- Get link
- X
- Other Apps
Posted by
Tiki liki
on
- Get link
- X
- Other Apps
![]() |
| কলকাতার রাজপথ |
কলকাতার অনেক রাস্তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক ইতিহাস, কয়েকটি রাস্তা ও তার ইতিহাস কিছু গল্প তুলে ধরলাম।
বৈঠকখানা বাজার:
পুরনো কলকাতার মানচিত্র দেখলে জানা যায় বৈঠকখানা বাজার বলে এক জায়গা ছিল।
লালবাজার মোড় থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত যে রাস্তায় আসছিল তার পাশে একটা বাজার ছিল তার নামে বৈঠকখানা বাজার । আবার অনেকের মতে কলকাতার 1784 খ্রিষ্টাব্দের Map এ ( মানচিত্রে ) লালবাজার মোড় থেকে পূর্ব দিকে থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত রাস্তাটাই বৈঠকখানা বাজার ।
![]() |
| বটগাছের নিচে বসতো বেচা কেনা |
তবে কি বৈঠকখানা নিয়ে এই বাজার তৈরি হয়েছিল ?! তবে সাধারন লোকের বৈঠকখানা নয় খোদ জোব চার্নকের বৈঠকখানা । যিনি কলকাতার জনক !( পরে প্রমানিত হয়েছে এটা ভূল )
![]() |
| 1784 সালের কলকাতার map |
কলকাতা গবেষকদের মতে চার্নকের মোটেই প্রথম পছন্দ কলকাতা ছিল না, সেই সময় গঙ্গার তীরে অন্যতম প্রধান জনপদ ছিল শ্রিরামপুর । সেখানেই ব্যাবসা করতে চেয়েছিলেন চার্নক। কিন্তু তা হলো কই , মোঘল সুবেদার ও অন্যান্য ইউরোপীয় বণিকদের দাপটে, চার্নক 1690 খ্রিষ্টাব্দের এখনকার হুগলি নদীর তীরে জঙ্গলে ঢাকা এলাকায়, জাহাজ নিয়ে এসেছিল জোব চার্নক । এই জন্যই তখন বণিকদের নজর পড়েনি কলকাতার উপর ।
ব্রিটিশরা কিন্তু এনার মাধ্যমেই কলকাতার কথা জানতে পেরেছিল , এবং রাজধানী করেছিল । সেই সময় বাংলায় ঘুরে বেড়াচ্ছে শুধুমাত্র ব্রিটিশরাই নয় এছাড়াও পর্তুগিজ, ফরাসি, ওলন্দাজরা এসেছিল কারণ একটাই বাণিজ্য ।
এই কলকাতাতেই ( তখন ছিল জঙ্গল ) জোব চার্নক বসবাস শুরু করলেন
![]() |
| জোব চার্নক এবং তার সমাধি |
নতুন জায়গায় ব্যবসা জমানোর জন্য স্থানীয়দের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও গল্প করে ব্যবসার কিভাবে জমানো যায় তার হালহকিকত জেনে নিলেন । অনেক বলেন চার্নক ঢিলে পাজামা আর কামিজ পড়তেন । হুঁকো টান দিতেন, মানে স্থানীয় বাসিন্দারা সঙ্গে একবারে মিশে যেতে চেয়েছিলেন।
সেই সময় গল্প করার জায়গা ছিল একটা বটতলা । সপ্তদশ শতকে বটতলা তেই একসাথে চলতো গল্প আর বিক্রিবাটা, এখানেই অনেক ব্যাবসায়িরা বিশ্রাম নিতেন ।
পরে সুতানুটি কোলকাতা গোবিন্দপুর গ্রাম কিনে নিলেন চার্নক ,আর ঐ বটগাছের নিচে বসত জোড় চার্নকের কাউন্সিল ।
আচ্ছা ঐ বটগাছ আছে ? মানে যেখানে বসত জোব চার্নক এর বিচার সভা ? উত্তর না নেই ।
ঐ বটগাছটি কাঁটা যায়, এই কাঁটা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে । অনেক মনে করেন 1799 খ্রিষ্টাব্দের গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলি নির্দেশ দেয় বটগাছ কাঁটার জন্য কারণ, ঐ খানে বৌবাজার স্ট্রিট তৈরি হবে। অনেক অভিযোগ করে বলেন ওয়েলেসলি দেশীয় ভাবাবেগ এ আঘাত করেছেন।
![]() |
| ওয়েলসলি এবং হেস্টিংস |
আবার অনেকে মনে করেন ঐ বটগাছ কাঁটা পড়েছিল 1820 খ্রিষ্টানদের লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস নির্দেশে । কিন্তু বটগাছ যে কাঁটা পড়েছিল এইটা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে আবার আরো একটা প্রশ্ন ওঠে যে গাছটির নিচে বৈঠক হতো, ওটা কি বটগাছ ? হ্যাঁ গাছ নিয়েও প্রশ্ন, অনেকে মনে করেন ওটা ছিল নিম গাছ। আর আরো বলা হয় গাছটি মোটেই লালবাজার আর শিয়ালদহ ওখানে ছিল না, গাছটি নাকি অস্তিত্ব ছিল শোভাবাজার আর বেনিয়ালার মাঝখানে, গঙ্গার ধারে নিমতলায় । আরো বলা হয়েছে 1779 খ্রিষ্টাব্দে পুড়িয়ে ফেলা হয় । কেন পুড়িয়ে ফেলা হয় সেটা জানা যায় নি ।
