- Get link
- X
- Other Apps
Posted by
Tiki liki
on
- Get link
- X
- Other Apps
![]() |
| কর্নেল সুরেশ বিশ্বাস |
ফেলুদার ছিন্নমস্তার অভিশাপ গল্পে ফেলুদা কারান্ডিকারের আসল নাম জানতে পেরেছিল, আরো বলেছিল কারান্ডিকার আসলে সুরেশ বিশ্বাস দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল মানে সত্যজিৎ রায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
সুরেশ বিশ্বাস সত্যি এক অসামান্য মানুষ। সুরেশ বিশ্বাস 1861 সালে নদিয়া জেলার নাথপুর জন্মগ্রহণ করেন, বাবা গিরিশচন্দ্র বিশ্বাস ছিলেন সরকারি চাকুজিবি, ভাই বোনদের মধ্যে বড় ছিলেন সুরেশ । বলা হয় সুরেশ বিশ্বাস পূর্ব পুরুষরা নাকি নীল বিদ্রোহে বিশেষ ভুমিকা পালন করেছিলেন ।
জানা যায় ছোটবেলায় থেকেই দস্যি ছিলেন সুরেশ, শোনা যায় দুবছর বয়েসে কুঁড়ি ফুট উঁচু মইতে চড়েছেন আবার কখনো পাখির ছানা পড়তে গিয়ে, সাপের মুখ চেপে ধরেছেন । আরো বলা হয় হিংস্র শূয়োর কে নাকি মাছ ধরার ছিপের বাড়ি মেরে মাটিতে ফেলেছিল । ছোটবেলা থেকেই রামায়ণ মহাভারত এবং ইতিহাসের বিভিন্ন বীরদের গল্পের প্রতি তার অগাধ আগ্রহ ছিল। খেলাধুলা বদলে শরীরচর্চা তেই বেশি আগ্রহ সুরেশের,
এবং বড় হওয়ার পর এই দস্যিপনা কমনি। কলকাতা এসে বালিগঞ্জে থাকতে শুরু করলো সুরেশ বিশ্বাস এর পরিবার , সুরেশ ভর্তি হলেন লন্ডন মিশনারী কলেজে। কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু পড়াশোনা মন বসত না তার, খুচরো রংবাজিতেই দিন কাটছিলো তার, এইসবের জন্য মাসে দশদিন ও ক্লাসে জেতন না সুরেশ। মায়ের আশকারা ছিল এতে ,এইসবের জন্য পরিবার সাথে মতবিরোধ হওয়ায় বাড়ি ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি , আশ্রয় পেলে কলেজর প্রফেসর আটসন সাহেবর কাছে, প্রফেসর আটসন জন্য কলেজ হোস্টেলে ফ্রি তে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হলো।
সেই সময় খ্রিষ্টান ধর্ম নেন সুরেশ বিশ্বাস। তখন থেকে শুরু করলেন চাকরির চেষ্টা, সরকারি অফিস, সৌদাগোরি অফিস, ডাক, রেল , জেটি কোথাও বাদ দিলেন না, কিন্তু চাকরি কোথাও পেলেন না, অনেক ঘুরেও চাকরি পেলেন না.... । কিন্তু অবশেষে পেলন একটা টুর গাইডের চাকরি পান স্পেন্সেস হোটেল এ , আর তখনই ইউরোপীয় সাহেব মেমদের সান্নিধ্যে আসা , বলা হয় অবসর সময়ে তিনি বিভিন্ন বিখ্যাত পর্যকট ও অভিযাত্রীদের ভ্রমণ কাহিনী পড়া শুরু করেন । সেই জন্যই জাহাজ চড়া ও সমুদ্রে পাড়ি দেওয়া, আর তখন থেকেই বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছে প্রবল হল । কিন্তু যাব বললেই কি যাওয়া যায়, প্রথমে গেলেন রেঙ্গুনে , এই রেঙ্গুনে যাওয়ার জন্য তাকে চাকরিতে ইস্তফা দিতে হয়েছিল। এই রেঙ্গুনে তার প্রাণটা চলে যাচ্ছিল, ঘটনা ছিল এরকম একদিন সন্ধ্যার সময় ইরাবতী নদীর