন নেতাজি । প্রায় সাড়ে তিন মাস গভীর সমুদ্রে ছিলেন নেতাজি, আর তার সঙ্গে ছিলেন আবিদ হাসান।

সাবমেরিনে করে ইন্দোনেশীয়ার মালয়, পৌঁছালেন সেখান থেকে প্লেনে জাপান পৌছালেন নেতাজি । 1943 সালে 21 অক্টোবর সিঙ্গাপুরের ( তখন জাপানের অধিদিনে সিঙ্গাপুর ) ক্যাথে সিনেমা হলে স্বাধীন ভারত সরকারের কথা ঘোষণা করেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু । আর এখানেই রাসবিহারী বসু  INA এর দায়িত্বভার তুলে নেতাজির হাতে । নেতাজি সেনা বাহিনীর নাম দেন আজাদ হিন্দ ফৌজ।

আজাদ হিন্দ ফৌজ 


নেতাজির ভারত সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল জাপান‌ সরকার। নেতাজির সরকারের কাছে চল্লিশ হাজার ভারতীয় সেনা ছিল, যারা সিঙ্গাপুরে জাপানি সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে ছিল। সিঙ্গাপুরেই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, ব্রিটিশ সরকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। নেতাজি তার ব্রিগেড নাম দিয়েছিলেন, গান্ধী ব্রিগেড, নেহরু ব্রিগেড এছাড়া নেতাজির সেনাবাহিনী তে ঝাঁসির রানী ব্রিগেড ছিল মানে মহিলারা এই যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিল। 1943 সালের ডিসেম্বর মাসে আজাদ হিন্দ ফৌজের কাছে জাপান সরকার আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের শাসন ভার তুলেদেয় । 

আজাদ হিন্দ ফৌজের বাহিনী

নেতাজি সুভাষচন্দ্র এই দ্বীপপুঞ্জের নতুন নাম দেন শহীদ ও স্বরাজ দ্বীপ । বর্তমান এই নামেই চিহ্নিত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। 1943 সালেই পোর্ট ব্লেয়ার পৌঁছালেন, এবং জিমখানা মাঠে প্রথমবার জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন পুরো দমে চলেছে, 4th ফেব্রুয়ারি আজাদ হিন্দ ফৌজের বর্মা সীমানা অতিক্রম করে , সৌকত আলি মালিকের নেতৃত্বে 14 এপ্রিল মণিপুরের মৈরাং শহর ছিনিয়ে নিয়েছিল আজাদ হিন্দ ফৌজ । কিন্তু আজাদ হিন্দ ফৌজ পিছু হটতে বাধ্য হলো , কারণ জাপানি সেনাবাহিনী আজাদ হিন্দ ফৌজ কে আর সমর্থন করেছিল না , কারণ জাপান আন্মসমর্পন করেছিল ।  কিন্তু নেতাজি সুভাষচন্দ্র হার মেনে নেন নি । 


অনেকের মনে করেন নেতাজি 18 আগস্ট 1945 সালে তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনার বলা হয় থাকে । কিন্তু এই ঘটনা কথা কোনো ভাবেই সমর্থন করা যায় না। বিচারপতি মোনজ কুমার মুখার্জি তদন্ত রিপোর্টে পরিষ্কার করা বলা হয়েছে যে, তাইহোকুতে ঐ রকম কোনো বিমান দুর্ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে তাহলে নেতাজি গেলেন কোথায়? আর কেন তার বিমান সহযাত্রী আজাদ হিন্দ ফৌজের কর্নেল হাবিবুর রহমান কেন বলেছিলেন নেতাজি বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘটেছে? নাকি এইটা নেতাজির নির্দেশ ছিল ? 

দ্বিতীয় কথায় টি প্রযোজ্য । পরবর্তী কালে বিভিন্ন তথ্য এসেছে, কিন্তু তথ্যই  প্রমান করতে পারেনি । এখানে উঠে এসেছে আর একটি তথ্য সেটা হল গুমনামি বাবা অথবা ভগবানজী । 

গুমনামি বাবা 

এই গুমনামি বাবা উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদের রাম ভবন নামে একটি বাড়িতে থাকতেন । বলা হয়ে থাকে তিনি কাউর সামনে আসতেন না পর্দার আড়ালে থেকেই কথা বলতেন । 

1986 সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর 

ভাই সুরেশচন্দ্র বসুর মেয়ে ললিতা বসু এই রাম ভবনে এসেছিলেন, এবং ঘরের ভেতর জিনিস পত্র , বিভিন্ন চিঠি পত্র, নথি দেখে নিশ্চিত হন যে ইনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু । আদালতের নির্দেশে ফৈজাবাদের ট্রেজারি তে ঐ সবস্ত জিনিস রেখে দেওয়া হয় । মুখার্জি কমিশনের নির্দেশে ফৈজাবাদের ট্রেজারি তে ভগবানজির বাক্স গুলির খোলা হয় , এবং সেখানে দেখা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়ে ব্যাবহিত ফ্ল্যাশ লাইট, আজাদ হিন্দ ফৌজের বিভিন্ন সদস্যের ছবি , সুভাষচন্দ্র বসুর মা বাবা ও ভাই বোনদের বিভিন্ন ছবি এবং আরো অনেক কিছু। ভগবানজি ও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু হাতের লেখার ফরেনসিক টেস্ট করলে সম্পুর্ন মিলে যায় । মুখার্জি কমিশনের ও পরবর্তিকালে সাহাই কমিশন একমত হয়ে ছিল যে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর গলার স্বর ও

ভগবানজির  গলার স্বরে মিল পাওয়া যায়, এবং দুজনেই বাঙালি ছিলেন।  

ভগবানজির ঘর থেকে পাওয়া দাঁতের সঙ্গে নেতাজির ডিএনএ, টেস্ট করলে দেখা যায় ডিএনএ ম্যাচ করছে না। কিন্তু পরবর্তীতে আরো দেখা গেছে যেখানে এই ডিএনএ টেস্টে করতে দেওয়া হচ্ছিল সেখানে অদ্ভুত কোন রিপোর্ট পাওয়া যায় নি । 


আর একটা ব্যাপার চমকে দেয় 2022 সালে , সেটা হল একটা RTI. 

https://tv9bangla.com/kolkata/rti-answer-on-dna-test-report-of-gumnami-baba-au50-672677.html

 এখানে ক্লিক করলেই জানতে পারবেন।

ছবি সূত্র - internet

তথ্য সূত্র - https://ichorepaka.in/was-gumnami-baba-actually-netaji-subhas-chandra-bose/


https://www.prohor.in/netaji-mystery-part-4


https://m.sangbadpratidin.in/article/hand-writting-of-netaji-and-gumnami-baba-is-same-says-document-examiner-curt-baggett/767964


https://aajkaal.in/news/editorial/post-edit-hetz


বি: দ্র: - উপরের সমস্ত লেখা বিভিন্ন খবরের কাগজ ও উপরুক্ত link উপরে ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। 

Comments