মানুষের মুখে মুখে এই জায়গার নাম হয়ে যায় বৈঠকখানা আর তার সাথে যুক্ত হল বাজার আর বাকিটা ইতিহাস ।
চৌরঙ্গী :
কলকাতা তো আগে জঙ্গল ছিল, আগেই বলেছি, এখন যে চৌরঙ্গী কে আমরা চিনি, তখন সেটা ছিল একটি ছোট্ট গ্রাম। কেন এই রাস্তার নাম চৌরঙ্গী ? বলা হয় এক সন্ন্যাসী ছিল চৌরঙ্গী গিরি নামে, সেখান থেকেই রাস্তার নাম হয় চৌরঙ্গী । এই চৌরঙ্গী ছিল জলভূমী । ধানক্ষেত আর ছোট ছোট কুড়ে ঘরে ভরা । একটা জঙ্গল ছিল গোবিন্দপুর ও চৌরঙ্গী গ্রামের মাঝখানে, এই জঙ্গল ছিল গোবিন্দপুর ও চৌরঙ্গীকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল।
শোনা যায় এই জঙ্গলে নাকি ওয়ারেন হেস্টিংস হাতির উপর বসে বাঘ শিকার করতেন। পলাশি যুদ্ধের পর, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কলকাতায় জাঁকিয়ে বসলো । ব্যাবসা বাণিজ্য করার জন্য তারা কলকাতায় শহরে গড়ার কাজ শুরু করলেন, আস্তে আস্তে তৈরি হলো ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ ।
সেই সময় অনেক ইউরোপীয়রা ময়দানের দিকটায় বসবাস করতেন।
![]() |
| চৌরঙ্গী |
বলা হয়ে থাকে অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ইংরেজরা চৌরঙ্গীতে বড় বড় অট্টালিকা গড়া শুরু করলো, আর এর ফলে কলকাতা পেল প্রাসাদ নগরীর তকমা । মহাবিদ্রোহ যেবছর হলো মানে 1857 সালের 6 জুলাই কলকাতার চৌরঙ্গী অঞ্চলে ওরিয়েন্টাল গ্যাস কোম্পানি প্রথম গ্যাসবাতি বসায়। ঝলমল করতে লাগলো চৌরঙ্গীর আসপাস , এরপরের বছর কলকাতায় ফুটপাথ তৈরির কাজ শুরু হলো, কারণ ছিল গ্যাসবাতি বসানো । কিন্তু রাস্তার দুপাসে সারিবদ্ধভাবে গ্যাস বাতি বসানো হবে।
![]() |
| গ্যাস বাতি |
কিন্তু এতে ব্যাবসায়ীরা আপত্তি জানায়, কারণ এতে খদ্দের অসুবিধা হবে। তারা কোথায় গাড়ি রাখবে ? ফলে গাড়ি অনেক দূরে রাখতে হচ্ছিল, সেই জন্য ব্যাবসায়ীরা ইংরেজদে কাছে জানায় কিন্তু, ফল বিশেষ কিছু হলো না । ইংরেজ শাসকরা সাফ জানিয়ে দিলেন চৌরঙ্গীর জন্য আলাদা ভাবে পার্কিং ব্যবস্থা করার কথা ভেবে দেখবেন ।
চৌরঙ্গীর বিশাল রাস্তাটি দক্ষিণ দিকের লোয়ার সার্কুলার রোড যা আচর্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড নামে পরিচিত আর, উত্তরে ধর্মতলা অবধি বিস্তৃত ছিল। পুরনো কলকাতা map
( মানচিত্রে ) দেখলে জানা যায় চৌরঙ্গী শুধু রাস্তা নাম নয়, একটা অঞ্চলের নাম ছিল। আরো জানা যায়, 1784 সালে জৈনক কর্নেল মার্ক উড একটি map ( মানচিত্র ) এঁকেছিলেন ওখানে তিনি চৌরঙ্গীকে "রোড টু চৌরঙ্গী" বলে উল্লেখ ছিলেন । ইংরেজ আমলে পার্কস্ট্রিট এর দক্ষিণ দিকের একটা অঞ্চলের নাম ও ছিল চৌরঙ্গী।
নিউইয়র্কে যেমন "ফিফথ অ্যাভিনিউ"
প্যারিসে তেমন "চ্যাম্পস এলিসিজ"
কলকাতার তেমনি চৌরঙ্গী ।
হ্যারিসন রোড:
এই রাস্তায় এক বিখ্যাত গোয়েন্দা থুরি সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সীর বাড়ি ছিল। পরে অবশ্য তিনি অন্য যায়গায় বাড়ি নিয়েছিলেন। যতই ব্যোমকেস বক্সি কাল্পনিক চরিত্র হোক না কেন, হ্যারিসন রোড কিন্তু সত্যি আছে । বর্তমান এই রাস্তাটির নাম, মহাত্মা গান্ধী রোড । এই রাস্তাটি উত্তর ও মধ্য কলকাতার মধ্যের সীমানা তৈরি করেছে । আচ্ছা এই হ্যারিসন কার নাম ! কারণ কলকাতার বেশিরভাগ রাস্তার নাম তো কোনো ইংরেজ সাহেব বা গভর্নর জেনারেল নামে নামকরণ হয়েছিল, স্বাধীনতার পর আস্তে আস্তে রাস্তা গুলোর নাম পাল্টানো হয় ।