নৌকা ভ্রমণ থেকে ফিরছিলেন সুরেশ, হঠাৎ দুটো ধারালো অস্ত্র ছুটে সুরেশ বিশ্বাস এর দিকে , যারা অস্ত্র গুলো ছুঁড়েছিল তারা দুজন ষন্ডামার্কা মগ ডাকাত । তারা ঝাঁপিয়ে পড়লো সুরেশ এর উপর, কিন্তু সুরেশ তো মল্লযুদ্ধে পারদর্শী । কিন্তু ওরা দুজন ফলে একার পক্ষে পেরে ওঠা সম্ভব না, প্রায় মরে যাচ্ছিলো কিন্তু কথা আছে রাখে হরি মারে কে ! সেই সময় একদল বরযাত্রী যাচ্ছিল, ডাকতেরা পালিয়ে যায় ফলে প্রাণে বেঁচে গেল সুরেশ ।
কিন্তু রেঙ্গুনে বিশেষ সুবিধা করতে পারলেন না , ফিরে আসেন তখনকার মাদ্রাজ এখনকার চেন্নাই এ । তবে তার আগে প্রেমে পড়লেন এক যুবতির প্রেমে, সেই যুবতীকে তিনি বাঁচিয়েছিলেন এক অগ্নিকাণ্ড থেকে , এইসব হয়েছিল রেঙ্গুনে। মাদ্রাজে এসে আসলেন ঠিকই কিন্তু চাকরি তো নেই শেষমেষ এক ফিরিঙ্গি সাহেবের দুই নাতির পরিচারকের কাজ নেন সুরেশ বিশ্বাস । এরপর তিনি কিছুদিন সেই চাকরি করে কলকাতায় ফিরে এসেছিলেন আটসন সাহেবের কাছে ।
তবে তিনি বিদেশে গেলেন, সেই সুযোগ আসলো ১৮৭৮ সালে। বি. এস. এন কোম্পানির জাহাজে, স্টুয়ার্টের পদে চাকরি নিয়ে লন্ডনের পথে যাত্রা করলেন, সুরেশ বিশ্বাস সাতেরো বছর
( 17 ) বয়সে দেশে ছেড়ে চলে গেলেন। বিদেশে একার পেট চালানো তো সহজ কথা নয় কোন সময় কাগজ বিক্রি করে আবার কখনো মুটের কাজ করে, কোনোরকমের দিন চলছিল সুরেশ এর , সুরেশ বিশ্বাস ইংল্যান্ডের ফেরিওয়ালা কাজ করতেন।
এই সময় তিনি আবার পড়াশোনা করতে লাগলেন অংক ও কেমিস্ট্রির মত বিষয় তিনি দক্ষ হয়ে উঠলেন। এই সময় তিনি কেন্ট প্রদেশে সার্কাসের কাজ নিলেন পারিশ্রমিক ছিল 15 শিলং। একজন পালোয়ানকে হারিয়ে তিনি এই কাজ পেয়েছিলেন, তাও আবার মাত্র দশ মিনিটে ।
![]() |
| এখানেই প্রথম সুরেশ বিশ্বাসের খেলা দেখে চমকে ওঠে সাহেবরা |
সুরেশ বিশ্বাস হয়ে উঠলেন পশু প্রশিক্ষক বন্যপ্রাণীরা অনায়াসেই তার বর্ষতা স্বীকার করে নিত, হিংস্র সিংহের খেলা দেখাতেন তিনি এই খবর লন্ডনে
1881 বা 1882 সাল নাগাদ ইস্ট মিনটনে এর রয়েল এগ্রিকালচার হলে এক প্রর্দশনীর আয়োজন করা হয়, সেখানকার অন্যতম আকর্ষণ ছিল বাঘ সিংহের খেলা, এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে প্রর্দশনীর হ্যান্ডবিলে তার নাম ও ছবি ছাপা শুরু হয়,
কালো বুট , লাল প্যান্ট ও নীল জ্যাকেট সাথে জমকালো গোঁফ এবং সাথে বাধ্য ছাত্র ছাত্রী মত বাঘ এবং সিংহের দল ।
সংবাদপত্রে বেশ প্রশংসিত হয়েছিল এমনকি সার্কাস দলের বিঞ্জাপনে আঁকা হয়েছিল তার মুখ।