![]() |
| হ্যারিসন রোড |
বলা হয় এই হ্যারিসন সাহেব নাকি কলকাতার কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ছিলেন, অবশ্যই ব্রিটিশদের সময়। এই সাহেবের পুরো নাম স্যার হেনরি হ্যারিসন । 1889 সালের ডিসেম্বর মাসে 75 ফুট রাস্তার কাজ শুরু হয়, এবং শেষ হয় 1892 সালে । এই রাস্তার বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায় মিঃ কটনের সাহেবর লেখায় ( নিচে দেওয়া হলো লেখাটি )
" It is of the uniform breadth of 75 feet and is named after Sir Henry Harrison, the chairman of the Corporation, by whom the scheme was inaugurated and matured. Begun in December 1889, it was complited in 1892, and many an overcrowed tenenent and narrow festering lane has been swept away by its construction. "
-H. E. A. Cotton: Calcutta Old and New, 1907, page 345.
![]() |
| সেই বই |
একটা কথা না বলেই নয় এই হ্যারিসন রোড কিন্তু পরাধীন ভারতের অনেক ইতিহাসের সাক্ষী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়
"হাওড়ার ব্রীজ চলে মস্ত সে বিছে।
হ্যারিসন রোড চলে তার পিছে পিছে।।
স্ট্র্যান্ড রোড :
এখন যে স্ট্র্যান্ড রোডের উপর হেটে চলে বেড়াচ্ছি, আগে কিন্তু এই রোডটি ছিল না, আগে এখানে ছিল দীর্ঘস্থায়ী নদীর তীর। আর এখানে চন্দ্র পাল বলে একজন দোকানদার ছিল। ব্যাবসা বাণিজ্য করতে আসা, লোকজন এখানেই বিশ্রাম করতেন । পরবর্তী কালে এখানে একটা ঘাট তৈরি করা হয়েছিল, এই ঘাটের নাম দেওয়া হয় সেই দোকানির নামে, মানে চাঁদপাল ঘাট । ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পদস্থ কর্মচারীরা এই ঘাটে নামলে ফোর্ট উইলিয়াম থেকে তোপ দেগে তাদের সন্মানের সঙ্গে স্বাগত করা হতো ।
![]() |
| স্ট্র্যান্ড রোড |
স্ট্র্যান্ড রোডের আগের নাম ছিল স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক , বলা হয় থাকে সুমাত্রা নামের এক জাহাজ এখানে ডুবে যায় আর এই জাহাজের ধংসাবসেস পলির সঙ্গে মিশে মাটি আরো সক্ত হয়ে যায়, আর এই নতুন মাটির নাম হয় সুমাত্রা স্ট্র্যান্ড । এই স্ট্র্যান্ড রোড টি তৈরি করে লটারি কমিটি 1828 সালে । পরাধীন ভারতের সুপ্রিমকোর্টে প্রথম চীফজাস্টিস এলিজা ইম্পে ( Elijah Impey ) এই দেশে চাঁদপাল ঘাটে নামেন, তখন অনেক লোক এসেছিল তাকে দেখতে।
![]() |
| ইম্পে সাহেব |
তখন এদেশে কেউ জুতো পরতনা , সেইটা দেখে ইম্পে সাহেব তার বন্ধুদের বলেন কি অবস্থা দেখ এই দেশের, মানুষের পায়ে জুতো নেই ! আমরা যথাসময়ে এসেছি , আর বলেন " আমি কথা ছয় মাসের মধ্যে এই দেশের দুর্দশা দূর করে দেব " । এর এই ইম্পে সাহেবই ওয়ারেন হেস্টিংসের সাথে চক্রান্ত করে, মহারাজা নন্দকুমারের ফাঁসি দিয়েছিলেন।
এই সব রাস্তা গুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কল্লোলিনী তিলোত্তমার ইতিহাস।
ছবি সূত্র - internet
https://www.bongodorshon.com/home/story_detail/chowrangee-light-of-history
https://dailynewsreel.in/harrison-road-kolkata-feature/
Heritage www.chaloamaragalpakori.com
History of Baithakkhana Bazar
History of Chowringhee Road
History of Harrison Road
History of Strand Road
Kolkata
Roads
- Get link
- X
- Other Apps











Comments