সার্কাস দলে আবার এক যুবতীর প্রেমে পড়লে সুরেশ, কিন্তু মায়ের অসুস্থতার জন্য প্রেমিকার জার্মানি চলে এলো সুরেশ আসলো তবে ভাগ্য বদলানোর জন্য, জার্মানির হামবুর্গের বিশিষ্ট পশু প্রশিক্ষক গাজেনবাখ সাহেবের পশুশালায় মোটা পারিশ্রমিকের চাকরি পেলেন সুরেশ, এখানে এক "ফ্যানি" নামের বাঘ কে তিনি প্রশিক্ষণ দেন , বলাহয় ঐ বাঘটি সুরেশের খুবই অনুগত হয়ে ওঠে । একটা হাতি ছিল , তার নাম বস্কো সে নাকি সুরেশ না খেওয়ালে খেতই না । সুরেশ বিশ্বাস এর প্রশিক্ষত পশুদের দাম ও ছিল চড়া। ক্রমেই পশু প্রশিক্ষক হিসেবে অদ্বিতীয় হয়ে উঠে ছিল সুরেশ বিশ্বাস। গাজেনবাখ তাকে বিক্রি করলেন ক্রালো ব্রাদার্সের সার্কাসে, ক্রালো ব্রাদার্সের সার্কাস তখন দুনিয়া কাঁপাচ্ছে ।
কিন্তু আবার জার্মানি ছেড়ে আমেরিকা চলে আসেন । জার্মানি কেন ছেড়েছিলেন খুঁজলে জানা যায় জার্মানির প্রেমিকার এক প্রেমিক ও আত্মীয়রা গুন্ডা লাগিয়েছিলে শুরু সুরেশের বিরুদ্ধে এবং তিনি দুবার প্রাণে বেঁচে যান। তবে এই নিয়ে বিতর্ক রয়েছে ।
আমেরিকায় যখন ছিলেন সুরেশ তিনি ইংরেজ পর্তুকিজ সহ বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন, আমেরিকা থেকে
বস্কোর ট্রেনার হিসেবে সুরেশ গেলেন
ব্রাজিলে । 1885 সালে আগস্ট মাসে
প্রথম কোন বাঙালি তিনি ব্রাজিলে পা রাখল । ব্রাজিলে ক্রালো ব্রাদার্সের সার্কাসে, সুরেশ বিশ্বাস খেলা দেখে এক সাংবাদিক বলেন মনেই হচ্ছে না একজন বাঘ সিংহের সাথে খেলা দেখাচ্ছেন , মনে হয় যেন ওগুলো পোশা বিড়াল ।
ব্রাজিলে আবারও তিনি প্রেমে পড়লেন এবং বিয়ে করলেন ডেসডিমোনা কে , এই ডেসডিমোনার অনুপ্রেরণাতে ব্রাজিলের সৈন্য দলে যোগদেন এই বাঙালি যুবক । 1887 কর্পোরাল, তারপর সার্জেন্ট এবং সবশেষে 1893 সালে লেফটেন্যান্ট প্রমশন হয় সুরেশ এর সেই সময় ব্রাজিলে নৌবাহিনীতে দেখা দিয়েছিল বিদ্রোহ ব্রাজিলের নাথেরেয় তারা ঐদিকে শহরে মাত্র ৫০ জন সেনা আছে , দায়িত্ব নিয়ে অংশ নিয়ে সেই অসম লড়াই তার নেতৃত্বে জিতেছিল ব্রাজিল সেনা । বিদ্রোহী হাতে আহত হয়েছিলেন সুরেশ, আবার সু্স্থ হয়েছিলেন তিনি । 1905 সালে তার ক্যাপ্টেন পদে প্রমশন হয়, কিন্তু কিছু দিন পরে সুরেশ বিশ্বাস শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জানা তার ছয় সন্তান ছিল।
বিদেশের পাশাপাশি 1894 সালে তার কৃত্তিকলাপের কথা অমৃতবাজার পত্রিকাতেও এই খবর বেরিয়েছিল । সেখানে দেশের সুরেশ বিশ্বাস এর কথা জানতে পারে ।
ব্রাজিলের সাধারণ মানুষ তাকে কর্নেল বলে উল্লেখ করেন, আবার কেউ কেউ তাকে বলতেন ব্রাজিলের রক্ষাকর্তা !
আরে সুরেশ বিশ্বাসের কথা অনুমান করে ফেলুদা জানতে পেরেছিল কারান্ডিকারের কথা ।
ছবি সূত্র - internet
তথ্য সূত্র - https://www.telegraphindia.com/amp/culture/the-royal-bengal-lion-tamer/cid/1675615
https://images.app.goo.gl/cepiznPxpys8yiZ58
https://images.app.goo.gl/JfDFaEzxApB3SwF89
Adventure
Brazil
Circus
Colonel Suresh Biswas
History
www.chaloamaragalpakori.com
Legend
Savior of Brazil
- Get link
- X
- Other Apps


.jpeg)

Comments